ডিম্পল কপাড়িয়া
ডিম্পল চুন্নিভাই কপাড়িয়া (হিন্দি: डिम्पल कपाड़िया; জন্ম: ৮ জুন, ১৯৫৭) বিখ্যাত ভারতীয় চলচ্চিত্র অভিনেত্রী।[1] ষোলো বছর বয়সে তার অভিনয়শিল্পে আত্মপ্রকাশ ঘটে। ১৯৭৩ সালে রাজ কাপুরের কিশোর-কিশোরীর আবেগঘন ববি চলচ্চিত্রে কেন্দ্রীয় ভূমিকায় অংশগ্রহণ করেছিলেন তিনি। একই বছর ভারতীয় অভিনেতা রাজেশ খান্নার সাথে পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হন কপাড়িয়া। এ দম্পতির টুইঙ্কল খান্না ও রিঙ্কি খান্না নাম্নী দুই কন্যা সন্তান রয়েছে। তারাও বলিউডের সাবেক অভিনেত্রী। তাদের মধ্যকার সম্পর্ক শিথিলতার কারণে উভয়ে পৃথকভাবে বসবাস করতে থাকেন। পরবর্তীতে ১৯৮৪ সালে পুনরায় চলচ্চিত্রাঙ্গনে ফিরে আসেন। এ সময়ে তিনি নাট্যধর্মী চলচ্চিত্র সাগর চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। ১৯৮৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত সাগর ও ১৯৭৩ সালের ববি চলচ্চিত্রের জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার লাভ করেন তিনি।[2] ১৯৮০-এর দশকে হিন্দি চলচ্চিত্রে অন্যতম শীর্ষস্থানীয় অভিনেত্রী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন তিনি।
ডিম্পল কপাড়িয়া | |
---|---|
জন্ম | ডিম্পল চুন্নিভাই কপাড়িয়া ৮ জুন ১৯৫৭ |
পেশা | অভিনেত্রী |
কর্মজীবন | ১৯৭৩; ১৯৮৪-বর্তমান |
দাম্পত্য সঙ্গী | রাজেশ খান্না (১৯৭৩-২০১২) |
সন্তান | টুইঙ্কল খান্না (মেয়ে) রিঙ্কি খান্না (মেয়ে) |
আত্মীয় | অক্ষয় কুমার (জামাতা) |
শৈশবকাল
গুজরাটি ব্যবসায়ী চুন্নিভাই কপাড়িয়া ও বেটি দম্পতির চার সন্তানের মধ্যে ডিম্পল জ্যেষ্ঠা ছিলেন। তার ছোট ভাই-বোনের মধ্যে সিম্পল কপাড়িয়া প্রয়াত অভিনেত্রী ছিলেন। তার রিম নাম্নী আরেক বোন ও মুন্না নামে এক ভাই রয়েছে।[3][4] পরিবারটি মুম্বইয়ের সান্তা ক্রুজ এলাকায় বসবাস করতে ও তিনি সেন্ট জোসেফস কনভেন্ট হাই স্কুলে অধ্যয়ন করেন।[5][6] পিতার অঢেল অর্থসম্পদ থাকায় তিনি নিজেকে ভিন্ন ধাঁচে গড়ে তুলেছেন।[7]
ব্যক্তিগত জীবন
নভেম্বর, ১৯৭৩ সালে তার প্রথম চলচ্চিত্র ববি মুক্তি পাবার ছয়মাস পূর্বেই মার্চ, ১৯৭৩ সালে অভিনেতা রাজেশ খান্নার সাথে পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হন।[8] ববি চলচ্চিত্রের অধিকাংশ দৃশ্যই তাদের বিয়ের পর নেয়া হয়েছিল।[9] দুই কন্যা টুইঙ্কল ও রিঙ্কিকে লালন-পালনের উদ্দেশ্যে বারো বছর চলচ্চিত্র জগৎ থেকে দূরে সরে থাকেন।[10] জানা যায় যে, বিবাহের পর তিনি অভিনয় করা থেকে অলিখিতভাবে নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়েন। অবশ্য তিনি একবার বলেছিলেন যে, অভিনয়কে তিনি সর্বদাই গৌণ অবস্থায় রেখেছেন।
১৯৮২ সালের এপ্রিল মাসে খান্নার কাছ থেকে চলে আসেন।[11] স্বামীগৃহ ত্যাগ করে দুই কন্যাকে নিয়ে বাবার বাড়ী চলে আসেন তিনি। দুই বছর পর অভিনয় জগতে পুনরায় ফিরে আসেন।[10] ১৯৮৫ সালে ইন্ডিয়া টুডেকে দেওয়া এক স্বাক্ষাৎকারে তিনি বলেন যে, আমাদের গৃহে জীবন ও সুখ তখনি শেষ হয় যখন আমি ও রাজেশ বৈবাহিক সম্পর্কে আবদ্ধ হই। তিনি তার অসুখী দাম্পত্য জীবনের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে মতবিনিময় করেন। দীর্ঘকালের নরক থেকে উদ্ধার পেয়েছেন। তবে, ২০১০ সালে প্রতিবেদক দিনেশ রাহেজা মন্তব্য করেন যে, রাজেশ ও ডিম্পলের মধ্যকার তিক্ততাপূর্ণ সম্পর্ক অনেকটা চোখে ধূলো দেয়ার মতো। তাদেরকে একত্রে পার্টিতে দেখা গেছে। ১৯৯০ সালে রাজেশ খান্নার নির্বাচনী প্রচারণায়ও অংশ নিয়েছেন। এছাড়াও খান্নার চলচ্চিত্র জয় শিব শঙ্কর চলচ্চিত্রে কাজ করেছেন তিনি।[12] ফিল্মফেয়ার পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে আবারো বিবাহ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান যে, আমি বর্তমান অবস্থায় সুখী। কেন আমি পুনরায় বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হবো একবারই যথেষ্ট হয়েছে।
তার কন্যারাও অভিনয় জগতে অংশ নিয়েছিলেন। প্রতিষ্ঠা লাভের পর তারা অবসর নেয়। জ্যেষ্ঠা কন্যা টুইঙ্কল খান্না বিশিষ্ট অভিনেতা অক্ষয় কুমারের সাথে পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হয়েছিলেন।[13]
কর্মজীবন
অভিষেক (১৯৭৩)
কপাড়িয়া একবার বলেছিলেন যে, শৈশবকাল থেকেই চলচ্চিত্রাভিনেত্রী হবার স্বপ্ন দেখতেন। তার ভাষায় তিনি চলচ্চিত্র পাগল ছিলেন।[14] ১৩ বছর বয়সে রাজ কাপুরের নজর কাড়েন।
১৯৭৩ সালে আবেগঘন চলচ্চিত্র ববি'র মাধ্যমে তার চলচ্চিত্রে অভিষেক ঘটে। চলচ্চিত্রটি কাপুর তনয় ঋষি কাপুরের অভিষেক চলচ্চিত্র ছিল ও কেন্দ্রীয় চরিত্রের ছিল। অন্যদিকে কপাড়িয়া ববি ব্রাগাঞ্জা নাম ভূমিকায় ছিলেন, যে গোয়ার মধ্যবিত্ত খ্রিস্টান বালিকা ছিল।[10] কাহিনীতে সম্পদশালী ব্যবসায়ী পরিবারের সন্তান রাজের সাথে ভালোবাসায় জড়িয়ে পড়ে। কিন্তু এ যুগল তাদের পরিবার সম্পর্ক মেনে নেয়নি। ববি ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে ও সফলতা পায়। কাপাডিয়াও তার অভিনয়শৈলীতে মনোযোগ কাড়েন। ফলশ্রুতিতে অভিমান চলচ্চিত্রের নায়িকা জয়া ভাদুরীর সাথে যৌথভাবে ফিল্মফেয়ার শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী পুরস্কার লাভ করেন। পরবর্তী বছরগুলোয় কপাড়িয়া তার চলচ্চিত্রে সফলতা লাভে রাজ কাপুরের কৃতিত্বকে তুলে ধরেন। তার ভাষ্য অনুযায়ী, আজ আমার পূর্ণাঙ্গ অভিনেত্রী হবার পেছনে রাজ কাপুর রয়েছেন।[14] ঐ চলচ্চিত্রে বেশ কয়েকবার তার কণ্ঠে একটি বাক্য 'মুজসে দোস্তি করোগে' বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করে।[10] ২০০৮ সালে রেডিফ.কম চলচ্চিত্রে তার অবদানকে হিন্দি চলচ্চিত্রের ইতিহাসে সর্বকালের চতুর্থ সেরা অভিষেক লাভকারী অভিনেত্রীরূপে চিত্রিত করে। চলচ্চিত্রটির সফলতা লাভের পর কপাড়িয়ার আধুনিক চুলের ধরন, ব্লাউজ ভারতের ঐ সময়কার তরুণীদের ফ্যাশনে ব্যাপক প্রভাব ফেলে ও পোল্কা ছিটের পোশাকগুলো ববি প্রিন্ট নামে আখ্যায়িত হয়।[15]
অভিনয়ে প্রত্যাবর্তন
শুরুতে তিনি জাতীয় যৌনতার প্রতীক হিসেবে চিত্রিত হয়েছিলেন।[16] পরবর্তীকালে এ জাতীয় অভিনয় থেকে দূরে সরে এসে বহুমূখী অভিনয়ের দিকে ধাবিত হন। কাশ, দৃষ্টি, লেকিন, রুদালী'র ন্যায় চলচ্চিত্রে অভিনয় করে সুনাম কুড়ান। তন্মধ্যে, ১৯৯৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত রুদালী'র জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ও শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে ফিল্মফেয়ার সমালোচক পুরস্কার পান তিনি।[17] এরপর তিনি গরদিশ, প্রহার: দ্য ফাইনাল অ্যাটাক ও ক্রান্তিবীর চলচ্চিত্রে পার্শ্ব ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। তন্মধ্যে ১৯৯৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ক্রান্তিবীরের জন্য শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রী বিভাগে তার চতুর্থ ফিল্মফেয়ার পুরস্কার লাভ করেন। তবে ১৯৯০-এর দশক থেকে ২০০০-এর দশক পর্যন্ত অনিয়মিতভাবে অংশ নিয়েছেন তিনি।
মূল্যায়ন
চলচ্চিত্র জগতে প্রত্যাবর্তনের পর থেকে তাকে তার ববি চলচ্চিত্রের দিনগুলোর সাথে ধারাবাহিকভাবে তুলনা করা হচ্ছিল। দ্য সিনেমাটিক ইমেজিন্যাশন গ্রন্থের লেখক জ্যোতিকা বির্দির মতে, কপাড়িয়ার বিয়োগাত্মক ঘটনা অন্য যেকোনো হিন্দি মহিলা তারকাদের তুলনায় ভিন্নধাঁচের। তিনি তার প্রত্যেক অসফলতাকে সফলতার দিকে টেনে আনতে সচেষ্ট ছিলেন।[18] এইতবার, কাশ ও দৃষ্টি চলচ্চিত্রে তিনি তার চরিত্র ভূমিকায় নিজস্ব অভিজ্ঞতাকে সূচারূরূপে তুলে ধরেছেন।[18]
তথ্যসূত্র
- "'I want to laugh, really laugh!'"। MiD DAY। ৮ জুন ২০০৭। সংগ্রহের তারিখ ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১১।
- "The best of Dimple Kapadia"। Rediff.com। ৮ জুন ২০১০। সংগ্রহের তারিখ ৩ জানুয়ারি ২০১১।
- Film World। T.M. Ramachandran। ১৯৭৩। পৃষ্ঠা 11। সংগ্রহের তারিখ ২৭ অক্টোবর ২০১০।
- Agrawal, Malti (১ জানুয়ারি ২০০৭)। New Perspectives on Indian English Writings। Atlantic Publishers & Dist। পৃষ্ঠা 26। আইএসবিএন 978-81-269-0689-5। সংগ্রহের তারিখ ২৭ অক্টোবর ২০১২।
- Bamzai, Kaveree (১৮ নভেম্বর ২০০২)। "Forever Diva"। India Today। সংগ্রহের তারিখ ১ জানুয়ারি ২০১২।
- Mirani, Indu (২২ আগস্ট ২০০৬)। "Once upon a time"। Daily News and Analysis। সংগ্রহের তারিখ ১ জানুয়ারি ২০১২।
- The Illustrated Weekly of India। জুলাই ১৯৮৭। পৃষ্ঠা 9। সংগ্রহের তারিখ ২৭ অক্টোবর ২০১২।
- "Happy Birthday Rajesh Khanna, Twinkle Khanna: Some unseen family photos of the original superstar"। দি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস (ইংরেজি ভাষায়)। ২৯ ডিসেম্বর ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ১৪ জুন ২০১৮।
- খান, রুবিনা এ. (১৮ জুলাই ২০১২)। "When Rajesh celebrated wife Dimple's 16th birthday at the Hilton, London- Entertainment News, Firstpost"। ফার্স্ট পোস্ট (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ১৪ জুন ২০১৮।
- Raheja, Dinesh (৮ সেপ্টেম্বর ২০০৪)। "Dimple: A Most Unusual Woman"। Rediff.com। সংগ্রহের তারিখ ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১১।
- Mitra, Sumit (১৯৮৫)। India Today। Bangalore: Living Media India Ltd.। 10 (17–24): 74।
|শিরোনাম=
অনুপস্থিত বা খালি (সাহায্য) - Sinha, Seema (১৩ সেপ্টেম্বর ২০১০)। "Rajesh-Dimple: Complicated!"। The Times of India। ১৩ অক্টোবর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৬ ডিসেম্বর ২০১১।
- Das Gupta, Ranjan (৯ জানুয়ারি ২০০৯)। "Lucky once again"। The Hindu। ২ জুন ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ ডিসেম্বর ২০১১।
- The Illustrated Weekly of India। The Times Group। 108 (27–38): 8। ১৯৮৭।
|শিরোনাম=
অনুপস্থিত বা খালি (সাহায্য) - Srinivasan, V S (৬ মে ১৯৯৮)। "Mature beauty"। Rediff.com। সংগ্রহের তারিখ ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১১।
- "Dimple Kapadia: The sensuous star"। The Times of India। Indiatimes। ৩১ আগস্ট ২০০৫। ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১১।
- Miglani, Surendra (৫ অক্টোবর ২০০৩)। "Parallel cinema"। The Tribune। Spectrum। সংগ্রহের তারিখ ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১১।
with movies like Kaash, Drishti, Lekin, Rudaali and Leela, she (Dimple) showed that off-beat films too are her forte.
- Jyotika Virdi (২০০৩)। The cinematic imagiNation (sic): Indian popular films as social history। Rutgers University Press। পৃষ্ঠা 140–143। আইএসবিএন 978-0-8135-3191-5। সংগ্রহের তারিখ ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১১।
বহিঃসংযোগ
- ইন্টারনেট মুভি ডেটাবেজে ডিম্পল কপাড়িয়া (ইংরেজি)