জোনবিল মেলা

জোনবিল মেলা হচ্ছে খাদ্যদ্রব্য বিনিময় করার মেলা। অসমের মরিগাও জেলার অন্তর্গত জাগীরোডে “জোনবিল” নামক একটি বিল আছে। এই বিলের পাড়ে অনুষ্ঠিত হওয়া মেলার নাম “জোনবিল মেলা"। মাঘ বিহুর পরের সপ্তাহে এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়।[1] এই মেলার বিশেষ তাৎপর্য হল ঘরোয়া ভাবে উৎপাদিত খাদ্য দ্রব্যের বিনময় করা। এখানকার সমতলে বসবাসকারী তিওয়া জনজাতির দ্বারা তৈরী করা শুকনো মাছ, পিঠা, সন্দেশ ইত্যাদি পাহাড়ে বসবাসকারী অন্যান্য জনজাতির সাথে বিনিময় করা এই মেলার প্রধান আকর্ষণ। বিভিন্ন জনজাতির সাথে বিনিময় করার ফলে পারস্পরিক সম্পর্কের সৃষ্টি হয়।

জোনবিল মেলা
( তিওয়া সম্প্রদায়ের মেলা)
তারিখ (সমূহ)জানুয়ারি অথবা ফেব্র‌ুয়ারি
পুনরাবৃত্তিবাৎসরিক
অবস্থান (সমূহ)দয়াং বেলগুড়ি, মোরিগাঁও, আসাম
প্রবর্তিত১৫ শতকে

ইতিহাস

জোনবিল মেলা কবে আরম্ভ হয়েছিল সেই সমন্ধে কোন সঠিক তথ্য পাওয়া যায় না কিন্তু পন্ডিতদের অনুমান গোভারাজ্য প্রতিষ্ঠার সময় এই মেলা প্রথমবার আয়োজন করা হয়েছিল। লোকবিশ্বাসমতে, গোভারাজ্য প্রতিষ্ঠা করার পর রাজা ও রাণী রাত্রে এই বিলে ঘুরতে বের হন। রাত্রের নক্ষত্রের আলোতে বিল আলোকিত হয়ে উঠে। আনন্দিত হয়ে রানি “হেবে ছনাই পিল হঙদ” এই উক্তিটি করেন, যার অর্থ নক্ষত্রের মত বিল। অসমীয়া ভাষায় নক্ষত্রকে জোন বলা হয়ে থাকে। কালক্রমে অসমীয়া ও তিওয়া ভাষার সংমিশ্রণ হয়ে জোনবিল নামের উৎপত্তি হয়েছে।[1]

মেলার আরম্ভ

মাঘ বিহুর পরের সপ্তাহে জোনবিল মেলা অনুষ্ঠিত করা হয় । সপ্তাহের শুক্রবার ও শনিবার এই মেলা অনুষ্ঠিত হয় যদিও মঙ্গলবার ও বুধবার থেকে এখানে মানুষের সমাগম দেখা যায়। মেলা আরম্ভ হওয়ার পুর্বে রাজা পরিষদ ও বিভিন্ন স্থানের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা জোনবিলে মাছ ধরেন। একে “রজা মাছ মরা” অর্থাৎ রাজা মাছ ধরা বলা হয়। মেলার দিন জনসাধারনকে এই বিলে মাছ ধরার জন্য অনুমতি দেওয়া হয়।[1]

একজন তিওয়া মহিলা মেলায় খাবার তৈরি করছে

মেলার মূল বিষয়

জোনবিল মেলায় বিনিময় প্রথার মাধ্যমে ক্রয়বিক্রয়

বিনিময় প্রথা জোনবিল মেলার মূল বিষয়। যদিও বিনিময় প্রথা এই মেলার মূল নীতি তথাপি এখানে মুদ্রার সাহায্যে ক্রয় বিক্রয় করার সুবিধা আছে। পাহাড়ে বসবাসকারি তিওয়া জনজাতির দ্বারা উৎপাদিত খাদ্য শস্য, কৃষি সামগ্রী যেমন: কচু, হলুদ, লঙ্কা, ঠেকেরা টেঙা ইত্যাদি সমতলে বসবাস করা মানুষের পিঠা, সন্দেশ ও মাছের সঙ্গে বিনিময় করেন। এই মেলায় পাহাড়ে বসবাসকারি খাসিয়া, জয়ন্তিয়া, গারো ও কার্বি লোকেরাও অংশ গ্রহণ করেন। বিনিময় প্রথা আরম্ভ হওয়ার সময় এখানে মুরগির লড়াই খেলা অনুষ্ঠিত করা হয়। মেলা সঠিকভাবে পরিচালনা করার জন্য পরিচালনা সমিতি গঠন করা হয়। পরিচালনা সমিতি মেলায় অংশ গ্রহণকারী ব্যক্তির সুব্যাবস্থার প্রতি লক্ষ্য রাখেন।[2]

তথ্যসূত্র

  1. ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৫ জানুয়ারি ২০১২ তারিখে "মরিগাঁও জিলার তিৱাসকলর জোনবিল মেলা", ধীরাজ পাটর; গণ অধিকার, ১৮ জানুয়ারি ২০১২
  2. ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে Jonbeel Mela, Vedanti.com, 2 Feb 2011

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.