জরাথুস্ট্রবাদ
জরথুস্ত্রবাদ (অবেস্তা: 𐬨𐬀𐬰𐬛𐬀𐬌𐬌𐬀𐬯𐬥𐬀; ফার্সি: مزدیسنا; ইংরেজি: Zoroastrianism বা Zarathustraism) বা পারসিক ধর্ম (Magianism) (এবং অনুসারীদের মধ্যে মজদাযস্ন) একটি অতিপ্রাচীন ইরানীয় একেশ্বরবাদী ধর্ম বা ধর্মীয় মতবাদ। ভারতীয় উপমহাদেশে এটি পারসী ধর্ম নামেও পরিচিত।[1][2] জরথুস্ত্রীয় বা পারসিক ধর্মের প্রবর্তক জরথুস্ত্র। তার নাম অনুসারেই বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় এই ধর্মের নাম হয়েছে "জরোয়াস্ট্রিয়ানিজ্ম" বা জরাথ্রুস্টবাদ। এ ধর্মে ঈশ্বরকে অহুর মজদা বা আহুরা মাজদা ("সর্বজ্ঞানস্বামী") নামে ডাকা হয়। এদের ধর্মগ্রন্থের নাম আবেস্তা বা জেন্দাবেস্তা। পারসিক ধর্মের অনুসারীরা অগ্নি-উপাসক। আগুনের পবিত্রতাকে ঈশ্বরের পবিত্রতার সাথে তুলনীয় মনে করেন পারসিক জরথুস্ত্রীয়রা। এই ধর্ম গ্রন্থের সঙ্গে ঋগ্বেদ এর অনেক মিল আছে, তাই এদের উভয়ের উৎপত্তি একই উৎস থেকে হয়েছে বলে মনে করা হয়। ইহুদী ও খৃস্টান ধর্মে জরথুস্টকে ঈশ্বর প্রেরিত দূত বলে জ্ঞান করা হয়।
জরথুস্ত্রবাদ | |
---|---|
𐬨𐬀𐬰𐬛𐬀𐬌𐬌𐬀𐬯𐬥𐬀 مزدیسنا | |
প্রকারভেদ | ইরানীয় |
ধর্মগ্রন্থ | আবেস্তা |
ধর্মতত্ত্ব | একেশ্বরবাদ দ্বৈতবাদী বিশ্বতত্ত্ব |
নেতা | জরথুস্ত্রীয় নেতৃত্ব |
Associations | জরথুস্ত্রীয় সংগঠনসমূহ |
অঞ্চল | ভারত, ইরান, উত্তর আমেরিকা |
ভাষা | অবেস্তা ভাষা |
প্রতিষ্ঠাতা | জরথুস্ত্র |
উৎপত্তি | খ্রীষ্টপূর্ব ২য় সহস্রাবদ– খ্রীষ্টপূর্ব ৬ষ্ঠ শতাব্দী পারস্য (ইরান) |
সন্ন্যাস সংঘ | জরথুস্ত্রীয় সম্প্রদায়সমূহ |
সদস্য | ১১০,০০০–১২০,০০০ |
Ministers | কাতুজি, মগ, দস্তুর, মোবদ, হেরবদ |
অন্যান্য নাম | পারসি, ইরানি |
জরাথ্রুস্টবাদ |
---|
এর ওপর একটি সিরিজের অংশ |
প্রাথমিক বিষয় |
দূত ও দানব |
ধর্মগ্রন্থ এবং উপাসনা |
|
বিবরণ ও উপকথা |
|
ইতিহাস ও সংস্কৃতি |
|
অনুসারীগণ |
|
অনুসারীর সংখ্যা ১লক্ষ ৩০ হাজার (প্রায়)। জরথুস্ত্রীয় ধর্মে আনুষ্ঠানিকভাবে দীক্ষিত করার জন্য নওজোত (বা নবজোত) নামে একটি আচার-অনুষ্ঠান পালিত হয়। সাত বছর বয়স হওয়ার আগে কারও নওজোত হয় না। তবে নওজোতের জন্য বয়সের কোন উর্ধ্বসীমা নেই।
প্রাথমিক তথ্য
জরথুস্ত্রীয় বা পারসিক ধর্মের প্রবর্তক জরথুস্ত্র। তার নাম অনুসারেই বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় এই ধর্মের নাম হয়েছে "জরোয়াস্ট্রিয়ানিজ্ম" বা জরাথ্রুস্টবাদ। এ ধর্মে ঈশ্বরকে অহুর মজদা বা আহুরা মাজদা ("সর্বজ্ঞানস্বামী") নামে ডাকা হয়। এদের ধর্মগ্রন্থের নাম অবেস্তা (বা আবেস্তা) বা জেন্দাবেস্তা। পারসিক ধর্মের অনুসারীরা অগ্নি-উপাসক। আগুনের পবিত্রতাকে ঈশ্বরের পবিত্রতার সাথে তুলনীয় মনে করেন পারসিক জরথুস্ত্রীয়রা।[2]
অনুসারীর সংখ্যা
বর্তমানে পৃথিবীতে জরথুস্ত্রীয়দের সংখ্যা প্রায় ১ লক্ষ ৩০ হাজার। ভারত, আমেরিকা, কানাডা, ব্রিটেন, ইরান সহ হাতে গোনা কয়েকটি দেশে এদের বাস। তবে ধর্মটির অনুসারী বা পারসীদের অর্ধেকই বর্তমানে ভারতে বসবাস করছে। ভারতে বসবাসকারী এসব পারসীদের ৯০ শতাংশ থাকেন মুম্বইয়ে। বাকি ১০ শতাংশ ছড়িয়ে রয়েছেন সারা ভারতে। কলকাতায় পারসিক জনসংখ্যা প্রায় চারশো। সাম্প্রতিক সময়ে ২০১৫ সালে হিন্দু নৃগোষ্ঠীর ১ লক্ষ মানুষ নতুন করে জরথুস্ত্রীয় ধর্মে দীক্ষিত হয়েছেন।[2]
ধর্মীয় দীক্ষার অনুষ্ঠান
জরথুস্ত্রীয় ধর্মে আনুষ্ঠানিকভাবে দীক্ষিত করার জন্য নওজোত (বা নবজোত) নামে একটি আচার-অনুষ্ঠান পালিত হয়। সাত বছর বয়স হওয়ার আগে কারও নওজোত হয় না। তবে নওজোতের জন্য বয়সের কোন উর্ধ্বসীমা নেই।[2]
ভারতে পার্সি জরথুস্ত্রীয়দের ইতিহাস
খ্রিস্টীয় ৯ম শতকে জরথুস্ত্রীয় ধর্মালম্বী পারসিকরা পারস্য (বর্তমান ইরান) থেকে ভারতে চলে আসেন । ভারতে এসে এরা প্রথম পা রাখে বর্তমান গুজরাতের সঞ্জান এলাকায়। এদের এই আগমন সম্পর্কে একটি চমৎকার ঘটনা প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে জানা যায়। পারসীদের আগমনের পর সনজানের শাসক একটি কানায় কানায় পূর্ণ দুধের পাত্র পারসিদের কাছে পাঠিয়েছিলেন। অর্থাৎ তিনি বোঝাতে চেয়েছিলেন তার রাজ্যে আর কাউকে ঠাঁই দেয়ার জায়গা নেই। পারসিরা ঐ পাত্রে চিনি ঢেলে দেখিয়ে দেন পাত্র উপচে পড়ছে না। অর্থাৎ বোঝানোর চেষ্টা করেন চিনি যেমন দুধে মিশে যায় তেমনি তারাও ওই এলাকার মানুষের সাথে মিলেমিশে থাকবেন। এরপর শাসক পার্সিদের আশ্রয় দেন।[2]
উপাসনার মাধ্যম
এককালের হাখমানেশী, পার্থীয় এবং সাসানীয় সাম্রাজ্যগুলোর রাষ্ট্রধর্ম ছিল জরাথুস্ট্রবাদ। [1] পারসীদের প্রধানত 'অগ্নি-উপাসক' নামে সংজ্ঞায়িত করা হলেও জরথুস্ত্রীয়দের অগ্নি উপাসনার ধারণাটি মূলত জরাথুস্ট্রবাদ-বিরোধী বিতর্ক থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে। প্রকৃতপক্ষে আগুনকে পারসিক ধর্মে শুদ্ধতার প্রতিনিধি এবং ন্যায় ও সত্যের প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হয়, এমনকি তাদের অগ্নি-মন্দিরেও (পারসিক পরিভাষায় সরল অর্থে আগুনের ঘর) এই একই ধারণা পোষণ করা হয়। বর্তমানকালে এই বিষয়টিকে ব্যাখ্যা করা হয়েছে এভাবে যে অগ্নি প্রজ্বলনের কারণ হল তা সর্বদা যে কোন ঊর্ধ্বমুখী বস্তুবিশেষকে পুড়িয়ে ফেলে এবং তা কখনোয় দূষিত হয় না। তা সত্ত্বেও "সাদে" এবং "চহারশনবা-এ-সূরী" হল বৃহত্তর ইরানের সর্বত্র উদযাপিত দুটি অগ্নি-সম্পর্কিত উৎসব এবং এই দুটি উৎসবে সেই যুগের রীতিতে ফিরে যাওয়া হয় যে যুগে জরথুস্ত্রীয় ধর্ম ইরানে সবচেয়ে প্রভাব বিস্তারকারী ধর্ম ছিল।
জরাথ্রুস্ট্রবাদে আপোস বা আবান অর্থাৎ পানি এবং আতর বা আদুর অর্থাৎ আগুন হল ধর্মীয় পবিত্রতার প্রতিনিধি এবং এ-সম্পর্কিত শুদ্ধিকরণ আচার-অনুষ্ঠানসমূহকে ধর্মীয় জীবনব্যবস্থার ভিত্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। জরথুস্ত্রীয় সৃষ্টিতত্ত্ব অনুসারে পানি এবং আগুন হল যথাক্রমে দ্বিতীয় এবং সর্বশেষ সৃষ্ট প্রভাবশালী পদার্থ, এবং তাদের ধর্মীয় গ্রন্থে পানিকে সৃষ্টিগতভাবে আগুনের মূল উৎস মনে করা হয়েছে। আগুন এবং পানিকে জীবন ধারণের জন্য অপরিহার্য বলে মনে করা হয়, এবং আগুন ও পানি উভয়কেই অগ্নি-মন্দিরের চারপাশে প্রতীকীরূপে তুলে ধরা হয়। জরথুস্ত্রীয়গণ বিভিন্নভাবে প্রজ্বলিত আগুনের (যাকে যে কোন ধরনের আলোতে স্পষ্টভাবে দেখা যায়) উপস্থিতিতে উপাসনা করে থাকেন, এবং উপাসনার মৌলিক কর্মের চূড়ান্ত আচারটি "জলরাশির শক্তি"-রূপে সংযুক্ত হয়। আগুনকে একটি মাধ্যম হিসেবে বিবেচনা করা হয়, যার মাধ্যমে আধ্যাত্মিক জ্ঞান ও অন্তর্দৃষ্টি অর্জিত হয়, এবং পানিকে সেই জ্ঞানের উৎস হিসেবে বিবেচনা করা হয়।