জামাইষষ্ঠী
জামাইষষ্ঠী (ইংরেজি: Jamai Sasthi) বাঙালির ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতিক লৌকিক আচার। জ্যৈষ্ঠ মাসের শুক্ল পক্ষের ষষ্ঠী তিথিতে এই আচার পালন করা হয়।[1] এই দিনে বিবাহিত মেয়ে ও জামাইকে নিমন্ত্রণ করে আপ্যায়ন করা হয়।[2] এভাবে জামাইকে খুশি রাখার চেষ্টায় ষষ্ঠীপুজোর লৌকিক প্রথাই হয়ে উঠে বাঙালির জষ্টি মাসের উৎসব।[3]
জামাইষষ্ঠী | |
---|---|
অন্য নাম | অরণ্য ষষ্ঠী |
পালনকারী | বাঙালি |
ধরন | সংস্কৃতিক |
তাৎপর্য | পারিবারিক পুনর্মিলন |
পালন | ভারত ও বাংলাদেশ |
তারিখ | ২৫শে মে ২০২৩ ইং (১০ই জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০ বঙ্গাব্দ) |
সংঘটন | বার্ষিক |
ইতিহাস
ভারতবর্ষ তথা দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে একসময় সংস্কার ছিল কন্যা যতদিন না পুত্রবতী হয় ততদিন কন্যার পিতা বা মাতা কন্যাগৃহে পদার্পণ করবেন না ৷ এই ব্যবস্থায় সমস্যা দেখা দেয়, সন্তানধারণে সমস্যা বা সন্তান মৃত্যুর (শিশুমৃত্যু) ফলে কন্যার পিতামাতাকে দীর্ঘদিন অপেক্ষা করতে হত কন্যার বাড়ি যাওয়ার জন্য ৷ সেক্ষেত্রে বিবাহিত কন্যার মুখদর্শন জন্য সমাজের বিধানদাতা জৈষ্ঠ্য মাসের শুক্লা ষষ্ঠীকে বেছে নেয় জামাই ষষ্ঠী হিসাবে ৷ যেখানে মেয়ে জামাইকে নিমন্ত্রণ করে সমাদর করা হবে ও কন্যার মুখ দর্শন করা যাবে এবং সেইসঙ্গে মা ষষ্ঠীর পুজো করে তাঁকে খুশি করা যাতে কন্যা শীঘ্র পুত্রমুখ দর্শন করতে পারে ৷[4]
আরো কথিত আছে যে, একটি পরিবারে দুটি বউ ছিলেন। দুই বউয়ের মধ্যে ছোট বউ লোভী ছিল। যিনি সর্বদা বাড়িতে যখন ভালো খাবার রান্না হত তা লুকিয়ে খেয়ে নিত এবং বিড়ালের উপর দোষ চাপাতেন। বিড়াল দেবী ষষ্ঠী বাহন। নিজের বাহন বেড়ালের নামে এমন অভিযোগ শোনার পর অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হন। ফলস্বরূপ ছোট বউয়ের সন্তানের প্রাণ কেড়ে নেন। কষ্টে ভেঙে পড়েন সেই বাড়ির ছোট বউ। পরে এক বৃদ্ধার রূপ ধারণ করে দেবী ষষ্ঠী তাঁর কাছে যান। ছোট বউকে তাঁর আচরণের কথা মনে করিয়ে দেন। ভুল বুঝতে পেরে, নিজের ভুলের জন্য ক্ষমা চাওয়ায় ষষ্ঠী দেবী ছোট বউকে তাঁর সন্তান ফিরিয়ে দেন।[5] তবে ঘটনাটি জানতে পেরে শ্বশুরবাড়ির লোকজন ক্ষুব্ধ হয়ে তাকে তার বাবার বাড়িতে যেতে বাধা দেয়। ষষ্ঠী পূজার দিন তাদের মেয়েকে দেখতে আগ্রহী বাবা-মা তাদের জামাই এবং তাদের মেয়েকে তাদের বাড়িতে নিমন্ত্রণ করেছিলেন। তাই সেই দিনটি জামাই ষষ্ঠী নামে পরিচিতি লাভ করে। এটি পুনর্মিলন এবং আনন্দের দিন হিসাবে পালিত হয়।[6]
তাৎপর্য
এই দিনে শাশুড়ি দেবী ষষ্ঠীকে খুশি করার জন্য ষষ্ঠী পূজা করেন এবং তার কন্যা এবং জামাইদের সৌভাগ্য ও সমৃদ্ধির জন্য তার আশীর্বাদ চান। জামাইকে বাড়িতে আমন্ত্রণ জানানো হয় এবং শাশুড়ির তৈরি নিরামিষ এবং আমিষ উভয় খাবারের একটি দুর্দান্ত ভোজ খাওয়ানো হয়। এই দিনে জামাই মেয়েকে উপহারও দেওয়া হয়। জামাই ষষ্ঠী একটি পরিবারের একত্রিত হওয়ার দিন হিসাবে উদযাপন করা হয় এবং পরিবারের সবাই একসাথে খাবার খাওয়ার মাধ্যমে একত্রিত হয়ে উদযাপন করা হয়।[7]
তথ্যসূত্র
- Ram, Priyanka (২০২১-০৬-১৫)। "বুধবার জামাই ষষ্ঠী - জানুন নির্ঘণ্ট, পুজোর নিয়ম ও কাহিনি"। Hindustantimes Bangla। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১২-২৪।
- "Jamai Sasthi Special:: Fixture of JamaiShasthi dgtl"। www.anandabazar.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১২-২৪।
- "Jamai Sasthi 2022: বাংলায় জামাইষষ্ঠী কীভাবে শুরু হল? এত আয়োজনের কারণ কী?"। Aaj Tak বাংলা। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১২-২৪।
- "জামাইদের জন্য জামাই ষষ্ঠী নয়! কাদের মঙ্গল কামনায় পালিত হয় এই দিন? জানেন?"। News18 Bengali। ২০২২-০৬-০৩। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১২-২৪।
- "Jamai Shashthi 2022: ৫ জুন জামাই ষষ্ঠী, জানেন কেন পালিত হয়?"। EI Samay। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১২-২৪।
- "Jamai Sasthi 2022: History, significance and all that you need to know"। Hindustan Times (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২২-০৬-০৩। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১২-২৪।
- "Jamai Shashthi: 'জামাইষষ্ঠী' কি আসলে জামাইদের জন্য অনুষ্ঠান?"। calcuttanews.tv। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১২-২৪।
বহিঃসংযোগ
![](../I/Commons-logo.svg.png.webp)