জ্যাক কাউয়ি

জন কাউয়ি, ওবিই (ইংরেজি: Jack Cowie; জন্ম: ৩০ মার্চ, ১৯১২ - মৃত্যু: ৩ জুন, ১৯৯৪) অকল্যান্ডে জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত নিউজিল্যান্ডীয় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার ও আম্পায়ার ছিলেন। নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট দলের পক্ষে ১৯৩৭ থেকে ১৯৪৯ সময়কালে মাত্র নয় টেস্ট খেলার সুযোগ পেয়েছেন। নিউজিল্যান্ডের সীমিত আকারের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশগ্রহণ ও ১৯৩৯ থেকে ১৯৪৫ সময়কালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দামামাই এর প্রধান কারণ ছিল। ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অকল্যান্ডের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। দলে তিনি মূলতঃ ডানহাতি ফাস্ট-মিডিয়াম বোলার ছিলেন। উদ্বোধনী বোলারের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিং করতেন 'বুল' ডাকনামে পরিচিত জ্যাক কাউয়ি। খেলোয়াড়ী জীবন থেকে অবসর নেয়ার পর ১৯৫৬ থেকে ১৯৫৯ সময়কালে ৩ টেস্টে আম্পায়ারের দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।

জ্যাক কাউয়ি
১৯৩৭ সালের সংগৃহীত স্থিরচিত্রে জ্যাক কাউয়ি
ব্যক্তিগত তথ্য
পূর্ণ নামজন কাউয়ি
জন্ম(১৯১২-০৩-৩০)৩০ মার্চ ১৯১২
অকল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড
মৃত্যু৩ জুন ১৯৯৪(1994-06-03) (বয়স ৮২)
লোয়ার হাট, ওয়েলিংটন, নিউজিল্যান্ড
ডাকনামবুল
ব্যাটিংয়ের ধরনডানহাতি
বোলিংয়ের ধরনডানহাতি ফাস্ট-মিডিয়াম
ভূমিকাউদ্বোধনী বোলার, প্রশাসক
আন্তর্জাতিক তথ্য
জাতীয় দল
টেস্ট অভিষেক
(ক্যাপ ২৭)
২৬ জুন ১৯৩৭ বনাম ইংল্যান্ড
শেষ টেস্ট১৬ আগস্ট ১৯৪৯ বনাম ইংল্যান্ড
ঘরোয়া দলের তথ্য
বছরদল
১৯৩২/৩৩–১৯৪৯/৫০অকল্যান্ড
আম্পায়ারিং তথ্য
টেস্ট আম্পায়ার৩ (১৯৫৬–১৯৫৯)
এফসি আম্পায়ার১৮ (১৯৫৫–১৯৬১)
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান
প্রতিযোগিতা টেস্ট এফসি
ম্যাচ সংখ্যা ৮৬
রানের সংখ্যা ৯০ ৭৬২
ব্যাটিং গড় ১০.০০ ১০.১৬
১০০/৫০ –/– –/১
সর্বোচ্চ রান ৪৫ ৫৪
বল করেছে ২০২৮ ২০৪০৭
উইকেট ৪৫ ৩৫৯
বোলিং গড় ২১.৫৩ ২২.২৮
ইনিংসে ৫ উইকেট ২০
ম্যাচে ১০ উইকেট
সেরা বোলিং ৬/৪০ ৬/৩
ক্যাচ/স্ট্যাম্পিং ৩/– ৩৫/–
উৎস: ইএসপিএনক্রিকইনফো.কম, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৭

প্রারম্ভিক জীবন

নিচেরসারিতে কার্যকরী ডানহাতি ব্যাটসম্যান ও ডানহাতি ফাস্ট-মিডিয়াম বোলিংয়ের অধিকারী কাউয়ি ১৯৩২-৩৩ মৌসুমে অকল্যান্ডের পক্ষে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করতে শুরু করেন। এরপর ১৯৩৪-৩৫ মৌসুম থেকে প্লাঙ্কেট শীল্ডে নিয়মিত পদচারণা ছিল তার।[1] ১৯৯৫ সালে তার সম্পর্কে উইজডেনের স্মরণীকায় উল্লেখ করা হয় যে, ব্যাটসম্যান হিসেবে তিনি যাত্রা শুরু করেন। তবে, অকল্যান্ড দলে অনেক প্রতিভাধর ব্যাটসম্যান থাকায় দলে নিজের অবস্থান নিশ্চিতকরণে তাকে বোলার হতে হয়েছিল।[2] বোলার হিসেবে তিনি নিখুঁত বোলিং করতেন ও পিচে পড়ার পর বলকে বাঁক খাওয়ানোতে সক্ষমতা দেখাতেন। উইজডেন লক্ষ্য করে যে, পরবর্তীকালে বিখ্যাত নিউজিল্যান্ডীয় বোলার রিচার্ড হ্যাডলির বোলিং অনেকটাই তার মতো ছিল।[2]

১৯৩৬-৩৭ মৌসুমের পূর্ব-পর্যন্ত ঘরোয়া ক্রিকেটে তেমন সফলতা পাননি। তবে, ঐ মৌসুমে চারটি প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশ নিয়ে ২১ উইকেট পান। তন্মধ্যে, অকল্যান্ডে ওয়েলিংটনের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো পাঁচ-উইকেট লাভ করেন। খেলায় তার বোলিং পরিসংখ্যান ছিল ৫/৮১।[3] সুন্দর ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৩৭ সালে কার্লি পেজের নেতৃত্বে নিউজিল্যান্ড দলের সদস্যরূপে ইংল্যান্ড গমন করেন।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট

২৬ জুন, ১৯৩৭ তারিখে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জ্যাক কাউয়ি’র টেস্ট অভিষেক ঘটে। ১৯৩৭ সালের সফরের বিষয়ে উইজডেন মন্তব্য করে যে, দলের অসাধারণ খেলোয়াড় ছিলেন কাউয়ি। এ সফরের পূর্বে তিনি মাত্র ৪৫টি প্রথম-শ্রেণীর উইকেট পেয়েছিলেন। ইংল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ড সফরে তিনি ১৯.৯৫ গড়ে ১১৪টি উইকেট তুলে নেন। সফরকারী দলের বোলিং গড়ে ও সংগ্রহের দিক দিয়ে তিনি অপ্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন। উইজডেন জানায়, কেবলমাত্র প্রথমসারির ফাস্ট-মিডিয়াম বোলারই ছিলেন না তিনি, বরং বর্তমান যুগের ক্রিকেটে তার ধরনের যে-কোন বোলারের সমমানের ছিলেন। নিউজিল্যান্ডে তার সাথে কিংবা বিপক্ষে যেভাবে বিষ্ময়াভূত ছিলেন তেমনি তিনি ইংরেজ উইকেটে প্রদর্শন করেছেন। সঠিক দিক ও নিশানা বজায় রেখে প্রায়শঃই তিনি অফ-ব্রেক বোলিং করতেন। তিনি বলকে লিফট ও সুইং করাতে পারতেন। ফলে বোলার হিসেবে তাকে সেরা ব্যাটসম্যানেরা সমীহ করে চলতো।

ইংল্যান্ডের আবহাওয়ায় খুব দ্রুত নিজেকে মানিয়ে নেন। প্রথম প্রস্তুতিমূলক খেলায় সারের বিপক্ষে পাঁচ উইকেট পান।[4] অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে তিনি ৬/৫০ পান যা তার খেলোয়াড়ী জীবনের সেরা বোলিং পরিসংখ্যান ছিল। তন্মধ্যে, এক পর্যায়ে ২১ বলে পাঁচ রান দিয়ে চার উইকেট পান।[5] জুন মাসের শেষদিকে প্রথম টেস্ট শুরুর পূর্বে কাউয়ি ৩২টি প্রথম-শ্রেণীর উইকেট লাভ করেন।

লর্ডসে তার টেস্ট অভিষেক ঘটে। ইংল্যান্ডের পক্ষে অভিষেক ঘটা উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানদ্বয় - লিওনার্ড হাটনজিম পার্কস, সিনিয়র উভয় ইনিংসেই তার শিকারে পরিণত হন। ঐ টেস্টে হাটন দুই ইনিংস মিলিয়ে মাত্র ১ রান তুলতে পেরেছিলেন। এছাড়াও প্রথম ইনিংসে চার্লস বার্নেটবিল ভোসকে আউট করে ৪/১১৮ বোলিং পরিসংখ্যান গড়েন। দ্বিতীয় ইনিংসে ইংল্যান্ড ইনিংস ঘোষণা করার পূর্বে চার উইকেট হারায়। এ সময় তার পরিসংখ্যান ছিল ২/৪৯। খেলাটি ড্রয়ে পরিণত হয়।[6]

লর্ডস টেস্টের পর কাউয়ি টানটনে সমারসেটের বিপক্ষে আট উইকেট পান। তন্মধ্যে, দ্বিতীয় ইনিংসে ৫/৬০ লাভ করেন।[7] তবে সফরের মাঝামাঝি সময়ে অনুষ্ঠিত অন্যান্য খেলায় কম সফলতা পান। এ সময় উইজডেন জুলাইয়ে স্কটল্যান্ড সফরের পূর্বে বিশ্রামের সুযোগ লাভের পরিভাষা ব্যবহার করে।

ম্যানচেস্টারে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট শুরু হয়। ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় ইংল্যান্ড জয়ী হয়। উইজডেনের ভাষায়, বিশাল ব্যবধানের জয়।[8] তবে, কাউয়ির জন্য খেলাটি স্মরণীয় হয়ে থাকবে। প্রথম ইনিংসে ৪/৭৩ লাভের পর দ্বিতীয় ইনিংসে ৬/৬৭ লাভ করে। খেলায় তিনি ১০/১৪০ পান।[9] এরফলে প্রথম নিউজিল্যান্ডীয় হিসেবে টেস্টে ১০ উইকেট লাভ করেন। ৩৮ বছর পর্যন্ত তার এ অর্জনটি টিকেছিল।[10] উইজডেন এ প্রসঙ্গে লিখে যে, তিনি স্ট্যাম্প বরাবর বোলিং করেছিলেন। কোন কোন সময় ধীরগতিসম্পন্ন পিচ ও ভেজা বলকে নিয়ে ক্রীড়াশৈলীতে প্রভূত্ব দেখিয়েছেন।

পরের খেলায় সারের বিপক্ষে মাঠে আঘাত পান। এরফলে এক সপ্তাহ ক্রিকেট থেকে বিরত থাকেন।[11] এসেক্সের বিপক্ষে অংশগ্রহণ করে খেলায় ফিরে আসেন। ৩/৫৬ ও ৫/৬৬ লাভ করলেও খেলায় ১০ উইকেট লাভকারী জ্যাক ডানিংয়ের ক্রীড়াশৈলীর কাছে তার অবদান ম্লান হয়ে যায়।[12] এর পরপরই প্রথম-শ্রেণীর মর্যাদাবিহীন ২-দিনের খেলায় স্যার জুলিয়েন কান একাদশের বিরুদ্ধে অংশ নেন। উভয় ইনিংসে পাঁচটি করে খেলায় মোট দশ উইকেট পান তিনি।[13]

ওভালে সিরিজের তৃতীয় টেস্ট অনুষ্ঠিত হয়। তবে, বৃষ্টি ব্যাপক বাঁধার প্রাচীর গড়ে তোলে। ঐ গ্রীষ্মে কাউয়ি তুলনামূলকভাবে কম সফলতা লাভ করেন। তাস্বত্ত্বেও প্রথম ইনিংসে ইংল্যান্ডের সাত উইকেট পতনের তিনটিতেই তার প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ ছিল।[14] ২০.৭৮ গড়ে সিরিজে ১৯ উইকেট লাভ করে দলের শীর্ষস্থানীয় বোলার হন।[15] দ্বিতীয় সর্বাধিক সফলতম বোলার ছিলেন গিফ ভিভিয়ানের আট উইকেট লাভ করা। এছাড়াও, সিরিজে তিনি সর্বাধিক উইকেট শিকারী ছিলেন।

সফরের বাদ-বাকী প্রথম-শ্রেণীর খেলাগুলোয়ও তার চমৎকার ক্রীড়াশৈলী অব্যাহত রাখেন। কম্বাইন্ড সার্ভিসেসের বিপক্ষে আট উইকেট পান। তন্মধ্যে, দ্বিতীয় ইনিংসে পেয়েছিলেন ৫/৩৬। এরপর হ্যাম্পশায়ারের বিপক্ষে পাঁচ এবং কেন্ট ও সাসেক্সের খেলায় সাতটি করে উইকেট পেয়েছিলেন।[16][17][18][19]

ফোকস্টোন উৎসবের খেলায় ইংরেজ একাদশের বিপক্ষে সাত উইকেট লাভের পাশাপাশি প্রথম উইকেটটি ঐ মৌসুমে কাউয়ির শততম উইকেট ছিল।[20] ইংল্যান্ডে চূড়ান্ত খেলাটি স্কারবোরায় এইচ. ডি. জি. লেভেসন গাওয়ার একাদশের বিপক্ষে অনুষ্ঠিত হয়। খেলায় তিনি ৩৬ রানে আউট হন যা ঐ সময়ে তার সেরা সংগ্রহ ছিল। নবম উইকেটে টম লরির সাথে জুটি গড়ে ৭৪ রান তুলেন।

আয়ারল্যান্ড গমন

অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত খেলায় নিউজিল্যান্ডীয়রা ডাবলিনে আয়ারল্যান্ডের মুখোমুখি হয়। প্রথম-শ্রেণীর এ খেলাটি একদিনেই শেষ হয়ে যায় যা পরবর্তী ১২ বছর টিকেছিল।[21] আইরিশদের প্রথম ইনিংস ৭৯ রানে গুটিয়ে গেলেও তিনি কোন উইকেট পাননি। এর প্রত্যুত্তরে নিউজিল্যান্ড ৬৪ রানে থেমে যায়। আয়ারল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংস বেশ বিপর্যয়কর ছিল। কেবলমাত্র তিনজন ব্যাটসম্যান রান করতে সক্ষম হন। মোট ৩০ রানের মধ্যে ১০টিই ছিল অতিরিক্ত রান। জ্যাক কাউয়ি আট ওভার বোলিং করে তিন রান দিয়ে ছয় উইকেট তুলে নেন যা তার খেলোয়াড়ী জীবনের সেরা বোলিং পরিসংখ্যানের মর্যাদা পায়। উইজডেনের ভাষায় তিনি অপ্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন।[21][22]

নিউজিল্যান্ডে প্রত্যাবর্তন

১৯৩৭ সালে ইংল্যান্ড সফরের পর উইজডেন মন্তব্য করে যে, যদি তিনি অস্ট্রেলীয় হতেন তাহলে বয়সের দিক দিয়ে বিষ্ময়ের কারণ হয়ে দাঁড়াতেন।[23]

১৯৩৭ সালে ইংল্যান্ড সফরের পর স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দুই খেলায় অংশ নেয়। কিন্তু এর পরই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে তার খেলোয়াড়ী জীবনে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। এ সময়ে টেস্ট খেলাও খুব কম অনুষ্ঠিত হতো। ১৯৪০ সালে নিউজিল্যান্ডে প্রথম-শ্রেণীর খেলা স্থগিত করার পূর্বে তিনটি ঘরোয়া মৌসুমে নিয়মিত উইকেট শিকারী ছিলেন। তবে এ সময়ে নিউজিল্যান্ড কোন টেস্ট খেলায় অংশ নেয়নি।

১৯৪৫-৪৬ মৌসুমে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটের প্রচলন নিয়মিতভাবে অনুষ্ঠিত হলে ডন ব্র্যাডম্যানবিহীন অবস্থায় তুলনামূলকভাবে সেরা দলকে নিয়ে বিল ব্রাউনের নেতৃত্বে অস্ট্রেলিয়া দল নিউজিল্যান্ড গমন করে। দলটি পাঁচটি প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশ নেয়। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে অনুষ্ঠিত খেলাটি পরবর্তীতে টেস্ট খেলার মর্যাদা পায়। নিম্নমূখী রানের খেলাটি দুইদিনেই নিজেদের অনুকূলে নিয়ে আসে সফরকারী অস্ট্রেলিয়া দল। প্রথম ইনিংসে স্বাগতিকরা ৪২ ও দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র ৫৪ রানে অল-আউট হয়। অস্ট্রেলিয়া দল ১৯৯/৮ করে ইনিংস ঘোষণা করে। তাস্বত্ত্বেও তিনি ৪০ রান খরচায় ছয় উইকেট পান।[24] এটিই তার টেস্টে সেরা বোলিং পরিসংখ্যান ছিল।

পরের ১৯৪৬-৪৭ মৌসুমে নিউজিল্যান্ড আরও একটি টেস্টে অংশ নেয়। অ্যাশেজ সিরিজে হেরে ইংরেজ দল নিউজিল্যান্ড সফরে আসে। টেস্টটি বৃষ্টির কবলে পড়ে। এ টেস্টে কাউয়ি বলসহ অপ্রত্যাশিতভাবে ব্যাট হাতে সেরা ক্রীড়ানৈপুণ্য প্রদর্শন করেন। নিউজিল্যান্ডের একমাত্র ইনিংসে তিনি ৪৫ রান তুলেন যা টেস্টে তার সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত সংগ্রহ। নবম উইকেট জুটিতে টম বার্টের সাথে ৬৪ রান তুলেন। এরপর বোলিং উদ্বোধনে নেমে প্রথম ওভারেই সিরিল ওয়াশব্রুকের উইকেট লাভ করে। ইংল্যান্ডের পতন ঘটা সাত উইকেটের ছয়টি তুলে নেন ৮৩ রানের বিনিময়ে।[25]

১৯৪৭-৪৮ ও ১৯৪৮-৪৯ মৌসুমে ঘরোয়া সীমিত ওভারের খেলায় কাউয়ি আরও উইকেট পান। তবে এরজন্য তুলনামূলকভাবে বেশ রান প্রদান করতে হয়েছিল তাকে। তাস্বত্ত্বেও, ওয়াল্টার হ্যাডলি’র নেতৃত্বে ১৯৪৯ সালে দ্বিতীয়বারের মতো ইংল্যান্ড সফরে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নির্বাচিত হন।

ইংল্যান্ড সফর

৩৭ বছর বয়সেও দলের অন্যতম অমূল্য রত্ন হিসেবে বিবেচিত ছিলেন জ্যাক কাউয়ি। তবে, উষ্ণ ও শুষ্ক গ্রীষ্মে পিচ থেকে তেমন সহায়তা পাননি তিনি। উইজডেনের ভাষ্য মতে, তারা তাকে বিচারের বাইরে রেখেছিল।[26]

খেলোয়াড়ী জীবনে প্রথমবারের মতো এ সফরে আঘাতে জর্জরিত হন। উইজডেন মন্তব্য করে যে, তার আঘাত তেমন গুরুতর ছিল না। তৃতীয় ও চতুর্থ টেস্টের মাঝামাঝি তিন সপ্তাহ খেলার বাইরে অবস্থান করেন তিনি। এ আঘাতের ফলে সফরের ৩২টি প্রথম-শ্রেণীর খেলার মধ্যে ১৮টিতে অংশগ্রহণ করা তার পক্ষে সম্ভবপর হয়। ২৭.১৩ গড়ে ৫৯ উইকেট পান। এছাড়াও, তার ব্যাটিং তেমন কথা বলেনি। কেবলমাত্র স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম-শ্রেণীর খেলায় ৪৭ রান তুলতে পেরেছিলেন। এ খেলাতেই তিনি দ্বিতীয় ইনিংসে ৬/৬৬ পান।[27] সফরের শুরুতে লিচেস্টারশায়ারের বিপক্ষে সেরা বোলিং পরিসংখ্যান গড়েন ৬/৫৪।[28]

গ্রীষ্মের চার টেস্টের সবকটিতেই অংশ নেন। সবকটি টেস্টই ড্রয়ে পরিণত হয়। প্রথম খেলায় প্রথম দিনে ৩৬ ওভার বোলিং করেন। একমাত্র বোলার হিসেবে তিনি ইংল্যান্ডের জন্য ভয়ঙ্কর ছিলেন।[29] প্রথম ইনিংসে ১২৭ রান দিয়ে পাঁচ উইকেট পান। কিন্তু মাংসপেশীতে টান পড়ায় ব্যাটিংকালে রানারের প্রয়োজন পড়ে। দ্বিতীয় ইনিংসে তিনি বোলিং করতে পারেননি।

দ্বিতীয় টেস্টের পূর্বেই সুস্থ হন। তবে কোন প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশ নেননি। কাউয়ি বেশ লম্বা স্পেলে বোলিং করতেন। সঠিকমানের দ্রুতগতিসম্পন্ন পেস করলেও বেশ কয়েকবার বলকে মারতে প্রলুদ্ধ করেন তিনি।[30] গরমে তিনি ক্লান্ত হয়ে পড়েন। ৬৪ রানে ২ উইকেট পান। তৃতীয় খেলায় নিউজিল্যান্ডের বোলিং আক্রমণে বিরাট ভূমিকা রাখেন। ৯৮ রান দিয়ে ৩ উইকেট তুলে নেন।[31] এ সময় ইংল্যান্ড রানের জন্য ছটফট করছিল। সফরের চতুর্থ ও চূড়ান্ত টেস্টে আবারও গরমের মোকাবেলা করতে হয় তাকে। ফেন ক্রেসওয়েলকে সাথে নিয়ে ইংরেজ উইকেটগুলো ভাগাভাগি করে নেন। তবে তার চার উইকেট লাভে ১২৩ রান ব্যয় করতে হয় ও ইনিংসের শেষদিকে বেশ কার্যকরী বোলিং করেছিলেন।[32]

এ সিরিজে গড়ের দিক দিয়ে যে-কোন নিউজিল্যান্ডীয়ের তুলনায় শীর্ষে ছিলেন। ৩২.২১ গড়ে ১৪ টেস্ট উইকেট পান। তবে, উইকেট লাভের দিক দিয়ে বামহাতি স্লো বোলার টম বার্ট ১৭ উইকেট পান। কিন্তু এর জন্য তাকে ৩৩ রানের বেশি রান খরচ করতে হয়েছিল।[33]

এ সফরের শেষদিকে মিডলসেক্সের বিপক্ষে আরও একবার পাঁচ উইকেট পেয়েছিলেন জ্যাক কাউয়ি।[34] পরবর্তীতে এটিই প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে সর্বশেষ উল্লেখযোগ্য বোলিংরূপে বিবেচিত হয়েছিল।

অবসর

ইংল্যান্ড থেকে ফিরে আসার পর ওয়েলিংটনে বীমা পেশায় যোগ দেন। ১৯৪৯-৫০ মৌসুমে নিউজিল্যান্ডের ঘরোয়া ক্রিকেটে অকল্যান্ডের পক্ষে আরও একটি খেলায় অংশ নিয়েছিলেন তিনি। প্রতিপক্ষ ছিল টেস্টবিহীন অস্ট্রেলিয়া দল। এরপরই তিনি খেলোয়াড়ী জগৎ থেকে অবসর গ্রহণ করেন।

খেলোয়াড়ী জীবন থেকে অবসর নেয়ার পর ১৯৫৬ সালে টেস্ট আম্পায়ার হিসেবে অভিষেক ঘটে জ্যাক কাউয়ির। সর্বমোট তিনটি টেস্ট খেলা পরিচালনা করার সুযোগ হয় তার। ১৯৫৯ সালে ল্যাঙ্কাশায়ারের ল্যাঙ্কাস্টার পার্কে টেস্ট খেলায় আম্পায়ারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। উইকেটের অপর প্রান্তে তাকে যোগ্য সহায়তা করেন এরিক টিন্ডিল। তিনদিনের মধ্যেই ইংল্যান্ড দল ইনিংস ও ৯৯ রানে জয় পায়। খেলার উল্লেখযোগ্য দিক ছিল টেড ডেক্সটারের ১৪১ রান ও টনি লকের ৫/৩১ ও ৬/৫৩ বোলিং পরিসংখ্যান।[35]

শীত মৌসুমে পেশাদার ফুটবলেও অংশ নেন। অকল্যান্ডের পক্ষে ১৪ মৌসুমে গোলরক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। পরবর্তীকালে নিউজিল্যান্ড ফুটবল পরিচালনা পরিষদে যোগ দেন। ১৯৭২ সালে ওবিই পদবীতে ভূষিত হন। ১৯৭২ থেকে ১৯৭৮ সময়কালে ওশেনিয়া ফুটবল কনফেডারেশনের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।[36]

ব্যক্তিগত জীবন

১৯৩৬ সালে নায়রি ওয়ালেন নাম্নী এক রমণীর পাণিগ্রহণ করেন। এ দম্পতির দুই কন্যা ছিল।[37] অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড ইন্স্যুরেন্স গ্রুপ টি এন্ড জি মিউচুয়াল লাইফ এসুরেন্স সোসাইটিতে ৪৭ বছর কাজ করেছেন।

৩ জুন, ১৯৯৪ তারিখে ৮২ বছর বয়সে ওয়েলিংটনের লোয়ার হাট এলাকায় জ্যাক কাউয়ি’র দেহাবসান ঘটে।

তথ্যসূত্র

  1. "First-class Bowling in each Season by Jack Cowie"। www.cricketarchive.com। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৫-২২
  2. "Obituary"। Wisden Cricketers' Almanack (1995 সংস্করণ)। Wisden। পৃষ্ঠা 1382
  3. "Auckland v Wellington"। www.cricketarchive.com। ৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৩৭। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৫-২২
  4. "Surrey v New Zealanders"। www.cricketarchive.com। ৮ মে ১৯৩৭। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৫-২৯
  5. "New Zealanders in England in 1937"। Wisden Cricketers' Almanack (1938 সংস্করণ)। Wisden। পৃষ্ঠা 204
  6. "England v New Zealand"। www.cricketarchive.com। ২৬ জুন ১৯৩৭। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৫-২৯
  7. "Somerset v New Zealanders"। www.cricketarchive.com। ৩০ জুন ১৯৩৭। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৫-২৯
  8. "New Zealanders in England in 1937"। Wisden Cricketers' Almanack (1938 সংস্করণ)। Wisden। পৃষ্ঠা 224–226।
  9. "England v New Zealand"। www.cricketarchive.com। ২৪ জুলাই ১৯৩৭। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৫-২৯
  10. "Ten or More Wickets in a Match for New Zealand in Test Cricket"। www.cricketarchive.com। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৫-২৯
  11. "New Zealanders in England in 1937"। Wisden Cricketers' Almanack (1938 সংস্করণ)। Wisden। পৃষ্ঠা 226
  12. "Essex v New Zealanders"। www.cricketarchive.com। ৭ আগস্ট ১৯৩৭। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৫-২৯
  13. "Sir J Cahn's XI v New Zealanders"। www.cricketarchive.com। ১১ আগস্ট ১৯৩৭। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৫-২৯
  14. "New Zealanders in England in 1937"। Wisden Cricketers' Almanack (1938 সংস্করণ)। Wisden। পৃষ্ঠা 231–233।
  15. "New Zealanders in England in 1937"। Wisden Cricketers' Almanack (1938 সংস্করণ)। Wisden। পৃষ্ঠা 198
  16. "Combined Services v New Zealanders"। www.cricketarchive.com। ১৮ আগস্ট ১৯৩৭। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৫-৩০
  17. "Hampshire v New Zealanders"। www.cricketarchive.com। ২১ আগস্ট ১৯৩৭। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৫-৩০
  18. "Kent v New Zealanders"। www.cricketarchive.com। ২৫ আগস্ট ১৯৩৭। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৫-৩০
  19. "Sussex v New Zealanders"। www.cricketarchive.com। ২৮ আগস্ট ১৯৩৭। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৫-৩০
  20. "New Zealanders in England in 1937"। Wisden Cricketers' Almanack (1938 সংস্করণ)। Wisden। পৃষ্ঠা 238
  21. "New Zealanders in England in 1937"। Wisden Cricketers' Almanack (1938 সংস্করণ)। Wisden। পৃষ্ঠা 241
  22. "Ireland v New Zealanders"। www.cricketarchive.com। ১১ সেপ্টেম্বর ১৯৩৭। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৫-৩০
  23. "New Zealanders in England in 1937"। Wisden Cricketers' Almanack (1938 সংস্করণ)। Wisden। পৃষ্ঠা 192–196।
  24. "New Zealand v Australia"। www.cricketarchive.com। ২৯ মার্চ ১৯৪৬। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৬-১২
  25. "New Zealand v England"। www.cricketarchive.com। ২১ মার্চ ১৯৪৭। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৬-১২
  26. "New Zealanders in England, 1949"। Wisden Cricketers' Almanack (1950 সংস্করণ)। Wisden। পৃষ্ঠা 210
  27. "Scotland v New Zealand"। www.cricketarchive.com। ১৬ জুলাই ১৯৪৯। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৬-১৯
  28. "Leicestershire v New Zealand"। www.cricketarchive.com। ১৪ মে ১৯৪৯। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৬-১৯
  29. "New Zealanders in England, 1949"। Wisden Cricketers' Almanack (1950 সংস্করণ)। Wisden। পৃষ্ঠা 226–228।
  30. "New Zealanders in England, 1949"। Wisden Cricketers' Almanack (1950 সংস্করণ)। Wisden। পৃষ্ঠা 231–233।
  31. "New Zealanders in England, 1949"। Wisden Cricketers' Almanack (1950 সংস্করণ)। Wisden। পৃষ্ঠা 240–242।
  32. "New Zealanders in England, 1949"। Wisden Cricketers' Almanack (1950 সংস্করণ)। Wisden। পৃষ্ঠা 247–249।
  33. "New Zealanders in England, 1949"। Wisden Cricketers' Almanack (1950 সংস্করণ)। Wisden। পৃষ্ঠা 212
  34. "Middlesex v New Zealand"। www.cricketarchive.com। ২৭ আগস্ট ১৯৪৯। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৬-১৯
  35. 1st Test, England tour of New Zealand at Christchurch, Feb 27 – Mar 2 1959 | Match Summary | ESPNCricinfo. Cricinfo.com (2 March 1959). Retrieved on 2018-07-02.
  36. https://web.archive.org/web/20091006064630/http://www.oceaniafootball.com/ofcorgcontent/history.ofcpc
  37. Don Neely। "John Cowie 1912–1994"। Dictionary of New Zealand Biography। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৬-১৯

আরও দেখুন

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.