জাকির হোসেন (বীর প্রতীক)
শহীদ জাকির হোসেন (জন্ম: ১৯৫১[1] - মৃত্যু: ১৯৭১) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করে।[2]
জাকির হোসেন | |
---|---|
![]() | |
মৃত্যু | ১৯৭১ |
জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
নাগরিকত্ব | ![]() ![]() |
পরিচিতির কারণ | বীর প্রতীক |
জন্ম ও শিক্ষাজীবন
জাকির হোসেনের জন্ম ঢাকা মহানগরের রামকৃষ্ণ মিশন রোডে। তার বাবার নাম আবদুল করিম এবং মায়ের নাম পরীবানু। চার ভাইবোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার বড়। তিনি অবিবাহিত ছিলেন।মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকার ইত্তেফাক মোড় থেকে শাপলা চত্বর হয়ে কালভার্ট পর্যন্ত সড়কের নাম তার নামে ‘শহীদ জাকির হোসেন সড়ক’ করা হয়েছে। [3]
কর্মজীবন
১৯৭১ সালে বিএসসি তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন জাকির হোসেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে যুদ্ধে যোগ দেন তিনি। আগরতলায় প্রাথমিক প্রশিক্ষণ নিয়ে ঢাকায় কয়েকটি গেরিলা অপারেশনে অংশ নেন। পরে সালদা নদী সাব-সেক্টরে সম্মুখযুদ্ধ করেন। বেশ কয়েকটি সম্মুখযুদ্ধে অংশ নেন। তিনি ছিলেন ১২ নম্বর গ্রুপের দলনেতা।
মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা
১৯৭১ সালের ২৬ আগস্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার অন্তর্গত। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে সালদা নদী, মন্দভাগ ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় অসংখ্য যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এই এলাকা মুক্তিযোদ্ধা এবং পাকিস্তান সেনাবাহিনী—উভয়ের জন্য তখন সমান গুরুত্বপূর্ণ ছিল। মুক্তিযোদ্ধারা সালদা নদী হয়ে মেঘনা নদী এলাকা, ফরিদপুর, চাঁদপুর ও কুমিল্লার ভাটি এলাকায় অপারেশনে যেতেন। সে কারণে পাকিস্তান সেনাবাহিনী সালদা নদীর ওপর নজর রাখত। সেখানে বিভিন্ন স্থানে ছিল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রতিরক্ষা অবস্থান। মন্দভাগ রেলস্টেশন মুক্তিবাহিনীর দখলে থাকলেও সালদা নদী রেললাইন ক্রসপয়েন্ট বা সিগন্যাল পয়েন্টের উত্তর-পশ্চিমাংশ ছিল পাকিস্তানি সেনাদের দখলে। সেখানে ছিল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর শক্ত একটি ক্যাম্প। এই ক্যাম্পের কারণে ওই এলাকা দিয়ে চলাচলের সময় পাকিস্তানিদের হাতে শহীদ হন অনেক মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিবাহিনীর সালদা নদী সাব-সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধাদের কয়েকটি দল সেখানে সেদিন একযোগে আক্রমণ করে।
রাতের অন্ধকারে সীমান্তবর্তী ভারতীয় এলাকা থেকে বাংলাদেশের ভেতরে রওনা হলো মুক্তিবাহিনীর স্টুডেন্ট গ্রুপের একদল মুক্তিযোদ্ধা। তাদের দলনেতা ছিলেন জাকির হোসেন। লক্ষ্য, পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর একটি ক্যাম্প। জাকিরের জেদ, যে করেই হোক, পাকিস্তানিদের ওই ক্যাম্প ধ্বংস করতে হবে। সকাল হওয়া মাত্র দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে তার নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা আক্রমণ করল পাকিস্তানি অবস্থানে। পাকিস্তানিরাও পাল্টা আক্রমণ করল। গোলাগুলির শব্দে গোটা এলাকা প্রকম্পিত হয়ে উঠে। বারুদের উৎকট গন্ধ ও ধোঁয়া চারদিকে ছড়িয়ে পড়ল। কয়েক ঘণ্টা যুদ্ধের পর পাকিস্তানিরা কোণঠাসা। তখন জাকির হোসেন তার দলের মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে বুকসমান পানির ভেতর দিয়ে মাথা নিচু করে এগিয়ে গেলেন একদম পাকিস্তানি ক্যাম্পের কাছাকাছি। ২০০ গজ সামনে পশ্চিমে রেললাইনের ওপরে সর্বশেষ এলএমজি পোস্ট দখল বা ধ্বংস করতে পারলেই পাকিস্তানি প্রতিরক্ষার পতন ঘটবে। জাকির হোসেন চিন্তা করছেন, কীভাবে ওই এলএমজি পোস্ট দখল বা ধ্বংস করা যায়। এর মধ্যে হঠাৎ এক সহযোদ্ধা তার অগোচরে একাই এগিয়ে গেলেন সেদিকে। রেললাইনের কাছে পৌঁছে যেই ওপরে মাথা তুলেছেন, সঙ্গে সঙ্গে গুলি এসে লাগল তার চোয়াল ও ডান হাতে। সহযোদ্ধার চিৎকার শুনে জাকির গুলিবৃষ্টির মধ্যে এগিয়ে গেলেন তাকে বাঁচাতে। কাছে গিয়ে মাথা তোলা মাত্র তারও হলো একই পরিণতি। গুলি এসে লাগল তার কপালে ও বুকের পাঁজরে।
স্টুডেন্ট গ্রুপ আক্রমণ করে দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে। দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে আক্রমণ করে নিয়মিত মুক্তিবাহিনীর দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট। মুক্তিবাহিনীর প্রচণ্ড আক্রমণে পাকিস্তানিরা কোণঠাসা হয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে জাকিরের সহযোদ্ধা মোস্তাক একা পাকিস্তানি এলএমজি পোস্টের কাছে গিয়ে গুলিতে আহত হন। তার চিৎকারে জাকিরও দ্রুত সেখানে যান। তিনিও গুলিবিদ্ধ হন। দলনেতা শহীদ হওয়ায় মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। মুক্তিযোদ্ধাদের সেদিনের আক্রমণ ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়।
সমাধি
![](../I/Grave_of_Shahid_Zakir_Hossain_(_Bir_Protik_)_at_kullapathar_Martyrs_Memorial_(_front_middle).jpg.webp)
সহযোদ্ধারা জাকির হোসেনের লাশ উদ্ধার করে সমাহিত করেন মন্দভাগ রেলওয়ে স্টেশনের কাছে রঘুরামপুর গ্রামে এক টিলায়। তা কুল্লাপাথর শহীদ স্মৃতিসৌধ হিসেবে পরিচিত। [4]
পুরস্কার ও সম্মাননা
চিত্রশালা
![](../I/Kullapathar_Martyrs_Memorial._names_of_the_martyrs_of_1971.jpg.webp)
পাদটীকা
- এই নিবন্ধে দৈনিক প্রথম আলোতে ১৪-১১-২০১ তারিখে প্রকাশিত তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না প্রতিবেদন থেকে লেখা অনুলিপি করা হয়েছে। যা দৈনিক প্রথম আলো ক্রিয়েটিভ কমন্স অ্যাট্রিবিউশন-শেয়ার-এলাইক ৩.০ আন্তর্জাতিক লাইসেন্সে উইকিপিডিয়ায় অবমুক্ত করেছে (অনুমতিপত্র)। প্রতিবেদনগুলি দৈনিক প্রথম আলোর মুক্তিযুদ্ধ ট্রাস্টের পক্ষে গ্রন্থনা করেছেন রাশেদুর রহমান (যিনি তারা রহমান নামেও পরিচিত)।
তথ্যসূত্র
- "বাংলানিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম, ১৪ ডিসেম্বর ২০১১"। ২৫ অক্টোবর ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ অক্টোবর ২০১৯।
- দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না" | তারিখ: ১৪-১১-২০১১
- একাত্তরের বীরযোদ্ধাদের অবিস্মরণীয় জীবনগাঁথা, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা স্মারকগ্রহন্থ। জনতা ব্যাংক লিমিটেড। জুন ২০১২। পৃষ্ঠা ১৪০। আইএসবিএন 9789843351449।
- একাত্তরের বীরযোদ্ধা, খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা (প্রথম খন্ড)। প্রথমা প্রকাশন। এপ্রিল ২০১২। পৃষ্ঠা ১৭১। আইএসবিএন 9789843338884।