ট্রেবল (ফুটবল)
ট্রেবল (ইংরেজি: Treble) শব্দটি ফুটবলে ব্যবহৃত হয় একটি দলের একই মৌসুমে তিনটি শিরোপা জয়কে বুঝাতে। ঘরোয়া লীগের সর্বোচ্চ আসর, ঘরোয়া কাপ এবং মহাদেশীয় কাপ জয়কে ট্রেবল বলা হয়। অবশ্য কখনও কখনও এটি একটি দেশের ফুটবল প্রতিযোগিতাগুলোর গঠনের উপর নির্ভর করে। তবে যেসব প্রতিযোগিতা শুধুমাত্র একটি ম্যাচ বা একটি দুই লেগের ম্যাচ নিয়ে গঠিত (যেমন: এফএ কমিউনিটি শিল্ড, স্পেনীয় সুপার কাপ, রিকোপা সুদামেরিকানা, উয়েফা সুপার কাপ) সেসব প্রতিযোগিতাকে ট্রেবলের অংশ হিসেবে গন্য করা হয় না। ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপকেও ট্রেবলের অংশ হিসেবে ধরা হয় না।
আবার একটি মহাদেশীয় ট্রেবল বলতে বুঝায় কমপক্ষে একটি মহাদেশীয় শিরোপা জয় এবং একটি ঘরোয়া ট্রেবল জয় - সাধারণত ঘরোয়া লীগ এবং দুইটি অন্যান্য ঘরোয়া প্রতিযোগিতা।[1][2]
মহাদেশীয় ট্রেবল
একটি ক্লাবের এক মৌসুমে নিজ দেশের সর্বোচ্চ লীগ জয় এবং দ্বিতীয় কোনো প্রধান ঘরোয়া শিরোপা জয়কে বলা হয় দ্য ডাবল। এর সাথে একই মৌসুমে ঐ ক্লাবের মহাদেশীয় শিরোপা জয়কে ট্রেবল বলা হয়। ট্রেবল শিরোপা প্রথম জিতে ব্রাজিলীয় ক্লাব স্যান্তোস, ১৯৬২ সালে। ঐ বছর তারা জিতে ক্যাম্পিওনাতো পাউলিস্তা (প্রাদেশিক লীগ), তাকা ব্রাজিল (জাতীয় লীগ) এবং কোপা লিবের্তাদোরেস (মহাদেশীয় প্রতিযোগিতা)। স্যান্তোসই একমাত্র দক্ষিণ আমেরিকান ক্লাব যারা ট্রেবল জিতেছে।
এরপর থেকে ৭টি ইউরোপীয় ক্লাব, ৬টি আফ্রিকান ক্লাব, ২টি ওসেনীয় ক্লাব, ১টি এশিয়ান ক্লাব এবং ২টি উত্তর আমেরিকান ক্লাব ট্রেবল জিতেছে। মরোক্কোর ক্লাব রাজা কাসাব্লাংকার ১৯৯৯ মৌসুমকে মহাদেশীয় ট্রেবলও বলা হয়। ঐ মৌসুমে তারা সিএএফ চ্যাম্পিয়নস লীগ, সিএএফ সুপার কাপ এবং আফ্রো-এশিয়ান ক্লাব চ্যাম্পিয়নশিপ জিতে।[3] মিশরীয় ক্লাব আল-আহলি একমাত্র ক্লাব যারা এই ধরনের ট্রেবল একাধিকবার জিতেছে। তারা ২০০৫ এবং ২০০৬ মৌসুমে টানা দুইবার ট্রেবল জিতে।
ইউরোপীয় দলগুলোর মধ্যে এএফসি আয়াক্স ট্রেবল জয়ের সবচেয়ে নিকটবর্তী হয়েছিল ১৯৭৩ সালে। ঐ বছর তারা ডাচ এরেডিভিজি এবং ইউরোপীয়ান কাপ জিতে, কিন্তু কেএনভিবি কাপে তারা ব্যর্থ হয়। ২০০৯ সালে উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লীগের ফাইনালে জয় লাভের মাধ্যমে স্পেনীয় ক্লাব বার্সেলোনা পঞ্চম ইউরোপীয় ক্লাব হিসেবে ট্রেবল জিতে। তারা সেবছর লা লিগা, কোপা দেল রে এবং উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লীগ জিতেছিল। ২০১০ সালে ইতালীয় ক্লাব ইন্টারন্যাজিওনালে হোসে মরিনহোর অধীনে ট্রেবল জিতে।[4]
২০১৩ সালে, জার্মান ক্লাব বায়ার্ন মিউনিখ সপ্তম ইউরোপীয় ক্লাব হিসেবে ট্রেবল জিতে।
ক্লাব | দেশ | কনফেডারেশন | সাল | অর্জিত শিরোপা |
---|---|---|---|---|
স্যান্তোস | ব্রাজিল | কনমেবল | ১৯৬২[a] | ক্যাম্পিওনাতো পাউলিস্তা, তাকা ব্রাজিল, কোপা লিবের্তাদোরেস |
সেলটিক | স্কটল্যান্ড | উয়েফা | ১৯৬৬–৬৭[b] | স্কটিশ ফুটবল লীগ, স্কটিশ কপা, ইউরোপীয়ান কাপ |
আয়াক্স | নেদারল্যান্ডস | ১৯৭১–৭২ | এরেদিভিজি, কেএনভিবি কাপ, ইউরোপীয়ান কাপ | |
পিএসভি | নেদারল্যান্ডস | ১৯৮৭–৮৮ | এরেদিভিজি, কেএনভিবি কাপ, ইউরোপীয়ান কাপ | |
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড | ইংল্যান্ড | ১৯৯৮–৯৯ | প্রিমিয়ার লীগ, এফএ কাপ, উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লীগ | |
বার্সেলোনা | স্পেন | ২০০৮–০৯ | লা লিগা, কোপা দেল রে, উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লীগ | |
ইন্টারন্যাজিওন্যালে | ইতালি | ২০০৯–১০ | সিরি এ, কোপা ইতালিয়া, উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লীগ | |
বায়ার্ন মিউনিখ | জার্মানি | ২০১২–১৩[c] | বুন্দেসলীগ, ডিএফবি পোকাল, উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লীগ | |
ক্রুজ আজুল | মেক্সিকো | কনকাকাফ | ১৯৬৯ | প্রিমেরা দিভিশন দি মেক্সিকো, কোপা মেক্সিকো, কনকাকাফ চ্যাম্পিয়নস কাপ |
ডিফেন্স ফোর্স | ত্রিনিদাদ ও টোবাগো | ১৯৮৫ | টিটি প্রো লীগ, ত্রিনিদাদ ও টোবাগো কাপ, কনকাকাফ চ্যাম্পিয়নস কাপ | |
এঙ্গেলবার্ট | গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্র | সিএএফ | ১৯৬৭ | লিনাফুট, কোপ দু কঙ্গো, আফ্রিকান কাপ অফ চ্যাম্পিয়নস |
ভিটা ক্লাব | জাইর | ১৯৭৩ | লিনাফুট, কোপা দু কঙ্গো, আফ্রিকান কাপ অফ চ্যাম্পিয়নস | |
এমসি আলজিয়েরস | আলজেরিয়া | ১৯৭৬ | আলজেরিয়ান চ্যাম্পিয়োনাত ন্যাশনাল, আলজেরিয়ান কাপ, আফ্রিকান কাপ অফ চ্যাম্পিয়নস | |
হার্টস অফ ওক | ঘানা | ২০০০ | ঘানা প্রিমিয়ার লীগ, ঘানাইয়ান এফএ কাপ, সিএএফ চ্যাম্পিয়নস লীগ | |
আল-আহলি | মিশর | ২০০৬ | মিশরীয় লীগ, মিশরীয় সকার কাপ, সিএএফ চ্যাম্পিয়নস লীগ | |
এস্পের্যান্স | তিউনিসিয়া | ২০১১ | তিউনিশিয়ান লীগ, তিউনিশিয়ান প্রেসিডেন্ট কাপ, সিএএফ চ্যাম্পিয়নস লীগ | |
অকল্যান্ড সিটি | নিউজিল্যান্ড | ওএফসি | ২০০৬ | এনজেডএফসি চ্যাম্পিয়নশিপ, এনজেডএফসি প্রিমিয়ারশিপ, ওএফসি চ্যাম্পিয়নস লীগ |
ওয়েটেকেরে ইউনাইটেড | নিউজিল্যান্ড | ২০০৮ | এনজেডএফসি চ্যাম্পিয়নশিপ, এনজেডএফসি প্রিমিয়ারশিপ, ওএফসি চ্যাম্পিয়নস লীগ |
ঘরোয়া ট্রেবল
ঘরোয়া ট্রেবল বলতে বুঝায় একটি দলের এক মৌসুমে নিজ দেশের সর্বোচ্চ লীগ জয় এবং অন্য দুইটি প্রধান ঘরোয়া শিরোপা জয়। অনেক দেশেই দ্বিতীয় কোন ঘরোয়া (লীগ কাপ) প্রতিযোগিতা নেই, ফলে সেসব দেশে ঘরোয়া ট্রেবল অর্জন করা অসম্ভব। ব্রাজিলে “ট্রিপল ক্রাউন” নামে একটি অদাপ্তরিক পরিভাষা চালু আছে। যে দল এক মৌসুমে জাতীয় লীগ, জাতীয় কাপ এবং প্রাদেশিক লীগ জিতে তাদেরকে এই নাম দেওয়া হয়। ইংল্যান্ডে ঘরোয়া ট্রেবল সম্ভব হলেও, আজ পর্যন্ত তা কেউ জিততে পারেনি।
তথ্যসূত্র
- Spiers, Graham (১ জানুয়ারি ২০০৮)। "Walter Smith demands final push as Rangers target domestic treble"। দ্য টাইমস। সংগ্রহের তারিখ ১৭ জুন ২০১৩।
- Ralston, Gary (২৬ সেপ্টেম্বর ২০০৮)। "Domestic treble for Rangers will make up for failure in Europe, says Pedro Mendes"। ডেইলি রেকর্ড। সংগ্রহের তারিখ ১৭ জুন ২০১৩।
- "FIFA.com - Raja aiming high once more"। ফিফা। ২৫ সেপ্টেম্বর ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ জুন ২০১৩।
- "Inter join exclusive treble club"। উয়েফা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ জুন ২০১৩।
বহিঃসংযোগ
- ঘরোয়া ট্রেবলের তালিকা - RSSSF