চোর-চুন্নীর গান

চোর-চুন্নীর গান বা চোর-চোরনীর গান হল ভারতের পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার জেলার একটি বিশিষ্ট আঞ্চলিক লোকায়ত সঙ্গীতরীতি। এগুলি মূলত পশ্চিম ডুয়ার্সের গ্রামাঞ্চলের রাজবংশী কৃষক সমাজের মধ্যে দীর্ঘকাল ধরে প্রচলিত দলবদ্ধ গান।[1][2]

পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গীত
বীরভূমে বাউল গানের একটি অনুষ্ঠান
ধারা
  • ধ্রুপদী
  • রক
নির্দিষ্ট ফর্ম
ধর্মীয় সঙ্গীত
জাতিগত সঙ্গীত
ঐতিহ্যবাহী সঙ্গীত
গণমাধ্যম ও অনুষ্ঠান
সঙ্গীত মাধ্যমবেতার

টেলিভিশন

ইন্টারনেট

অঞ্চলিক সঙ্গীত
সম্পর্কিত এলাকা
অন্যান্য অঞ্চল

বিষয়বস্তু

গানের কেন্দ্রীয় চরিত্র চোর এবং চোরনী সমাজের বৃহত্তর অংশের কাছে নিন্দিত এবং অবজ্ঞাত। কিন্তু তাদের জীবনচর্যাতেও যে বিরহ-যন্ত্রণা, আশা-আকাঙ্ক্ষা, অভাব-অভিযোগ আছে, তা এই কৃষক লোককবিগণ তাদের প্রতি সহমর্মী হয়ে গানের মাধ্যমে চিত্রিত করতে সচেষ্ট হন; কিংবা চোর-চুন্নীকে সামনে রেখে দরিদ্র গ্রামীণ নরনারীর আশা-আকাঙ্ক্ষা, বেদনার অব্যক্ত বাণী সহৃদয় সামাজিক মানুষের অন্তরে সঞ্চারিত করার এটি এক প্রয়াস।

পালাগুলিতে চোর বা চোরনীর জবানীতে সমকালীন সামাজিক-রাজনৈতিক ব্যঙ্গরসাত্মক বা ব্যক্তিগত সুখদুঃখের অভিব্যক্তিপূর্ণ বা লোকশিক্ষামূলক বিষয় গ্রামীণ শ্রোতাদের আনন্দিত বা বিষণ্ণ করে, কিংবা করে কশাঘাত।[1][2]

বিবরণ

চোর-চুন্নীর গান মূলত গাওয়া হয় কার্তিক মাসে; দীপান্বিতা কালীপূজার পনেরো দিন আগে থেকে শুরু করে কালীপূজার রাত পর্যন্ত সমবেতভাবে। গ্রামের অবস্থাপন্ন কৃষকের (যারা এই অঞ্চলে গিরি/ধনী/দেওয়ানী নামে পরিচিত) পৃষ্ঠপোষকতায় এসময় গানের একটি দল গঠন করা হয়; তার বাড়ির বাইরের অঙ্গনে নিয়মিত গানের তালিম চলে। দলে থাকেন একজন মূল গায়েন, তার দোহাররূপে দু'তিন জন সুকণ্ঠী সহগায়ক থাকেন। এদের মধ্য থেকে একজনকে 'চোর' ও আরেকজনকে 'চুন্নী' সাজানো হয়। এছাড়া, দলে থাকেন বাদকবৃন্দ; তারা আবহ সুর-সঙ্গতের জন্য দোতারা, খোল, বাঁশী, সারিঞ্জা, জুরি প্রভৃতি বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে থাকেন।

গানগুলির শুরুতে সর্বসাফল্য লাভের উদ্দেশ্যে চোর চক্রপতি ভগবান কৃষ্ণ ও স্থানীয় লৌকিক দেব-দেবীর বন্দনা গাওয়া হয়। এরপর চোর-চুন্নীর গায়করা চাপান ও উতোরের কিছু অংশ গেয়ে ছেড়ে দিলে দোহাররা তা ধরে বিস্তৃত করে দেন সম্মেলক সুরে।

গানে, চোর ধনী জোতদারের বাড়িতে চুরি করতে যাবার পূর্বমুহূর্তে তার স্ত্রী চুন্নীর কাছ থেকে বিদায় নেয়। দারিদ্রপীড়িত নিরাভরণা স্ত্রীকে অবস্থাপন্ন সুখী মানুষের স্ত্রীর মতো মূল্যবান অলঙ্কার ও পোশাক-প্রসাধনে সজ্জিত করার আকাঙ্ক্ষা তার। তাই সে হাসিমুখে বিদায় চায়, এবং স্ত্রীকে নিশ্চিন্ত করতে নিজের চৌর্যকৌশলের নিপুণতার কথা বলে আশ্বস্ত করে। তার স্বপ্ন, এইভাবে সে সংগৃহীত অর্থের বিনিময়ে নিকটস্থ কোনও গ্রামে চাষের জমি কিনবে; আর সম্পদের অধিকারী হলে 'চুন্নী'ও একদিন হয়ে উঠবে আর্থিক মর্যাদাপ্রাপ্ত ধনবানের স্ত্রী। চোরের সমস্ত আশ্বাস সত্ত্বেও চোরনী তার স্বামীর জন্য শঙ্কিত ও ভাবিত। এভাবেই চোর-চুন্নীর গানের কাহিনিপট বিস্তৃত হতে থাকে। গানের মাধুর্যে গৃহস্থ কৃষক শ্রোতাবর্গ আপ্লুত হয়ে পারিতোষিক হিসেবে গায়কদের চাল, ডাল ও নগদ অর্থ প্রদান করে।[1][2]

তথ্যসূত্র

  1. বাংলার লোকসংস্কৃতির বিশ্বকোষ, দুলাল চৌধুরী, আকাদেমি অব ফোকলোর, কলকাতা: ৭০০০৯৪, প্রথম প্রকাশ: ২০০৪
  2. চক্রবর্তী, ড. বরুণকুমার সম্পাদিত (১৯৯৫)। বঙ্গীয় লোকসংস্কৃতিকোষ। কলকাতা: অপর্ণা বুক ডিস্ট্রিবিউটার্স। পৃষ্ঠা ১২৯। আইএসবিএন 81-86036-13-X।
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.