জটায়ু (রামায়ণ)

হিন্দু ধর্মের চর্চিত অন্যতম মহাকাব্য রামায়ণ অনুসারে জটায়ু (সংস্কৃত ভাষার দেবনাগরী লিপিতে : जटायुः) ছিলো একটি দৈবপক্ষী এবং সূর্যদেবের অশ্বচালক অরুণের কনিষ্ঠ পুত্র৷ তার জ্যেষ্ঠভ্রাতা সম্পাতি ছিলেন একজন অর্ধদেহী দেবতা এবং রামের পিতা দশরথের পরমমিত্র৷[1]

জটায়ু
রাবণ ও জটায়ুর আকাশযুদ্ধ এবং চিত্রের মাঝ বরাবর সীতাদেবীর অবস্থান৷
পরিবারঅরুণ (পিতা)

জটায়ুর ইতিহাস

জটায়ু পক্ষী হত্যা - বলসাহেব পন্ত প্রতিনিধির রং-তুলিতে

হিন্দু মহাকাব্য রামায়ণ অনুসারে রাবণ যখন সীতাকে হরণ করে নিজ রাজ্যে নিয়ে যেতে চান, সেই দৃশ্য দেখে জটায়ু তাকে রাবণের হাত থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করেন৷ জটায়ু রাবণের বিপক্ষে যথেষ্ট বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করেন কিন্তু বার্ধক্যের কারণে রাবণ অতি চতুরতার সাথে জটায়ুর বিপক্ষে জয় লাভ করেন৷

রাবণের জটায়ু হত্যা

রামলক্ষ্মণ; সুগ্রীবের বানরসেনা সহ সীতাদেবীর খোঁজে ঘুরতে ঘুরতে জটায়ুর সাক্ষাৎ পান৷ তিনি তাদেরকে জটায়ু-রাবণ যুদ্ধের বিষয়ে জানান এবং এও জানান যে রাবণ সীতাসহ দক্ষিণ দিকের সমুদ্রের নিকট অগ্রসর হয়েছে৷

জটায়ু এবং তার অগ্রজ সম্পাতি যুবাকালে সবচেয়ে উঁচুতে উড়াল দেওয়ার প্রতিযোগিতা করতেন৷ একটি বর্ণিত ঘটনা অনুসারে কোনো এক সময়ে জটায়ু উচ্চতর উড়াল দিলে সূর্যতেজে তার অবস্থা শোচনীয় হয়ে পড়ে৷ সম্পাতি ঐসময়ে নিজের ডানা প্রসারিত করে সূর্যের তেজ আটকে জটায়ুকে বাঁচান৷ এই ঘটনার ফলে সম্পাতি নিজে এতটাই জখম হন যে সে তার ডানাদুটিই হারান৷ এর ফলে সম্পাতি তার পরবর্তী জীবনে পক্ষহীন পক্ষীর জীবন অতিবাহিত করেন৷

রাবণের সাথে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পরে জটায়ু মূর্চ্ছিত হয়ে মাটি পড়ে থাকা অবস্থায় তিনি রামের সাক্ষাৎ পান৷ সমস্ত ঘটনা শুনে রাম তাকে তার মোক্ষ লাভের কথা বলেন৷ জটায়ু সীতার বিরহে বিব্রত রামকে সান্ত্বনা দিয়ে আশ্বস্ত করেন যে সীতার কোনো ক্ষতি হবে না এবং শীঘ্রই তারা তাকে খুঁজে পাবেন৷ তার মুখে সীতার কুশল সংবাদ ও আশ্বস্তবাণী শুনে রাম জটায়ুকে আলিঙ্গন করেন৷ জটায়ুর কথায় তৃপ্ত হয়ে তাকে আশীর্বাদ করেন৷ রাম জটায়ুর মৃৃত্যুতে সীতার বিরহের থেকেও অধিক মর্মাহত হন৷ রাম জটায়ুকে নিজের পিতার সমান ও পিতৃৃতুল্য মনে করে তার অন্ত্যেষ্টি ও প্রয়োজনীয় শ্রাদ্ধশান্তি নিষ্ঠাসহ সম্পন্ন করেন৷ ভগবান বিষ্ণুর রাম অবতার তার সমস্ত জীবন এক সাধারণ মানুষের মতো দুঃখ কষ্ঠ সুখ বিলাস ইত্যাদির আস্বাদ নিলেও এই ক্ষেত্রে তিনি অলৌকিকতার প্রকাশ ঘটান৷ নিজের তীর ভূমিতে নির্দেশিত করে তিনি সপ্তনদীর জল একত্রিত করে সঙ্কল্প করার পরিকল্পনা করেন৷ ছয় নদীর জল তার আদেশ মেনে ঐ স্থানে উপস্থিত হলেও একটি নদী তার আদেশ অবজ্ঞা করেন৷ ফলে বিষ্ণুর অবতার হওয়ার দরুন রাম গয়াধামকে উক্তস্থানে উপবিষ্ট হওয়ার জন্য একপ্রকার বাধ্য করেন৷

জটায়ু সম্বন্ধিত স্থান

জনশ্রুতি অনুযায়ী, এটা বিশ্বাস করা হয় যে রাবণ জটায়ুর পক্ষচ্ছেদ ঘটালে সে বর্তমান ভারতের কেরালা রাজ্যের জটায়ুমঙ্গলম নামক স্থানে একটি পাথরের ওপর এসে পতিত হলে স্থানটির এরূপ নাম হয়৷ যদিও স্থানীয় উচ্চারণে এটি "চডয়মঙ্গলম" নামে পরিচিত৷ এই গ্রামের যে স্থানে শিলার ওপর জটায়ু শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছিলেন সেই স্থানে কিছু বছর আগে অবধিও উন্মুক্ত আকাশে তার চঞ্চুচিহ্ন ও রামের পাদুকাচিহ্ন ছিলো, যা বর্তমানে আবৃত করা হয়েছে৷ আবার অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্যের লেপক্ষী অঞ্চলের সাথেও একই ইতিহাস জড়িত এবং কেরালার রামক্কলমেট্টুতে তার শেষকৃৃত্য সম্পন্ন হয়৷ রাম জটায়ুকে শায়িত অবস্থা থেকে উঠতে বলেন, যা তেলুগু ভাষাতে "লে পক্ষী" (বা ওঠো পক্ষী) উচ্চারিত হয়, এভাবেই এই স্থানটির নাম হয় লেপক্ষী৷[2][3]

কিন্তু বাল্মিকী রামায়ণ অনুসারে রাম কখনোই বিন্ধ্য পর্বত অতিক্রম করেন নি৷ সর্বতীর্থ গ্রন্থ অনুসারে জটায়ু মহারাষ্ট্রে আকোলা আহমদনগর অঞ্চলে পতিত হন৷ সেখানে জটায়ুর নামে একটি মন্দির রয়েছে এবং মন্দিরের নিকটে পুকুরটিকে ছয় নদীর সম্মিলিত ধারার উপস্থিতির কথা বিশ্বাস করা হয়৷ রামায়ণের একাধিক আঞ্চলিক সংস্করণে কেরালা ও অন্ধ্রপ্রদেশের উক্ত স্থানগুলির নাম পাওয়া যায়, মূল বাল্মিকী রামায়ণে নয়৷

জটায়ু পরিবেশ উদ্যান

জটায়ু আর্থ'স সেন্টার, যা জটায়ু পরিবেশ উদ্যান বা জটায়ু রক নামেও পরিচিত, এটি হলো কেরালা রাজ্যের কোল্লাম জেলার জটায়ুমঙ্গলমে অবস্থিত একটি উদ্যান ও পর্যটনকেন্দ্র৷ এটি সমুদ্রপৃৃষ্ঠ থেকে ৩৫০ মিটার (১২০০ ফুট) উচ্চতায় অবস্থিত৷ এই পরিবেশ উদ্যানটিতে বিশ্বের একমাত্র বৃহত্তম ২০০ ফুট লম্বা, ১৫০ ফুট চওড়া ও ৭০ ফুট উচ্চতাযুক্ত পাখির ভাস্কর্য রয়েছে, যা জটায়ুর উদ্দেশ্যে উৎসর্গীকৃৃত৷[4][5] এই উদ্যানটি নির্মান-সংরক্ষণ-হস্তান্তর নীতিভুক্ত কেরালা রাজ্যে অবস্থিত প্রথম প্রকাশ্য ব্যক্তিগত পর্যটন কেন্দ্র৷ ভাস্কর রাজীব অঞ্চল হলেন জটায়ুর মূর্তি তৈরীর নকশাকর৷ জটায়ুমঙ্গলম গ্রাম তথা পর্যটনস্থলটি জেলাসদর কোল্লম থেকে ৩৮ কিলোমিটার ও রাজ্যসদর তিরুবনন্তপুরম থেকে ৪৬ কিলোমিটার দুরত্বে অবস্থিত৷

উদ্যানটির দ্বিতীয় ক্ষেপের সংস্কারমূলক কাজ ১৭ই আগস্ট ২০১৮ খ্রিস্টিব্দে সম্পন্ন হয় ও তা জনসাধারণের দর্শনের জন্য খুলে দেওয়া হয়৷[6][7]

তথ্যসূত্র

  1. https://hinduism.stackexchange.com/questions/3044/how-did-dasharatha-become-friends-with-jatayu
  2. http://www.bangaloremirror.com/index.aspx?Page=article&sectname=Specials%20-%20Trippin&sectid=38&contentid=2009100120091001181345687b8670cd2%5B%5D
  3. "Lepakshi Temple - Lepakshi:: The Treasure House of Art and Sculpture"। ২৮ মার্চ ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯
  4. "Jatayu Nature Park Website"। ২৫ নভেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ ডিসেম্বর ২০১৫
  5. "Kerala park to welcome visitors in Jan - Khaleej Times"। সংগ্রহের তারিখ ১ ডিসেম্বর ২০১৫
  6. "Adventure Rock Hill open for visitors"। Times of India। সংগ্রহের তারিখ ৬ ডিসেম্বর ২০১৭
  7. "Enjoy a day of adventure at Jatayu Earth's Center"। Outlook Traveller। সংগ্রহের তারিখ ৭ ডিসেম্বর ২০১৭
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.