ট্রাক
ট্রাক অথবা লরি যান্ত্রিক মোটর যান যা কার্গো পরিবহনের জন্য বিশেষভাবে তৈরি। ট্রাকের সাইজ বা আকার তার ইঞ্জিনের ক্ষমতা এবং কনফিগারেশন এবং যে প্রয়োজনে ব্যবহার হবে তার উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। যেমন আবর্জনা ফেলার ট্রাক, কংক্রিট মিক্সারের ট্রাক, অগ্নি নির্বাপনের ট্রাক ইত্যাদি ট্রাকের ডিজাইন বা কনফিগারেশন এমন ভাবে তৈরি যা সাধারণ ট্রাক গুলোর মত নয়। স্পষ্ট ভাবে বললে ট্রাক্টর ব্যতীত অন্যান্য ট্রাককে ট্রাক বলা যায়, যখন নির্দিষ্টভাবে শুধু ট্রেইলার টানার জন্য ট্রাকের ডিজাইন করা হয় তখন সেটি কোন ট্রাক নয় সেটা ট্রাক্টর। আধুনিক ট্রাকগুলি মূলত ডিজেল ইঞ্জিন দ্বারা চালিত, যদিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা এবং মেক্সিকোতে গ্যাসোলিন ইঞ্জিন দ্বারা চালিত ছোট এবং মাঝারি আকারের ট্রাক দেখা যায়।
ইতিহাস
'বাষ্পীয় মাল গাড়ি
ট্রাক এবং কারের একই ধরনের পূর্ব ইতিহাস আছে। ১৭৬৯ সালে নিকোলাস জোসেফ কুনগট বাষ্প চালিত ইঞ্জিন তৈরি করেন। যদিও, ১৮৫০ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত বাষ্পীয় ওয়াগন গুলি তেমন একটা ব্যবহার হয় নি। কারণ সেই সময়কার রাস্তাগুলো ঘোড়া অথবা ঘোড়ার গাড়ির চলাচলের জন্য উপযুক্ত ছিল। ঘোড়া টানিত ওয়াগন বা ক্যারিজ গুলোর জন্য তৈরি রাস্তাগুলো ফ্যাক্টরি থেকে নিকটতম রেল স্টেশন পর্যন্ত সীমাবদ্ধ ছিল। ১৮৮১ সালে সর্বপ্রথম সেমি ট্রেইলর দেখা যায়, De Dion-Bouton নির্মিত বাষ্পীয় ট্রাক্টর দ্বারা ট্রেইলরগুলো টানা হত। বাষ্প চালিত ওয়াগন গুলি যুক্তরাষ্ট্র এবং ফ্রান্সে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রাক্কাল পর্যন্ত বিক্রি হয়। কিন্তু ১৯৩৫ সালে যুক্তরাজ্যের নতুন প্রবর্তিত রাস্তার ট্যাক্স আইন ডিজেল চালিত লরি এবং বাষ্পীয় লরির সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ হয়ে উঠে।
অন্তর্দহন ইঞ্জিন
১৮৯৫ সালে কার্ল বেঞ্জ সর্বপ্রথম অন্তর্দহ ইঞ্জিন ব্যবহার করে ট্রাক তৈরি করেন। কিছু দিন পর একই বছরে বেঞ্জের কিছু ট্রাককে বাসে মডিফাই করে Netphener কোম্পানি। যারা ইতিহাসের সর্বপ্রথম মটর বাস কম্পানি হিসাবে ইতিহাসে নাম লেখায়। এক বছর পরেই ১৮৯৬ সালে Gottlieb Daimler অন্তর্দাহ ইঞ্জিন ব্যবহার করে নতুন ট্রাক তৈরি করেন। অন্যান্য কম্পানি যেমন: Peugeot ,Renault এবং Büssing তারা নিজেদের পছন্দের ডিজাইনে ট্রাক তৈরি করে। ১৮৯৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সর্বপ্রথম ট্রাক তৈরি করে Autocar কম্পানি। যেগুলো ৫ এবং ৮ হর্সপাওয়ারে পাওয়া যেত। তখনকার সময়ে ট্রাকগুলোতে ২ সিলিন্ডার বিশিষ্ট ইঞ্জিন ব্যবহার করা হত এবং ৩৩০০ থেকে ৪৪০০ পাউন্ড পর্যন্ত পণ্য পরিবহনের সক্ষমতা ছিল। ১৯০৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ৭০০ টি তুলনামূলক বেশি পণ্য পরিবহনের জন্য ট্রাক তৈরি করা হয়। ১০০০ টি ১৯০৭ সালে, ৬০০০ টি ১৯১০ সালে এবং ২৫০০০ টি ১৯১৪ সালে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরে বেশ কিছু অগ্রগতি সাধিত হয়েছিল যেমন বায়ুসংক্রান্ত টায়ারগুলি পূর্ণ রাবারের টায়ার দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়। ইলেক্ট্রিক স্টার্টার, পাওয়ার ব্রেক, ৪, ৬ এবং ৮ সিলিন্ডার বিশিষ্ট ইঞ্জিন, বৈদ্যুতিক আলো ইত্যাদি সংযোজন করা হয়। প্রায় কাছাকাছি সময়ে প্রথম আধুনিক সেমি ট্রেইলার ট্রাক বাজারে আসে এবং ফোর্ড ও রেনল্ট কম্পানি ভারী ট্রাক তৈরির দিকে মনোযোগ দেয়।
ডিজেল ইঞ্জিনের ট্রাক
১৮৯৭ সালে ডিজেল ইঞ্জিন আবিষ্কৃত হলেও ১৯২৩ সালে বেঞ্জ ডিজেল ইঞ্জিন ব্যবহার করে ট্রাক তৈরির পূর্বে ডিজেল ইঞ্জিন চালিত ট্রাক দেখা যায় নি। ১৯৩০ সালের পূর্বে ইউরোপেও ডিজেল ইঞ্জিন চালিত ট্রাক খুব একটা ব্যবহার হয় নি। যুক্তরাষ্ট্রে অটোকার 1930 এর দশকের মাঝামাঝি ভারী অ্যাপ্লিকেশনের জন্য ডিজেল ইঞ্জিন চালিত ট্রাক উৎপাদন করে। এই ধরনের ট্রাকের চাহিদা বেড়ে যাওয়াতে অটোকার ১৯৩৯ সালে "DC" মডেল (diesel conventional) বাজারে উন্মুক্ত করে। তবে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ডিজেল ইঞ্জিন চালিত ট্রাকগুলি ব্যাপকভাবে গ্রহণযোগ্য হওয়ার জন্য অনেক বেশি সময় নেয়।১৯৭০ এর দশকের গ্যসোলিন ইঞ্জিন চালিত ট্রাকগুলোর এখনও ব্যবহার করা পরবর্তী সংস্করণের ইঞ্জিনগুলো এখনো ব্যবহার হয়।
ট্রাক(Truck) শব্দের উৎপত্তি
(truckle) শব্দের পুনর্গঠন থেকে এসেছে। যার অর্থ "ছোট চাকা" (small wheel) অথবা "টানা" (pulley) যেটি মধ্য যুগের ইংরেজি শব্দ trokell থেকে এসেছে। trochlea.আরেকটি সম্ভাব্য উৎস ল্যাটিন "ট্রোকাস" (trochlea) যার অর্থ "লৌহ বেড়ি"। অন্যদিকে , উভয় উৎস গ্রিক শব্দ ট্রকহস (τροχός) থেকে উদ্ভূত হয়, যার মানে "চাকা", যার উৎপত্তি ট্রেকহিন থেকে (ρρέχειν, "চালানো")। ট্রাক শব্দটির ব্যবহার সর্বপ্রথম দেখা যায় ১৬১১ সালে,যখন জাহাজের ক্যানন ক্যারিয়ারগুলো বহনের জন্য ছোট শক্তিশালী চাকার ব্যবহারে ট্রাক শব্দটির উল্লেখ পাওয়া যায়। ১৭৭১ সালে ট্রলি ব্যবহার করে ভারী বোঝা পরিবহনের ক্ষেত্রে ট্রাক শব্দটির ব্যাপক ব্যবহার দেখা যায়। শব্দটির বহুল আরোপিত সমার্থক শব্দ "মোটর চালিত বোঝা বাহক" ১৯৩০ সাল পর্যন্ত দেখা যায়।
"লরি" শব্দের উৎপত্তি কিছুটা অনিশ্চিত, কিন্তু সম্ভবত রেল পরিবহন শিল্পে শব্দটির উৎপত্তিগত শিকড় আছে। ১৮৩৮ সাল থেকে শব্দটি ট্রাকেরই সমার্থক শব্দ হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে, ( "পণ্যববাহী ওয়াগন" ব্রিটিশ ব্যবহারে এবং আমেরিকান ব্যবহারে "বগি")। স্পষ্টভাবে বললে একটি বড় সমান্তরাল ওয়াগন বুঝায় শব্দটি দ্বারা। লরি শব্দটি ইংরেজি ক্রিয়াবাচক শব্দ lurry থেকে বিবৃত করা যায় যার অর্থ টানা যদিও উৎসটি অনিশ্চিত। লরি শব্দটি বিবৃত করলে অর্থ দাঁড়ায় "পণ্য বহন করার জন্য স্বনিয়ন্ত্রিত গাড়ি" যা ১৯১১ সাল থেকে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এর আগে, "লরি" শব্দটি একটি বৃহৎ ঘোড়া-টানা পণ্য Wagon এর জন্য ব্যবহৃত হত।
আন্তর্জাতিক শব্দগত বৈপরীত্য
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, কানাডা এবং ফিলিপাইনে "ট্রাক" শব্দটি সাধারণত স্বাভাবিক গাড়িগুলির চেয়ে বড় বাণিজ্যিক যানবাহনগুলির ক্ষেত্রে ব্যবহার হয়ে থাকে। পিকআপ এবং অন্যান্য পণ্য পরিবহনের জন্য পিছনে বোঝা বহনকারী যযানবাহ্ন সসমূহকেও ট্রাক বলা হয়। অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড এবং দক্ষিণ আফ্রিকাতে "ট্রাক" দ্বারা বড় বোঝা বহনকারী যানবাহন সমূহকে বুঝায়। অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডে পিকআপ ট্রাককে সাধারণত ute ("ইউটিলিটি" এর সংক্ষিপ্ত রুপ) বলা হয়। দক্ষিণ আফ্রিকায় পিকআপকে (bakkie)বাক্কি (আফ্রিকান: "ছোট খোলা ধারক") বলে। যুক্তরাজ্য, ভারত, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, আয়ারল্যান্ড এবং হংকং লরি শব্দটিকে ট্রাকের পরিবর্তে ব্যবহার করা হয়, তবে তা কেবল মাঝারি ও ভারী মালবাহী বাহনের জন্য ব্যবহার হয়।
আকৃতি অনুসারে ট্রাক
আল্ট্রা লাইট (Ultra Light)
প্রায়শই গলফ কোর্সে ব্যবহৃত গাড়িগুলি এই ধরনের হয়ে থাকে যেগুলো অন্তর্দহন ইঞ্জিন অথবা বৈদ্যুতিক ব্যাটারি চালিত হয়ে থাকে। এই ট্রাকগুলি সাধারণত অফ হাইওয়ের জন্য তৈরি। রিয়েল এস্টেট, গলফ কোর্স, পার্ক দেখা শুনার জন্য ব্যবহার হয়। হাইওয়ের জন্য গাড়িগুলো অনুপযুক্ত হলেও কিছু গাড়িকে রাস্তায় অপারেশন জন্য ধীর গতির যানবাহন হিসাবে সাধারণত লাইসেন্স দেওয়া হয়। এই ধরনের গাড়ির জন্য বিশেষ চ্যাসিস উৎপাদন করা হয়। জাপ মোটর কম্পানি তাদের জেব্রা ইলেকট্রিক ট্রাইসাইকেল (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একটি মোটর সাইকেল হিসাবে লাইসেন্সযোগ্য) এর সংস্করণ বাজারজাত করে।
খুব সাধারণ (Very light) ট্রাক
এই ট্রাকগুলো এইরোপ এবং এশিয়ায় বেশ জনপ্রিয়। অটোমোবাইল কারখানাগুলোতে মনোকুইক বডির মিনি ট্রাক তৈরি করা হয়। বিশেষায়িত ডিজাইন এবং ভিন্ন ধরনের ফ্রেমে ইতালীয় কম্পানী Piaggio জাপানী বিশেষ ডিজাইনে মিনিট্রাক তৈরি করে থাকে। ইউরোপের শহরগুলোতে "পুরানো শহর"(old city) সেকশনে এই মিনি ট্রাকগুলো বেশ জনপ্রিয়, কারণ সেখানকার রাস্তাসমূহ প্রস্থগত দিক থেকে কিছুটা অপ্রশস্ত। এই মিনিট্রাকগুলোর ব্যাপক ব্যবহার দেখা যায়। জাপানে এই মিনিট্রাকগুলো "kei car" আইনের আওতাধীনে নিয়ন্ত্রিত হয়। যে আইনে মালিককে ছোট এবং কম শক্তিশালী যানবাহন ক্রয়ের ক্ষেত্রে ট্যাক্সে ছাড় দেওয়া হয়( বর্তমানে ৬০০ সিসি ডিসপ্লেসম্যান্টের ইঞ্জিনসিমূহ এই আইনের আওতাধীন)। জাপানে তৈরি অন রোডের জন্য তৈরি এই মিনিট্রাকগুলো যুক্তরাষ্ট্রে অফ রোডে ATV এর সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। যুক্তরাষ্ট্রে মিনি ট্রাক আমদানি আইনের ক্ষেত্রে ২৫ মা./ঘণ্টা (৪০ কি.মি./ ঘণ্টা) অনুসরণ করা হয় এবং এই যানবাহনগুলোকে কম গতিসম্পন্ন যানবাহনের তালিকাতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।এই ট্রাক গুলোর ব্যবহার সাধারণত কন্সট্রাকশন সাইডে, বড় ক্যাম্পাসে ( বিশ্ববিদ্যায়, সরকারী নির্মাণাধীন কাজ, ইন্ডাস্ট্রিয়াল এলাকা), কৃষিক্ষেত্রে, পশু পাখির র্যাঞ্চার গুলোতে, চিত্তবিনোদনের পার্কগুলোতে, গলফ কোর্টে দেখা যায়।
উল্লেখযোগ্য মিনিট্রাক নির্মানকারী কোম্পানি এবং তাদের ব্র্যান্ডঃ
- হোন্ডা অ্যাক্টি (Honda Acty)
- ডাইহাটসু হাইজেট (Daihatsu Hijet)
- টাটা এইচ (Tata Ace)
- সুযুকি ক্যারি (Suzuki Carry)
- সুবারু সাম্বার (Subaru Sambar)
- মিতসুবিশি মিনিক্যাব
( Mitsubishi Minicab)
- মাযদা স্ক্রুম (Mazda Scrum)
সাধারণ বা হালকা (Light) ট্রাক:
এই ট্রাকগুলো ছোট গাড়ি আকৃতির হয় (যুক্তরাষ্টে ১৩,৯০০ পাউন্ড বা ৬.৩ টন থেকে বেশি নয় এমন ওজন সম্পন্ন ট্রাকগুলো এই ধরনের ট্রাকের অন্তর্ভুক্ত এবং এই ট্রাকগুলো অভ্যন্তরীণ সাধারণ ব্যাবসাক্ষেত্রে ব্যবহার হয়)। ইউরোপে ৩.৫ টন বা ৭,৭০০ পাউন্ড থেকে বেশি নয় এমন ওজনের ট্রাক সমূহ এই শ্রেণীগত এবং ড্রাইভ করার জন্য কার (car) ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়া হয়। এই শ্রেণীর ট্রাকগুলোকে অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, এশিয়া, আফ্রিকা, উত্তর আমেরিকা এবং ল্যাটিন আমেরিকার কিছু অংশে পিকআপ ট্রাক বলা হয়। ইউরোপে বাণিজ্যিক ভাবে ব্যবহৃত এই ট্রাকগুলোকে ভ্যান বলে।
মধ্যম (Medium) ট্রাক:
মধ্যম(Medium Truck) ট্রাকগুলো সাধারণ ট্রাক(Light Truck) থেকে বড় কিন্তু ভারী ট্রাক (Heavy Truck) থেকে ছোট। যুক্তরাষ্ট্রে ১৩,০০০ থেকে ৩৩,০০০ পাউন্ড(৫.৯-১৫.০ টন) ওজন ভুক্ত ট্রাকগুলো এই শ্রেণিভভুক্ত। যুক্তরাজ্য এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নে ৩.৫- ৭.৫ টন(৭,৭০০-১৬,৫০০ পাউন্ড) ওজনভুক্ত ট্রাকগুলো এই শ্রেণিভুক্ত। স্থানীয় পণ্য পরিবহন বা পাবলিক সার্ভিস ( আবর্জনা ফেলার ট্রাক, ডাম্পিং ট্রাক, অগ্নি নির্বাপনের জন্য ব্যবহৃত ট্রাক) সাধারণত এই শ্রেণীভুক্ত।
ভারী ( Heavy) ট্রাক:
এই ট্রাকগুলো বড় হাইওয়ে রাস্তার জন্য তৈরি করা হয়। এই শ্রেণিগত ট্রাক সমূহের মধ্যে ভারী ডাম্প ট্রাক, কংক্রিট পাম্প ট্রাক ইত্যাদি তথা ৪*২ এবং ৬*৪ ট্রাক্টর ইউনিট ভুক্ত বড় সাইযের ট্রাক এই শ্রেণির মধ্যে বিবেচনা করা হয়।
এক্সেলের ওজন বৃদ্ধির সঙ্গে খুব দ্রুত রাস্তার ক্ষতি হয়। রাস্তার ক্ষতি কমানোর জন্য এক্সেলের সংখ্যা কমানোর স্থগিতাদেশ বিদ্যমান রয়েছে। অনেক দেশে পণ্য পরিবহনে ব্যবহৃত রাস্তাসমূহতে সর্বোচ্চ ৬ টি অ্যাক্সেল সংবলিত ৪৪ টন বা ৯৭,০০০ পাউন্ডের ওজনভুক্ত ট্রাকগুলোকে চলাচলের অনুমোদন দিয়ে থাকে।
অফ রোড (Off Road) ট্রাকঃ
অফ রোডের ট্রাকের অন্তর্ভুক্ত যেমন অতিরিক্ত ভারী হাইওয়ে চলাচলের জন্য অনুমোদিত ট্রাক, ট্রাক অন্তর্ভুক্ত, হাইওয়েতে চলাচলের অনুপযুক্ত কিন্তু অফরোডে চলাচলের বিশেষ ফিচার সম্পন্ন সামনে ড্রাইভিং অ্যাক্সেলযুক্ত স্পেশাল টায়ার যুক্ত এইসকল ট্রাক কাঠের গুড়ি এবং কন্সট্রাকশনে ব্যবহার হয়। অফ রোডে চলাচলের জন্য তৈরি এসকল ট্রাকে ওজনের কোন সীমাবদ্ধতা নেই যেমন- Liebherr T 282B মাইনিং ট্রাক।
দেশ অনুসারে সর্বোচ্চ আকৃতি(Maximum sizes by country):
অস্ট্রেলিয়াঃ অস্ট্রেলিয়াতে ম্যাক্সিমাম স্যাইযের ট্রাকের ক্ষেত্রে বিদ্যমান আআইন বেশ জটিল। ওজন, দৈর্ঘ্য, অ্যাক্সেল কর্তৃক প্রতিস্থাপিত জায়গা, অ্যাক্সেল টাইপ, অ্যাক্সেল গ্রুপ, পিছনের ওভারহ্যাঙ, পিছনে ট্রেইলারের কিংপিন, গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স এবং তার সাথে দৈর্ঘ ও প্রস্থ এই আইনের মধ্যে বিবেচনা করা হয়। এই আইনে প্রস্তাবিত ট্রাকের বিভিন্ন সীমা কিছু ক্ষেত্রে পৃথিবীতে সর্বোচ্চ। যেমন- একটি B-Double Can এর ওজন ৬২.৫ টন এবং ২৫ মি. বা ৮২ ফুট লম্বা। রোডে ব্যবহৃত ট্রেনের মত দেখতে ট্রাকগুলোতে ওজন ১৭২ টন বা ৩৭৯,০০০ পাউন্ড এবং ৫৩.৫ মি বা ১৭৬ ফুট লম্বা ট্রাক সমূহ এই আইনে বিদ্যমান।
ইউরোপীয় ইউনিয়নেও এই বিধিনিয়ম জটিলতা পূর্ণ। এখানে অ্যাক্সেলের সংখ্যা এবং অ্যাক্সেল দ্বারা প্রতিস্থাপিত জায়গা, স্টিয়ারিং, সিংগেল অথবা ডাবল টায়ার, সর্বোচ্চ ওজনের সীমা, ট্রাক অথবা ট্রেইলারের দৈর্ঘ, অ্যাক্সেল থেকে হিচপয়েন্ট, পিছনের ট্রেইলারের কিংপিন, ট্রাক ঘুরা বা টার্ন করার জন্য কতটুকু জায়গা প্রয়োজন তা এই বিধিনিয়মে আলোচনা করা হয়েছে। তবে কিছু দেশে কন্টেইনার পরিবহন করার জন্য তাদের নিজস্ব ট্রাফিক স্পেশাল রুল বা আইন রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সেতু আইনে ট্রাকের মোট ওজন, অ্যাক্সেলের সংখ্যা, অ্যাক্সেলের ওজন এবং ট্রাক ও অ্যাক্সেলের মধ্যকার জায়গা ইত্যাদি বিবেচনা করে ট্রাকটিকে রাস্তায় চলাচলের অনুমোদন প্রদান করে। তবে প্রত্যেক অঙ্গরাজ্য এই নিয়ম অনুসরণ করে রাস্তায় ট্রাকগুলোকে চলাচলের অনুমতি দিয়ে থাকে।
দেশ | তিন অ্যাক্সেল বিশিষ্ট ট্রাক | একটি ট্রেইলর যুক্ত ট্রাক | সর্বোচ্চ ওজন ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন ট্রাক |
---|---|---|---|
অস্ট্রেলিয়া | ২৩ টন | ১২ মি. | ১৭২ টন (৩৭৯০০ পাউন্ড, ৫৩.৫ মি. বা ১৭৬ ফুট |
চীন | ২৫ টন ৫৫,১০০ পাউন্ড ১২ মি. বা ৩৯ ফুট | ৪৯ টন বা ১০৮,০০০ পাউন্ড ১৬.৫ মি. বা ৫৪ ফুট | ৫৫ টন ৬২ ফুট |
ইউরোপীয় ইউনিয়ন | ২৬ টন বা ৫৭,৩০০ পাউন্ড ১২ মি. বা ৩৯ ফুট | ১৬.৫ মি. বা ৫৪ ফুট | ৪৪ টন বা ৯৭,০০০ পাউন্ড,১৮.৭৫ মি. বা ৬২ ফুট |
আয়ারল্যান্ড | ২৬ টন বা ৫৭,৩০০ পাউন্ড, ১২ মি. বা ৩৯ ফুট | ৩০ টন বা ৬৬,১০০ পাউন্ড। ১৬.৫ মি. বা ৫৪ ফিট ২ ইঞ্চি | ৪৪ টন বা ৯৭,০০০ পাউন্ড; ২২ মি. |
সুইডেন | ২৬ টন বা ৫৭,৩০০ পাউন্ড ২৪ মি. বা ৭৯ ফুট | ৬০ টন বা ১৩২,৩০০ পাউন্ড; ২৪ মি বা ৭৮ ফুট ৯ ইঞ্চি | ৬০ টন বা ১৩২,৩০০ পাউন্ড; ২৫.২৫ মি. বা ৮২.৮ ফুট |
যুক্তরাজ্য | ২৬ টন বা ৫৭,৩০০ পাউন্ড ১২ মি. বা ৩৯ ফুট | ৪৪ টন বা ৯৭,০০০ পাউন্ড; ১৬ মি. বা ৫২ ফুট | ৪৪ টন ৯৭,০০০ পাউন্ড; ১৮.৭৫ মি. বা ৬২ ফুট |
যুক্তরাষ্ট্র | ৫৪,০০০ পাউন্ড বা ২৪.৫ টন; ৪৫ ফুট বা ১৩.৭ মি. | ৮০,০০০ পাউন্ড বা ৩৫.৩ টন। | ৮০,০০০ পাউন্ড বা ৩৫.৩ টন। |
কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান অঙ্গরাজ্যতে ট্রাকের সর্বোচ্চ ওজন ধারণ ক্ষমতা ১৬৪,০০০ পাউন্ড বা ৭৪,০০০ কেজি, যা যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় আইনে প্রস্তাবিত ওজনের দ্বিগুণ। যা যুক্তরাষ্ট্রের অন্য সকল রাজ্য থেকে মিশিগানের রাস্তা খারাপ হওয়ার অন্যতম একটি কারণ ( রাস্তা তৈরির ফান্ডিং ও বাকি ৫০ রাজ্য থেকে কম)। এই আইন পরিবর্তনের জন্য মিশিগান সিনেটে প্রস্তাব করা হলেও তা পরাজিত হয়।
নকশা (Design)
সকল ট্রাকের নকশা বা ডিজাইন মোটামুটি একই ধরনের হয়ে থাকে। চ্যাসিস, ক্যাব, কার্গো বা পণ্য রাখার স্থান, এক্সেল, সাসপেনশন, রোডহুইল, ইঞ্জিন, ডাইভারট্রেইন এইগুলো সকল ট্রাকের সাধারণ উপাদান। Pneumatic , hydraulic , water ,এবং electrical সিস্টেমও ডিজাইনে থাকে। অনেক ট্রাকের ডিজাইনে একটি বা দুটি ট্রেইলারের সাথে সেমি ট্রেইলার পরিবহন করার ব্যাবস্থাও থাকে।
ক্যাব (Cab)
ক্যাব একটি বদ্ধ জায়গা যেখানে থেকে ড্রাইভার তার কার্যক্রম পরিচালনা করে। সেমি ট্রেইলার ট্রাকে ক্যাবের সাথে স্লিপার নামে আলাদা একটি কম্পার্টম্যান্ট দেখা যায় যেখানে ড্রাইভার যখন ড্রাইভিং করে না তখন ঘুমাতে পারে।
ক্যাবের বিভিন্ন কনফিগারেশনঃ ক্যাব ওভার ইঞ্জিন (COE) বা ফ্ল্যাট নোজ ক্যাব যেখানে ড্রাইভার সামনের এক্সেল এবং ইঞ্জিনের উপর বসে।। এই নকশা ইউরোপে প্রায় সর্বব্যাপী, যেখানে সামগ্রিক ট্রাক দৈর্ঘ্য কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়, এই ডিজাইন পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও দেখা যায়। উত্তর আমিরিকাতে হেভি ডিউটি ট্রাকগুলোতে এই ডিজাইন দেখা যায়, ১৯৮০ দশকে ইউরোপের একই ডিজাইনের ট্রাকের বৈশিষ্ট্য আমেরিকায় হারিয়ে যায় কারণ আমেরিকাতে তখন একই ডিজাইনের ট্রাকের দৈর্ঘ আরো বাড়ানো হয়। কিন্তু তারপরেও উত্তর আমেরিকাতে এখনো মিডিয়াম এবং সাধারণ ট্রাকের মধ্যে ফ্ল্যাট নোজ ক্যাব ডিজাইন বেশ জনপ্রিয়। প্রায় পুরো ইঞ্জিনের উপর ক্যাব থাকায় এই ক্যাবকে টিল্ট ক্যাব ও বলা হয়। ইউরোপে মালামাল পরিবহনের জন্য এই ধরনের ক্যাব যুক্ত ট্রাকগুলো বেশ উপযুক্ত। কারণ ই-উরোপে অনেক রাস্তা অনেক আগের এবং তখনকার সময়ের আদলে বিন্যাস্ত, ট্রাকের বাঁক নেওয়ার জন্য সেখানে অনেক বেশি জায়গার প্রয়োজন। এইসকল রোডের জন্য ফ্ল্যাট নোজ ক্যাব বেশ উপযুক্ত। Viktor Schreckengost এই ডিজাইনের ক্যাব আবিষ্কার করেন। [1][2][3]