ডাইনোসরের বিবর্তন

ডাইনোসরেরা মধ্য ট্রায়াসিকের শেষভাগে ল্যাডিনিয়ান অধোযুগে, অর্থাৎ ২৩ কোটি ২০ লক্ষ থেকে ২৩ কোটি ৪০ লক্ষ বছর আগে আর্কোসরদের একটি শাখা থেকে বিবর্তিত হয়েছিল বলে জীবাশ্মবিদরা ধারণা করেন। ডাইনোসরিয়া একটি প্রমাণবহুল ক্লেড (অর্থাৎ জীবাশ্ম হিসেবে এদের প্রচুর নিদর্শন রয়েছে)। এদের সাধারণ শনাক্তকরণ বৈশিষ্ট্যের মধ্যে পড়ে মাথার খুলির পোস্টফ্রন্টাল হাড়ের বিলুপ্তি এবং প্রগণ্ডাস্থিতে প্রলম্বিত ডেল্টো-পেক্টোরাল উপবৃদ্ধি[1]

ডাইনোসরের বিবর্তনের সরলীকৃত ছক; কেবল প্রধান প্রধান শাখাগুলোকেই দেখানো হয়েছে।

আর্কোসর থেকে ডাইনোসর

ডাইনোসরোমর্ফা এবং প্রথম ডাইনোসরদের বিবর্তনের পদ্ধতিটি লক্ষ করা যায় ক্রমান্বয়ে কিছু বিশেষ জীবাশ্মের ধরনধারণ পর্যালোচনা করে, যথা- ২৫ কোটি বছরের পুরোনো আদিম আর্কোসর প্রোটেরোসুকিডি, এরিথ্রোসুকিডিইউপারকেরিয়া; তারপর টিসিনোসুকাস প্রভৃতি ২৩ কোটি ২০ লক্ষ থেকে ২৩ কোটি ৬০ লক্ষ বছর পুরোনো মধ্য ট্রায়াসিক আর্কোসর[2]। এই প্রসঙ্গে উল্লেখ্য যে, কুমিরেরাও মধ্য-ট্রায়াসিক আর্কোসরদের থেকে বিবর্তিত হয়েছে[1]

পাখি (সরিস্কিয়া) এবং ট্রাইসেরাটপ্‌সের (অর্নিথিস্কিয়া) সাম্প্রতিকতম সাধারণ পূর্বপুরুষ এবং তাদের সমস্ত বংশধর হিসেবে ডাইনোসরদের বর্ণনা দেওয়া যেতে পারে। এই সংজ্ঞা অনুযায়ী টেরোসর এবং আরও অনেক আর্কোসর প্রজাতি অল্পের জন্য ডাইনোসর পরিসীমার বাইরে থেকে যায়। টেরোসরেরা মেসোজোয়িক মহাযুগের প্রধান উড়ন্ত প্রাণী ও পৃথিবীর ইতিহাসে বৃহত্তম উড়ন্ত প্রাণী হিসেবে বিখ্যাত[3]স্ক্লেরোমোক্লাস (২২ কোটি-২২ কোটি ৫০ লক্ষ বছর), ল্যাগারপেটন (২৩ কোটি-২৩ কোটি ২০ লক্ষ বছর) ও মারাসুকাস (২৩ কোটি-২৩ কোটি ২০ লক্ষ বছর) হল আর্কোসরদের আরও কয়েকটি গণ যাদের ডাইনোসর বলা যায় না[4]

সর্বপ্রথম ডাইনোসর

আজ অবধি শনাক্ত হওয়া প্রাচীনতম ডাইনোসরেরা ছিল ১ থেকে ২ মিটার (৩.৩ থেকে ৬.৫ ফুট) দীর্ঘ দ্বিপদ মাংসাশী প্রাণী

স্পণ্ডাইলোসোমা ডাইনোসর হতেও পারে, না-ও পারে। এদের সমস্ত আবিষ্কৃত জীবাশ্ম আনুমানিক ২৩ কোটি ৫০ লক্ষ থেকে ২৪ কোটি ২০ লক্ষ বছরের পুরোনো[1]

যে সমস্ত জীবাশ্ম বিশ্লেষণ করে নিশ্চিতভাবে ডাইনোসর হিসেবে চিহ্নিত করা যায় তাদের মধ্যে প্রাচীনতম সরিস্কিয়ানরা (গিরগিটির-মতো-কোমরওয়ালা) হল নিয়াসাসরাস (২৪ কোটি ৩০ লক্ষ), স্যাটার্নালিয়া (২২ কোটি ৫০ লক্ষ-২৩ কোটি ২০ লক্ষ), হেরেরাসরাস (২২ কোটি-২৩ কোটি), স্টোরিকোসরাস (সম্ভবত ২২ কোটি ৫০ লক্ষ-২৩ কোটি), ইওর‍্যাপ্টর (২২ কোটি-২৩ কোটি) এবং অ্যাল্‌ওয়কেরিয়া (২২ কোটি-২৩ কোটি)। স্যাটার্নালিয়া হয় একটি প্রাথমিক সরিস্কিয়ান নয়তো একটি প্রোসরোপড; বাকিরা নিশ্চিতভাবে প্রাথমিক সরিস্কিয়ান।

প্রাচীনতম অর্নিথিস্কিয়ান (পাখির-মতো-কোমরওয়ালা) ডাইনোসরদের মধ্যে পড়ে পাইসানোসরাস (২২ কোটি-২৩ কোটি) ও লেসোথোসরাস (১৯ কোটি ৫০ লক্ষ-২০ কোটি ৬০ লক্ষ)। লেসোথোসরাসের জীবাশ্মগুলোর বয়স অপেক্ষাকৃত কম হলেও খুলির গড়ন দেখে বোঝা যায় তারা পাইসানোসরাসদের সাথেই অর্নিথিস্কিয়া হিসেবে বিবর্তিত হয়েছিল।

. ইওর‍্যাপ্টর, একটি প্রাথমিক সরিস্কিয়ান, লেসোথোসরাস, একটি প্রাথমিক অর্নিথিস্কিয়ান, স্টোরিকোসরাসের (সরিস্কিয়া) শ্রোণীচক্র, লেসোথোসরাসের শ্রোণীচক্র

উপরের ছবি থেকে বোঝা যায় যে প্রাথমিক সরিস্কিয়ানরা অনেকাংশে প্রাথমিক অর্নিথিস্কিনদের মতোই দেখতে ছিল। আধুনিক কুমিরদের সাথে এদের কারোরই সাদৃশ্য ছিল না। এই দুই প্রকার ডাইনোসরগোষ্ঠীকে ছবিতে প্রদর্শিত শ্রোণীচক্রের পার্থক্য অনুসারে আলাদা করা হয়। আরও একটা গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন ছিল মাথার খুলিতে; অর্নিথিস্কিয়ানদের উপরের চোয়াল বেশি মজবুত আর নিচের চোয়ালের সংযোগস্থল বেশি নমনীয়। দু'টোই গাছপালা খাওয়ার উপযোগী অভিযোজন আর দু'টোই লেসোথোসরাসের মতো একটা প্রাথমিক নমুনাতেও স্পষ্ট বোঝা যায়[5]

সরিস্কিয়া

প্রাথমিক নমুনাগুলো বাদ দিলে অবশিষ্ট সরিস্কিয়া প্রজাতিরা দু'টো প্রধান ভাগে বিভক্ত, সরোপডোমর্ফা এবং থেরোপোডা[6]। আবার, সরোপডোমর্ফার দু'টি উপবিভাগ হল প্রোসরোপোডা ও সরোপোডা। অন্যদিকে, থেরোপোডার বিবর্তনের গতিমুখ বেশ জটিল। ডাইনোসরদের সম্বন্ধে রচিত অন্যতম উৎকৃষ্ট বই দ্য ডাইনোসরিয়া-তে (২০০৪) থেরোপোডাকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে, যেমন সেরাটোসরিয়া, প্রাথমিক টেটানিউরা, টির‍্যানোসরয়ডিয়া, অর্নিথোমিমোসরিয়া, থেরিজিনোসরয়ডিয়া, ওভির‍্যাপ্টরোসরিয়া, ট্রুডন্টিডি, ড্রোমিওসরিডি এবং প্রাথমিক এভিয়ালা অর্থাৎ পাখিদের পূর্বপুরুষ[1]। এই সব ক'টা শাখাই থেরোপডদের উৎপত্তির বেশ কিছু সময় পরে তাদের প্রধান গোষ্ঠী থেকে আলাদা হয়। এই বিভাগগুলোর পারস্পরিক সম্পর্কের সম্বন্ধে বিশদে জানতে দেখুন ডাইনোসরের শ্রেণীবিন্যাস

সরোপডোমর্ফা

প্রথম সরোপডোমর্ফদের প্রোসরোপড বলা হয়। অন্ত্য ট্রায়াসিক থেকে আদি জুরাসিক,অর্থাৎ ২২ কোটি ৭০ লক্ষ থেকে ১৮ কোটি বছরের পুরোনো পাথরের স্তরে এদের জীবাশ্ম পাওয়া যায়[1]। এরা দ্বিপদ ও চতুষ্পদ দু'রকমেরই হত, লেজ আর গলা ছিল খুব লম্বা আর এদের মাথা ছিল অপেক্ষাকৃত ছোট। ২.৫ থেকে ১০ মিটার (৮.২ থেকে ৩৩ ফুট) পর্যন্ত এরা লম্বা হত (আনুভূমিকভাবে) আর প্রায় বাধ্যতামূলকভাবে শাকাহারী হত। থেকোডন্টোসরাস প্রভৃতি প্রোসরোপডদের কিছু আদিমতম নমুনার (২০.৫ থেকে ২২ কোটি বছর) গড়নে তাদের পূর্বপুরুষদের দ্বিপদ ভঙ্গি আর বড় মাথার আভাস পাওয়া যায়[7]

এই প্রাণীগুলোই পরবর্তীকালে বিশালদেহী শাকাহারী সরোপডে বিবর্তিত হয়, যাদের কেউ কেউ অন্তত ২৬ মিটার (৮৫ ফুট) পর্যন্ত দীর্ঘ হত। এই ক্লেডের অন্যতম শনাক্তকারী বৈশিষ্ট্য হল এদের সামনের পা ও পিছনের পায়ের দৈর্ঘ্যের অনুপাত ০.৬ এর বেশি, অর্থাৎ অধিকাংশ সরোপডের পশ্চাৎপদ অগ্রপদের চেয়ে বেশি লম্বা হত। উল্লেখযোগ্য ব্যতিক্রম হিসেবে ব্র্যাকিওসরাসের নাম করা যেতে পারে, যাদের লম্বা অগ্রপদ থেকে অনুমান করা হয় তারা আধুনিক জিরাফের মতো বড় গাছের উঁচু ডালপালা খাওয়ার জন্য অভিযোজিত হয়েছিল[8]

সরোপডদের জীবাশ্মের সন্ধান পাওয়া গেছে ডাইনোসরদের উৎপত্তির সময় থেকে তাদের রাজত্বের একদম শেষভাগে ক্রিটেশিয়াস-প্যালিওজিন অবলুপ্তি ঘটনা পর্যন্ত (২২.৭ থেকে ৬.৬ কোটি বছর) সুদীর্ঘ সময়কাল জুড়ে। বেশির ভাগ নিদর্শন জুরাসিক যুগের, অর্থাৎ কমবেশি ২২.৭ থেকে ১২.১ কোটি বছরের পুরোনো।

ক্রিটেশিয়াস যুগের সরোপডদের দু'টো শাখা ছিল; ডিপ্লোডোকয়ডিয়ারা রাজত্ব করেছিল ১২.১ থেকে ৬.৬ কোটি বছরের মধ্যে, আর টাইটানোসরিফর্মেরা ১৩.২ থেকে ৬.৬ কোটি বছরের মধ্যে। টাইটানোসরিফর্মদের অন্তর্গত অধোবিভাগগুলো হল টাইটানোসরিয়া, টাইটানোসরিডি এবং সল্টাসরিডি। ডিপ্লোডোকয়ডিয়া ও টাইটানোসরিফর্ম এই দু'টো শাখাই নিওসরোপোডা থেকে বিবর্তিত, যারা ১৬.৯ কোটি বছর আগে প্রথম আত্মপ্রকাশ করে।

সরোপডরা পৃথিবীর সর্বকালের সর্ববৃহৎ স্থলচর প্রাণী হিসেবে বিখ্যাত, যদিও তাদের মাথার খুলির আয়তন অনুপাতে খুবই ছোট হত। সময়ের সাথে সাথে বিভিন্ন সরোপড ডাইনোসরের দেহের আয়তন বৃদ্ধি এবং খুলির আয়তনের পরিবর্তন নিচের ছক দু'টোয় দেখানোর চেষ্টা করা হল।

প্রাচীন থেকে নবীন এই ক্রমে ছকে ব্যবহৃত ডাইনোসরগুলো হলː ইও ইওর‍্যাপ্টর ;

প্রোসরোপডসমূহ- রি রিওজাসরাস, প্ল্যা প্ল্যাটিওসরাস, য়ু য়ুনানোসরাস, ম্যা ম্যাসোস্পণ্ডাইলাস, জিং জিংশানোসরাস, অ্যা অ্যাঙ্কিয়াসরাস, লু লুফেঙ্গোসরাস, য়ি য়িমেনোসরাস ;

সরোপডসমূহ- শু শুনোসরাস, ওমে ওমেইসরাস, মা মামেঞ্চিয়াসরাস, সি সিটিওসরাস, ডিক্রে ডিক্রেওসরাস, ব্র্যা ব্র্যাকিওসরাস, ইউ ইউহেলোপাস, অ্যাপা অ্যাপাটোসরাস, ক্যা ক্যামারাসরাস, ডিপ্লো ডিপ্লোডোকাস, হ্যা হ্যাপ্লোক্যান্থোসরাস, আ আমার্গাসরাস, আর আর্জেন্টিনোসরাস (আনুমানিক), ব বনিটাসরা, কো কোয়েসিটোসরাস, আলা আলামোসরাস, স সল্টাসরাস, রা রাপেটোসরাস, অ অপিস্থোসিলিকডিয়া, নে নেমেগ্‌টোসরাস

আর্জেন্টিনোসরাস বাদে এই ছকে সেই সমস্ত সরোপডেরই উল্লেখ করা হয়েছে যাদের প্রায় পুরো কংকালটাই জীবাশ্ম হিসেবে বিজ্ঞানীদের হাতে এসেছে। এরা ছাড়াও অনেক সরোপড ছিল যারা আয়তনে খুব বড় (দেখুন ডাইনোসরের আয়তন), কিন্তু তাদের কঙ্কালের খুব অল্প কিছু হাড়ই আজ অবধি পাওয়া গেছে বলে তাদের এখানে অন্তর্ভুক্ত করা যায়নি। ইওর‍্যাপ্টরের খুলির দৈর্ঘ্য ও দেহের দৈর্ঘ্যের অনুপাত সরোপডদের থেকে অনেক বেশি। সবচেয়ে বড় খুলি নেমেগ্‌টোসরাসের,যারা সার্বিক আয়তনের বিচারে খুব একটা বড় ছিল না। নেমেগ্‌টোসরাসের খুলি পাওয়া গিয়েছিল একটা ১১ মিটার (৩৬ ফুট) লম্বা কবন্ধ অপিস্থোসিলিকডিয়ার কঙ্কালের পাশে, এবং এ'থেকে কেউ কেউ অনুমান করেন এই দু'টো আসলে একই প্রজাতি। কিন্তু এরা যেহেতু আলাদা আলাদা পরিবারের অন্তর্গত, তাই এই অনুমান ভিত্তিহীন হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি[9]

বিশালদেহী শাকাহারী এবং বিশালদেহী উদ্ভিদের বিবর্তনের মধ্যে কোনো প্রত্যক্ষ সম্পর্ক আছে কি না তা এখনও নিশ্চিত করে বলা যায়নি। ডাইনোসরদের রাজত্বকালের পুরোটা জুড়েই কনিফার অর্থাৎ পাইন জাতীয় ব্যক্তবীজীরা ছিল প্রধান উদ্ভিদগোষ্ঠী। তাদের ক্রমবর্ধমান সংখ্যা ট্রায়াসিক যুগে আজ থেকে ১৯ কোটি বছর আগে স্থিতিশীল হয়। উদ্ভিদদের দ্বিতীয় বৃহত্তম গোষ্ঠী ছিল সাইকাডদের, কিন্তু ১২ কোটি বছর আগে সদ্য বিবর্তিত সপুষ্পক উদ্ভিদেরা প্রভাবে তাদের ছাড়িয়ে যায়। ফার্নের প্রভাবও গোটা মধ্যজীব মহাযুগে কমবেশি অপরিবর্তিত ছিল। জুরাসিকের শেষভাগের অবলুপ্তি ঘটনায় সমস্ত শাকাহারী ডাইনোসরই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।

থেরোপোডা

প্রাথমিক সরিস্কিয়ানদের বাদ দিলে এখনও পর্যন্ত আবিষ্কৃত প্রাচীনতম থেরোপড জীবাশ্ম হল সিলোফাইসয়ডিয়াদের, যাদের অন্তর্ভুক্ত হল সিলোফাইসিস প্রভৃতি ডাইনোসর। এদের সময়কাল অন্ত্য ট্রায়াসিক থেকে আদি জুরাসিক অর্থাৎ ২২ কোটি ৭০ লক্ষ থেকে ১৮ কোটি বছর আগে পর্যন্ত[1]। ক্ল্যাডিস্টিক্স বিশ্লেষণে কখনও কখনও এদের সেরাটোসরিয়া বিভাগের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। শ্রোণীচক্র ও পশ্চাৎপদের গড়নে এই বিভাগটির অন্যান্য সদস্যদের সাথে সিলোফাইসয়ডিয়াদের সাদৃশ্য আছে। অন্যান্য সেরাটোসরিয়ার প্রথম আবির্ভাব হয়েছিল অন্ত্য জুরাসিকে, উত্তর আমেরিকার পশ্চিমাংশে।

এদের পরে আসে প্রাথমিক টেটানিউরারা, যাদের জীবাশ্ম পাওয়া গেছে মধ্য জুরাসিক থেকে আদি ক্রিটেশিয়াস ছাড়িয়ে, ১৮ কোটি থেকে ৯.৪ কোটি বছর আগে পর্যন্ত সময়কাল জুড়ে। এদের চোয়ালে দাঁতের সারি অপেক্ষাকৃত কম দৈর্ঘ্যের। এদের বিভিন্ন গোষ্ঠী বিভিন্ন সময়ে সিলুরোসরদের নানা শাখায় বিবর্তিত হয়। উল্লেখযোগ্য প্রাথমিক টেটানিউরাদের মধ্যে পড়ে মেগালোসরিডা, স্পিনোসরিড, বিভিন্ন ক্লেডের অ্যালোসর আর আরও অনেক গণ যাদের সম্পর্কে এখনও বিশদে জানা যায়নি, যেমন কম্পসোগ্ন্যাথাস, যারা এই গোষ্ঠীর একমাত্র ক্ষুদ্রায়তন সদস্য। অ্যালোসরেরা একটি দীর্ঘস্থায়ী ক্লেড যাদের খুলির কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্য আছে। এদের অন্তর্গত 'খ্যাতনামা' প্রজাতিগুলোর মধ্যে অ্যালোসরাসসিনর‍্যাপ্টরের নাম করা যায়।

সিলুরোসরিয়ার বিভিন্ন শাখায় থেরোপডদের 'বিকিরণ', অর্থাৎ নির্দিষ্ট কিছু থেরোপডের অপেক্ষাকৃত অল্প সময়ের মধ্যে বহুসংখ্যক সিলুরোসরে বিবর্তনের ঘটনাটি খুব সম্ভবত মধ্য থেকে অন্ত্য জুরাসিকের মধ্যেই ঘটেছে, কারণ আর্কিওপ্টেরিক্সের জীবাশ্মের সন্ধান মেলে এই সময়েরই (মোটামুটি ১৫.২ থেকে ১৫.৪ কোটি বছর আগেকার) পাথরের স্তরে; আর এমনও অনেক সিলুরোসর আছে যারা তার আগেই বিবর্তিত হয়েছিল[10]চীনে প্রাপ্ত জীবাশ্ম থেকে বোঝা যায় যে প্রথম পালকযুক্ত ডাইনোসরের আবির্ভাব হয়েছিল কোনো কোনো সিলুরোসরিড শাখার প্রাথমিক পর্যায়ে[11]। এদের মধ্যে সবচেয়ে পুরোনো পালকের নমুনা পাওয়া যায় ডিলং-এর জীবাশ্মে; যদিও এদের 'পালক'গুলো ফাঁপা তন্তু ছাড়া কিছুই নয় আর দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হলেও ওড়ার ব্যাপারে এদের কোনো ভূমিকাই ছিল না।

বিচ্ছিন্ন কয়েকটি নমুনা ও ক্ল্যাডিস্টিক্স বিশ্লেষণ[12] থেকে আন্দাজ করা হয় টির‍্যানোসরয়ডিয়া অন্যান্য থেরোপডের থেকে বিবর্তনের ধারায় আলাদা হয়ে গিয়েছিল মধ্য জুরাসিকে, যদিও আজ অবধি আবিষ্কৃত এদের প্রাচীনতম সম্পূর্ণ জীবাশ্মটি ইওটির‍্যানাসের, যারা বেঁচে ছিল তার একটু আগে; ১২.১ থেকে ১২.৭ কোটি বছরের মধ্যে। টির‍্যানোসরাস এবং তার অজস্র জ্ঞাতির কোনোটাই অন্ত্য ক্রিটেশিয়াসের আগে বিবর্তিত হয়নি[13]

কয়েকটি নির্বাচিত বৃহৎ থেরোপড ডাইনোসর ও একজন মানুষের গড় আয়তনের তুলনামূলক চিত্র

অর্নিথোমিমোসরিয়া জীবাশ্মগুলোর সময়কাল ১২.৭ থেকে ৬.৫ কোটি বছর আগে। আদি ক্রিটেশিয়াস থেকে প্রাপ্ত হার্পাইমিমাস কে এই বিভাগের প্রাচীনতম সদস্য হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে[14]

থেরিজিনোসরয়ডিয়ারা ছিল একমাত্র শাকাহারী থেরোপড[15]। এদের জীবাশ্ম প্রমাণও ১২·৭ থেকে ৬·৫ কোটি বছর আগেকার সময়সীমাকে নির্দেশ করে।

ম্যানির‍্যাপ্টোরানদের অন্তর্গত ছিল ওভির‍্যাপ্টরোসরিয়া ('ডিম-চোর গিরগিটি'), ডাইনোনিকোসরিয়া এবং পাখিরা। এদের সাধারণ বৈশিষ্ট্য হল অগ্রপদের আল্‌না হাড়ে একটা বাঁকানো উপবৃদ্ধি।

ওভির‍্যাপ্টরোসরিয়াদের জীবাশ্ম থেরিজিনোসরয়ডিয়ার সমসাময়িক। এদের দাঁতবিহীন খুলি বিশেষভাবে অভিযোজিত এবং লেজের দৈর্ঘ্য খুব কম[16][17]

ডাইনোনিকোসরেদের নামকরণ ('ভয়ংকর থাবাওয়ালা গিরগিটি') করা হয়েছে এদের কাস্তের ফলার আকারবিশিষ্ট পশ্চাৎপদের মাঝের আঙুলটির জন্য। এরা পাখিদের নিকট জ্ঞাতি। এরা দু'টো স্পষ্ট ভাগে বিভক্ত- ট্রুডন্টিডিড্রোমিওসরিডি। ট্রুডন্টিডরা ওভির‍্যাপ্টরোসরিয়া ও অর্নিথোমিমোসরিয়ার সমসাময়িক ছিল; এদের গড়ন অপেক্ষাকৃত হালকা আর লম্বা পা-যুক্ত। ট্রুডন্টিডদের মধ্যে আবিষ্কৃত প্রাচীনতম জীবাশ্ম হল সিনর্নিথয়েডেরইউটার‍্যাপ্টর বাদে বাকি ড্রোমিওসরিডরাও একই সময়কার প্রাণী। ইউটার‍্যাপ্টরের খুলির জীবাশ্ম ১২.৭ থেকে ১৪.৪ কোটি বছরের পুরোনো। এটা একটা অদ্ভুত ঘটনা বলা যায়, কারণ সাম্প্রতিক ক্ল্যাডিস্টিক্স প্রমাণ করে যে ইউটার‍্যাপ্টররা থেরোপডদের পূর্বপুরুষদের অনেক দূর সম্পর্কের জ্ঞাতি, আর্কিওপ্টেরিক্স দের থেকেও[10]। ড্রোমিওসরিডদেরই পায়ের বৈশিষ্ট্য ছিল পরিবর্ধিত মাঝের আঙুল। এদের অন্তর্গত হল নামকরা ডাইনোসর ড্রোমিওসরাস, ডাইনোনিকাস আর জুরাসিক পার্ক-খ্যাত ভেলোসির‍্যাপ্টর

প্রাগৈতিহাসিক এভিয়ালাদের অন্তর্ভুক্ত ছিল এভিস অর্থাৎ আধুনিক পাখি ও আর্কিওপ্টেরিক্স এর সাধারণ পূর্বপুরুষ এবং তাদের থেকে বিবর্তিত সকল প্রজাতি, আর এদের চেয়ে একটু আদিম এপিডেন্ড্রোসরাসপাখিদের জীবাশ্ম ১৫.৪ কোটি বছর আগে শুরু হয়ে ৬.৫ কোটি বছর আগেকার ক্রিটেশিয়াস-প্যালিওজিন অবলুপ্তি ঘটনা পেরিয়ে বর্তমান কাল পর্যন্ত উপস্থিত। চীন থেকে আধুনিক পাখিদের গোষ্ঠী অর্নিথুরার নিকটতর পূর্বপুরুষ কনফুশিয়াসর্নিসের প্রচুর জীবাশ্ম আবিষ্কৃত হয়েছে[18]। অর্নিথুরানদের প্রত্যেকেরই মেরুদণ্ডের শেষে পাইগোস্টাইল নামক একটা অস্থিময় উপবৃদ্ধি থাকে; এই অংশের সাথে লেজের লম্বা পালকগুলো সংযুক্ত থাকে। এই বিষয়ে আরও জানতে দেখুন পাখিদের বিবর্তন

অর্নিথিস্কিয়া

অর্নিথিস্কিয়ার নামকরণ করা হয়েছিল তাদের শ্রোণীচক্রের সাথে পাখির শ্রোণীচক্রের অঙ্গসংস্থানিক সাদৃশ্যের জন্য, যদিও পাখিরা তাদের থেকে বিবর্তিত হয়নি।

অর্নিথিস্কিয়ানদের মাথার খুলি ও দাঁতের গড়ন তাদের বিবর্তনের প্রথম পর্বেই শাকাহারী আহারের জন্য অভিযোজিত হয়ে গিয়েছিল[19]। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, লেসোথোসরাস একটি প্রাথমিক অর্নিথিস্কিয়ান, কিন্তু এর খুলিতেও পূর্বোক্ত অভিযোজনগুলোর দেখা মেলে; এদের উপরের চোয়াল শক্ত ও নিচের চোয়াল অপেক্ষাকৃত নমনীয়।

অর্নিথিস্কিয়ানদের প্রধান প্রধান ক্লেডগুলো হল বর্মযুক্ত থাইরিওফোরা, বর্মহীন অর্নিথোপোডা এবং শিরস্ত্রাণযুক্ত মার্জিনোসেফালিয়া। এরা প্রত্যেকেই আদি জুরাসিক নাগাদ আবির্ভূত হয়।

থাইরিওফোরা

স্টেগোসরাস স্টেনোপ্‌স্‌ এর পুনর্নির্মাণ

ত্বকের উপরিভাগে অবস্থিত বর্ম হল থাইরিওফোরানদের মূল শনাক্তকারী বৈশিষ্ট্য[19]। এদের আদিমতম উদাহরণগুলোর মধ্যে একটা হল স্কুটেলোসরাস, যারা অন্যান্য দিক দিয়ে লেসোথোসরাসের অনুরূপ হলেও শুধু বর্মের উপস্থিতির জন্যই আকারে পৃথক হয়ে গিয়েছিল[20]। এদের লেজ ছিল লম্বা আর ইচ্ছেমতো দু'পা বা চার পায় চলার ক্ষমতা ছিল, যে ক্ষমতা বিবর্তনের পরের ধাপে সমস্ত স্টেগোসরঅ্যাঙ্কিলোসরের দেহে লোপ পায়। এই দু'টো ক্লেড আপাতভাবে একে অপরের থেকে আলাদা দেখতে হলেও প্রকৃতপক্ষে মাথার খুলি ও অবশিষ্ট কঙ্কালের অনেক বৈশিষ্ট্যের দিক দিয়ে সদৃশ ছিল।

স্টেগোসরেরা তাদের পিঠের উপরকার দু'সারি চওড়া পাত আর লেজের আগায় অবস্থিত লম্বা কাঁটার জন্য বিখ্যাত। স্টেগোসরাস বাদে অধিকাংশ স্টেগোসরের কাঁধ থেকেও একজোড়া করে কাঁটা গজাত। এই পাত আর কাঁটা আগেকার বর্মের (স্কুটেলোসরাসের মতো) আঁশ থেকেই উদ্ভূত হয়। সবচেয়ে পুরোনো স্টেগোসরের প্রজাতি হল হুয়ায়াঙ্গোসরাস

অ্যাঙ্কিলোসরেদের দেহের সুগঠিত ও অত্যন্ত মজবুত বর্ম থেকে সহজেই চেনা যায়। এদের মাথার খুলির হাড়ের ঘনত্ব খুব বেশি হত। বিবর্তনের ধারায় অ্যাঙ্কিলোসরেরা দু'টো ভাগে ভাগ হয়েছিল, নোডোসরিডিঅ্যাঙ্কিলোসরিডি, যাদের পার্থক্য ছিল মূলতঃ খুলির গড়নে।

অর্নিথোপোডা

কয়েকটি হ্যাড্রোসরিড জাতীয় অর্নিথোপডের মাথার পার্শ্বচিত্র

অর্নিথোপডরা তিনটি প্রধান ভাগে বিভক্ত, যথা হেটারোডন্টোসরিডি, হিপসিলোফোডন্টিডি এবং ইগুয়ানোডন্টিয়া

হেটারোডন্টোসরিডরা খুব ছোট হত (দৈর্ঘ্য ১ মিটারের কম) আর এদের সময়কাল ছিল আদি থেকে অন্ত্য জুরাসিক। অ্যাব্রিকটোসরাস বাদে প্রত্যেকের উপরের শ্বদন্ত আয়তনে নিচের শ্বদন্তের থেকে ছোট হত। অন্যান্য ডাইনোসরের তুলনায় এদের অগ্রপদ অস্বাভাবিক রকমের লম্বা।

হিপসিলোফোডন্টিডরা ১ থেকে ২ মিটার অবধি লম্বা হত। সাত মহাদেশের প্রতিটিতেই এদের জীবাশ্ম পাওয়া গেছে। এদের সময়কাল মধ্য জুরাসিক থেকে অন্ত্য ক্রিটেশিয়াস। এদের প্রাচীনতম জীবাশ্ম হল চীন থেকে প্রাপ্ত অ্যাজিলিসরাস । এদের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হল ছোট আকারের কাঁধের হাড় বা স্ক্যাপুলা এবং কোমরের অস্থিচক্রে একটি নলাকার উপবৃদ্ধি।

ইগুয়ানোডন্টিডরা হল অন্ত্য ক্রিটেশিয়াস স্তর থেকে প্রাপ্ত বিচিত্র কিন্তু জিনগতভাবে নিকটাত্মীয় কয়েকটি প্রজাতির সমষ্টি। এদের বিশেষ বৈশিষ্ট্যের মধ্যে পড়ে একাধিক দাঁত জুড়ে গিয়ে সৃষ্ট যৌগিক দাঁত ও আঙুল যুক্ত হাতের তালু[21]। প্রাচীনতম ইগুয়ানোডন্টিড হল টেনন্টোসরাস। আরও কয়েকটি প্রজাতি হল বিখ্যাত ইগুয়ানোডন, ক্যাম্পটোসরাস এবং মাটাবারাসরাস

ইগুয়ানোডন্টিডদের অন্যতম শাখা হ্যাড্রোসরিডরা ক্রিটেশিয়াসের শেষভাগে বিবর্তিত হয় এবং এদের কোনো কোনো প্রজাতি বিশাল আয়তন ধারণ করে। শানটুঙ্গোসরাস হল বৃহত্তম হ্যাড্রোসরিড তথা বৃহত্তম অর্নিথোপড।

মার্জিনোসেফালিয়া

সেরাটোপ্ জাতীয় ডাইনোসরদের খুলির বৈচিত্র্য। ক- প্রোটোসেরাটপ্‌সের গোটা কঙ্কাল। খ থেকে ঝ- খুলি। খ- পাশ থেকে সিটাকোসরাস, গ- উপর থেকে সিটাকোসরাস , ঘ- প্রোটোসেরাটপ্‌স পাশ থেকে, ঙ- প্রোটোসেরাটপ্‌স উপর থেকে, চ- পাশ থেকে ট্রাইসেরাটপ্‌স , ছ- উপর থেকে ট্রাইসেরাটপ্‌স , জ- স্টিরাকোসরাস পাশ থেকে, ঝ- স্টিরাকোসরাস উপর থেকে।

মার্জিনোসেফালিয়াদের নামকরণ হয়েছে তাদের শিরস্ত্রাণের আকৃতিবিশিষ্ট মাথার খুলির জন্য[19]। এদের দু'টো প্রধান ভাগ হল প্যাকেসেফালোসরিয়াসেরাটোপ্‌সিয়া

প্যাকেসেফালোসরদের কপালের হাড় অত্যন্ত মজবুত ও মোটা হত। আজ অবধি প্রাপ্ত সবচেয়ে পুরোনো প্রজাতিটি হল স্টেনোপেলিক্স , এদের চারণভূমি ছিল আদি ক্রিটেশিয়াসের ইউরোপ

নকশাদার শিংওয়ালা শিরস্ত্রাণের বিবর্তনের বৈচিত্র্য দেখা যায় নানা প্রকার সেরাটোপ্‌সিয়ানের মধ্যে। প্রোটোসেরাটপ্‌স, ট্রাইসেরাটপ্‌সস্টিরাকোসরাস হল এদের মধ্যে সবচেয়ে জানাশোনা নাম। সমস্ত মার্জিনোসেফালিয়ার খুলির পিছন দিকে যে পাতের আকারের উপবৃদ্ধি থাকে তার থেকেই এদের উন্নত কারুকার্যখচিত শিরস্ত্রাণের উদ্ভব হয়েছিল। সেরাটোপ্‌সিয়ার দু'টো ভাগ। পাখির মত চঞ্চুযুক্ত সিটাকোসরাস প্রভৃতি প্রাথমিক নমুনা এবং নিওসেরাটোপ্‌সিয়া

পাশের ছবিটিতে দেখানো হয়েছে সেরাটোপ্ জাতীয় ডাইনোসরদের খুলির বৈচিত্র্য। ক- প্রোটোসেরাটপ্‌সের গোটা কঙ্কাল। খ থেকে ঝ- খুলি। খ- পাশ থেকে সিটাকোসরাস, গ- উপর থেকে সিটাকোসরাস, ঘ- প্রোটোসেরাটপ্‌স পাশ থেকে, ঙ- প্রোটোসেরাটপ্‌স উপর থেকে, চ- পাশ থেকে ট্রাইসেরাটপ্‌স, ছ- উপর থেকে ট্রাইসেরাটপ্‌স, জ- স্টিরাকোসরাস পাশ থেকে (নিচের চোয়াল ছাড়া), ঝ- স্টিরাকোসরাস উপর থেকে।

সেরাটপ্‌সিড ডাইনোসরদের বিবর্তন অনেকাংশে কোনো কোনো স্তন্যপায়ী প্রাণীগোষ্ঠীর বিবর্তনের সাথে তুলনীয়। স্তন্যপায়ীদের কোনো কোনো বিভাগের মতোই এদের বিবর্তন ভূতাত্ত্বিক সময়ের নিরিখে খুব তাড়াতাড়ি হয়েছিল। অপেক্ষাকৃত অল্প সময়ের মধ্যেই এদের দেহের বড় আয়তন, খাদ্যাভ্যাস ও "বিচিত্র শিং জাতীয় অঙ্গের" বৈশিষ্ট্যগুলো আত্মপ্রকাশ করে[22]

ক্রিটেশিয়াস যুগে সেরাটোপ্ ডাইনোসরদের বিবর্তনের একটা সোজাসাপটা ছক হিসেবে সিটাকোসরাস (১২·১-৯·৯ কোটি বছর) থেকে প্রোটোসেরাটপ্‌স (৮·৩ কোটি বছর) থেকে ট্রাইসেরাটপ্‌স (৬·৭ কোটি বছর) ও স্টিরাকোসরাস (৭·২ কোটি বছর)—এই ধারাক্রমের কথা বলা হয়। পাশ থেকে দেখলে সিটাকোসরাসস্টিরাকোসরাসের খুলির মধ্যে অনেক তফাৎ চোখে পড়ে, কিন্তু উপর থেকে দেখলে উভয় প্রজাতির খুলিতেই স্পষ্ট পঞ্চভুজাকার বিন্যাস বোঝা যায়।

জীবাশ্ম প্রমাণ

প্রাথমিক ডাইনোসরদের গোষ্ঠীগুলো ট্রায়াসিক যুগ ধরে নানা শাখায় ভাগ হয়ে গিয়েছিল। তারা বিভিন্ন বাস্তুতন্ত্রগত ধাপে অবস্থানের উপযুক্ত অভিযোজনে অভিযোজিত হয়। ডাইনোসরদের রাজত্বকাল, অর্থাৎ গোটা জুরাসিকক্রিটেশিয়াস যুগে ১ মিটারের বেশি দীর্ঘ স্থলচর প্রাণীদের প্রায় প্রত্যেকটিই ছিল কোনো না কোনো প্রজাতির ডাইনোসর।

জীবাশ্ম প্রমাণের বৈশিষ্ট্য ও গুণাগুণ বিচারের একটা স্বীকৃত পদ্ধতি হল প্রাপ্ত নমুনার বয়স নির্ণয় করে তার বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য ইতোমধ্যেই আবিষ্কৃত অন্যান্য নমুনার সাথে তুলনা করা। এইভাবে সংশ্লিষ্ট ক্ল্যাডোগ্রামে নতুন নমুনার যথার্থ অবস্থান চিহ্নিত করা যায়[19]। অর্নিথিস্কিয়া, সরিস্কিয়া ও তাদের শাখাগুলোর মধ্যে নিকট যোগসূত্র খঁজে পাওয়া গেছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বয়সের ও বিবর্তনের ধারার বিচারে অনেক দূরবর্তী কিছু ডাইনোসর প্রজাতির একই রকম অভিযোজন দেখা যায়, যেমন- সিলোফাইসিড এবং সেরাটোসরিয়া জাত দু'টোর দেহের আকারে অনেক মিল, যদিও সিলোফাইসিডরা অনেক আগে বিবর্তিত হয়েছিল। এই ঘটনার সম্ভাব্য ব্যাখ্যা হতে পারে অভিসারী অভিযোজন, অর্থাৎ ঘটনাচক্রে বা কোনো বিশেষ প্রয়োজনে সিলোফাইসিড ও সেরাটোসরেরা একই রকম আকৃতি লাভ করেছিল। অবশ্য অন্য আর একটা সম্ভাবনাও সমান সত্যিː হয়তো সেরাটোসরেরা প্রাপ্ত জীবাশ্ম নমুনাগুলোর চেয়ে অনেক পুরোনো জাত; শুধু তাদের পুরোনো জীবাশ্মের কোনো নিদর্শন এখনও পাওয়া যায়নি।

অধিকাংশ ডাইনোসর জীবাশ্ম পাওয়া গেছে নরিয়ান-সিনেমুরিয়ান, কিমেরিজিয়ান-টিথোনিয়ান এবং কাম্পানিয়ান-মাস্ট্রিক্টিয়ান অধোযুগ থেকে। যদিও অন্তর্বর্তী ব্যবধানের সময় থেকেও যথেষ্ট সংখ্যক নমুনা পাওয়া যায়। এ' থেকে বোঝা যায় ঐ ব্যবধানগুলোয় ডাইনোসরেদের প্রকরণ ও বিবর্তনের ধারা অব্যাহত ছিল।

জীবাশ্ম স্তরসমূহের মধ্যবর্তী উল্লিখিত ব্যবধানগুলি অনেক জাতের ডাইনোসরের বিবর্তনের পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস নির্ধারণে বাধার সৃষ্টি করে। ১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত নথিভুক্ত ডাইনোসরদের বিভিন্ন শাখার জীবাশ্মে[19] এই ধরনের ব্যবধানের ব্যাপ্তি আড়াই কোটি বছর (লেসোথোসরাস, জেনাসরিয়া, হ্যাড্রোসরয়ডিয়া, সরোপোডা, নিওসেরাটোপসিয়া, সিলুরোসরিয়া) থেকে সাড়ে আট কোটি বছর (কার্কারোডন্টোসরিডি)। ডাইনোসরদের বিবর্তন প্রথমে ছোট আকারের প্রজাতি থেকে শুরু হয়েছিল। ছোট প্রাণীদের দেহাবশেষের জীবাশ্মীভবন অপেক্ষাকৃত বিরল বলে অনেক জাতের প্রাথমিক ইতিহাসের প্রত্যক্ষ প্রমাণ লোপ পেয়েছে বলে ধারণা করা হয়। অবশ্য কার্কারোডন্টোসরিডি এবং অ্যাবেলিসরিডি প্রভৃতি কোনো কোনো শাখায় যথেষ্ট নিদর্শনের অভাব অন্য ব্যাখ্যা দাবি করে, কারণ এদের জীবাশ্মের বিভিন্ন স্তরের ব্যবধান এমন কিছু সময়কালের মধ্য দিয়ে বিস্তৃত যখন অন্যান্য জাতের অনেক নমুনার জীবাশ্মীভবন ঘটেছে।

বিবর্তনীয় বৈশিষ্ট্য

দেহের আয়তন

বিবর্তনের ক্ষেত্রে দেহের আয়তন গুরুত্বপূর্ণ কারণ এর সাথে প্রাণীর বিপাক, খাদ্যাভ্যাস, জীবনযাত্রার ধরন, ভৌগোলিক বিস্তার ও প্রজাতি বিলুপ্তির হার প্রভৃতি বিষয়গুলো জড়িত থাকে[19]। মোটামুটিভাবে ডাইনোসরদের ভর বাসস্থান নির্বিশেষে সমগ্র মধ্যজীব মহাযুগ ধরে ১ থেকে ১০ টনের মধ্যে ছিল। তবে বেশ কিছু ক্লেডের সদস্যদের ক্রমবর্ধমান আয়তনের প্রতি বিবর্তনীয় ঝোঁক দেখা যায়, যেমন- থাইরিওফোরা, অর্নিথোপোডা, প্যাকেসেফালোসরিয়া, সেরাটোপসিয়া, সরোপডোমর্ফা এবং প্রাথমিক থেরোপোডা। কোনো কোনো ধারায় আয়তনের উল্লেখযোগ্য হ্রাসও লক্ষ্য করা যায়, তবে এই প্রবণতা অপেক্ষাকৃত বিরল। আয়তন হ্রাসের সবচেয়ে চিত্তাকর্ষক উদাহরণ হল ম্যানির‍্যাপ্টোরা বর্গ থেকে পাখিদের উদ্ভব; আর্কিওপ্টেরিক্সের ভর ছিল ১০ কিগ্রা-এর কম, আর কনফুশিয়াসর্নিসসিনর্নিস প্রভৃতি পরবর্তী পাখিরা ছিল শালিক থেকে পায়রার আয়তনবিশিষ্ট। ওড়ার ক্ষেত্রে সুবিধে পাওয়ার জন্য আয়তনের এই হ্রাসের প্রয়োজন হয়।

অঙ্গ সঞ্চালন

প্রথম ডাইনোসর ছিল দ্বিপদ। পরবর্তীকালে চার বার ডাইনোসরদের মধ্যে চতুষ্পদ দেহগঠনের আবির্ভাব হয়— ইউঅর্নিথোপোডা, সেরাটোপসিয়া, থাইরিওফোরাসরোপডোমর্ফা— এই চারটি ক্লেডের বিবর্তনের সময়। প্রত্যেক বারই এই ঘটনা সংশ্লিষ্ট প্রজাতির দেহের ক্রমবর্ধমান আয়তনের ফলে ঘটেছিল, আর প্রত্যেক বারই এই পরিবর্তন ছিল একমুখী, অর্থাৎ কোনো চতুষ্পদ ডাইনোসর থেকে কখনও আবার দ্বিপদ প্রজাতির বিবর্তন হয়নি।

ডাইনোসরদের মধ্যে অগ্রপদ বা হাতের তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম আঙুলের আয়তন হ্রাস ও অবলুপ্তির একটা পরিষ্কার প্রবণতা দেখা যায়। ডাইনোসর হাতের প্রধান কাজ ছিল ভারী কিছু স্থানান্তর নয়, বরং আংশিকভাবে নমনীয় বুড়ো আঙুলের সাহায্যে কোনো কিছু আঁকড়ে ধরা। আঙুলের অবলুপ্তি বিশেষত টির‍্যানোসরিডদের একটা মূল বৈশিষ্ট্য বলা যায়; এদের বিসদৃশ্য রকমের খুদে হাতে মাত্র দু'টো করে নড়তে সক্ষম আঙুল থাকত।

খাদ্যের উৎসের প্রভাব

প্রথম ডাইনোসর ছিল মাংসাশী। বিবর্তনের ধারায় তিন বার ডাইনোসরদের মধ্যে নিরামিষ আহারের আবির্ভাব ঘটে— অর্নিথিস্কিয়া, সরোপডোমর্ফা এবং থেরিজিনোসরিডদের বিবর্তনের সময়। পরবর্তীকালে থেরিজিনোসরেদের মধ্যে শাকাহারী ও মাংসাশী— উভয় প্রকার প্রজাতিরই দেখা মিলেছে, কিন্তু অর্নিথিস্কিয়া আর সরোপডদের নিরামিষ আহারের অভ্যাস কখনও পাল্টায়নি[19]

গাছ আর শাকাহারী ডাইনোসরদের সমসাময়িক বিবর্তন ও কার্যকারণ সম্পর্কটি এখনও প্রবল বিতর্কের উৎস। অন্ত্য ট্রায়াসিকে প্রোসরোপডদের আবির্ভাবের সাথে তৎকালীন উদ্ভিদকুলের সম্ভাব্য বিপর্যয় অথবা বহুমুখী বিবর্তনের যোগসূত্র স্থাপন করার চেষ্টা চলছে। ক্রিটেশিয়াস যুগে সেরাটোপসিড, ইগুয়ানোডন্ট এবং হ্যাড্রোসরিডদের আবির্ভাবের ফলেই গুপ্তবীজী উদ্ভিদদের বিবর্তনীয় বিকিরণ হয়েছিল (অর্থাৎ গাছের পাতা-খেকো ডাইনোসরদের থেকে বাঁচতে তারা আলাদা আলাদাভাবে অভিযোজিত হয়ে আলাদা আলাদা প্রজাতিতে ভাগ হয়ে গিয়েছিল) বলে ধারণা করা হয়। দুর্ভাগ্যের বিষয় ডাইনোসরদের খাদ্যের ব্যাপারে পছন্দ-অপছন্দের কোনো প্রত্যক্ষ প্রমাণ নেই, শুধুমাত্র চিবানোর ধরন এবং গ্যাস্ট্রোলিথ বা গিলে ফেলা খাবার থেঁতো করার জন্য পাকস্থলির ভিতরকার পাথরের নিদর্শন ছাড়া।

জীবভূগোল

প্যাঞ্জিয়া অতিমহাদেশ ভাঙতে শুরু করার আগে ডাইনোসরদের বৈচিত্র্য অপেক্ষাকৃত কম থাকলেও ক্রিটেশিয়াসের শেষভাগে প্যাঞ্জিয়া ভেঙে যাওয়ার পর তারা নানা ভাগে ভাগ হয়ে যায়। একটি সাধারণ প্রজাতির বাসস্থানের মাঝে ভৌগোলিক কোনো প্রতিবন্ধকতা তৈরি হলে সেই বাধার দু'পাশে প্রজাতিটির সদস্যদের ভিন্ন প্রকার অভিযোজন হয়ে ভিন্ন ভিন্ন প্রজাতির উদ্ভবের প্রক্রিয়াকেই জীবভূগোল বলে। ডাইনোসর বিবর্তনের ক্ষেত্রে জীবভূগোলের প্রয়োগ এখনও পর্যন্ত সীমিত আছে, কারণ উত্তর আমেরিকার পূর্বভাগ, মাদাগাস্কার, ভারত, অ্যান্টার্কটিকাঅস্ট্রেলিয়া থেকে যথেষ্ট জীবাশ্ম প্রমাণ সংগ্রহ করা হয়নি। ডাইনোসরের বিবর্তনে জীবভৌগোলিক প্রভাব সম্পর্কে দ্ব্যর্থহীন প্রমাণ এখনও পাওয়া যায়নি[19], কিন্তু কোনো কোনো গবেষক বিভিন্ন ডাইনোসর পরিবারের উৎপত্তিস্থল চিহ্নিত করেছেন, তাদের পরিযানের একাধিক রাস্তা এবং বিভিন্ন প্রজাতির ভৌগোলিক বিচ্ছিন্নতার সময়সীমা নির্ধারণ করেছেন।

জীবভৌগোলিক প্রক্রিয়ার উদাহরণস্বরূপ দক্ষিণ আমেরিকা এবং গন্ডোয়ানার অন্যত্র প্রাপ্ত অ্যাবেলিসরিডদের কথা বলা যায়।

ডাইনোসরদের নানা বিভাগের পারস্পরিক সম্পর্ক পর্যালোচনা করলে পৃথিবীর এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে তাদের স্থানান্তরের অনেক নিদর্শনের উপস্থিতি টের পাওয়া যায়। টেটানিউরান থেরোপডরা উত্তর আমেরিকা, এশিয়া, দক্ষিণ আমেরিকা, আফ্রিকা ও আন্টার্কটিকার বিশাল অঞ্চল জুড়ে বিচরণ করত। প্যাকেসেফালোসর এবং সেরাটোপসিয়ানরা বেরিঙ্গা অঞ্চলে বহুসংখ্যক দ্বিমুখী বিভাজনের প্রমাণ দেয়।

অবলুপ্তি

৬·৬ কোটি বছর আগে ক্রিটেশিয়াস যুগের শেষভাগে সংঘটিত ক্রিটেশিয়াস-প্যালিওজিন অবলুপ্তি ঘটনা অধিকাংশ ডাইনোসরের বিলুপ্তি ঘটায়। কেবল যে শাখাটি থেকে ইতোমধ্যেই প্রথম পাখিদের বিবর্তন হয়েছিল তারা আজ পর্যন্ত টিকে আছে।

আরও দেখুন

  • ডাইনোসরের শ্রেণীবিন্যাস
  • পাখিদের উৎপত্তি
  • ডাইনোসর

তথ্যসূত্র

  1. Weishampel, Dodson & Osmolska, 2004, The Dinosauria
  2. Glut, Donald F. (1997). Dinosaurs: The Encyclopedia. Jefferson, North Carolina: McFarland & Co. p. 40. আইএসবিএন ০-৮৯৯৫০-৯১৭-৭
  3. Rey LV, Holtz, Jr TR (2007). Dinosaurs: the most complete, up-to-date encyclopedia for dinosaur lovers of all ages. New York: Random House. আইএসবিএন ০-৩৭৫-৮২৪১৯-৭.
  4. Sereno, Paul C. and Arcucci, Andrea B. (1994). "Dinosaurian precursors from the Middle Triassic of Argentina: Marasuchus lilloensis gen. nov." Journal of Vertebrate Paleontology 14: 53-73 Chicago, IL Abstract
  5. Knoll, F.; Padian, K.; and de Ricqles, A. (2009). "Ontogenetic change and adult body size of the early ornithischian dinosaur Lesothosaurus diagnosticus: implications for basal ornithischian taxonomy". Gondwana Research. online 17 (1): 171. doi:10.1016/j.gr.2009.03.010.
  6. Dave Smith. "The Saurischan Dinosaurs". UCMP. Retrieved 31 July 2011.
  7. Yates, A.M. & Kitching, J. W. (2003). "The earliest known sauropod dinosaur and the first steps towards sauropod locomotion". Proc. R. Soc. Lond.: B Biol Sci. 2003 Aug 22; 270(1525): 1753–8
  8. "Hearts, neck posture and metabolic intensity of sauropod dinosaurs". Proc. Biol. Sci. 267 (1455): 1883–7. September 2000. doi:10.1098/rspb.2000.1225. PMC 1690760. PMID 11052540
  9. D'Emic, M. D. (2012). "The early evolution of titanosauriform sauropod dinosaurs". Zoological Journal of the Linnean Society 166 (3): 624–671. doi:10.1111/j.1096-3642.2012.00853.x.
  10. Senter, P. (2007). "A new look at the phylogeny of Coelurosauria (Dinosauria: Theropoda)." Journal of Systematic Palaeontology, (ডিওআই:10.1017/S1477201907002143)
  11. Xu Xing, X; Zhou Zhonghe & Prum, Richard A. (2003). "Branched integumental structures in Sinornithosaurus and the origin of feathers". Nature 410 (6825): 200–204. doi:10.1038/35065589. PMID 11242078.
  12. Rauhut, Oliver W.M. (2003). "A tyrannosauroid dinosaur from the Upper Jurassic of Portugal". Palaeontology 46 (5): 903–910. doi:10.1111/1475-4983.00325.
  13. Hicks, J.F.; Johnson, K.R.; Obradovich, J.D.; Tauxe, L.; Clark, D. (2002). "Magnetostratigraphy and geochronology of the Hell Creek and basal Fort Union Formations of southwestern North Dakota and a recalibration of the Cretaceous–Tertiary Boundary" (PDF). Geological Society of America Special Papers 361: 35–55. doi:10.1130/0-8137-2361-2.35.
  14. Kobayashi, Y. and Barsbold, R. (2005). "Anatomy of Harpymimus okladnikovi Barsbold and Perle 1984 (Dinosauria; Theropoda) of Mongolia." In Carpenter, K. (ed.) The Carnivorous Dinosaurs. Indiana University Press: 97-126
  15. Russell, D.A.; Dong, Z. (1993). "The affinities of a new theropod from the Alxa Desert, Inner Mongolia, People's Republic of China." In Currie, P.J. (ed.).". Results from the Sino-Canadian Dinosaur Project. Canadian Journal of Earth Sciences 30: 2107–2127.
  16. Witmer, L.M. (2005). "The debate on avian ancestry; phylogeny, function and fossils." Pp. 3-30 in Mesozoic Birds: Above the Heads of Dinosaurs. আইএসবিএন ০-৫২০-২০০৯৪-২
  17. He, T., Wang, X.-L., and Zhou, Z.-H. (2008). "A new genus and species of caudipterid dinosaur from the Lower Cretaceous Jiufotang Formation of western Liaoning, China." Vertebrata PalAsiatica, 46(3): 178-189.
  18. Zhou Z., 1995, "The discovery of Early Cretaceous birds in China", Acta Palaeornithologica 181: 9-22
  19. PC Sereno (1997) "The origin and evolution of dinosaurs" Annu. Rev. Earth Planet. Sci. 25:435-489
  20. Benton, Michael J. (2012). Prehistoric Life. Edinburgh, Scotland: Dorling Kindersley. p. 271. আইএসবিএন ৯৭৮-০-৭৫৬৬-৯৯১০-৯.
  21. Norman, David B. (2005). Dinosaurs: A Very Short Introduction. Oxford University Press. আইএসবিএন ৯৭৮-০১৯২৮০৪১৯৮.
  22. "Introduction," Sampson (2001); page 264
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.