ঝালকাঠি এন এস কামিল মাদ্রাসা
ঝালকাঠি এন এস কামিল মাদরাসা বা নেছারাবাদ কামিল মাদরাসা বাংলাদেশের বরিশাল বিভাগের ঝালকাঠি জেলা শহরে অবস্থিত বাংলাদেশের একটি স্বনামধন্য ও জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।[1][2][3] এটি ঝালকাঠি জেলার বাসন্ডায় অবস্থিত। ১৯৫৬ সালে মাওলানা মুহাম্মদ আযীযুর রহমান নেছারাবাদী মাদরাসাটি প্রতিষ্ঠা করেন।[4][5] এখানে দাখিল, আলিম, ফাযিল ও কামিল শ্রেণীতে পাঠদান করা হয়।[6][7][8] এর দাখিল ও আলিম শিক্ষা কার্যক্রম বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড এবং ফাযিল ও কামিল ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত। এই মাদ্রাসার ফলাফল খুবই ভালো, সবসময় সারা দেশের মধ্যে শীর্ষ স্থান দখল করে থাকে।[9][10]
ধরন | এমপিও ভুক্ত |
---|---|
স্থাপিত | ১ জানুয়ারি ১৯৫০ |
প্রতিষ্ঠাতা | আযীযুর রহমান নেছারাবাদী কায়েদ |
প্রাতিষ্ঠানিক অধিভুক্তি | ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ (২০০৬- ২০১৬), ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয় (২০১৬- বর্তমান) |
অধ্যক্ষ | গাজী মুহাম্মদ শহিদুল ইসলাম |
শিক্ষার্থী | ৫০০০+ |
অবস্থান | , ২২.৬৫৮০৭১° উত্তর ৯০.১৯৫৭৬১° পূর্ব |
ইতিহাস
প্রখ্যাত আলেম হযরত মাওলানা মুহাম্মদ আযীযুর রহমান কায়েদ সাহেব.১৯৫০ সালে ফোরকানিয়া মাদরাসা নামে এর কার্যক্রম শুরু করেন। সেই সময় ঝালকাঠি পৌর এলাকার বাসন্ডা গ্রামে একটি ক্ষুদ্র মক্তব হিসাবে যাত্রা শুরু করে বর্তমান এনএস মাদ্রাসাটি। ১৯৬১ সালে মাদরাসাটি দাখিল ও ১৯৮৬ সালে কামিল (হাদীস) পর্যায়ে উন্নীত হয়।
মাদরাসার সাবেক অধ্যক্ষ মাওলানা মুহাম্মদ খলীলুর রহমান নেছারাবাদী (মাওলানা আযীযুর রহমান নেছারাবাদীর একমাত্র ছেলে) ১৯৯৪ সনে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে গভর্নিং বডি, শিক্ষকমন্ডলী ও অভিভাবকদের সহযোগিতায় মাদরাসার অবকাঠামোগত উন্নয়ন করার পরে বাংলাদেশের ইসলামী ও সাধারণ শিক্ষা জগতে দেশসেরা প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়।[11]
এই মাদ্রাসাটি ২০০৬ সালের ফাযিল ও কামিল ডিগ্রি প্রদানের জন্য ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া অধিভুক্ত হয়। এবং ২০০৬ সালে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকার অধীনে স্থানান্তরিত হয়।
শিক্ষা কার্যক্রম
মাদ্রাসার দাখিল ও আলিমে পর্যায়ে বিজ্ঞান ও মানবিক উভয় শাখা চালু আছে। ফাযিলে ২টি বিষয়ে অনার্সের সুযোগ রয়েছে এবং কামিল পর্যায়ে হাদীস, তাফসীর ও ফিকহ বিভাগ রয়েছে।[12][12]
মাদ্রাসায় ক্লাস নেওয়ার পাশাপাশি মাদ্রাসার আবাসিক হোস্টেলের ব্যবস্থা রয়েছে। আবাসিক ছাত্রদের জন্য বিষয় ভিত্তিক শিক্ষক রয়েছে, ছাত্রদের সার্বক্ষণিক তদারকি করার জন্য তাদের মাদ্রাসার ব্যক্তিগত তহবিল থেকে নিয়োগ করা হয়েছে।
শিক্ষার্থী- শিক্ষকগন
মাদ্রাসাটিতে দাখিল, আলিম, ফাজিল, কামিল সব শ্রেণি মিলিয়ে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার ছাত্র রয়েছে।
অবকাঠামো
নেছারাবাদীর দরবার শরিফ
আযীযুর রহমান নেছারাবাদীর ভক্তরা, শুভাকাঙ্ক্ষীগন, সাধারণ মানুষ সবাই তার কাছে আসতো নিজের প্রয়োজন মেটানোর জন্য। অনেকে আসতো পরামর্শ নিতে, অনেকে আসতো দ্বীনের ব্যপারে ফতোয়া নিতে, আলোচনা শুনতে। এইসকল মানুষের সাথে কথা বলার জন্য তার একটি আলাদা স্থান প্রয়োজন ছিলো। তাই তিনি মাদ্রাসার অভ্যন্তরেই প্রতিষ্ঠা করেছিলেন দরবার শরীফ। এখানে তিনি সবার সামনে আলোচনা করতেন। এখনো সেই দরবার শরীফ রয়েছে এখানে তার জীবনী নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠান হয়ে থাকে।
নেছারাবাদীর মাজার শরীফ
মাদ্রাসার অভ্যন্তরেই আযীযুর রহমান নেছারাবাদীর কবরস্থ করা হয়, বর্তমানে এটা কিছু দর্শনীয় স্থান হয়ে গিয়েছে। মাদ্রাসায় বহু মানুষ আসে এই মাজার দেখতে। এখানে এসে সবাই কবর জিয়ারত করে, নিজেদের জন্য ও নেছারাবাদীর জন্য দোয়া করে।
সুযোগ-সুবিধা
মাদ্রাসাটি অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত একটি মাদ্রাসা। এর নিজস্ব জমির উপর সুবিশাল খেলার মাঠ রয়েছে, মসজিদ রয়েছে, লাইব্রেরি ভবন রয়েছে। মাদ্রাসার সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় হচ্ছে এই সুবিশাল মাঠ, এখানে ছাত্ররা অবসর সময়ে খেলাধুলা করে থাকে। মাদ্রাসাটির আকর্ষণীয় প্রধান ফটক কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশের প্রধান ফটকের আদলে তৈরি করা হয়েছে।
নেছারাবাদ কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ
মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের নামাজ পড়ার জন্য মাদ্রাসার অভ্যন্তরেই পাঁচ তলা বিশাল আয়তনের একটি আকর্ষণীয় মসজিদ রয়েছে। মাদ্রাসার আবাসিক ছাত্রদের ৫ ওয়াক্ত নামাজ বাধ্যতামূলকভাবে এই মসজিদে আদায় করতে হয়। এবং প্রতি জুম্মায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার ধর্মপ্রাণ মুসল্লীদের সমাগম ঘটে।
লাইব্রেরি কমপ্লেক্স ভবন
মাদ্রাসার ছাত্রদের জন্য উন্মুক্ত একটি বিশাল লাইব্রেরি রয়েছে, এখানে ইসলামের ইতিহাস, বাংলাদেশের ইতিহাস, ইসলামি রাজনীতি, অর্থনীতি সহ সকল ধরনের বই পাওয়া যায়। ছাত্ররা এখানে এসে বই পড়তে পারে, এবং প্রয়োজন অনুসারে এখান থেকে বই সংগ্রহ করতে পারে।
শিক্ষা-সহায়ক কার্যক্রম
এই মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠা করেছিলো ঝালকাঠি অঞ্চলের বিশিষ্ট পীর মাওলানা মুহাম্মদ আযীযুর রহমান নেছারাবাদী, তার জীবিত থাকাকালীন মাদ্রাসার অভ্যন্তরে একটি দরবার শরীফ প্রতিষ্ঠা করেছিলো নিজের প্রয়োজনে। মাদ্রাসার সার্বিক তত্ত্বাবধায়ন করার জন্য তিনি সবসময় মাদ্রাসাতে অবস্থান করতেন।
উল্লেখযোগ্য প্রাক্তন শিক্ষার্থী
মাওলানা আব্দুল মতিন, পীর সাহেব, নাঙ্গুলী দরবার শরীফ।
অধ্যাপক মুহাম্মদ শহীদুল হক, চেয়ারম্যান, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
অধ্যাপক মুহাম্মদ আমীনুল হক, দাওয়াহ এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, আন্তর্জান্তিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্রগ্রাম।
অধ্যক্ষ মুহাম্মদ ফয়জুল হক
ডাঃ হাফিজুর রহমান
তথ্যসূত্র
- "Jhalokathi N S Kamil Madrasa topped in Madrasa Board"। আমাদের বরিশাল। ২ সেপ্টেম্বর ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ মে ২০১৫।
- "ঝালকাঠি এন এস কামিল মাদরাসা দেশের তৃতীয়"। আমাদের বরিশাল। ১৩ আগস্ট ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ২৯ মে ২০১৫।
- প্রতিবেদক, নিজস্ব। "এইচএসসির টুকেরা খবর"। Prothomalo। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৬-০৩।
- "ঝালকাঠি এন এস কামিল মাদরাসা - ঝালকাঠি জেলা"। জাতীয় তথ্য বাতায়ন। সংগ্রহের তারিখ ২৯ মে ২০১৫।
- "ঝালকাঠি এন এস কামিল মাদ্রাসা (নেছারাবাদ মাদ্রাসা)"। Education Watch | এডুকেশন ওয়াচ (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২০-০৫-১৬। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৬-০৩।
- "ঝালকাঠি এন এস কামিল মাদ্রাসা জেডিসি পরীক্ষায় বিভাগে প্রথম, বোর্ডে ৫ম"। দৈনিক যায় যায় দিন। ২৮ ডিসেম্বর ২০১২। সংগ্রহের তারিখ ২৯ মে ২০১৫।
- "দাখিলে বাংলাদেশে প্রথম ঝালকাঠীর এন এস কামিল মাদরাসা"। দৈনিক জনতা। ২০ জুন ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ মে ২০১৫।
- "ঝালকাঠি এন এস কামিল মাদরাসা তৃতীয় স্থান"। সংগ্রহের তারিখ ২৯ মে ২০১৫।
- "বোর্ড সেরা ঝালকাঠি এন এস কামিল মাদরাসা"। banglanews24.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৬-০৩।
- "মাদ্রাসা বোর্ডে ঝালকাঠির এনএস কামিল মাদ্রাসা দ্বিতীয়"। NTV Online (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৫-০৫-৩০। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৬-০৩।
- Dainikshiksha। "ঝালকাঠি এনএস কামিল মাদ্রাসা এবারও জিপিএ-৫ প্রাপ্তিতে শীর্ষস্থান - দৈনিকশিক্ষা"। Dainik shiksha (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৬-০৩।
- ডেস্ক, ইনকিলাব। "মাদরাসা বোর্ডে শীর্ষে ঝালকাঠি এন এস কামিল মাদরাসা"। DailyInqilabOnline। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৬-০৩।