টি-শার্ট
টি-শার্ট বা টি হচ্ছে এক প্রকার শার্ট, যা ঘাড়ের অংশ থেকে দেহের ওপরাংশে কবন্ধের বেশিরভাগ স্থানকে ঢেকে রাখে। ইংরেজি 'টি' (T) আকৃতির ন্যায় দেখতে, তাই এ পোশাকটির নাম টি-শার্ট হয়েছে। টি-শার্টে সাধারণত কোনো বোতাম বা কলার থাকে না। সচারচর এটি হয় গোলাকার ও খাটো হাতাযুক্ত। যদিও কিছু ক্ষেত্রে মানুষ ভুলবশত খাটো হাতাযুক্ত যে-কোনো শার্ট বা ব্লাউজকেই টি-শার্ট ভেবে ভুল করে। পোলো শার্ট বা অন্যান্য কলারযুক্ত শার্ট প্রকৃতপক্ষে টি-শার্ট নয়। কারণ এ ধরনের শার্টের হাতা কাঁধের পাশ দিয়ে সামান্য একটু বাড়তি থাকে, এবং খাটো হাতার ক্ষেত্রে তা কনুই পর্যন্ত হতে পারে।
টি-শার্ট সাধারণত তুলা বা পলিয়েস্টার দ্বারা তৈরি হয়। কিছুক্ষেত্রে উভয় উপাদান মিশ্রিত সুতা দ্বারাও টি-শার্ট তৈরি হয়। এ দুইয়ের মিশ্রণে জার্সি ধরনের সেঁলাই করার ফলে টি-শার্ট আরো কোমল ও আরামদায়ক হয়ে ওঠে। কিছু ক্ষেত্রে টি-শার্ট ডিজাইনে সামনে কিংবা পেছনে কিংবা উভয় পার্শ্বেই ছবি, বাণী, কার্টুন চিত্র প্রভৃতি ব্যবহৃত হয়। এছাড়া বিজ্ঞাপন হিসেবে প্রচারের ক্ষেত্রেও এ ধরনের শার্টের ভূমিকা আছে।
ব্যবহার ক্ষেত্র
সাধারণতঃ নৈমিত্তিক পোশাক হিসেবেই টি-শার্ট পরিধান করা হয়। টি-শার্টের ফ্যাশন সকল বয়সের নারী-পুরুষের মধ্যেই প্রচলিত ও তারুণ্যের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ইংল্যান্ড এবং ফ্রান্সের ন্যায় পশ্চিমা বিশ্বের দেশসমূহে নারী-পুরুষ উভয়ের মাঝেই এর ব্যাপক ব্যবহার ও জনপ্রিয়তা সবিশেষ লক্ষণীয়। কিন্তু মুসলিম নারীরা বাড়ীর বাইরে টি-শার্ট পরিধান করেন না।
প্রচলন
টি-শার্ট প্রাথমিকভাবে শার্টের নিচে পরিধান করা হতো। বর্তমানে এটি শরীরের ওপরাংশ আবৃত করার জন্য পৃথক ও স্বয়ংসম্পূর্ণ পোশাক হিসেবেও বহুল ব্যবহৃত। সচারচর অন্তর্বাস হিসেবে এর নিচে গেঞ্জি বা বক্ষবন্ধনী পরিধান করা হয়। একই সাথে নিজের মনোভাব প্রকাশ এবং বিজ্ঞাপনেরও একটি মাধ্যম। টি-শার্টের ডিজাইনে প্রায়ই বিভিন্ন শব্দগুচ্ছ, ছবি, এমন-কি আলোকচিত্রও স্থান পায়।[1]
বার্তা প্রকাশ
১৯৮০-এর দশক থেকে ব্যক্তিগত ভাবাবেগ প্রকাশের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে টি-শার্টের ব্যাপকভাবে ব্যবহার হয়ে আসছে।[1] ১৮৮০-এর দশকে ডিজাইনার ক্যাথরিন হ্যামনেট বড় করে স্লোগান ছাপানো টি-শার্টের ডিজাইন করা শুরু করেন। ২০০০-এর দশকে স্লোগান সমৃদ্ধ টি-শার্টের প্রচলন শুরু হয়। এছাড়াও হাস্যরসাত্মক বার্তাবাহী টি-শার্টের প্রচলনও শুরু হয়। এই দশকের শেষে এসে এর জনপ্রিয়তা আরো বাড়ে। কারণ, ব্রিটনি স্পিয়ার্স ও প্যারিস হিলটনের মতো শীর্ষতারকা ব্যক্তিত্বরা এ ধরনের টি-শার্ট ব্যবহার করা শুরু করেন। বিভিন্ন সামাজিক এবং রাজনৈতিক বার্তাও টি-শার্টে স্থান পেতে শুরু করে। কোনো বার্তার প্রতি সমর্থন বা বিরোধিতা জানাতেও টি-শার্টের ব্যবহার তখন থেকে শুরু হয়। এই বার্তা কখনো কখনো ভীতিকর, দুঃখজনক, বা পর্নোগ্রাফিক হিসেবে প্রতীয়মান হতে থাকে। এছাড়া তথ্য প্রদানেও টি-শার্টের ভূমিকা আছে। বিভিন্ন অনুষ্ঠান, দিবস প্রভৃতিকে লক্ষ্য রেখে সে সংক্রান্ত কিছু তথ্য সংকলনও টি-শার্টের ডিজাইনে ব্যবহৃত হয়।
স্ক্রিন প্রিন্ট করা টি-শার্ট পণ্য বিপণন-বাজারজাতকরণে বিজ্ঞাপন হিসেবে ব্যবহার হয়। ১৯৭০-এর দশক থেকে কোকা-কোলা ও মিকি মাউসের মতো পণ্যের বাজারজাতকরণে বিজ্ঞাপন হিসেবে টি-শার্ট ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ১৯৯০-এর দশক থেকেই কোম্পানিগুলো তাদের পণ্য ও কোম্পানির বিজ্ঞাপনে পণ্যের ছবি, লোগো এবং বাণিজ্যিক স্লোগানযুক্ত টি-শার্ট তৈরি ও বিপণন করা শুরু করে। এটি ছিলো তাদের প্রচারণার একটি অংশ।
বিশ্বরেকর্ড
সবচেয়ে বেশি একের পর এক ২৫৭টি টি-শার্ট পরিধান করে গিনেস বিশ্ব রেকর্ডের পাতায় নিজের নাম লেখান সনাথ বন্দরা।[2] ২২ ডিসেম্বর, ২০১১ সালে শ্রীলঙ্কার কলম্বোতে তিনি এই বিশ্বরেকর্ড গড়েন। কলম্বোর একটি উদ্যানে হাজারো জনতার সামনে তিনি এই কৃতিত্ব দেখান। এর পূর্বে দক্ষিণ কোরিয়ার অধিবাসী হুয়াং কুয়াংহি ২৫২টি টি-শার্ট পড়ে রেকর্ড গড়েছিলেন। ২০১১ সালের ২৮ মে বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে কুয়াংহি ২৫২টি টি-শার্ট পড়ে সবাইকে আশ্চর্যান্বিত করেছিলেন।[3]
টি-শার্ট তৈরী
- বাংলাদেশের তৈরীকৃত টি-শার্টের লাইভ মডেলের সাহায্যে ফিটিং পরীক্ষা করা হচ্ছে।
- টি-শার্টের প্রিন্টিং এর জন্য বিভিন্ন অত্যাধুনিক অটোমেটেড প্রিন্টিং মেশিনের ব্যবহার হচ্ছে বাংলাদেশের তৈরী পোষাক শিল্পে।
- টি-শার্টের জন্য কাপড় বুনন হচ্ছে।
- টি-শার্টের জন্য কাপড় রং করা হচ্ছে।
- টি-শার্টের উৎপাদন
- ক্রেতাদের সামনে প্রদর্শনের জন্য টি-শার্ট।
তথ্যসূত্র
- Sally Larsen with Neeli Cherkovski, Japlish, Pomegranate Art Books, San Francisco, 1993, আইএসবিএন ১-৫৬৬৪০-৪৫৪-১
- "Guiness World Records". Retrieved 2012-05-01.
- ZE:A 광희, '성형돌' 벗고 티셔츠 껴입어 세계 기네스 기록 갱신