জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যান

জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যান (আগে ছিল জলদাপাড়া বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য) পশ্চিমবঙ্গের আলিপুরদুয়ার জেলায় পূর্ব হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত একটি জাতীয় উদ্যান। সমুদ্রপৃষ্ঠ ৬১ মিটার উচ্চতায় তোর্সা নদীর তীরে অবস্থিত এই অভয়ারণ্যের সামগ্রিক আয়তন ১৪১ বর্গ কিলোমিটার। জলদাপাড়া মূলত নদীকেন্দ্রিক বনাঞ্চলময় একটি সুবিস্তৃত তৃণভূমি। জৈব ও উদ্ভিজ্জ প্রকৃতির বৈচিত্রময় সমাবেশ দেখা যায় এই অভয়ারণ্যে। এগুলির মধ্যে অবলুপ্তপ্রায় একশৃঙ্গ গণ্ডার বিশেষভাবে উল্লেখ্য। এইসব প্রাণী ও উদ্ভিদ সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে ১৯৪১ সালে জলদাপাড়া একটি অভয়ারণ্য ঘোষিত হয়।

জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যান
জলদাপাড়ায় এলিফ্যান্ট সাফারি
মানচিত্র জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের অবস্থান দেখাচ্ছে
মানচিত্র জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের অবস্থান দেখাচ্ছে
অবস্থানআলিপুরদুয়ার জেলা, পশ্চিমবঙ্গ,  ভারত
স্থানাঙ্ক২৬°৩৭′৪৩″ উত্তর ৮৯°২২′৩৯″ পূর্ব
আয়তন২১৬.৫১ বর্গকিলোমিটার (৮৩.৫৯ বর্গমাইল)

১০ মে, ২০১২ তারিখে জলদাপাড়া বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যকে "জাতীয় উদ্যান" ঘোষণা করা হয়।[1]

প্রাণী ও উদ্ভিদ

এই বনভূমি প্রধানত লম্বা এলিফ্যান্ট ঘাসবিশিষ্ট সাভানা অঞ্চল। জলদাপাড়া অভয়ারণ্যের মুখ্য আকর্ষণ এশীয় একশৃঙ্গ গন্ডারঅসমের কাজিরাঙা জাতীয় উদ্যানের পর ভারতে এই অভয়ারণ্যেই সর্বাধিক সংখ্যক গন্ডারের দেখা মেলে। এই অভয়ারণ্যে বসবাসকারী অন্যান্য বন্যপ্রাণীগুলি হল বেঙ্গল টাইগার, হাতি, সম্বর হরিণ, মায়া হরিণ, চিতল হরিণ, হগ ডিয়ার, বুনো শুয়োরগৌর। জলদাপাড়া পক্ষীদর্শকদের কাছে স্বর্গরাজ্য। ভারতের যে অল্প কয়েকটি অঞ্চলে বেঙ্গল ফ্লোরিক্যান দেখা যায়, তার মধ্যে জলদাপাড়া অন্যতম। এখানে দেখা যায় এমন অন্যান্য পাখিগুলি হল ক্রেস্টেড ইগল, পালাস’স ফিশিং ইগল ও শিরকা। এছাড়া দেখা যায় বনমোরগ, ময়ূর, তোতা, বেঙ্গল ফ্লোরিক্যান, লেসার পেইড হর্নবিল প্রভৃতি।

এখানে সরীসৃপের ভেতরে আছে অজগর, গিরগিটি, ক্রেট, কোবরা, গুই সাপ[2] গিকোস ও মিষ্টি জলে বসবাসকারী কচ্ছপের আটটি প্রজাতি।

পর্যটন

১৫ জুন থেকে ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়কাল বাদে বছরের অন্যান্য সময় জলদাপাড়া অভয়ারণ্য পর্যটকদের জন্য খোলা থাকে। অক্টোবর-মে মাসে, বিশেষত মার্চ-এপ্রিল মাসে বনে নতুন ঘাস গজায়।

এলিফ্যান্ট সাফারি

জলদাপাড়া অভয়ারণ্যে এলিফ্যান্ট সাফারির ব্যবস্থা আছে। হাতির পিঠে চড়ে জঙ্গলের গভীরে যাওয়া যায় এবং বন ও তৃণভূমিতে গন্ডার, হাতির পাল ও অন্যান্য জীবজন্তুর বন্যজীবন প্রত্যক্ষ করা যায়। এলিফ্যান্ট সাফারি ছাড়াও বনে কার সাফারিও করা যায়।

টোটোপাড়া

অভয়ারণ্য সংলগ্ন টোটোপাড়া একটি গুরুত্বপূর্ণ নৃতাত্ত্বিক পর্যটনস্থল। টোটোপাড়া বিশ্বে টোটো উপজাতির একমাত্র আবাসস্থল। বর্তমানে টোটোদের জনসংখ্যা ১০০০ জনের কাছাকাছি। তাদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের জন্য সরকারি ও বেসরকারি স্তরে অনেক উদ্যোগ গৃহীত হয়েছে। যাই হোক, টোটোদের গ্রামে তাদের উপজাতীয় রীতিনীতি প্রত্যক্ষ করা পর্যটকদের কাছে এক বিরল অভিজ্ঞতা।

চিলাপাতা বনাঞ্চল

চিলাপাতা অরণ্যের মধ্যে এই অঞ্চলের দেড় হাজার বছরের পুরনো নল রাজার দুর্গ দেখা যায়। এটি ঐতিহাসিক ও পুরাতাত্ত্বিক গুরুত্বের স্থল। ধ্বংসাবশেষের মধ্যে দুর্গের একটি দরজা ও ভগ্নপ্রাচীরই অবশিষ্ট আছে। পঞ্চম শতাব্দীতে গুপ্তযুগে এই দুর্গ নির্মিত হয়। বর্তমানে এই অঞ্চলটি অসংরক্ষিত। প্রাকৃতিক ভারসাম্যহানির ভয়ে এখানে বেশি পুরাতাত্ত্বিক খননকার্য চালানো হয়নি। চিলাপাতা অরণ্যের এক প্রজাতির গাছ দেখা দেয় যা থেকে মানুষের রক্তের মতো রংবিশিষ্ট তরল নিঃসৃত হয়। এই গাছের মাত্র কয়েকটিই দুর্গপ্রাকারের নিকট দেখা যায়। স্থানীয়দের মতে বিশ্বে এই গাছ অন্যত্র দেখা যায় না এবং এর কোনো উদ্ভিদবৈজ্ঞানিক নামও নেই।

চিত্রাবলি

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

  1. "জাতীয় উদ্যানের স্বীকৃতি জলদাপাড়াকে"আনন্দবাজার পত্রিকা। ১১ মে ২০১২। ১১ মে ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ মে ২০১২
  2. কল্যাণ চক্রবর্তী, বিশ্বজিত রায়চৌধুরী, ভারতের বন ও বন্যপ্রাণী, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পুস্তক পর্ষদ, ফেব্রুয়ারি, ১৯৯১, কলকাতা, পৃষ্ঠা-১৩০।

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.