জগজিৎ সিং

জগজিৎ সিং (উর্দু: جگجیت سنگھ, পাঞ্জাবি: ਜਗਜੀਤ ਸਿੰਘ; জন্মগত নাম জগমোহন সিং; (৮ ফেব্রুয়ারি, ১৯৪১–১০ অক্টোবর, ২০১১) ছিলেন একজন বিশিষ্ট ভারতীয় গজল গায়ক, সুরস্রষ্টা, সংগীত পরিচালক, সমাজকর্মী ও শিল্পোদ্যোগী। তিনি "গজল-সম্রাট" নামে পরিচিত। তার স্ত্রী চিত্রা সিংও একজন বিশিষ্ট ভারতীয় গজল গায়িকা।[1] ১৯৭০ ও ১৯৮০-এর দশকে জগজিৎ এবং চিত্রা সিং ভারতীয় সংগীত জগতে প্রায় একই সঙ্গে খ্যাতনামা হয়ে ওঠেন।[2] তাদের দুজনকে আধুনিক গজল সংগীতের পথপ্রদর্শক মনে করা হয়। ভারতের ফিল্মি গানের ধারার বাইরে থেকেও তারা ছিলেন অত্যন্ত জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী। অর্থ (১৯৮২) ও সাথ সাথ ছবিতে ব্যবহৃত তাদের গাওয়া গজলের সংকলন এইচএমভি থেকে প্রকাশিত হয়; এটি ছিল তাদের সর্বাধিক বিক্রীত অ্যালবাম।[3] লতা মঙ্গেশকরের সঙ্গে তিনি প্রকাশ করেন সাজদা (১৯৯১) অ্যালবামটি। তিনি পাঞ্জাবি, হিন্দি, উর্দু, বাংলা, গুজরাটি, সিন্ধিনেপালি ভাষাতেও গান গেয়েছিলেন। ২০০৩ সালে সংগীত ও সংস্কৃতি জগতে অবদানের জন্য তাকে ভারতের তৃতীয় সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান পদ্মভূষণ দিয়ে সম্মানিত করা হয়।

জগজিৎ সিং
জগজিৎ সিং ভুবনেশ্বরের জয়দেব হলে এক সংগীতানুষ্ঠানে, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০১১
প্রাথমিক তথ্য
জন্মশ্রীগঙ্গানগর, বিকানের রাজ্য, ব্রিটিশ ভারত
মৃত্যুমুম্বই, মহারাষ্ট্র, ভারত
ধরনগজল, শাস্ত্রীয় সংগীত, ভক্তিগীতি, লোকসংগীত
পেশাগীতিকার, গায়ক, সংগীত পরিচালক, সমাজকর্মী, শিল্পোদ্যোগী
বাদ্যযন্ত্রকণ্ঠশিল্পী, হারমোনিয়াম, তানপুরা, পিয়ানো
কার্যকাল১৯৬৬-২০১১
লেবেলইএমআই, এইচএমভি, সারেগামা, ইউনিভার্সাল মিউজিক, সোনি বিএমজি মিউজিক এন্টারটেইনমেন্ট, পলিডোর, টিপস ইন্ডাস্ট্রিজ, ভেনাস, টি-সিরিজ
দাম্পত্য সঙ্গীচিত্রা সিং

গজল ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীতের একটি জটিল ধারা। সিং গজলের সঙ্গে "গীত" ধারার মিশ্রণ ঘটিয়ে এই ধারাটিকে সরল করে তোলেন। এরই ফলে গজল পুনরায় জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। প্রেম গীত (১৯৮১), অর্থসাথ সাথ (১৯৮২) চলচ্চিত্রে এবং টিভিসিরিয়াল মির্জা গালিব (১৯৮৮) ও কহকশান (১৯৯১)-এ গজল গেয়ে তিনি জনপ্রিয়তা পান। বাণিজ্যিক দিক থেকেও তিনি ছিলেন একজন সফল গজল শিল্পী। প্রায় পাঁচ-দশকব্যাপী সংগীতজীবনে তিনি ৮০টি অ্যালবাম প্রকাশ করেন। তার নয়ি দিশা (১৯৯৯) ও সমবেদনা (২০০২) ছিল ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী তথা বিশিষ্ট হিন্দি কবি অটলবিহারী বাজপেয়ীর লেখা গানের সংকলন।

জগজিৎ ও চিত্রা সিং প্রথম ভারতীয় সুরস্রষ্টা যিনি ডিজিটাল মাল্টি-ট্র্যাক রেকর্ডিং পদ্ধতিতে গান রেকর্ড করেন। এই পদ্ধতিতে রেকর্ড করা তাদের প্রথম অ্যালবামটি ছিল বিয়ন্ড টাইম (১৯৮৭)।[4] রবিশঙ্কর ও অন্যান্য সংগীতশিল্পী ও সাহিত্যিকদের সঙ্গে তিনি ভারতীয় শিল্প ও সংস্কৃতির রাজনীতিকরণের বিরুদ্ধে আন্দোলনে সামিল হয়েছিলেন। শাস্ত্রীয় ও লোকশিল্পীদের তিনি নানাভাবে সাহায্য করতেন। মুম্বইয়ের সেন্ট মেরি স্কুলের লাইব্রেরি নির্মাণ, বম্বে হসপিটাল গঠন এবং ক্রাই, সেভ দ্য চিলড্রেন ও আলমা প্রভৃতি সংগঠনের কাজকর্মেও তিনি প্রত্যক্ষভাবে সাহায্য করেন।

মৃত্যু

বয়সজনিত কারণে জগজিৎ সিং প্রায়ই হৃদরোগের চিকিৎসা নিতেন। এছাড়াও উচ্চ রক্তচাপেরও সমস্যা ছিল তার। মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণজনিত গুরুতর সমস্যায় তাকে ভারতের মুম্বাইয়ের লীলাবতী হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র বা আইসিইউতে ভর্তি করা হয়েছিল। ১০ অক্টোবর, ২০১১ইং, সোমবার, সকাল ৮ টা ১০ মিনিটে ঐ হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৭০ বছর বয়সে মারা যান এই গজল শিল্পী।[5]

তথ্যসূত্র

  1. "Indian singer Jagjit Singh dies" |ইউআরএল= এর মান পরীক্ষা করুন (সাহায্য)BBC News। ১০ অক্টোবর ২০১১। সংগ্রহের তারিখ ১০ অক্টোবর ২০১১ অজানা প্যারামিটার |1= উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য)
  2. Harris, Craig। "Jagjit and Chitra Singh: Biography"। Allmusic। সংগ্রহের তারিখ ১০ অক্টোবর ২০১১
  3. "Ghazal loses its voice"
  4. "Jagjit Singh: Ghazal Personified"। ২৯ জুন ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ অক্টোবর ২০১১
  5. "চলে গেলেন বিখ্যাত গজল শিল্পী জগজিৎ সিং, retrieved 20 October, 2011"। ১১ অক্টোবর ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ অক্টোবর ২০১১

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.