জিজিয়া কর

জিজিয়া (আরবি: جزية, প্রতিবর্ণী. jizyah, আইপিএ: [dʒizja], জিজ়্য়াঃ) হলো ইসলামি রাষ্ট্রে ইসলামি আইনের অনুকূলে স্থায়ীভাবে বসবাসরত অমুসলিমদের জনপ্রতি বাৎসরিক ধার্যকৃত কর[1][2][3] মুসলিম ফকীহগণের অভিমত এই যে, অমুসলিমদের মধ্যে করদাতাকে প্রাপ্তবয়স্ক, স্বাধীন, কর্মক্ষম পুরুষ হতে হবে।[4] মহিলা, শিশু, বৃদ্ধ, প্রতিবন্ধী, উন্মাদ, দাসদের নিস্কৃতি দেয়া হয়েছে।[5][6][7][8][9] পাশাপাশি মুসতামিনস – অমুসলিম বিদেশী যে অস্থায়ী মুসলিম দেশে আশ্রয় নেয়[5][10] এবং যে অমুলিমরা সামরিক বাহিনীতে যোগদান করতে চায়[1][6][11][12] এবং যারা দিতে অসমর্থ ও অক্ষম তাদের এই কর থেকে নিস্কৃতি দেওয়া হয়েছে।[6][13][14]

জিজিয়া করপত্র

হাদিসেও জিজিয়া কর সম্পর্কে উল্লেখ আছে, কিন্তু পরিমাণ উল্লেখ নেই।[15] ফকীহগণ এই বিষয়ে একমত যে, পূর্বে মুসলিম শাসকরা বাইজেন্টাইন এবং সাসানীয় সাম্রাজ্যে এটি আদায় করতেন।[10][16][17][18][19]

ইসলামি ইতিহাসে এর প্রয়োগ বিভিন্ন রকম দেখা যায়। অনেক সময় জিজিয়াকে খারাজ এর সাথে সাধারণ কর হিসাবে আদায় করা হয়েছে।[20][21][22] এবং ইসলামি রাজনীতিতে রাজস্ব আদায়ের প্রধান উৎস ছিল।[23] জিজিয়া কর করদাতার সামর্থ্য অনুসারে বাৎসরিকভাবে নির্ধারিত হত।[24] বিভিন্ন সময় স্থান, কাল ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে ভিন্ন সময় ধার্যকৃত কর এর পরিমাণ ভিন্ন হয়েছে।[1][25][26][27][28]

এ প্রসঙ্গে কুরআনের সুরা তওবার ২৯ আয়াতে বলা হয়েছে,

“তোমরা লড়াই করো আহলে কিতাবের সেসব লোকের সাথে যারা আল্লাহ ও শেষ দিবসে ঈমান রাখে না এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূল যা হারাম করেছেন তা হারাম মনে করে না, আর সত্য দীন (জীবনব্যবস্থা) গ্রহণ করে না, যতক্ষণ না তারা স্বহস্তে নত হয়ে জিযিয়া দেয়।”[কুরআন ৯:২৯][29]

উসমানীয় তুরস্কে ১৯শ শতকের মধ্যভাগ পর্যন্ত জিজিয়া বলবৎ ছিল। মুসলমানদের বাধ্যতামূলকভাবে সামরিক বিভাগে যোগদান করতে হতো বলে তার পরিবর্তে অমুসলমানদের ওপর একটি কর ধার্য করা হয়। কিন্তু সকল ধর্মের নাগরিকদের জন্য বাধ্যতামূলক সামরিক পেশা প্রবর্তিত হওয়ার পর এই করেরও বিলোপ হয়। মধ্য যুগে পৃথিবীর অন্যান্য মুসলিম শাসিত দেশেও অমুলমানদের ওপর জিজিয়া কর ধার্য করা হয়। ভারতীয় উপমহাদেশে আকবর এটা রহিত করেন, কিন্তু সম্রাট আওরঙ্গজেবের আমলে এটা পুনঃপ্রবর্তিত হয়।

তথ্যসূত্র

  1. Abdel-Haleem, Muhammad (২০১০)। Understanding the Qur'ān: Themes and StyleI. B. Tauris & Co Ltd। পৃষ্ঠা 70, 79। আইএসবিএন 978-1845117894।
  2. Abou Al-Fadl 2002, পৃ. 21।
  3. Jizyah The Oxford Dictionary of Islam (2010), Oxford University Press
  4. M. Zawati, Hilmi (২০০২)। Is Jihād a Just War?: War, Peace, and Human Rights Under Islamic and Public International Law (Studies in religion & society)Edwin Mellen Press। পৃষ্ঠা 63–4। আইএসবিএন 978-0773473041।
  5. Wael, B. Hallaq (২০০৯)। Sharī'a: Theory, Practice and TransformationsCambridge University Press। পৃষ্ঠা 332–3। আইএসবিএন 978-0-521-86147-2।
  6. Ellethy 2014, পৃ. 181।
  7. Alshech, Eli (২০০৩)। "Islamic Law, Practice, and Legal Doctrine: Exempting the Poor from the Jizya under the Ayyubids (1171-1250)"। Islamic Law and Society10 (3)।
  8. Rispler-Chaim, Vardit (২০০৭)। Disability in Islamic law। Dordrecht, the Netherlands: Springer। পৃষ্ঠা 44আইএসবিএন 1402050526।
  9. Majid Khadduri, War and Peace in the Law of Islam, pp. 192-3.
  10. Mirza, editor, Gerhard Bowering ; associate editors, Patricia Crone ... [et al.] ; assistant editor, Mahan (২০১৩)। The Princeton encyclopedia of Islamic political thought। Princeton, N.J.: Princeton University Press। পৃষ্ঠা 283.। আইএসবিএন 0691134847।
  11. Mapel, D.R. and Nardin, T., eds. (1999), International Society: Diverse Ethical Perspectives, p. 231. Princeton University Press. আইএসবিএন ৯৭৮০৬৯১০৪৯৭২৪
  12. Shah 2008, পৃ. 19–20।
  13. Ghazi, Kalin এবং Kamali 2013, পৃ. 240–1।
  14. Abdel-Haleem 2012, পৃ. 75–6, 77।
  15. Sabet, Amr (2006), The American Journal of Islamic Social Sciences 24:4, Oxford; pp. 99–100.
  16. Bravmann 2009, পৃ. 199–201, 204–5, 207–12।
  17. Mohammad, Gharipour (২০১৪)। Sacred Precincts: The Religious Architecture of Non-Muslim Communities Across the Islamic WorldBRILL। পৃষ্ঠা XV। আইএসবিএন 9004280227।
  18. Shah 2008, পৃ. 20।
  19. Walker Arnold, Thomas (১৯১৩)। Preaching of Islam: A History of the Propagation of the Muslim FaithConstable & Robinson Ltd। পৃষ্ঠা 59 ff। অজানা প্যারামিটার |1= উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য) (online)
  20. Morony, Michael (২০০৫)। Iraq after the Muslim conquest। NJ, USA: Gorgias Press। পৃষ্ঠা 109, 99–134। আইএসবিএন 978-1-59333-315-7।
  21. Levy, Reuben (২০০২)। The social structure of Islam। London New York: Routledge। পৃষ্ঠা 310–1। আইএসবিএন 978-0-415-20910-6।
  22. Satish Chandra (1969), Jizyah and the State in India during the 17th Century, Journal of the Economic and Social History of the Orient, Vol. 12, No. 3, pp. 322–40, quote="Although kharaj and jizyah were sometimes treated as synonyms, a number of fourteenth century theological tracts treat them as separate"
  23. Oded Peri; Gilbar (Ed), Gad (১৯৯০)। Ottoman Palestine, 1800-1914 : Studies in economic and social history। Leiden: E.J. Brill। পৃষ্ঠা 287। আইএসবিএন 978-90-04-07785-0। the jizya was one of the main sources of revenue accruing to the Ottoman state treasury as a whole.
  24. Abu Khalil, Shawkiy (২০০৬)। al-Islām fī Qafaṣ al-ʾIttihām الإسلام في قفص الإتهام (আরবি ভাষায়)। Dār al-Fikr। পৃষ্ঠা 149। আইএসবিএন 1575470047। (online)
  25. Charles Hamilton (1957), Hedaya, Lahore
  26. Ghazi, Kalin এবং Kamali 2013, পৃ. 82–3।
  27. The French scholar Gustave Le Bon writes "that despite the fact that the incidence of taxation fell more heavily on a Muslim than a non-Muslim, the non-Muslim was free to enjoy equally well with every Muslim all the privileges afforded to the citizens of the state." Mun'im Sirry (2014), Scriptural Polemics: The Qur'an and Other Religions, p. 179. Oxford University Press. আইএসবিএন ৯৭৮-০১৯৯৩৫৯৩৬৩.
  28. Abu Zahra, MuhammadZahrat al-Tafāsīr زهرة التفاسير (আরবি ভাষায়)। Cairo: Dār al-Fikr al-ʿArabī। পৃষ্ঠা 3277–8।
  29. Nasr, Seyyed Hossein; Dagli, Caner K.; Dakake, Maria Massi; Lumbard, Joseph E.B.; Rustom, Mohammed (২০১৫)। The Study Quran: A New Translation and Commentary। HarperCollins।

আরো দেখুন

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.