টি কোষ
টি কোষ এক প্রকারের লসিকাকোষ (শ্বেতকণিকা) যেগুলি দেহের অনাক্রম্যতন্ত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং যেগুলি দেহে বহিরাগত পদার্থ তথা প্রত্যুৎপাদকসমূহের বিরুদ্ধে উপযোজী অনাক্রম্য প্রতিক্রিয়ায় নির্দিষ্টকরণে কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করে। টি কোষগুলি লসিকাকোষের দুইটি প্রধান ধরনের একটি ধরন; অপর ধরনটি হল বি কোষ। টি কোষগুলির কোষপৃষ্ঠে টি-কোষ গ্রাহক থাকে, যার দ্বারা এগুলিকে অন্যান্য লসিকাকোষ থেকে পৃথক করে চেনা যায়। টি কোষগুলি অস্থিমজ্জায় অবস্থিত রক্তোৎপাদী কাণ্ডকোষগুলি থেকে উৎপত্তিলাভ করে।[1] বিকাশমান টি কোষগুলি এরপর বক্ষকোটরে অবস্থিত থাইমাস গ্রন্থিতে অভিবাসিত হয় ও সেখানে আরও বিকাশ লাভ করে (বা পরিপক্বতা লাভ করে)। থাইমাস গ্রন্থিতে বিকাশলাভ করে বলে গ্রন্থিটির ইংরেজি আদ্যক্ষর "টি"-র নামে এই কোষগুলির নামকরণ করা হয়েছে টি লসিকাকোষ বা টি কোষ।[2] থাইমাস গ্রন্থিতে অভিবাসনের পরে এই পূর্বগ কোষগুলি সংখ্যাবৃদ্ধি করে ও পরিপক্বতা লাভ করে বেশ কিছু স্বতন্ত্র প্রকারের টি কোষে পরিণত হয়। এগুলির মধ্যে রয়েছে কোষ-বিষাক্তকারক বা ঘাতক টি কোষ, সাহায্যকারী টি কোষ, নিয়ন্ত্রক টি কোষ এবং স্মৃতি টি কোষ। এরপর এগুলিকে প্রান্তীয় দেহকলায় প্রেরণ করা হয় কিংবা রক্ত সংবহনতন্ত্রের রক্তে বা লসিকাতন্ত্রের লসিকারসে এগুলি সঞ্চালিত হতে শুরু করে।
টি কোষ (টি লসিকাকোষ) cell | |
---|---|
বিস্তারিত | |
তন্ত্র | অনাক্রম্যতন্ত্র |
শনাক্তকারী | |
লাতিন | lymphocytus T |
মে-এসএইচ | D013601 |
টিএইচ | H2.00.04.1.02007 |
এফএমএ | FMA:62870 |
মাইক্রো শারীরস্থান পরিভাষা |
থাইমাস গ্রন্থি পরিত্যাগ করার পরেও টি কোষের স্বতন্ত্রীভবন ঘটতে পারে। বিশেষ স্বতন্ত্রীভূত টি কোষের উপপ্রকারগুলির দলগুলি অনাক্রম্য প্রতিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ ও রূপদানে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই ভূমিকাগুলির একটি হল অনাক্রম্য-মধ্যস্থতাকৃত কোষ মৃত্যু; মূলত দুই ধরনের টি কোষ এই কাজটি পালন করে, সিডি৮+ "বিষাক্তকারক" বা "ঘাতক" টি কোষ এবং সিডি৪+ "সাহায্যকারক" টি কোষ (কোষের পৃষ্ঠতলে অবস্থিত সিডি৮ ও সিডি৪ প্রোটিনগুলির উপস্থিতির কারণে এইরূপ নামকরণ করা হয়েছে)। সিডি৪+ "সাহায্যকারক" টি কোষগুলির কাজ হল স্মৃতি বি কোষ ও কোষ-বিষাক্তকারক সিডি৮+ টি কোষগুলিকে সক্রিয় করা, যার ফলে অনাক্রম্য প্রতিক্রিয়ার আকার বৃদ্ধি পায়। যখন সাহায্যকারক টি কোষগুলি একটি যথোপযুক্ত প্রত্যুৎপাদক দ্বারা উদ্দীপ্ত হয়, তখন সেগুলি রাসায়নিক সংকেত বা বার্তাবাহী কিছু প্রোটিন নিঃসৃত করতে শুরু করে, যেগুলিকে সাইটোকাইন বলে। সাইটোকাইনগুলির কারণে স্মৃতি বি কোষগুলি প্রতিরক্ষিকা (অ্যান্টিবডি) উৎপাদনকারী প্লাজমা কোষে স্বতন্ত্রীভূত হতে শুরু করে। সাহায্যকারক টি কোষগুলিকে এগুলি থেকে নিঃসৃত সাংকেতিক প্রোটিন বা সাইটোকাইনের উপর ভিত্তি করে বেশ কিছু স্বতন্ত্র উপপ্রকারে ভাগ করা যায়, যেগুলির একেক রকম নির্দিষ্ট উপযোজী অনাক্রম্য প্রতিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে। এর বিপরীতে সিডি৮+ ঘাতক টি কোষগুলি কোষের জন্য বিষাক্ত পদার্থে পূর্ণ; এগুলি বিভিন্ন ধরনের সাইটোকাইন দ্বারা উদ্দীপ্ত হয়ে সরাসরি ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত দেহকোষ ও কর্কটকোষগুলির সাথে আবদ্ধ হয়ে সেগুলিকে মেরে ফেলতে পারে। অধিকন্তু সিডি৮+ টি কোষগুলিও নিজস্ব সাইটোকাইন নিঃসরণ করে অনাক্রম্য প্রতিক্রিয়াতে অন্যান্য ধরনের কোষকে মোতায়েন করতে পারে। [3] টি কোষসমূহের আরেকটি বৃহৎ দল হল নিয়ন্ত্রক টি কোষ। এগুলি অনাক্রম্য সহনশীলতা নামক অতি গুরুত্বপূর্ণ কার্যপদ্ধতিটি প্রদান করে। এক্ষেত্রে অনাক্রম্য কোষগুলি পোষকদেহের নিজস্ব নির্দোষ দেহকোষ থেকে বহিরাগত আক্রমণকারী দ্বারা আক্রান্ত দেহকোষগুলি শনাক্ত করতে পারে। এর বদৌলতে অনাক্রম্য কোষগুলি ভুল করে নিজদেহের কোষগুলিকে আক্রমণ করা থেকে বিরত থাকে, যে অবাঞ্ছিত ব্যাপারটিকে স্বতঃঅনাক্রম্য প্রতিক্রিয়া বলে। এই কারণে নিয়ন্ত্রক টি কোষগুলিকে অনেক সময় অবদমক টি কোষ নামেও ডাকা হয়। কিন্তু এই একই নিয়ন্ত্রক টি কোষগুলিকে কর্কটকোষগুলি নিজেদের কাজে লাগাতে পারে, যাতে অর্বুদ বা টিউমার কোষগুলির বিরুদ্ধে দেহের অনাক্রম্য প্রতিক্রিয়া অবদমিত হয়।
মানবদেহে লক্ষ লক্ষ টি ও বি কোষ রয়েছে, যেগুলির অনেকগুলির অনন্য গ্রাহক রয়েছে। তাই দেহ প্রায় যেকোনও ধরনের প্রত্যুৎপাদকের বিরুদ্ধে অনাক্রম্য প্রতিক্রিয়া প্রদান করতে পারে।
তথ্যসূত্র
- "5. Hematopoietic Stem Cells"। Stem Cell Information। Bethesda, MD: National Institutes of Health, U.S. Department of Health and Human Services। ১৭ জুন ২০০১। ২৯ অক্টোবর ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ ডিসেম্বর ২০২১।
- Alberts B, Johnson A, Lewis J, Raff M, Roberts k, Walter P (2002). Molecular Biology of the Cell. New York: Garland Science. p. 1367. "T cells ... derive their [name] from the organs in which they develop. T cells develop [mature] in the thymus"
- Alberts, Bruce; Johnson, Alexander; Lewis, Julian; Raff, Martin; Roberts, Keith; Walter, Peter (২০০২)। "Helper T Cells and Lymphocyte Activation"। Molecular Biology of the Cell (ইংরেজি ভাষায়) (4th সংস্করণ)।
বহিঃসংযোগ
- Immunobiology, 5th Edition
- The Immune System at the National Institute of Allergy and Infectious Diseases
- T-cell Group – Cardiff University ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১১ ডিসেম্বর ২০১৮ তারিখে