জেরাল্ড স্মিথসন

জেরাল্ড আর্থার স্মিথসন (ইংরেজি: Gerald Smithson; জন্ম: ১ নভেম্বর, ১৯২৬ - মৃত্যু: ৬ সেপ্টেম্বর, ১৯৭০) উত্তর ইয়র্কশায়ারের স্পফোর্থ এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ইংরেজ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার ছিলেন। ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। ১৯৪৮ সালে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্যে ইংল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেছেন।

জেরাল্ড স্মিথসন
১৯৪৭ সালের সংগৃহীত স্থিরচিত্রে জেরাল্ড স্মিথসন
ব্যক্তিগত তথ্য
পূর্ণ নামজেরাল্ড আর্থার স্মিথসন
জন্ম(১৯২৬-১১-০১)১ নভেম্বর ১৯২৬
স্পফোর্থ, উত্তর ইয়র্কশায়ার, ইংল্যান্ড
মৃত্যু৬ সেপ্টেম্বর ১৯৭০(1970-09-06) (বয়স ৪৩)
অ্যাবিংডন, অক্সফোর্ডশায়ার, ইংল্যান্ড
ব্যাটিংয়ের ধরনবামহাতি
বোলিংয়ের ধরনডানহাতি মিডিয়াম
ভূমিকাব্যাটসম্যান
আন্তর্জাতিক তথ্য
জাতীয় দল
টেস্ট অভিষেক
(ক্যাপ ৩৩০)
২১ জানুয়ারি ১৯৪৮ বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ
শেষ টেস্ট১১ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৮ বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান
প্রতিযোগিতা টেস্ট এফসি
ম্যাচ সংখ্যা ২০০
রানের সংখ্যা ৭০ ৬,৯৪০
ব্যাটিং গড় ২৩.৩৩ ২২.৬৭
১০০/৫০ –/– ৮/৩১
সর্বোচ্চ রান ৩৫ ১৬৯
বল করেছে ৯৪
উইকেট
বোলিং গড় ১১৭.০০
ইনিংসে ৫ উইকেট
ম্যাচে ১০ উইকেট
সেরা বোলিং ১/২৬
ক্যাচ/স্ট্যাম্পিং –/– ১৩১/–
উৎস: ইএসপিএনক্রিকইনফো.কম, ৬ এপ্রিল ২০২০

ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে লিচেস্টারশায়ার ও ইয়র্কশায়ার দলের প্রতিনিধিত্ব করেন তিনি। দলে তিনি মূলতঃ বামহাতি ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতেন। এছাড়াও, ডানহাতে মিডিয়াম বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন জেরাল্ড স্মিথসন

প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট

১৯৪৬ সাল থেকে ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত জেরাল্ড স্মিথসনের প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান ছিল। ১৯৫১ সালে লিচেস্টারশায়ারে যোগদান করেন। এ ক্লাবে ছয় মৌসুম অতিবাহিত করেন। নিজস্ব দ্বিতীয় বছরেরই লিচেস্টারে অনুষ্ঠিত খেলায় লিচেস্টারশায়ারের বিপক্ষে ১৬৯ রান তুলেন। ১৯৫২ সালে নিজস্ব স্বর্ণালী মৌসুম অতিবাহিত করেন। বামহাতে আকর্ষণীয় ব্যাটিংশৈলী উপহার দিয়ে দুই সেঞ্চুরির সহযোগে ২৮.০৮ গড়ে ১,২৬৪ রান তুলেন।

বামহাতি মাঝারিসারির ব্যাটসম্যান, মিডিয়াম পেস বোলার ও বল সংগ্রহে পটু কার্যকরী ফিল্ডারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন জেরাল্ড স্মিথসন। ব্রাডফোর্ড ক্রিকেট লীগে ইয়র্কশায়ারের পক্ষে ১৯৪৬ থেকে ১৯৫০ সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট খেলায় অংশ নিয়েছিলেন। ১৯ বছর বয়সে ১০ জুলাই, ১৯৪৬ তারিখে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তার। হ্যারোগেটের সেন্ট জর্জেস রোডে এসেক্সের বিপক্ষে অনুষ্ঠিত ঐ খেলায় একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেন ও ১৬ রান তুলেন। খেলায় তার দল ছয় উইকেটে জয়লাভ করেছিল। আগস্ট, ১৯৪৭ সালে লিচেস্টারের গ্রেস রোডে লিচেস্টারশায়ারের বিপক্ষে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ইনিংস খেলেন। তিন নম্বরে ব্যাটিংয়ে নেমে ১৬৯ রান তুলেছিলেন তিনি।

লিচেস্টারশায়ারে স্থানান্তর

ইয়র্কশায়ার থেকে চলে আসার পর ১৯৫১ থেকে ১৯৫৬ সময়কালে লিচেস্টারশায়ারের সদস্যরূপে খেলেন। এরপর, ১৯৫৭ থেকে ১৯৬২ সাল পর্যন্ত মাইনর কাউন্টিজে হার্টফোর্ডশায়ারের পক্ষে খেলেছিলেন তিনি।[1]

১৯৪৭ সালে গোলাপের খেলায় ইয়র্কশায়ারের পক্ষে অংশগ্রহণ করেছিলেন। ল্যাঙ্কাশায়ারের বিপক্ষে ২০ বছর বয়সে তিনি ৯৮ রান তুলেন। ধারাভাষ্যকার ও সাংবাদিক মাইকেল পার্কিনসনের কাছ থেকে ভূয়সী প্রশংসা কুড়ান। ইয়র্কশায়ারের অধিনায়ক নরম্যান ইয়ার্ডলি’র কাছ থেকে জানা যায় যে, ঐ সময়ের তরুণ অস্ট্রেলীয়দের সাথে তার ব্যাটিংয়ের তুলনা করা হতো। ঐতিহাসিক অ্যালেন হিল তার ঐ ইনিংসকে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের পদচিহ্নরূপে আখ্যায়িত করেন। পরবর্তীকালে তার এ খেলার ধরন ইংল্যান্ডের বামহাতি ব্যাটসম্যান ডেভিড গাওয়ারের খেলায় দেখা যায়।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন কয়লা খনিতে বাধ্যতামূলকভাবে বেভিন বয় হিসেবে জাতীয় সেবায় অংশ নেন। দক্ষিণ ইয়র্কশায়ারের আস্কার্ন মেই কোলিয়ারিতে তিন বছর কাজ করেন।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট

সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে দুইটিমাত্র টেস্টে অংশগ্রহণ করেছেন জেরাল্ড স্মিথসন।[2] উভয় টেস্টেই তিনি ওয়েস্ট ইন্ডিয়ানদের মুখোমুখি হন। ২১ জানুয়ারি, ১৯৪৮ তারিখে ব্রিজটাউনে স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তার। এরপর, ১১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৪৮ তারিখে পোর্ট অব স্পেনে একই দলের বিপক্ষে সর্বশেষ টেস্টে অংশ নেন তিনি।

কমন্স সভায় তার বিষয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয় ও বিশেষ অনুমতি লাভ করে অস্থায়ীভাবে ১৯৪৭-৪৮ মৌসুমে মেরিলেবোন ক্রিকেট ক্লাবের (এমসিসি) সদস্যরূপে ওয়েস্ট ইন্ডিজ গমন করেন।[3] ১৯৪৭-৪৮ মৌসুমে স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তার। ঐ টেস্টে ১২ জন ক্রিকেটারের একযোগে অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়ছিল। ক্লাইড ওয়ালকট, রবার্ট ক্রিস্টিয়ানি, উইলফ্রেড ফার্গুসন, বার্কলি গ্যাসকিন, জন গডার্ডপ্রায়র জোন্স - এ সাতজন ওয়েস্ট ইন্ডিজের এবং জিম লেকার, মরিস ট্রেমলেট, ডেনিস ব্রুকস, উইনস্টন প্লেস ও জেরাল্ড স্মিথসন - এ পাঁচজন ইংল্যান্ডের ছিলেন। ২১ জানুয়ারি, ১৯৪৮ তারিখে ব্রিজটাউনে অনুষ্ঠিত ঐ টেস্টটি ড্রয়ে পরিণত হয়েছিল।[4]

ব্রিজটাউনের কেনসিংটন ওভাল ও ত্রিনিদাদের পোর্ট অব স্পেনে দুই টেস্টে অংশগ্রহণ করেছিলন তিনি। ঐ টেস্টগুলোয় ফ্রাঙ্ক ওরেল, ক্লাইড ওয়ালকট ও এভারটন উইকস - এ ত্রয়ী কিংবদন্তি প্রথমবারের মতো একত্রে খেলেছিলেন। প্রথম খেলায় তেমন সফলতা পাননি। তবে, দ্বিতীয় টেস্টের উভয় ইনিংসেই ৩৫ রান করে তুলেছিলেন। উইকেটে তার অনড় মনোভাবের কল্যাণে ইংল্যান্ড দল খেলা থেকে উদ্ধার পায়। এ সফরে তিনি আঘাতের কবলে পড়েন ও ১৯৪৮ সালে ইয়র্কশায়ারের পক্ষে আর খেলায় অংশ নেননি।

অবসর

১৯৪৯ সালে কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশীপে নরম্যান ইয়ার্ডলি’র সাথে একযোগে অংশ নেন। মিডলসেক্সের সাথে যৌথভাবে চ্যাম্পিয়নশীপের শিরোপা জয় করে তার দল। জুলাই, ১৯৫০ সালে এডিনবরায় স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ইয়র্কশায়ারের সদস্যরূপে সর্বশেষ অংশ নেন।

১৯৫১ সালে লিচেস্টারশায়ারে যোগ দেন। এ দলটির পক্ষে ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত খেলেন।[1] ১৯৫২ সালে সেখানে তিনি তার স্বর্ণালী সময় অতিবাহিত করেন। দুই সেঞ্চুরি সহযোগে ২৮.০৮ গড়ে ১,২৬৪ রান সংগ্রহ করেছিলেন জেরাল্ড স্মিথসন। আগস্ট, ১৯৫৬ সালে নর্দাম্পটনের কাউন্টি গ্রাউন্ডে নর্দাম্পটনশায়ারের বিপক্ষে লিচেস্টারশায়ারের সদস্যরূপে সর্বশেষ প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশ নিয়েছিলেন তিনি।

ক্রিকেট খেলা থেকে অবসর গ্রহণের পর কোচের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন জেরাল্ড স্মিথসন। পেশাদারী পর্যায়ে পূর্ণাঙ্গকালীন খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করার পর স্মিথসন পেশাদার ক্রিকেট কোচ ও মাঠ কর্মকর্তার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। পাশাপাশি, সারের ক্যাটারহাম স্কুল ও পরবর্তীতে অক্সফোর্ডশায়ারের অ্যাবিংডন স্কুলে এ দায়িত্ব পালন করেন।[1] এছাড়াও, ১৯৫৭ থেকে ১৯৬২ সময়কালে হার্টফোর্ডশায়ার কাউন্টি ক্রিকেট ক্লাবের পক্ষে মাইনর কাউন্টিজ ক্রিকেটে অংশ নেন।

ব্যক্তিগত জীবন

১৯৪৮ সালের উইজডেন সংস্করণের ৩৮ পাতায় স্মিথসনের পোশাক পরিহিত অবস্থার স্থিরচিত্র প্রকাশ করা হয়।[1] ২১ জুন, ২০০৯ তারিখে অ্যাবিংডন স্কুলে জেরাল্ড স্মিথসন স্মরণে টুয়েন্টি২০ ক্রিকেট প্রতিযোগিতার প্রবর্তন করা হয়। সাবেক ইংরেজ ক্রিকেটার ডেভন ম্যালকম এ প্রতিযোগিতার সম্মানীয় অতিথি হিসেবে উদ্বোধন করেন।

ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত ছিলেন জেরাল্ড স্মিথসন। ১৯৫৪ সালে বার্কশায়ারের আর্লের সেন্ট পিটার্স চার্চে অ্যানি সল্টার নাম্নী এক রমণীর পাণিগ্রহণ করেন। এ দম্পতির চার কন্যা - জ্যাকুলিন, জিলিয়ান, জোয়ান ও জাস্টিন ছিল।[5] অনেকটা আকস্মিকভাবে ৬ সেপ্টেম্বর, ১৯৭০ তারিখে ৪৩ বছর বয়সে অক্সফোর্ডশায়ারের অ্যাবিংডন এলাকায় জেরাল্ড স্মিথসনের দেহাবসান ঘটে।[1]

তথ্যসূত্র

  1. "Gerald Smithson"। Espncricinfo.com। সংগ্রহের তারিখ ২৯ এপ্রিল ২০১১
  2. "Gerald Smithson"। www.cricketarchive.com। সংগ্রহের তারিখ ৫ মার্চ ২০১২
  3. Bateman, Colin (১৯৯৩)। If The Cap Fits। Tony Williams Publications। পৃষ্ঠা 154আইএসবিএন 1-869833-21-X।
  4. Cricinfo, "Scorecard, 1st Test: West Indies v England at Bridgetown, 21–26 Jan 1948" Accessed 4 January 2017
  5. Willis, Donald (১৯৮৩)। Song on a Bugle Blown। Cumnor, UK: Kenton। পৃষ্ঠা 232। আইএসবিএন 978-0-9508503-0-6।

আরও দেখুন

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.