ডলি জহুর
ডলি জহুর (জন্মঃ ১৯৫৩) বাংলাদেশের কিংবদন্তি অভিনেত্রী। তিনি মঞ্চ, টেলিভিশন এবং চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়ার সময়ে ১৯৭৪-৭৫ সালের দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে অভিনয় শুরু করেন। এরপর মঞ্চে অভিনয় শুরু করেন। পরবর্তীতে টেলিভিশন নাটকে এবং চলচ্চিত্রে অভিনয় শুরু করেন। তিনি ১৬০টির অধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন।[1] এছাড়া ২০২১ সালে তাঁকে আজীবন সম্মাননা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রদান করা হয়।
ডলি জহুর | |
---|---|
জন্ম | ১৯৫৩ |
জাতীয়তা | বাংলাদেশি |
শিক্ষা | সমাজবিজ্ঞান |
মাতৃশিক্ষায়তন | ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় |
পেশা | অভিনেত্রী |
কর্মজীবন | ১৯৭৫ - বর্তমান |
দাম্পত্য সঙ্গী | জহুরুল ইসলাম (১৯৭৬-২০০৬) |
সন্তান | রিয়াসাত (পুত্র) |
পুরস্কার | জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (২ বার) |
চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য তিনি দুইবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। তিনি শঙ্খনীল কারাগার (১৯৯২) চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী এবং ঘানি (২০০৬) চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রী বিভাগে পুরস্কার লাভ করেন।[2]
প্রারম্ভিক জীবন
ডলি জহুরের জন্ম ও বেড়ে ওঠা ঢাকার গ্রিন রোডে।[3] তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগে পড়াশুনা করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন তিনি মঞ্চ নাটকের সাথে যুক্ত হন।[4]
কর্মজীবন
ডলি জহুর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় ১৯৭৪-৭৫ সালে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের একটি নাটকে অভিনয় করেন।[3] এই নাটক থেকে ম. হামিদ বা নাট্যচক্রের একজনের মাধ্যমে নাট্যচক্রে যুক্ত হন এবং মঞ্চে অভিনয় শুরু করেন। নাট্যচক্র থেকে তার অভিনীত প্রথম নাটক লেট দেয়ার বি লাইট। সেখান থেকে তার বন্ধু (পরবর্তীতে স্বামী) জহুরুল ইসলামের সাথে যুক্ত হন কথক নাট্যগোষ্ঠীতে। কথক নাট্যগোষ্ঠী থেকে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত প্রাগৈতিহাসিক অবলম্বনে মঞ্চস্থ নাটকে অভিনয় করেন। নাটকটি কয়েকটি প্রদর্শনীর পর বন্ধ হয়ে যায়।[4] পরে মামুনুর রশীদের বাংলা থিয়েটারে মানুষ নাটকে অভিনয় করেন। এসময়ে মানুষ নাটকের নিয়মিত কাজের পাশাপাশি নাট্যচক্রের ১০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ম. হামিদ নির্দেশিত অনুস্বারের পালা নাটকে কাজ করেন। মানুষ নাটকের একটি শো করতে তিনি দেশের বাইরেও যান। সেখানে আরণ্যকের ইবলিশ নাটকেরও প্রদর্শনী চলছিল। এই নাটকের অভিনেত্রী নাজমার অনুপস্থিতিতে ডলি এই নাটকেও অভিনয় করেন। পরবর্তীতে দেশে আসার পর আরণ্যকের ময়ূর সিংহাসন নাটকে প্রিন্সেস বলাকার চরিত্রে কাজ করেন এবং আরণ্যকের সাথে যুক্ত হয়ে যান।[1]
তারপর তিনি টেলিভিশন নাটকে কাজ শুরু করেন। টেলিভিশনের জন্য কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ রচিত প্রথম নাটক এইসব দিনরাত্রি (১৯৮৫) এ অভিনয় করেন। নাটকটি পরিচালনা করেন মোস্তাফিজুর রহমান।[5] বিটিভিতে প্রচারিত এই নাটকে নিলু ভাবী চরিত্রের জন্য তিনি ব্যাপকভাবে পরিচিতি লাভ করেন।[2] পরে এক সাক্ষাৎকারে ডলি বলেন প্রথমে এই নাটকের স্ক্রিপ্ট পড়ে তিনি রেগে গিয়েছিলেন। পরবর্তীতে তিনি হুমায়ূন আহমেদের একক নাটক জননীতে নাম ভূমিকায় অভিনয় করেন। এই নাটকে তার মেয়ের ভূমিকায় অভিনয় করেন মেহের আফরোজ শাওন।[6]
ডলি জহুর অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র অসাধারণ।[7] তিনি হুমায়ূন আহমেদ রচিত শঙ্খনীল কারাগার উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত একই নামের চলচ্চিত্র (১৯৯২) এবং হুমায়ূন আহমেদ রচিত ও পরিচালিত আগুনের পরশমণি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন।[1] মোস্তাফিজুর রহমান পরিচালিত শঙ্খনীল কারাগার চলচ্চিত্রে রাবেয়া চরিত্রে অভিনয়ের জন্য তিনি প্রথমবারের মত শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন।
২০০৬ সালে তিনি কাজী মোরশেদ রচিত ও পরিচালিত ঘানি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। কলুদের জীবনের নির্মম গল্প নিয়ে নির্মিত ছবিতে রোকেয়া চরিত্রে অভিনয়ের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রীর জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন।[8] ২০১৫ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ৭৪তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে মাছরাঙ্গা টেলিভিশনে প্রচারিত শেষের রাত্রি টেলিভিশন চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। রবীন্দ্রনাথের একটি ছোটগল্প অবলম্বনে নাটকটি চিত্রনাট্য রচনা করেন এবং পরিচালনা করেন অঞ্জন আইচ।[9]
ব্যক্তিগত জীবন
ডলি জহুর ১৯৭৬ সালের ৫ নভেম্বর জহুরুল ইসলামের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। জহুরুল ইসলাম ছিলেন একজন অভিনেতা। বিয়ের নয় বছর পর তাদের একমাত্র পুত্র রিয়াসাত জন্মগ্রহণ করেন। ২০০৬ সালের ১০ নভেম্বর ডলির স্বামী জহুরুল মৃত্যুবরণ করেন।[10]
চলচ্চিত্রের তালিকা ও চরিত্র
- নতুন বউ (১৯৮৩)
- শঙ্খনীল কারাগার (১৯৯২) - রাবেয়া
- আগুনের পরশমণি (১৯৯৪) - সুরমা
- দেশপ্রেমিক (১৯৯৪)
- বিক্ষোভ (১৯৯৪) - সালমা
- আঞ্জুমান (১৯৯৫)
- নয়ন (১৯৯৫, টিভি চলচ্চিত্র) - জহুরা
- লাভ স্টোরি: প্রেমের গল্প (১৯৯৫) - জাহানারা
- স্বপ্নের ঠিকানা (১৯৯৫)
- চাওয়া থেকে পাওয়া (১৯৯৬)
- দীপু নাম্বার টু (১৯৯৬) - তারেকের মা
- প্রিয়জন (১৯৯৬) - মিসেস চৌধুরী
- বিচার হবে (১৯৯৬) - রাবেয়া
- শয়তান মানুষ (১৯৯৬)
- অন্ধ ভালবাসা (১৯৯৭)
- আনন্দ অশ্রু (১৯৯৭) - দোলার মা
- আমার মা (১৯৯৭) - মা
- কুলি (১৯৯৭) - রাজুর মা
- বাবা কেন চাকর (১৯৯৭)
- শুধু তুমি (১৯৯৭)
- স্বপ্নের নায়ক (১৯৯৭) - মিসেস সাদেক
- শান্ত কেন মাস্তান (১৯৯৮)
- অনন্ত ভালবাসা (১৯৯৯) - নাজমা
- গুন্ডা নাম্বার ওয়ান (২০০০)
- মিলন হবে কত দিনে (২০০১) - পাথরের মা
- মেঘলা আকাশ (২০০১) - মেঘলার মামী
- রংবাজ বাদশাহ (২০০১)
- শ্বশুরবাড়ী জিন্দাবাদ (২০০১) - রেহানা আক্তার
- ওদের ধর (২০০২)
- রং নাম্বার (২০০৪)
- ঘানি (২০০৬) - রোকেয়া
- নিরন্তর (২০০৬) - তিথির মা
- হৃদয়ের কথা (২০০৬) - অধরার মা
- দারুচিনি দ্বীপ (২০০৭) - রেহানা
- কি যাদু করিলা (২০০৮) - আকাশের মা
- শুভ বিবাহ (২০০৮) - পিউলি
- সন্তান আমার অহংকার (২০০৮)
- এবাদত (২০০৯) - ছমিরন
- চাঁদের মত বউ (২০০৯) - সাগরের মা
- মন বসে না পড়ার টেবিলে (২০০৯)
- মা বড় না বউ বড় (২০০৯)
- রাস্তার ছেলে (২০০৯)
- বস্তির ছেলে কোটিপতি (২০১০)
- আত্মগোপন (২০১২)
- কমন জেন্ডার-দ্য ফিল্ম (২০১২)
- জ্বী হুজুর (২০১২)
- একই বৃত্তে (২০১৩) - জমিদারের স্ত্রী
- দুই পৃথিবী (২০১৫)
- শেষের রাত্রি (২০১৫, টিভি চলচ্চিত্র)
- ধারাবাহিক নাটক
- এইসব দিনরাত্রি (১৯৮৫) - নীলু
- একদিন হঠাৎ (১৯৮৬) - সোমা
- শেষ পত্র
- চুপি চুপি
- বাঘা শের
- স্ক্যান্ডাল
- উত্তরাধিকার
- মাগো তোমার জন্য
- নোয়াশাল
- মামলাবাজ
- ধন্যি মেয়ে
- ক্ষণিকালয়
- গপ্পো
- দহন
- স্বপ্ন বুনন[11]
পুরস্কার
- বিজয়ী: শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী - শঙ্খনীল কারাগার (১৯৯২)[7]
- বিজয়ী: শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রী - ঘানি (২০০৬)
তথ্যসূত্র
- বন্দ্যোপাধ্যায়, নূপুর (১১ সেপ্টেম্বর ২০১৪)। "সবার প্রিয় মা..."। দৈনিক ইত্তেফাক। সংগ্রহের তারিখ ২৩ নভেম্বর ২০১৪।
- "আমি জন্মদিন উদ্যাপন করি না : ডলি জহুর"। দৈনিক মানবকণ্ঠ। ১৯ জুলাই ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ১৯ জুলাই ২০১৭।
- "Ever-renewing Old Glory" (ইংরেজি ভাষায়)। দ্য ডেইলি স্টার। ১ জুলাই ২০১১। সংগ্রহের তারিখ ১৯ জুলাই ২০১৭।
- মিলি, মৌসুমী (২ এপ্রিল ২০১৫)। "ডলি জহুর একাল আর সেকাল"। দৈনিক যুগান্তর। সংগ্রহের তারিখ ১৯ জুলাই ২০১৭।
- "Doly Zahur on acting career and more [অভিনয় জীবনে ডলি জহুর এবং আরও]" (ইংরেজি ভাষায়)। ঢাকা মিরর। ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ১৯ জুলাই ২০১৭।
- "'এইসব দিনরাত্রি'র স্ক্রিপ্ট পড়ে রেগে গিয়েছিলাম: ডলি জহুর"। রাইজিংবিডি ডট কম। ১৯ জুলাই ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ১৯ জুলাই ২০১৭।
- "আবার চলচ্চিত্রে নিয়মিত ডলি জহুর"। বাংলানিউজ২৪.কম। ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১১। সংগ্রহের তারিখ ২৩ নভেম্বর ২০১৪।
- "National Film Awards for the last fours years announced [গত চার বছরের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ঘোষণা]" (ইংরেজি ভাষায়)। দ্য ডেইলি স্টার। ১ সেপ্টেম্বর ২০০৮। সংগ্রহের তারিখ ১৯ জুলাই ২০১৭।
- "'Shesher Ratri' based on Tagore's short story to be aired tonight [রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছোটগল্প অবলম্বনে 'শেষের রাত্রি' আজ রাতে প্রচারিত হবে]" (ইংরেজি ভাষায়)। দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট। ৮ আগস্ট ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ১৯ জুলাই ২০১৭।
- "Dolly Johur with son, daughter-in-law in Australia on her birthday today [আজ জন্মদিনে ডলি জহুর তার পুত্র ও পুত্রবধূর সাথে অস্ট্রেলিয়ায়]" (ইংরেজি ভাষায়)। দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট। ১৭ জুলাই ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ১৯ জুলাই ২০১৭।
- "৮ ধারাবাহিকে ডলি জহুর"। যায়যায়দিন। ২৯ আগস্ট ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ১৯ জুলাই ২০১৭।