ডমরু

ডমরু (ইংরেজি: damaru) বা "ডুগডুগি" হলো একটি ছোট আকারের দ্বিমুখী ড্রাম। এই বাদ্যযন্ত্র সাধারনত হিন্দু ধর্ম এবং "তিব্বতীয় বৌদ্ধ ধর্ম"-এ ব্যবহৃত হয়।[1] ডমরুর উৎপত্তি প্রাক-বৈদিক কালে হওয়া বলে জানা যায়। কথিত আছে, এই বাদ্যযন্ত্র মহাদেবের বাদ্য ছিল। ডমরু সর্বপ্রথম তাল-বাদ্য বলেও অনেকে বিশ্বাস করেন।

একটা তিব্বতীয় ডমরু
ডমরু
ডমরু
তথ্যসমূহ
অন্য নামডুগডুগি

এটি একজাতীয় বাঙালি লোকবাদ্যযন্ত্রও বটে।[2] আমাদের দেশীয় সংস্কৃতিতে এটি বর্তমানে তার স্বকীয়তা ও ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতা হারিয়ে ফেলেছে।[3][4]

ইতিহাস

বাংলাদেশে লোকবাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার বহু প্রাচীন। খিস্টীয় পঞ্চম শতকে বিখ্যাত চৈনিক পর্যটক ফা-হিয়েন প্রাচীন বাদ্যযন্ত্র দেখে এ দেশকে সঙ্গীত ও নৃত্যের দেশ বলে আখ্যায়িত করেন। খ্রিস্টীয় অষ্টম শতকে নির্মিত পাহাড়পুর-ময়নামতীর প্রস্তরফলক ও পোড়ামাটির চিত্রে নৃত্য ও বাদ্যরত মনুষ্যমূর্তি পাওয়া গেছে। এতে কাঁসর, করতাল, ঢাক, বীণা, মৃদঙ্গ, বাঁশি, মৃৎভান্ড প্রভৃতি বাদ্যযন্ত্রের চিত্র দেখা যায়। ঢাক, ডম্ফ, ডমরু প্রভৃতি আনদ্ধ এবং শিঙ্গা, বাঁশি, তুবড়ি প্রতৃতি শুষির যন্ত্রকে দ্রাবিড় জনগোষ্ঠীর অবদান বলে মনে করা হয়। নবম-একাদশ শতকে রচিত বাংলা সাহিত্যের আদি নিদর্শন চর্যাপদে গীত-নট-নৃত্য-বাদ্যের বর্ণনা পাওয়া যায়। চর্যার তিনটি পদে মোট সাতটি বাদ্যযন্ত্রের নাম আছে বীণা, পটহ, মাদল, করন্ড, কসালা, দুন্দুভি ও ডম্বরু। এগুলির মধ্যে পটহ, মাদল, করন্ড, কসালা ও দুন্দুভি বিবাহোৎসবে বাজানো হতো। এতে বীণা সম্বন্ধে বলা হয়েছে যে, শুকনো লাউয়ের খোলের সঙ্গে তাঁতের (সুতার) তার দিয়ে তৈরি এ যন্ত্র ‘সারি’ বা ছড় দিয়ে বাজানো হয়। [2]

বিবরণ

ডমরুর অবয়ব কাঠের মাধ্যমে নির্মিত। মুখ দুটি বৃত্তাকার এবং চামড়ায় ঢাকা। মুখ দুটির থেকে বাদ্যখনর মাঝের অংশের ব্যাস কম; মাকুর মত। ডমরুর মাঝে, দুধারে দুটি টোপোলা আকৃতির গাঁঠি থাকা দুগাছি সুতো বাঁধা থাকে। ডমরুর গায়ের মধ্যে হাত ধরে ডমরুটি ঘোরালে সেই টোপোলা দুটি ছাল দুটির যথাস্থানে আঘাত করে শব্দ ধ্বনির সৃষ্টি করে।

ব্যবহার

ডুগডুগি সাধারণত শিবের গাজন, সাপখেলা, বানরনাচ ও ভল্লুকের খেলায় ব্যবহূত হয়। এর বড় সংস্করণের নাম বিষম ঢাকি।[2] দুটির মধ্যে পার্থক্য হলো, ডুগডুগির মতো এতে গুলতিযুক্ত সুতা বাঁধা থাকে না এবং খাড়াখাড়িভাবে রেখে হাতের তালু ও তর্জনী দিয়ে এটি বাজাতে হয়। পশ্চিমবঙ্গে মনসার ভাসান বা ঝাঁপান গানে বিষম ঢাকি বাজানোর রীতি আছে।[2] বাংলার ঐতিহ্যবাহী এই ডুগডুগি যন্ত্রটি এখন অনেকটাই বিলুপ্তপ্রায়। আগে গ্রাম-বাংলায় এর দেখা মিলত হরহামেশাই। কটকটিওয়ালা, আইসক্রিমওয়ালা, চুরিওয়ালাসহ গ্রাম-বাংলার ভ্রাম্যমাণ দোকানিরা এই ডুগডুগি বাজিয়ে নিজেদের আগমন জানান দিতেন। গ্রামের শিশু, বউ-ঝিরা টাকা, কেউ চাল, কেউবা ভাঙাচুড়া লোহালক্কড় দিয়ে তাদের কাছ থেকে পণ্য কিনতেন। সময়ের বিবর্তনে গ্রাম-বাংলার সেই ডুগডুগির আর দেখা মেলে না।[4] পুরাকালে ধর্মানুষ্ঠানেও এই বাদ্যের ব্যবহার হত। আজকাল কোনো কোনো ধর্মানুষ্ঠানে এই বাদ্য ব্যবহার করা ছাড়াও বিশেষত ভালুক নাচ, বাঁদর নাচ এবং সাপ নাচাতে ডমরু বাজাতে দেখা যায়। বাজীকর মন্ত্রের বাদ্য রূপেও এই বাজনাটি ব্যবহার করে।

তথ্যসূত্র

  1. Damru Devshoppe.com
  2. "বাদ্যযন্ত্র - বাংলাপিডিয়া"bn.banglapedia.org। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০১-২৯
  3. dailyjagaran.com। "ঐতিহ্য সংকটে গাইবান্ধার তবলা-ডুগডুগি"dailyjagaran.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০১-২৯
  4. "বৈশাখে ডুগডুগির বেঁচে থাকা"https://wwww.jagonews24.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০১-২৯ |ওয়েবসাইট= এ বহিঃসংযোগ দেয়া (সাহায্য)

আরও দেখুন

  • তিন তাল (তবলা)

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.