ছারছিনা দারুসসুন্নাত কামিল মাদ্রাসা
ছারছিনা দারুসসুন্নাত আলিয়া কামিল মাদ্রাসা তবে মাদ্রাসাটি সারা দেশে শর্ষিনা দারুসসুন্নাত কামিল মাদ্রাসা[1] নামেও ব্যপক পরিচিত। মাদ্রাসাটি বাংলাদেশের বরিশাল বিভাগের পিরোজপুর জেলার নেছারাবাদ উপজেলার ছারছীনা গ্রামে অবস্থিত একটি বিখ্যাত আলিয়া মাদরাসা।[2] ১৯১৫ সালে বিখ্যাত পীর নেছারউদ্দীন আহমদ এই মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠা করেন।[1] এটি বাংলাদেশের প্রথম স্বীকৃত টাইটেল (কামিল) মাদ্রাসা। এই মাদ্রাসা ফলাফলের দিক থেকে সর্বদাই দেশের শীর্ষ স্থান দখল করে থাকে।[3] এই মাদ্রাসা নীতি-নৈতিকতা ও আকীদা বিষয়ের উপর জোর দেওয়ার জন্য সারা দেশে বিখ্যাত।[4] এই মাদ্রাসা হতে এ পর্যন্ত ৩০০ ছাত্র এর বেশি বোর্ডস্ট্যান্ড করেছে।
ছারছীনা দারুসসুন্নাত কামিল মাদ্রাসা | |
অন্যান্য নাম | ছারছীনা মাদ্রাসা, শর্ষিনা মাদ্রাসা |
---|---|
স্ট্যান্ড ছাত্র | ৩০০ জন |
ধরন | এমপিও ভুক্ত |
স্থাপিত | ১৫ জানুয়ারি, ১৯১৫ |
প্রতিষ্ঠাতা | আল্লামা নেছারউদ্দীন আহমদ (রহঃ) (ছারছীনার পীর) |
অধিভুক্তি | ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ (২০০৬- ১০১৬) ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় (২০১৬- বর্তমান) |
চেয়ারম্যান | মাওলানা শাহ মোহাম্মদ মোহেব্বুল্লাহ |
অধ্যক্ষ | মাওলানা সাইয়্যেদ শরাফাত আলী |
শিক্ষক | ৪৭ জন |
শিক্ষার্থী | ৩০০০ এর অধিক |
ঠিকানা | দারুস্সুন্নাত,নেছারাবাদ,পিরোজপুর। , , ৮৫২১ , |
শিক্ষাঙ্গন | গ্রাম্য, ২০.৫৬ একর |
প্রকাশনা | পাক্ষিক তাবলীগ, মাসিক কুঁড়ি, মুকুল, আল-হেলাল পত্রিকা,এহইয়া উঅসুন্নাহ |
ওয়েবসাইট | sarsinadorbarsharif.org |
ইতিহাস
ছারছিনা দারুসসুন্নাত কামিল মাদ্রাসা ১৫ জানুয়ারি, ১৯১৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। ছারছিনা দরবারের প্রতিষ্ঠাতা ও পীর নেছার উদ্দীন আহমেদ এটি প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯২৭ সালে অধ্যক্ষ মৌলভী ইসহাকের প্রচেষ্টায় মাদ্রাসাটি সরকারি অনুমোদন লাভ করে। ১৯২২ সালে আলিম, ১৯৩১ সালে ফাজিল ও ১৯৪২ সালে কামিল শ্রেণির জন্য সরকারি অনুমোদন পায়। ১৯৩০ সালে ৮০ হাত দৈর্ঘ্য এবং ২০ হাত প্রস্থ একটি ভবন নির্মিত হয়।
১৯৫২ সালে মাদ্রাসা পরিচালনার দায়িত্বভার ছারছিনার পীর মাওলানা আবু জাফর মোহাম্মদ সালেহ গ্রহণ করলে তার চেষ্টায় ১৯৬১ সালে দারুল হাদিস ভবন, ১৯৬৬ সালে লাইব্রেরি, ১৯৭৪ সালে রেস্ট হাউজ, চার তলা একাডেমিক ভবন, ১৯৭৪ সালে মসজিদ, ১৯৫৬ সালে দ্বিতল প্রশাসনিক ভবন এবং ১৯৬১ সালে ছাত্রাবাস নির্মিত হয়।[5] ২০০৬ সালে মাদ্রাসার ফাজিল ও কামিল শ্রেণী ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়ার অধিভুক্ত হয়, এবং ২০১৬ সালে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে স্থানান্তরিত হয়।
ক্যাম্পাস
বর্তমান ছারছীনা দারুসসুন্নাত কামিল মাদ্রাসার ক্যাম্পাস ২০.৫৬ একর জমির ওপরে প্রতিষ্ঠিত। এছাড়া মাদ্রাসার অধীনে রয়েছে প্রায় ৩ হাজার বিঘা আবাদি জমি রয়েছে, এসব জমি থেকে মাদ্রাসার ৫০ লক্ষ টাকারও বেশী পরিমাণ আয় হয়। এসব টাকা মাদ্রাসার অবকাঠামো উন্নয়ন, পড়াশোনার মান উন্নয়ন, শিক্ষার্থীদের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতকরণ ও ইসলাম প্রচারের কাজে ব্যবহৃত হয়।
শিক্ষা ব্যবস্থা
সুপ্রাচীন এই মাদ্রাসার শিক্ষা ব্যবস্থা খুব আধুনিক এবং পড়াশোনার মানও খুব ভালো। বরাবরই মাদ্রাসাকে দেশের মধ্যে শীর্ষস্থানীয় ফলাফল করতে দেখা যায়।[6][7] এই মাদ্রাসা হতে এযাবত ৩০০ এর অধিক শিক্ষার্থী বোর্ডস্ট্যান্ড করেছে। মাদ্রাসাটির দাখিল শ্রেণী পর্যন্ত বিজ্ঞান শাখা চালু আছে, আলিম শ্রেণীতে শুধু মানবিক শাখা চালু রয়েছে, কামিল শ্রেণিতে হাদীস, তাফসীর ও ফিকহ বিভাগ চালু রয়েছে।
সুযোগ-সুবিধা
মাদ্রাসাটিতে আধুনিক সকল সুবিধা রয়েছে, নিজস্ব লাইব্রেরী, আবাসিক হল, মসজিদ, খেলার মাঠ, বিজ্ঞানাগার সহ আরো অনেক সুবিধা রয়েছে সাধারন শিক্ষার্থীদের জন্য। মাদ্রাসার আবাসিক হলে ছাত্রদের পড়াশোনা ও সার্বিক তত্ত্বাবধায়নের জন্য শিক্ষক নিয়োগ করা হয়েছে, তারা ছাত্রদের সাহায্য ও পরিচর্যা করে থাকেন।
লাইব্রেরী
ছারছিনা মাদ্রাসায় দুটি সমৃদ্ধ লাইব্রেরি আছে। এই লাইব্রেরীদ্বয়ে ২০ হাজারের অধিক জ্ঞান সমৃদ্ধ বই রয়েছে, লাইব্রেরীতে কুরআন ও হাদিস বিশ্লেষণী ধর্মী বই, বিভিন্ন তাফসীর বই, মৌলিক হাদিসের বই, বিজ্ঞান সাময়িকী, দেশ ও বিদেশের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জার্নাল সহ আধুনিক বই এখানে পাওয়া যায়।
প্রকাশনী
মাদ্রাসার একটি নিজস্ব প্রকাশনা আছে, যেখান থেকে বিভিন্ন বই প্রকাশিত হয়। ছাত্র ও শিক্ষকদের লেখা বইসমূহ এখান থেকে ছাপানো হয়ে থাকে, এছাড়াও বিভিন্ন বই ছাপানো হয়ে থাকে। ছাপাখানা হতে এ পর্যন্ত প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলঃ তরীকুল ইসলাম (১ম ও ২য় খণ্ড), ফতওয়ায়ে সিদ্দীকিয়া, খুৎবায়ে সালেহিয়া, কুরবানীর মাসায়েল, মাওলানা নেছারউদ্দীন রহ. (জীবনী), মাওলানা আবু জাফর মোহাম্মদ ছালেহ রহ. (জীবনী), আজীফায়ে সালেহীন, চার তরীকার শাজরা, বার চান্দের ফজীলত, নারী ও পর্দা, দাড়ী ও ধূমপান, আমীর মুয়াবীয়া প্রভৃতি।
আবাসন সুবিধা
শিক্ষার্থীদের আবাসনের ছাত্রাবাস রয়েছে ৭টি। মাদ্রাসার আয়ের ফান্ড থেকে ৭টি ছাত্রাবাসে ৩০০০ এর অধিক ছাত্রের বিনামূল্যে থাকা এবং খাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। এসব ছাত্রাবাসে আধুনিক সকল সুযোগ-সুবিধা রয়েছে।
প্রকাশনা
মাদ্রাসার ছাত্র ও শিক্ষকদের লেখালিখি করার জন্য কিছু প্রকাশনা রয়েছে। এরমধ্যে কিছু পত্রিকা মাসিক, কিছু ত্রৈমাসিক। এগুলো হলো
- পাক্ষিক তাবলীগ
- মাসিক কুঁড়িমুকুল ও
- আল-হেলাল পত্রিকা
শিক্ষার্থী ও শিক্ষক
বর্তমানে মাদ্রাসার ছাত্রসংখ্যা ৩০০০ এর অধিক। মাদ্রাসায় শিক্ষক সংখ্যা ১৫০ এবং কর্মচারীর সংখ্যা ৫০।[1][8]
উল্লেখযোগ্য প্রাক্তন শিক্ষার্থী
- দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, ইসলামি বক্তা ও রাজনীতিবিদ
- আযীযুর রহমান কায়েদ, ঝালকাঠি জেলার ধর্ম সংস্কারক
- মাওলানা শাহ মুহাম্মদ মাছউদ আলম,পীর ছাহেব খোশবাজার (উত্তর বাংলার সংগ্রামী দ্বীন প্রচারক)।
- মাওলানা শরীফ মুহাম্মদ আবদুল কাদির রহ,
- নুরুল ইসলাম ফারুকী
- রুহুল আমিন খান, দৈনিক ইনকিলাবের নির্বাহী সম্পাদক
- কাফিলুদ্দীন সরকার সালেহী
- আ খ ম আবু বক্কর সিদ্দিক
- আব্দুল লতিফ শেখ
- মাওলানা আব্দুল মতিন, পীর সাহেব, নাঙ্গুলী দরবার শরীফ।
- মাওলানা আবদুর রহিম রহ,
- মাওলানা রফিকউল্লাহ আফসারী
আরও দেখুন
- ছারছিনা দারুসসুন্নাত কামিল মাদ্রাসার শিক্ষক
- ছারছিনা দারুসসুন্নাত কামিল মাদ্রাসার প্রাক্তন শিক্ষার্থী
- সরকারি মাদ্রাসা-ই-আলিয়া, ঢাকা
- নাঙ্গুলী নেছারিয়া ফাযিল মাদরাসা
তথ্যসূত্র
- আ ব ম সাইফুল ইসলাম সিদ্দীকী (২০১২)। "শর্ষিনা দারুসসুন্নাত কামিল মাদ্রাসা"। ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। আইএসবিএন 9843205901। ওএল 30677644M। ওসিএলসি 883871743।
- Pakistan; National Assembly (১৯৬৭)। "Debates. Official report."। Debates. Official report.। Volume 1, Issue 16-28: 1498 Page। ওসিএলসি 8693726।
- "ঝালকাঠির কাঁঠালিয়াতে জনগণের ভালোবাসার শীর্ষে ছারছিনা মাদ্রাসা প্রধান মুহাদ্দিস এর পুত্র ~ দৈনিক দেশের কন্ঠ 24" (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২১-০৬-০৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৬-০৪।
- "ঝালকাঠির কাঁঠালিয়াতে জনগণের ভালোবাসার শীর্ষে ছারছিনা মাদ্রাসা প্রধান মুহাদ্দিস এর পুত্র ~ দৈনিক দেশের কন্ঠ 24" (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২১-০৬-০৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৬-০৪।
- হাওলাদার ওমর ফারুক। "ছারছিনা দরবার শরীফের ইতিকথা"। দৈনিক ইত্তেফাক। ৭ জুন ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ জুলাই ২০১৮।
- "ইবতেদায়ী সমাপনীতে সেরা মাদ্রাসা তা'মীরুল মিল্লাত"। banglanews24.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৬-০৪।
- "কালের কণ্ঠ"। Kalerkantho। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৬-০৪।
- "ছারছিনা দারুস সুন্নাত আলিয়া মাদ্রাসা / শর্শিনা মাদ্রাসা - Barisalpedia"। www.barisalpedia.net.bd। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৯-২৭।