জ্ঞানযোগ

জ্ঞানযোগ (সংস্কৃত: ज्ञान योग) বা "শুদ্ধ জ্ঞানের মাধ্যমে যোগস্থাপন"[1] হল হিন্দু যোগ দর্শনের একটি বিভাগ। সংস্কৃত ভাষায় "জ্ঞান" শব্দের অর্থ "জানা"।[2]

আদি শঙ্কর ও তাঁর শিষ্যগণ, রাজা রবি বর্মা অঙ্কিত, ১৯০৪,। পরম উপাস্য সম্পর্কে জ্ঞানকে আদি শঙ্কর প্রাথমিক গুরুত্বের বিষয় বলে উল্লেখ করেছিলেন।

জ্ঞানযোগ হল নাম ও রূপের বাইরে গিয়ে পরম সত্যকে উপলব্ধি। জ্ঞানযোগ অনুসারে, এই উপলব্ধির মাধ্যমে মোক্ষ লাভ সম্ভব। যোগ দর্শনের অন্যান্য শাখায় একটি বিশেষ নাম বা রূপকে ধ্যান করার মাধ্যমে পরম সত্যকে উপলব্ধি করার কথা বলা হয়। কিন্তু জ্ঞানযোগে তা বলা হয় না। জ্ঞানযোগের মতে, শুধুমাত্র জ্ঞানই যথেষ্ট। এই যোগের কোনো কোনো অভিমত সাংখ্য দর্শনের অনুরূপ।

ভগবদ্গীতা অনুসারে, অদ্বৈতবাদী দার্শনিক আদি শঙ্কর “ব্রহ্মজ্ঞান”-এর উপর প্রাথমিক গুরুত্ব আরোপ করেছেন। অন্যদিকে। বিশিষ্টাদ্বৈতবাদী দার্শনিক রামানুজের মতে, জ্ঞান ভক্তির একটি শর্ত মাত্র।[3] ভগবদ্গীতায় (১৩।৩) কৃষ্ণ বলছেন, প্রকৃত জ্ঞান “ক্ষেত্র” (কর্মের ক্ষেত্র—অর্থাৎ, দেহ) এবং “ক্ষেত্রজ্ঞ”-এর (দেহকে যিনি জানেন—অর্থাৎ, আত্মা) সঠিক ধারণার মাধ্যমে পাওয়া যায়। কৃষ্ণের মতে, জ্ঞানীর এই দুইয়ের পার্থক্য সম্পর্কে অবহিত হওয়া কর্তব্য।[4]

সাধন চতুষ্টয়

অদ্বৈত বেদান্তে মোক্ষ লাভের জন্য “সাধন-চতুষ্টয়” [5] বা চার প্রকার সাধনার কথা বলা হয়েছে। এই পথে চারটি ধাপ রয়েছে: [6][7]

  • সমন্যাস, অর্থাৎ ব্যক্তির মধ্যে চারটি গুণের বিকাশ: [6][8]
    • বিবেক – কোন বস্তু নিত্য ও কোন বস্তু অনিত্য বা অস্থায়ী সেই বিচার।
    • বৈরাগ্য – ত্যাগের ভাব ও জাগতিক সুখ ও দুঃখ সম্পর্কে বিতৃষ্ণা।
    • ষট্-সম্পত্তি – ছয়টি গুণ:
      • শম – মানসিক শান্তি;
      • দম – ইন্দ্রিয় সংযম;
      • উপরতি –জাগতিক ক্রিয়াকর্ম থেকে নিষ্কৃতি;
      • তিতিক্ষা – প্রতিকূল অবস্থাতেও শান্ত থাকা;
      • শ্রদ্ধা – ঈশ্বর বিশ্বাস;
      • সমাধি – মনের বাইরে যাওয়া।
    • মুমুক্ষুত্ব – মুক্তিলাভের ইচ্ছা।
  • শ্রবণ – বেদ ও আচার্যের উপদেশ শোনা।
  • মনন – বেদ ও আচার্যের উপদেশ স্মরণ করা;
  • ধ্যান, “তুমিই সেই” এই মহাবাক্য উপলব্ধি করা।

আরও দেখুন

পাদটীকা

  1. For translation of jñāna yoga as "union due to pure knowledge" see: Flood (1996), p. 127.
  2. For definition of jñāna as "knowledge" see: Apte, p. 457.
  3. For the varying views of Shankara and Ramanuja, see: Flood (1996), p. 127.
  4. B-Gita 13.35 ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৯ জানুয়ারি ২০১৫ তারিখে "Those who see with eyes of knowledge the difference between the body and the knower of the body, and can also understand the process of liberation from bondage in material nature, attain to the supreme goal."
  5. puligandla 1997, পৃ. 253।
  6. puligandla 1997, পৃ. 251-254।
  7. Shankara, Adi। "The Crest Jewel of Wisdom"। পৃষ্ঠা Ch. 1। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৪-২৮ অজানা প্যারামিটার |coauthors= উপেক্ষা করা হয়েছে (|author= ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে) (সাহায্য)
  8. "Advaita Yoga Ashrama, Jnana Yoga. Introduction"। ১৩ জানুয়ারি ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ এপ্রিল ২০১৪

তথ্যসূত্র

  • Apte, Vaman Shivram (১৯৬৫)। The Practical Sanskrit Dictionary। Delhi: Motilal Banarsidass Publishers। আইএসবিএন 81-208-0567-4। (Fourth revised and enlarged edition).
  • Basu, Asoke (জুন ২০০৪)। "Advaita Vedanta and Ethics"। Religion East and West (4): 91–105।
  • Feuerstein, Georg (২০০১)। The Yoga Tradition: Its History, Literature, Philosophy and Practice। Prescott, Arizona: Hohm Press। আইএসবিএন 1-890772-18-6। (Unabridged, New Format Edition).
  • Flood, Gavin (১৯৯৬)। An Introduction to Hinduism। Cambridge: Cambridge University Press। আইএসবিএন 0-521-43878-0।
  • Puligandla, Ramakrishna (১৯৮৫)। Jñâna-Yoga--The Way of Knowledge (An Analytical Interpretation)। New York: University Press of America। আইএসবিএন 0-8191-4531-9।
  • Varenne, Jean (১৯৭৬)। Yoga and the Hindu Tradition। Chicago: The University of Chicago Press। আইএসবিএন 0-226-85114-1। অজানা প্যারামিটার |coauthors= উপেক্ষা করা হয়েছে (|author= ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে) (সাহায্য)
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.