জ্যাকি গ্র্যান্ট

জর্জ কোপল্যান্ড জ্যাকি গ্র্যান্ট (ইংরেজি: Jackie Grant; জন্ম: ৯ মে, ১৯০৭ - মৃত্যু: ২৬ অক্টোবর, ১৯৭৮) ত্রিনিদাদ ও টোবাগোর পোর্ট অব স্পেনে জন্মগ্রহণকারী ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার ও ধর্মপ্রচারক ছিলেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। অধিনায়ক হিসেবে বেশ কয়েকটি সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলকে পরিচালনা করেছেন।

জ্যাকি গ্র্যান্ট
১৯৩০-৩১ মৌসুমের সংগৃহীত স্থিরচিত্রে জ্যাকি গ্র্যান্ট
ব্যক্তিগত তথ্য
পূর্ণ নামজর্জ কোপল্যান্ড গ্র্যান্ট
জন্ম৯ মে, ১৯০৭
পোর্ট অব স্পেন, ত্রিনিদাদ ও টোবাগো
মৃত্যু২৬ অক্টোবর, ১৯৭৮
কেমব্রিজ, ইংল্যান্ড
ব্যাটিংয়ের ধরনডানহাতি
বোলিংয়ের ধরনডানহাতি ফাস্ট মিডিয়াম
ভূমিকাবোলার, অধিনায়ক
সম্পর্করল্ফ গ্র্যান্ট (ভ্রাতা), ফ্রেডরিক গ্র্যান্ট (ভ্রাতা)
আন্তর্জাতিক তথ্য
জাতীয় দল
টেস্ট অভিষেক
(ক্যাপ ৩১)
১২ ডিসেম্বর ১৯৩০ বনাম অস্ট্রেলিয়া
শেষ টেস্ট১৪ মার্চ ১৯৩৫ বনাম ইংল্যান্ড
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান
প্রতিযোগিতা টেস্ট এফসি
ম্যাচ সংখ্যা ১২ ৮১
রানের সংখ্যা ৪১৩ ৩৮৩১
ব্যাটিং গড় ২৫.৮১ ৩২.১৯
১০০/৫০ ০/৩ ৪/২০
সর্বোচ্চ রান ৭১* ১১৫
বল করেছে ২৪ ১৫৪১
উইকেট ১৯
বোলিং গড় - ৫১.০০
ইনিংসে ৫ উইকেট
ম্যাচে ১০ উইকেট
সেরা বোলিং -/- ৩/২৪
ক্যাচ/স্ট্যাম্পিং ১০/০ ৭১/০
উৎস: ইএসপিএনক্রিকইনফো.কম, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ক্রিকেটে ত্রিনিদাদ ও টোবাগো দলে তিনি মূলতঃ ডানহাতে ফাস্ট মিডিয়াম বোলিং করতেন। এছাড়াও, নিচেরসারিতে ডানহাতে ব্যাটিংয়ে পারদর্শীতা দেখিয়েছেন জ্যাকি গ্র্যান্ট

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট

পোর্ট অব স্পেনে জন্মগ্রহণকারী জ্যাকি গ্র্যান্ট নিজ শহর কুইন্স রয়্যাল কলেজে অধ্যয়ন করেন। পরবর্তীতে কেমব্রিজের ক্রাইস্টস কলেজে ভর্তি হন। বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালে গ্র্যান্ট প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে খেলার সুযোগ লাভ করেন।

১২ ডিসেম্বর, ১৯৩০ তারিখে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে জ্যাকি গ্র্যান্টের। টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে একই টেস্টে দুইবার অপরাজিত অর্ধ-শতরান সংগ্রহ করেছিলেন।[1]

অধিনায়কত্ব লাভ

১৯৩০ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট দলের অধিনায়কের দায়িত্ব নেয়ার প্রস্তাবনা পান। এ বিষয়টি অপ্রত্যাশিত ছিল। কেননা, তিনি তখনও দলের সদস্য হিসেবে মনোনীত হননি। সাম্প্রতিককালের এক গবেষণায় দেখা যায় যে, গ্র্যান্টকে মনোনয়ন করা হয়নি। তার ক্রিকেট বিষয়ে পারদর্শীতা ছিল ও অপ্রত্যাশিত ছিল না। কিন্তু, তার জাতিগত বিষয়টির কারণেই অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছিল। ঐ সময়ে দলকে পরিচালনার জন্য শ্বেতাঙ্গকে মনোনীত করা হতো। তবে, দলের সেরা খেলোয়াড়েরা কৃষ্ণাঙ্গ থাকা স্বত্ত্বেও এ সুযোগ তাদেরকে দেয়া হয়নি। দল নির্বাচকমণ্ডলী সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে, দলে যদি অধিনায়কের দায়িত্ব দেয়া হয় তাহলে কেবলমাত্র শ্বেতাঙ্গদের মাঝ থেকে নেয়া হবে।[2] তার দলে লিয়ারি কনস্ট্যান্টাইনের ন্যায় কৃষ্ণাঙ্গ খেলোয়াড় ছিলেন। কনস্ট্যান্টাইন পরবর্তীকালে ব্যারন কনস্ট্যান্টাইন হন এবং মন্ত্রিপরিষদের সভাপতি ও দেশের হাই কমিশনার হয়েছিলেন।[3]

ত্রিনিদাদ ও টোবাগো দলে জর্জ হ্যাডলি এবং হারম্যান গ্রিফিথম্যানি মার্টিনডেলের ন্যায় ফাস্ট বোলারদ্বয় ছিল। ১৯৩০-৩১ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়া, ১৯৩৩ ও ১৯৩৪-৩৫ মৌসুমে ইংল্যান্ড সফরে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলকে নিয়ে জ্যাকি গ্র্যান্ট পরিচালনা করেন।

ব্যক্তিগত জীবন

ক্রিকেট খেলার পাশাপাশি তিনি ত্রিনিদাদ ও টোবাগো জাতীয় ফুটবল দলের সদস্যরূপে অংশ নিতেন তিনি।[4] তার ছোট ভাই রল্ফ গ্র্যান্ট পরবর্তীতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পেয়েছিলেন। অন্য দুই ভাই ক্রিকেট খেললেও উচ্চ পর্যায়ের ক্রিকেটে সফলতা পাননি। রল্ফকে বিশ্ববিদ্যালয় দলে অনিয়মিতভাবে খেলানো হতো ও প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটার হিসেবে গণ্য করা হতো না। কিন্তু তিনি স্বভাবজাত ক্রীড়াবিদ হিসেবে জাতীয় দলে শৌখিন ফুটবলার ও দেশের পক্ষে হেভিওয়েট বক্সিং শিরোপাধারী হন। তাস্বত্ত্বেও রল্ফের মনোনয়নকে স্পষ্টতঃই তার নিচে রেখে দেয়া হয়।

ধর্মপ্রচারক

জ্যাকি গ্র্যান্ট ডারবানের কাছাকাছি এলাকায় অবস্থিত অ্যাডামস কলেজ নামীয় এক মিশন স্কুলে শিক্ষকতার জন্য গমন করেন। দক্ষিণ আফ্রিকান সরকারের বর্ণবাদ বৈষম্যের শিকারে পরিণত হওয়ায় জোরপূর্বক বিদ্যালয়টি বন্ধ করে দেয়া হয়। এ প্রসঙ্গে জ্যাকি গ্র্যান্ট তার ‘দ্য লিকুইডেশন অব অ্যাডামস কলেজ’ শীর্ষক গ্রন্থে বিস্তারিত উল্লেখ করেন। অবশ্য পরবর্তীকালে অ্যাডামস কলেজ চালু হলেও বিলুপ্ত ঘোষিত হয়েছিল।

১৯৩০-এর দশকে এ বিদ্যালয়ে ক্রিকেট খেলার প্রবর্তন করা হয়েছিল। ডারবানের সর্বত্র এ খেলাটি ছড়িয়ে দিতে কোপল্যান্ড গ্র্যান্ট পথিকৃতের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। অ্যাডামস কলেজকে নতুন এ ক্রীড়ার কেন্দ্রস্থলে পরিণত হয়।[5]

১৯৩৩ থেকে ১৯৪৫ সালের মধ্যে বিদ্যালয়টি কৃষ্ণাঙ্গদের মাঝে শিক্ষা প্রসারে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিদ্যালয়ের মর্যাদা পায়।[6] সেখানে দূর্বলমানের ক্ষুদ্রাকৃতি মাঠ ছিল। তবে, ১৯৪৮ সালে ত্রিনিদাদ থেকে আসা নতুন শ্বেতাঙ্গ ব্যক্তিত্ব জ্যাক গ্র্যান্ট আসায় এর পরিবর্তন ঘটে। তিনি বেশ ভালোভাবে পরিচালনা করছিলেন। তবে, ১৯৫৩ সালের বান্টু শিক্ষা পদ্ধতির ফলে অ্যাডামস কলেজকে বেশ বড় ধরনের বাঁধার মুখোমুখি হয়েছিল। সরকার কৃষ্ণাঙ্গদেরকে ক্ষুদ্রতর পদে রাখার পক্ষপাতি ছিল ও শ্বেতাঙ্গদের অধীনে রাখতে চেয়েছিল। তবে, অ্যাডামসের পক্ষ থেকে এর তীব্র প্রতিবাদ আসে। মন্ত্রিপরিষদ থেকে বালিকাদের জন্য ইনাডা সেমিনারি বিদ্যালয়ে স্থানান্তরের কথা আসে যা ঐ অধ্যাদেশের বাইরে ছিল। কিন্তু, ১৯৫৬ সালে কলেজটিকে সময় দেয়া হয় ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এর বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। তারা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ও আধ্যাত্মিক শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়।[7] বিদ্যালয়টি সরকারের কাছে হস্তান্তর করা হয় ও প্রতিষ্ঠানের প্রধান দক্ষিণ আফ্রিকা ত্যাগ করেন। তবে বিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ অংশ অ্যাডামস নামটি স্থানান্তরিত হয়নি। [8]

এভাবে প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়টির কর্মকাণ্ড শেষ হয়ে যায়। এ প্রসঙ্গে জর্জ সি. গ্র্যান্ট তার গ্রন্থ ‘দ্য লিকুইডেশন অব অ্যাডামস কলেজে’ এর সচিত্র রূপ তুলে ধরেন।[9]

৭১ বছর বয়সে ২৬ অক্টোবর, ১৯৭৮ তারিখে ইংল্যান্ডের কেমব্রিজে জি. সি. গ্র্যান্টের দেহাবসান ঘটে।

তথ্যসূত্র

  1. "Records | Test matches | Batting records | Two unbeaten fifties in a match | ESPN Cricinfo"Cricinfo। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০২-২২
  2. "The forgotten story of ... white West Indian cricketers"Talking Sport। The Guardian। সংগ্রহের তারিখ ৮ আগস্ট ২০১৩
  3. Gerald M. D. Howat, "Constantine, Learie Nicholas, Baron Constantine (1901–1971)", Oxford Dictionary of National Biography, Oxford University Press, 2004; online edn, January 2011, accessed 8 August 2013.
  4. "George Copeland Grant"। bestoftrinidad.com। সংগ্রহের তারিখ ৮ আগস্ট ২০১৩
  5. Odendaal, André (২০০৩)। The Story of an African Game: black cricketers and the unmasking of one of South Africa's greatest myths, 1850-2003। Cape Town: David Philip। পৃষ্ঠা 66। আইএসবিএন 0864866380।
  6. Rich, Paul B. (১৯৯৩)। Hope and Despair: English-speaking intellectuals and South African politics: 1896-1976। London u.a.: British Acad. Press। পৃষ্ঠা 77। আইএসবিএন 1850434891।
  7. Elphick, Richard (২০১২)। The Equality of Believers: Protestant missionaries and the racial politics of South Africa। Charlottesville [Va.]: University of Virginia Press। আইএসবিএন 978-0-8139-3273-6।
  8. Healey-Clancy, Megan। A World of Their Own A History of South African Women’s Education। UKZN Press। পৃষ্ঠা Chap 4। আইএসবিএন 978 1 86914 242 1।
  9. Grant, George C (১৯৫৫)। The Liquidation of Adams College। 1957।

আরও দেখুন

বহিঃসংযোগ

পূর্বসূরী
কার্ল নুনেস
ওয়েস্ট ইন্ডিজের টেস্ট ক্রিকেট অধিনায়ক
১৯৩০/৩১-১৯৩৪/৩৫
উত্তরসূরী
রল্ফ গ্র্যান্ট
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.