চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য

চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য বাংলাদেশের একটি সংরক্ষিত বনাঞ্চল ও বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য।[1] এটি চুনতি অভয়ারণ্য নামেও পরিচিত। চট্টগ্রাম শহর থেকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার দক্ষিণে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পাশে এর অবস্থান। এর আয়তন ৭,৭৬৪ হেক্টর।[2] বনের সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্য রক্ষা ও বিপন্ন বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের জন্য ১৯৮৬ সালে এই অভয়ারণ্য প্রতিষ্ঠা করা হয় ।[3] বাংলাদেশ ও মায়ানমারের মধ্যে বন্য এশীয় হাতির যাতায়াতের একটি করিডোর হিসেবে এই অভয়ারণ্যের গুরুত্ব অপরিসীম। এই বনের ব্যবস্থাপনা ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে স্থানীয় জনগণের সম্পৃক্ততায় এখানে সহব্যবস্থাপনা প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে।[4] এই অভয়ারণ্য তার বিশালাকায় শতবর্ষী মাদার গর্জন গাছের জন্য সুপরিচিত যা এই বনের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য। তবে ক্রমাবর্ধমান জনসংখ্যার চাপ, নির্বিচারে গাছ কাটা, কৃষি জমিতে রূপান্তরের মাধ্যমে বন্যপ্রানীর আবাসস্থান ধ্বংস প্রভৃতি কারণে এ বনের অস্তিত্ব আজ হুমকির সম্মুখীন।[5]

চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য
আইইউসিএন বিষয়শ্রেণী IV (বাসস্থান/প্রজাতি ব্যবস্থাপনা অঞ্চল)
মানচিত্র চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের অবস্থান দেখাচ্ছে
মানচিত্র চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের অবস্থান দেখাচ্ছে
বাংলাদেশে অবস্থান
অবস্থানচট্টগ্রাম জেলা, লোহাগাড়া উপজেলা, চুনতী ইউনিয়ন, বাংলাদেশ
নিকটবর্তী শহরচট্টগ্রাম
স্থানাঙ্ক২১°৫৪′০″ উত্তর ৯২°০৮′০″ পূর্ব
আয়তন৭,৭৬৪ হেক্টর
স্থাপিত১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দ
কর্তৃপক্ষচট্টগ্রাম (দক্ষিণ) বন বিভাগ

অবস্থান ও আয়তন

চুনতি অভয়ারণ্য চট্টগ্রামের বাঁশখালী, লোহাগাড়াসাতকানিয়া উপজেলা এবং কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ৭৭৬৪ হেক্টর বা ৭৭ বর্গকিলোমিটার জায়গা জুড়ে বিস্তৃত। চট্টগ্রাম (দক্ষিণ) বন বিভাগের চুনতি রেঞ্জ ও জলদি রেঞ্জ নিয়ে এ অভয়ারণ্য গড়ে তোলা হয়েছে। প্রকল্প এলাকায় ২০০৩ সালে চুনতি ও জলদি রেঞ্জের অধীনে সাতটি বিট অফিস স্থাপন করা হয়।

ভূপ্রকৃতি

এই অভয়ারণ্য মূলত টিলাময় এবং অনেক জায়গায় পাহাড়ি ভূপ্রকৃতি, প্রচুর অগভীর ও গভীর খাদ রয়েছে। কোথাও সামান্য ঢালু জায়গা আবার কোথাও খাড়া ঢাল দেখা যায়। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এর গড় উচ্চতা ৩০ থেকে ৯০ মিটার। বনের ভেতর দিয়ে প্রচুর খাঁড়ি বা পাহাড়ি ছড়া এঁকেবেকে বয়ে গেছে, এদের তলদেশ বালুময় বা পাথুরে।[3] এই ছড়াগুলো বন্যপ্রানীদের পানির উৎস।

চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য

জীববৈচিত্র

চুনতি অভয়ারণ্য এক সময় জীববৈচিত্রে সমৃদ্ধ ছিল। বন ধ্বংসের কারণে যা দিন দিন কমে আসছে। বন্য এশীয় হাতি এই বনের অন্যতম আকর্ষণ এবং এরা বাংলাদেশ ও মায়ানমারের বনের মধ্য দিয়েই চলাচল করে। এই বনে ১২০০ প্রজাতির উদ্ভিদ দেখা যায়। যার মধ্যে ৪৫ প্রজাতির উচু গাছও রয়েছে। বড় প্রজাতির গাছের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: গর্জন, রাকতান, জাম, উরি আম, চাপালিশ, শিমুল, কড়ই প্রভৃতি। এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের ভেষজ উদ্ভিদ এবং লতাগুল্ম এ বনে পাওয়া যায়।

পূর্বে এই বনে ১৭৮ প্রজাতির জীবজন্তু ও পাখি পাওয়া যেতো, যার মধ্যে রয়েছে ৬ প্রজাতির উভচর, ৮ প্রজাতির সরীসৃপ, ১৩৭ প্রজাতির পাখি এবং ২৭ প্রজাতির স্তন্যপায়ী। তবে এদের একটি বড় অংশ বর্তমানে আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে, বেশ কিছু প্রজাতি একেবারেই বিলুপ্ত হয়ে গেছে বা বিলুপ্তির পথে।[6] জীবজন্তুর মধ্যে ২ প্রজাতির উভচর, ২ প্রজাতির সরীসৃপ, ২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী এবং প্রায় ১১ ধরনের পাখি বর্তমানে বেশি দেখতে পাওয়া যায়। বন্য প্রানীর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: হাতি, কয়েক ধরনের বিড়াল, দেশি বন শুকর, হনুমান প্রভৃতি এবং পাখির মধ্যে আছে: কাঠঠোকরা, ছোট বসন্তবৌরি, বনস্পতি, বড় কুবো, আবাবিল, তিলা ঘুঘু, ফিঙে, ময়না, ভাত শালিক প্রভৃতি। এছাড়াও বেশ কিছু জলজ প্রানীও এই বনে পাওয়া যায়।[7]

তথ্যসূত্র

  1. "বন্যপ্রানী অভয়ারণ্য"জীববৈচিত্র্য ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ। ২০১৭-০১-৩১। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০২-০২
  2. "Arannayk Foundation" (পিডিএফ)www.arannayk.org। ৫ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ এপ্রিল ২০১২
  3. "নরওয়েজিয়ান ইন্সটিটিউট অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি এর ওয়েবসাইট"
  4. "বনব্যবস্থাপনা ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে অনন্য অবদান ।। চুনতি কো-ম্যানেজমেন্ট কমিটি জাতিসংঘ ইকুয়েটর পুরস্কারের জন্য মনোনীত"
  5. "উজাড় হচ্ছে চুনতি অভয়ারণ্যের গাছপালা"
  6. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি" (পিডিএফ)। ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১২ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ এপ্রিল ২০১২
  7. "The Daily Star Web Edition Vol. 5 Num 572"www.thedailystar.net

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.