জলার তিতির

জলার তিতির (বৈজ্ঞানিক নাম: Francolinus gularis) (ইংরেজি: Swamp Francolin) ফ্যাজিয়ানিডি (Phasianidae) গোত্র বা পরিবারের অন্তর্গত ফ্র্যাঙ্কোলিনাস (Francolinus) গণের এক প্রজাতির বড় তিতির[1] এরা দক্ষিণ এশিয়ার ভারতনেপালের স্থানীয় পাখি। ঐতিহাসিকভাবে বাংলাদেশেও এদের অবস্থান ছিল এবং বর্তমানে সেদেশে এরা আছে কিনা সেবিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোন তথ্যপ্রমাণ নেই। প্রায় ১ লক্ষ ২২ হাজার বর্গ কিলোমিটারএলাকা জুড়ে এদের আবাস।[2] গত কয়েক দশক ধরে এদের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমে যাচ্ছে। আই. ইউ. সি. এন. এই প্রজাতিটিকে Vulnerable বা ঝুঁকিপূর্ণ বলে ঘোষণা করেছে।[3] সারা বিশ্বে আনুমানিক ১০০০০ থেকে ১৯৯৯৯টি জলার তিতির রয়েছে।[2]

জলার তিতির
Francolinus gularis
জলার তিতির
Francolinus gularis
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ: Animalia
পর্ব: কর্ডাটা
শ্রেণী: পক্ষী
বর্গ: Galliformes
পরিবার: Phasianidae
উপপরিবার: Perdicinae
গণ: Francolinus
প্রজাতি: F. gularis
দ্বিপদী নাম
Francolinus gularis
(Temminck, 1815)
প্রতিশব্দ

Perdix gularis (Temminck, 1815)

বিস্তৃতি

বাংলাদেশ, ভারতনেপাল জলার তিতিরের প্রধান আবাসস্থল। ব্রহ্মপুত্রগঙ্গা বা পদ্মা নদীর অববাহিকা জুড়ে এদের বিস্তৃতি। নেপালে এদের মূল অবস্থান তরাইয়ে। উত্তর ভারতের উত্তর প্রদেশ, বিহার, পশ্চিম বঙ্গ, সিকিম থেকে শুরু করে মেঘালয়, আসামঅরুনাচল প্রদেশ পর্যন্ত এদের বিস্তৃতি। বাংলাদেশে এরা একসময় বেশ ভাল অবস্থায় ছিল। সেদেশের পদ্মামেঘনা নদীর অববাহিকা এদের প্রধান আবাস ছিল। অতীতে চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম, সুন্দরবন, ঢাকা, ময়মনসিংহ (গারো পাহাড়), সিলেট, কুমিল্লা, নোয়াখালী, বরিশাল, যশোর প্রভৃতি অঞ্চলে জলার তিতির দেখার নজির লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। ১৯৮২ সালে বাংলাদেশে এদের শেষ দেখা গেছে। ১৯৯৮ সালে ময়মনসিংহের গজনীতে এদের দেখা গেছে বলে দাবি করা হলেও সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় তথ্যপ্রমাণ নেই। বাংলাদেশের সিলেটে নাকি এক অদ্ভুত উপায়ে জলার তিতিরের ডিম ফুটানো হত। পেটের সাথে কাপড় বেঁধে তাতে ডিম নিয়ে মানুষ দিনরাত ঘুরে বেড়াত। তাতে ডিম ফুটে ছানা বের হত।[4]

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ সহ ভারতের মেঘালয় আর সিকিমে জলার তিতির দেখতে পাওয়ার কোন নজির নেই। ভারতের তেরাইয়ের তৃণভূমিতে জলার তিতিরের প্রাচুর্য নেপালে এদের সংখ্যা সম্পর্কে পূর্বেকার ধারণা বদলে দিয়েছে।[2][3]

বিবরণ

এশীয় তিতিরদের মধ্যে জলার তিতির সবচেয়ে বড় আকৃতির। লম্বা পায়ের জন্যে এদের একই গণের অন্যান্য প্রজাতি থেকে খুব সহজেই আলাদা করা যায়। এদের পিঠ ও ডানা কালচে-বাদামী পালক দ্বারা আবৃত। মাথা ও ঘাড় একই রঙের পালক দ্বারা আবৃত। পিঠে অনেক মিহি সাদা ডোরা থাকে। অন্যসব তিতির প্রজাতির মতোই এদের পেটে ও বুকে মোটা মোটা উজ্জ্বল সাদা দাগ থাকে। সাদা মোটা ভ্রু দেখা যায়। ঠোঁটের গোড়া ও চোখের কোলও সাদা। গলা লালচে-কমলা। পা লালচে। স্ত্রী ও পুরুষ তিতির দেখতে একই রকম। তবে পায়ের গাঢ় রঙ আর পায়ের পেছনের আঙ্গুল দেখে সহজেই পুরুষ তিতিরকে শনাক্ত করা যায়।[5] জলার তিতিরের দৈর্ঘ্য কমবেশি ৩৭ সেন্টিমিটার।

আচরণ

জলার তিতির প্রধানত জলার তৃণভূমি বা নদীসংলগ্ন তৃণভূমি পছন্দ করে। এছাড়া বনসংলগ্ন ঘাসভূমি কিংবা ঝোপঝাড়েও বিচরণ করে। এছাড়া ধানক্ষেত বা আখক্ষেতেও চরে বেড়ায়। এদের লম্বা পা জলায় চলাফেরা করার উপযোগী।[2][3]

বীজ ও নরম উদ্ভিদাংশ এদের প্রধান খাবার। এছাড়া শামুক, ঝিনুক, পোকামাকড়, কেঁচো, চিংড়ি, ছোট মাছ ও কাঁকড়া এদের খাদ্যতালিকার অন্তর্ভুক্ত।[4] এদের ডাক অনেকটা তীক্ষ্ন চুঁইল্-চুঁইল্-চুঁইল যা অনেক দ্রুত, গড়ে প্রতি আট সেকেন্ডে দশবার ডাকে।[2][5] প্রজনন ঋতু স্থানভেদে ফেব্রুয়ারির শুরু থেকে জুন মাস পর্যন্ত। বাসা বানানো হয় প্রধানত ঘাসবনে। ঘাস আর আগাছা দিয়ে শক্তপোক্ত গোলাকার বাসা বানানো হয়। বাসায় ২-৮টি (গড়ে ৪টি) ডিম পাড়ে।[4]

অস্তিত্বের সংকট

ব্যাপকহারে আবাসন ধ্বংস, কীটনাশক প্রয়োগ ও বনাঞ্চল কেটে চাষাবাদের ফলে পাহাড়ি তিতিরের অস্তিত্ব সর্বত্রই হুমকির মুখে পড়েছে। এছাড়া মাংসের জন্য শিকারও এদের অস্তিত্ব-ঝুঁকির অন্যতম কারণ। তবে ভারত ও নেপালে এদের সংরক্ষণের জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

  1. বাংলাদেশের পাখি, রেজা খান, বাংলা একাডেমী, ঢাকা (২০০৮), পৃ. ৩৩০।
  2. Swamp Francolin, Francolinus gularis ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৯ জুলাই ২০১৩ তারিখে, BirdLife International এ জলার তিতির বিষয়ক পাতা।
  3. Francolinus gularis, The IUCN Red List of Threatened Species এ জলার তিতির বিষয়ক পাতা।
  4. , জলার তিতির বিষয়ক তথ্যাবলী।
  5. Swamp francolin, Francolinus gularis ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৮ জুন ২০১২ তারিখে, ARKive, জলার তিতির বিষয়ক পাতা।
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.