ডগলাস জারদিন

ডগলাস রবার্ট জারদিন (ইংরেজি: Douglas Jardine; জন্ম: ২৩ অক্টোবর, ১৯০০ - মৃত্যু: ১৮ জুন, ১৯৫৮) ব্রিটিশ ভারতের বোম্বে প্রেসিডেন্সির মালাবর হিলে জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ইংরেজ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার ছিলেন। ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য হিসেবে তিনি মূলতঃ শীর্ষসারির ব্যাটসম্যান হিসেবে মাঠে নামতেন।

ডগলাস জারদিন
১৯৩২ সালের সিগারেট চিত্রে ডগলাস জারদিন
ব্যক্তিগত তথ্য
পূর্ণ নামডগলাস রবার্ট জারদিন
জন্ম(১৯০০-১০-২৩)২৩ অক্টোবর ১৯০০
মালাবর হিল, বোম্বে, বোম্বে প্রেসিডেন্সি, ব্রিটিশ ভারত
মৃত্যু১৮ জুন ১৯৫৮(1958-06-18) (বয়স ৫৭)
মন্ট্রিক্স, ভদ, সুইজারল্যান্ড
ব্যাটিংয়ের ধরনডানহাতি
বোলিংয়ের ধরনডানহাতি লেগ ব্রেক
ভূমিকাশীর্ষসারির ব্যাটসম্যান, অধিনায়ক
আন্তর্জাতিক তথ্য
জাতীয় দল
টেস্ট অভিষেক
(ক্যাপ ২৩৫)
২৩ জুন ১৯২৮ বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ
শেষ টেস্ট১০ ফেব্রুয়ারি ১৯৩৪ বনাম ভারত
ঘরোয়া দলের তথ্য
বছরদল
১৯২০-১৯২৩অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়
১৯২১-১৯৩৩সারে
১৯২৫-১৯৩৩/৩৪এমসিসি
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান
প্রতিযোগিতা টেস্ট এফসি
ম্যাচ সংখ্যা ২২ ২৬২
রানের সংখ্যা ১২৯৬ ১৪,৮৪৮
ব্যাটিং গড় ৪৮.০০ ৪৬.৮৩
১০০/৫০ ১/১০ ৩৫/৭২
সর্বোচ্চ রান ১২৭ ২১৪
বল করেছে ২৫৮২
উইকেট ৪৮
বোলিং গড় - ৩১.১০
ইনিংসে ৫ উইকেট
ম্যাচে ১০ উইকেট
সেরা বোলিং ০/১০ ৬/২৮
ক্যাচ/স্ট্যাম্পিং ২৬/০ ১৮৮/০
উৎস: ইএসপিএনক্রিকইনফো.কম, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৫

ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, সারে ও মেরিলেবোন ক্রিকেট ক্লাবের প্রতিনিধিত্ব করেন। ডানহাতে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে লেগ ব্রেক বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন তিনি। ১৯৩১ থেকে ১৯৩৪ সালের মধ্যে ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের অধিনায়ক ছিলেন তিনি। ১৯৩২-৩৩ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়া সফরে দল পরিচালনা করে অধিক পরিচিত হয়ে আছেন ডগলাস জারদিন। এছাড়াও, ক্রিকেটের বাইরে থেকে বহুরঙের ‘হার্লিকুইন টুপি’ পরিধান করেও তিনি পরিচিত ছিলেন।

প্রারম্ভিক জীবন

বিদ্যালয় জীবনেই অত্যন্ত প্রতিশ্রুতিশীল ব্যাটসম্যান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন নিজেকে। উইনচেস্টার কলেজের পক্ষে ক্রিকেট খেলেন। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত অবস্থায় দলে সংশ্লিষ্ট হন ও শৌখিন ক্রিকেটার হিসেবে সারে কাউন্টি ক্রিকেট ক্লাবে অংশগ্রহণ করেন। ব্যাটিংয়ের রক্ষণাত্মক কৌশল অবলম্বন করেন যা শৌখিন ক্রীড়াবিদদের বিপরীতে ছিল। এরফলে তাকে মাঝে-মধ্যেই সমালোচনার মুখোমুখি হতে হয়।

খেলোয়াড়ী জীবন

১৯২৮ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো টেস্ট খেলার জন্য তাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। সফরকারী দলে বেশকিছুসংখ্যক উদীয়মান বোলার ছিল ও সফরে সফলতা পেয়েছিল। কিন্তু জারদিন আত্মবিশ্বাসের সাথে টেস্ট সিরিজ খেলেন। প্রথম দুই টেস্টে ইংল্যান্ড ইনিংস ব্যবধানে জয় পেলেও তৃতীয় টেস্টে অজানা কারণে তাকে রাখা হয়নি। অভিষেক টেস্টে ২২ রান তোলেন।[1] কিন্তু দ্বিতীয় টেস্টে কার্যকর ৮৩ রান সংগ্রহ করেন।[1] ২৬ রানের সময় রান নেয়ার উদ্দেশ্যে উইকেটে আঘাত করলেও তিনি অপরাজিত থাকেন।[2] ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান লিয়ারি কনস্ট্যান্টাইনের বলে এ ঘটনার পূর্বেই ব্যাটসম্যান আম্পায়ারকে জানালে তিনি এ সুবিধা পান।[3] পরবর্তীতে অবশ্য মরিস টেটের কারণে রান আউটে প্যাভিলিয়নে ফেরত যান। ঐ সময়ে টেটের সাথে তার সুসম্পর্ক ছিল না।[4][5]

অস্ট্রেলিয়া গমন, ১৯২৮-২৯

১৯২৮-২৯ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়া সফরে টেস্ট সিরিজে কিছুটা সফলতা পান। এ সফরের পর ব্যবসায়িক দায়বদ্ধতার কারণে ক্রিকেটে নিয়মিত অংশ নিতে পারেননি। ১৯৩১ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে তাকে অধিনায়ক মনোনীত করা হয়।[6][7] একই সালে ১৯৩২-৩৩ মৌসুমে অনুষ্ঠিতব্য সিরিজের কথা মনে রেখে দল নির্বাচকমণ্ডলী জারদিনকে ইংল্যান্ডের অধিনায়ক মনোনীত করেন।[8] কিছুটা প্রতিবন্ধকতা থাকা স্বত্ত্বেও পরবর্তী তিন মৌসুমে ও দুটি বিদেশ সফরে দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তন্মধ্যে ১৯৩২-৩৩ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়া সফর অন্যতম ছিল।

১৯৩৩ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল ইংল্যান্ড গমন করে। সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে ম্যানি মার্টিনডেল ও লিয়ারি কনস্ট্যান্টাইনের পেস আক্রমণ সামাল দিতে ইংল্যান্ড দল ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় ইংরেজ অধিনায়ক ডগলাস জারদিন দীর্ঘ পাঁচ ঘণ্টা ক্রিজে অবস্থান করতে সক্ষম হন। এ সময় তিনি নিজের একমাত্র সেঞ্চুরিটি তুলে নেন। অনেক ক্রিকেট সমালোচক জারদিনের ব্যাটিংয়ের প্রশংসা করে ও খেলায় সাহসীকতা তুলে ধরায় খুশী হয়।[9][10] ১৫ টেস্টে দলকে নেতৃত্ব দিয়ে নয়টিতে জয় ও একটিতে পরাজয়বরণ করে তার দল। বাদ-বাকী পাঁচ টেস্ট ড্রয়ে পরিণত হয়।

১৯৩৩-৩৪ মৌসুমে ভারত সফরে বডিলাইন সিরিজের সদস্য হিসেবে শুধুমাত্র ভেরিটি তার সাথে যান। পূর্ণশক্তির দল না হওয়া স্বত্ত্বেও ইংল্যান্ড ২-০ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে।[11] ১৯৩৪ সালে ভারত সফরের পর প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট থেকে অবসর নেন তিনি।

খেলার ধরন

ডগলাস জারদিন

১৯৩২-৩৩ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়া সফরে অনুষ্ঠিত টেস্ট সিরিজে ইংল্যান্ড দলকে বডিলাইন কৌশল অবলম্বন করে অস্ট্রেলীয় ব্যাটসম্যানদেরকে কোনঠাসা অবস্থায় রেখেছিল তার দল। ইংরেজ বোলাররা লেগ স্ট্যাম্প বরাবর শর্ট বল ফেলেছিল যাতে ব্যাটসম্যানগণ ভীতসন্ত্রস্ত ও শারীরিকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। তাকে বডিলাইন ধারণার কৌশল বাস্তবায়নের জন্য সাধারণভাবে মনে করা হয়। এরফলে তিনি বিতর্কিত ব্যক্তিত্বে পরিণত হন। অস্ট্রেলীয় খেলোয়াড়সহ দর্শকদেরকে পছন্দ না করার জন্যও তিনি পরিচিতি পেয়েছেন।[12] ফলশ্রুতিতে বডিলাইন সফরের পর অস্ট্রেলিয়ায় তিনি নিন্দনীয় পর্যায়ে চলে যান। তবে, তার নেতৃত্বে খেলোয়াড়গণ তাকে খুবই ভালো নেতৃত্বের অধিকারী হিসেবে গুণগান করেছিলেন। কিন্তু জনতাকে পরিচালনার গুণাবলী ছিল না তার।

ব্যক্তিগত জীবন

আইন পেশায় অংশগ্রহণের জন্য যোগ্যতা লাভ করলেও তিনি ওকালতিতে তেমন অংশগ্রহণ করেননি। তার পরিবর্তে ব্যাংকিং খাতেই কাজ করেছেন বেশি। এরপর সাংবাদিকতার দিকে ঝুঁকে পড়েন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে টেরিটোরিয়াল আর্মিতে যোগ দেন। ডানকির্কের যুদ্ধে সৌভাগ্যবশতঃ বেঁচে যান; কিন্তু আঘাতপ্রাপ্ত হন।[13] এরপর মেজর হিসেবে ভারতে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। ১৯৪৫ সালে সেনাবাহিনীর চাকরি ত্যাগ করে স্বল্পকালের জন্য কয়লা খনি প্রতিষ্ঠানে চলে যান।[14] যুদ্ধশেষে কাগজ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের সচিব মনোনীত হন। কিন্তু পুনরায় সাংবাদিকতার দিকে চলে যান। ১৯৫৭ সালে ব্যবসায়িক সফরে চলাকালীন তিনি অসুস্থ হন। এরপর ১৯৫৮ সালে ৫৭ বছর বয়সে ফুসফুসের ক্যান্সারে তার দেহাবসান ঘটে।

সম্মাননা

১৯২৮ সালে রজার ব্লান্ট, চার্লস হ্যালোজ, ওয়ালি হ্যামন্ডভ্যালেন্স জাপের সাথে তিনিও উইজডেন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক বর্ষসেরা ক্রিকেটার হিসেবে বিবেচিত হন।[15]

তথ্যসূত্র

  1. "HowSTAT! Player Progressive Batting"। HowSTAT। সংগ্রহের তারিখ ২ ফেব্রুয়ারি ২০১০
  2. Brodribb, Gerald (১৯৯৫)। Next Man In. A Survey of Cricket Laws and Customs। London: Souvenir Press। পৃষ্ঠা 237আইএসবিএন 0-285-63294-9।
  3. Frith, p. 31.
  4. Douglas, p. 62.
  5. "England v West Indies 1928"Wisden Cricketers' Almanack। John Wisden & Co। ১৯২৯। সংগ্রহের তারিখ ২ ফেব্রুয়ারি ২০১০
  6. Douglas, p. 87.
  7. Caine, Stewart (১৯৩১)। "Notes by the Editor"Wisden Cricketers' Almanack। John Wisden & Co। সংগ্রহের তারিখ ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১০
  8. Le Quesne, p. 161
  9. Howat, p. 102.
  10. Frith, pp. 356–58.
  11. "M.C.C. team in India, 1933–34"Wisden Cricketers' Almanack। John Wisden & Co। ১৯৩৫। সংগ্রহের তারিখ ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১০
  12. Arlott, John (১৯৮৯)। "The Iron Duke"Wisden Cricket Monthly। John Wisden & Co। সংগ্রহের তারিখ ১৩ মার্চ ২০১০
  13. Douglas, p. 201.
  14. Douglas, pp. 202–03.
  15. "Douglas Jardine – Cricketer of the Year 1928"Wisden Cricketers' Almanack। John Wisden & Co। ১৯২৮। সংগ্রহের তারিখ ১ ফেব্রুয়ারি ২০১০

আরও দেখুন

গ্রন্থপঞ্জী

  • Bowes, Bill (১৯৪৯)। Express Deliveries। London: Stanley Paul।
  • Douglas, Christopher (২০০২)। Douglas Jardine: Spartan Cricketer। London: Methuen। আইএসবিএন 0-413-77216-0।
  • Fingleton, Jack (১৯৪৭)। Cricket Crisis। London, Melbourne: Cassell।
  • Frith, David (২০০২)। Bodyline Autopsy. The full story of the most sensational Test cricket series: Australia v England 1932–33। London: Aurum Press। আইএসবিএন 1-85410-896-4।
  • Gibson, Alan (১৯৭৯)। The Cricket Captains of England। London: Cassell। আইএসবিএন 0-304-29779-8।
  • Hamilton, Duncan (২০০৯)। Harold Larwood। London: Quercus। আইএসবিএন 978-1-84916-207-4।
  • Hill, Alan (২০০০)। Hedley Verity. Portrait of a Cricketer। Edinburgh and London: Mainstream Publishing। আইএসবিএন 1-84018-302-0।
  • Howat, Gerald M. D. (সেপ্টেম্বর ২০০৪)। "Jardine, Douglas Robert (1900–1958)"Oxford Dictionary of National Biography। Oxford University Press। সংগ্রহের তারিখ ৯ জুন ২০১০
  • Le Quesne, A. L. (১৯৮৩)। The bodyline controversy। London: Secker and Warburg। আইএসবিএন 0-436-24410-1।
  • Peebles, Ian (১৯৭৮)। Spinner's Yarn। Newton Abbot: Readers Union Ltd।
  • Robertson-Glasgow, R. C. (১৯৪৩)। Cricket Prints. Some Batsmen and Bowlers 1920–1940। London: T. Werner Laurie Ltd।
  • Warner, Pelham (১৯৫১)। Long innings: the autobiography of Sir Pelham Warner। London: Harrap।

বহিঃসংযোগ

ক্রীড়া অবস্থান
পূর্বসূরী
পার্সি চ্যাপম্যান
ইংরেজ ক্রিকেট অধিনায়ক
১৯৩১-১৯৩৩/৩৪
উত্তরসূরী
বব ওয়াট
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.