টাইফয়েড জ্বর

টাইফয়েড বা টাইফয়েড জ্বর (ইংরেজি: Typhoid fever) হল এক ধরনের ব্যাক্টেরিয়া ঘটিত রোগ, যা Salmonella typhi ব্যাক্টেরিয়ার কারণে হয়। লক্ষণ মৃদু থেকে তীব্র হতে পারে, সচরাচর জীবাণু প্রবেশের ৬-৩০ দিন পর লক্ষণগুলি দেখা যায়।[1][2] প্রায়ই কয়েকদিনের ব্যবধানে জ্বর এর তীব্রতা বৃদ্ধি পেতে থাকে।[1] দুর্বলতা, পেট ব্যাথা, কোষ্ঠ্যকাঠিন্য, মাথা ব্যাথা সচরাচর হতে দেখা যায়।[2][6] ডায়রিয়া খুব একটা হয় না, বমিও সেরকম হয় না।[6] কিছু মানুষের ত্বকে র‍্যাশ (Rash) এর সাথে গোলাপী স্পট দেখা যায়।[2] বিনা চিকিৎসায় সপ্তাহ বা মাসখানেক ধরে লক্ষণ থাকতে পারে।[2] কিছু ব্যক্তি আক্রান্ত না হয়েও জীবাণু বহন করে রোগের বিস্তার ঘটাতে পারে।[4] টাইফয়েড জ্বর আন্টিবায়টিক ব্যবহার করে সারানো যায়। [10]

টাইফয়েড জ্বর
প্রতিশব্দটাইফয়েড
টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত একজন ব্যক্তির বুকে গোলাপি রং এর স্পট
বিশেষত্বসংক্রামক রোগ
লক্ষণজর, পেট ব্যাথা, মাথা ব্যাথা, গুটি গুটি ভাব[1]
রোগের সূত্রপাতসংক্রমিত হবার ৬-৩০ দিনের মধ্যে[1][2]
কারণ''Salmonella'' typhi (দূষিত খাদ্য বা পানি থেকে ছড়ায়)[3][4]
ঝুঁকির কারণপরিষ্কার পরিচ্ছন্ন না থাকা, শৌচকাজের পর হাত না ধোয়া[3]
রোগনির্ণয়ের পদ্ধতিব্যাক্টেরিয়া কালচার, ডিএনএ শনাক্তকরণ[2][3][5]
পার্থক্যমূলক রোগনির্ণয়অন্যান্য সংক্রামক রোগ[6]
প্রতিরোধটাইফয়েড টিকা, হাত ধোয়া[2][7]
চিকিৎসাঅ্যান্টিবায়োটিক[3]
সংঘটনের হার১ কোটি ২৫ লক্ষ (২০১৫)[8]
মৃতের সংখ্যা১,৪৯,০০০ (২০১৫)[9]

টাইফয়েড জ্বরের কারণ হল সালমোনেলা টাইফি নামক এক প্রকার ব্যাক্টেরিয়া, যা অন্ত্ররক্তে বৃদ্ধি পায় ।[2][6] এটা সংক্রমিত (সংক্রমিত ব্যক্তির মল ও মূত্র দ্বারা) খাদ্য বা জল পানের দ্বারা ছড়ায়। ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়গুলির মধ্যে স্যানিটেশনের অভাব এবং ন্যূনতম স্বাস্থ্যবিধি অন্তর্ভুক্ত। [3] উন্নয়নশীল বিশ্বের যারা ভ্রমণ করে, তারাও ঝুঁকির মাঝে আছে।[4][6] শুধুমাত্র মানুষ সংক্রমিত হতে পারে। ব্যাক্টেরিয়া কালচারের মাধ্যমে, অথবা রক্ত, মল বা অস্থি মজ্জার মধ্যে ব্যাকটেরিয়ার ডিএনএ(DNA) শনাক্ত করে এ রোগ নির্ণয় করা হয়।[2][3][5] অস্থি মজ্জার টেস্টিং সবচেয়ে সঠিক।[5]

সংক্রমন

দূষিত খাদ্য, পানি এবং দুধের মাধ্যমে এই ব্যাকটেরিয়া শরীরের খাদ্যনালিতে প্রবেশ করে। এ ছাড়া আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এলে এবং পানির মাধ্যমেও এই রোগের জীবাণু ছড়ায়।[11]

লক্ষণ

টাইফয়েড আক্রান্ত হওয়ার পরও বেশ কিছুদিন পর্যন্ত স্পষ্ট কোনো লক্ষণ প্রকাশ পায় না। শুরুর দিকে চাপা অস্বস্তি, মাথাব্যথা, ঝিমঝিম করা, শরীরময় ব্যথা ইত্যাদি অনুভূত হয়। সাধারণত জ্বর একটু বাড়ে। রোগী প্রলাপ বকতে পারে, এমনকি অচেতনও হতে পারে। ওষুধ চলা অবস্থায়ও সপ্তাহ খানেক জ্বর থাকতে পারে।

  • প্রচন্ড জ্বর  সাধারণত ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা তার বেশি হতে পারে
  • মাথাব্যথা ও শরীর প্রচন্ড ব্যথা
  • মাথা ভারী হয়ে যাওয়া
  • শারীরিক দুর্বলতা
  • ক্ষুধামন্দা বা খাওয়ার ইচ্ছা না থাকা
  • ডায়রিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্য
  • বমি-বমি ভাব বা বমি হওয়া
  • শরীরে অলসতা আসা
  • প্রচণ্ড কফ বা কাশি
  • পেটে ব্যথা হওয়া
  • পেটের ওপরের দিকে বা পিঠে লালচে দাগ হতে পারে
  • জ্বরের ২য় সপ্তাহে রোগীর পেটে ও পিঠে গোলাপি রঙের দানা দেখা যাওয়া
  • হার্ট রেট বা হৃদস্পন্দন অনেক কমে যাওয়া

জটিলতা

পরিপাকতন্ত্র থেকে রক্তক্ষরণ, অগ্ন্যাশয়ে প্রদাহ, মেরুদণ্ডে সংক্রমণ, মস্তিষ্কে প্রদাহ, পিত্তথলিতে সংক্রমণ, নিউমোনিয়া, শরীরের বিভিন্ন স্থানে ফোড়া, স্নায়বিক সমস্যা এমনকি কিডনিতেও বড় ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে।

টাইফয়েড সাধারণত যেকোন বয়সেই হতে পারে, তবে শিশুদের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। শরীরে জীবাণু প্রবেশ করলেই টাইফয়েড হয়ে যাবে এমন কোন কথা নেই কারণ দেহে যদি রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো থাকে তাহলে অনেক সময়ই জীবাণু দেহে সংক্রমণ করতে পারেনা। তবে কম রোগপ্রতিরোধক্ষমতা সম্পন্ন ব্যক্তি যেমন এইচআইভি পজিটিভ ও এইডস আক্রান্ত রোগীরা সহজেই টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হতে পারে।

চিকিৎসা

রেজিস্ট্যান্স বা প্রতিরোধক না হলে, ফ্লুরোকুইনোলন যেমন সিপ্রোফ্লক্সাসিন সবচেয়ে কার্যকরি।[12][13] অন্যথায়, তৃতীয় প্রজন্মের সেফালোস্পোরিন যেমন সেফট্রায়াক্সন বা সেফোট্যাক্সিম কার্যকরি।[14][15][16][17] মুখে খাওয়ার ঔষধের মধ্যে সেফিক্সিম ব্যবহার করা হয়।[18][19]

অধিকাংশ ক্ষেত্রে টাইফয়েড প্রাণঘাতী নয়।অ্যান্টিবায়োটিক যেমন অ্যাম্পিসিলিন, ক্লোরাম্ফেনিকল, অ্যামক্সিসিলিন, সিপ্রোফ্লক্সাসিন ইত্যাদি টাইফয়েড চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়।[20] চিকিৎসায় এ রোগে মৃত্যুর হার ১% এ নেমে আসে।[21] পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি ও স্যালাইন গ্রহণ করতে হবে।

প্রতিরোধ

সব সময় পরিষ্কার পোশাক পরে, নিরাপদ ও বিশুদ্ধ পানি পান করে টাইফয়েড প্রতিরোধ করা যায়। এছাড়া, অবশ্যই হাত ভালোভাবে ধুতে হবে। ঘরের জিনিসপত্র নিয়মিত পরিষ্কার রাখতে হবে এবং আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত জিনিস আলাদা করে রাখতে হবে। পানি ফুটিয়ে পান করতে হবে। খাবার গরম করে খেতে হবে। বাইরের খাবার খেলে সব সময় সচেতন থাকতে হবে। অপরিষ্কার শাকসবজি ও কাঁচা-ফলমূল খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট ব্যবহার করতে হবে। লক্ষ রাখতে হবে কোনোভাবেই যেন টয়লেটে ময়লা বা পানি জমে না থাকে। আক্রান্ত ব্যক্তির টয়লেট নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে। আক্রান্ত ব্যক্তিকে খোলামেলা ও পরিষ্কার বাসায় রাখতে হবে।

তথ্যসূত্র

  1. Anna E. Newton (২০১৪)। "3 Infectious Diseases Related To Travel"। CDC health information for international travel 2014 : the yellow bookআইএসবিএন 9780199948499। ২০১৫-০৭-০২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০১-০১
  2. "Typhoid Fever"cdc.gov। মে ১৪, ২০১৩। ৬ জুন ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ মার্চ ২০১৫
  3. Crump, JA; Mintz, ED (১৫ জানুয়ারি ২০১০)। "Global trends in typhoid and paratyphoid Fever."Clin Infect Dis50 (2): 241–6। ডিওআই:10.1086/649541পিএমআইডি 20014951পিএমসি 2798017অবাধে প্রবেশযোগ্য
  4. "Typhoid Fever"cdc.gov। মে ১৪, ২০১৩। ২ এপ্রিল ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ মার্চ ২০১৫
  5. GBD 2015 Disease and Injury Incidence and Prevalence, Collaborators. (৮ অক্টোবর ২০১৬)। "Global, regional, and national incidence, prevalence, and years lived with disability for 310 diseases and injuries, 1990–2015: a systematic analysis for the Global Burden of Disease Study 2015."Lancet388 (10053): 1545–1602। ডিওআই:10.1016/S0140-6736(16)31678-6পিএমআইডি 27733282পিএমসি 5055577অবাধে প্রবেশযোগ্য
  6. GBD 2015 Mortality and Causes of Death, Collaborators. (৮ অক্টোবর ২০১৬)। "Global, regional, and national life expectancy, all-cause mortality, and cause-specific mortality for 249 causes of death, 1980–2015: a systematic analysis for the Global Burden of Disease Study 2015."। Lancet388 (10053): 1459–1544। ডিওআই:10.1016/s0140-6736(16)31012-1পিএমআইডি 27733281
  7. http://www.who.int/topics/typhoid_fever/en/
  8. টাইফয়েড প্রতিরোধে ৩ পরামর্শ - প্রথম আলো (০৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৪)
  9. Effa EE, Lassi ZS, Critchley JA, Garner P, Sinclair D, Olliaro PL, Bhutta ZA (২০১১)। Bhutta, Zulfiqar A, সম্পাদক। "Fluoroquinolones for treating typhoid and paratyphoid fever (enteric fever)"। Cochrane Database Syst Rev (10): CD004530। ডিওআই:10.1002/14651858.CD004530.pub4পিএমআইডি 21975746
  10. Soe GB, Overturf GD (১৯৮৭)। "Treatment of typhoid fever and other systemic salmonelloses with cefotaxime, ceftriaxone, cefoperazone, and other newer cephalosporins"। Rev Infect Dis। The University of Chicago Press। 9 (4): 719–36। জেস্টোর 4454162ডিওআই:10.1093/clinids/9.4.719পিএমআইডি 3125577
  11. Wallace MR, Yousif AA, Mahroos GA, Mapes T, Threlfall EJ, Rowe B, Hyams KC (১৯৯৩)। "Ciprofloxacin versus ceftriaxone in the treatment of multiresistant typhoid fever"। Eur J Clin Microbiol Infect Dis12 (12): 907–910। ডিওআই:10.1007/BF01992163পিএমআইডি 8187784
  12. Dutta P, Mitra U, Dutta S, De A, Chatterjee MK, Bhattacharya SK (২০০১)। "Ceftriaxone therapy in ciprofloxacin treatment failure typhoid fever in children"। Indian J Med Res113: 210–3। পিএমআইডি 11816954
  13. Коваленко А.Н.; ও অন্যান্য (২০১১)। "Особенности клиники, диагностики и лечения брюшного тифа у лиц молодого возраста"। Voen.-meditsinskii zhurnal332 (1): 33–39।
  14. Bhutta ZA, Khan IA, Molla AM (১৯৯৪)। "Therapy of multidrug-resistant typhoid fever with oral cefixime vs. intravenous ceftriaxone"। Pediatr Infect Dis J13 (11): 990–993। ডিওআই:10.1097/00006454-199411000-00010পিএমআইডি 7845753
  15. Cao XT, Kneen R, Nguyen TA, Truong DL, White NJ, Parry CM (১৯৯৯)। "A comparative study of ofloxacin and cefixime for treatment of typhoid fever in children. The Dong Nai Pediatric Center Typhoid Study Group"। Pediatr Infect Dis J18 (3): 245–8। পিএমআইডি 10093945
  16. Baron S et al.
  17. "Diarrhoeal Diseases (Updated February 2009)"। নভেম্বর ২, ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৪-২৫. World Health Organization

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.