চিলারায়
কামতাপুরের/কোচবিহারের চিলারায়(অসমীয়া: চিলাৰায়)(জন্ম:১৫১০ - মৃত্যু:১৫৭১) কোচ রাজবংশের সাহসী ও পারদর্শি সেনাপতি ছিলেন। তার প্রকৃত নাম শুক্লধ্বজ।[1] কমতা রাজ্যের প্রতিষ্ঠাপক বিশ্ব সিংহ তার পিতা ছিলেন। কোচ রাজবংশের রাজা নরনারায়ণ তার ভাই ছিলেন। তিনি নরনারায়নের সুদক্ষ সেনাপতি ছিলেন।তিনি ঘুড়ির (কামতাপুরি ভাষায় চিলা) বেগে রণ করিতেন বলে তাকে চিলারায় বলা হয়। [1] দেওয়ান বা মন্ত্রীর পদে নিযুক্ত ছিলেন বলে তার অপর নাম চিলারায় দেওয়ান। তিনি যুদ্ধে কাছাড়ী,মুুুুুুনিপুরি, আহোম ও ভূটিয়া সৈন্যদের পরাস্ত করেছিলেন।তার জন্মদিন মাঘী পূৰ্ণিমা বীর চিলারায় দিবস হিসেবে পালন করা হয়। মহাবীর চিলা রায় পৃথিবীতে প্রথম মিলিটারি সিস্টেম গেরিলা রননীতি চালু করেছিলেন।
চিলারায় | |
---|---|
রাজত্ব | নরনারায়ণ |
পূর্বসূরি | বিশ্ব সিংহ |
উত্তরসূরি | রঘুদেব |
জন্ম | ১৫১০ সন মাঘী পূৰ্ণিমা |
মৃত্যু | ১৫৭৭ সন |
পিতা | বিশ্ব সিংহ |
মাতা | পদ্মাবতী দেবী(গৌড়ের রাজকন্যা) |
জন্ম ও বংশ পরিচয়
চিলারায়ের জন্ম হয় ১৫১০ সনে । কোচ রাজ্যের প্ৰতিষ্ঠাতা বিশ্ব সিংহের ১৯ জন স্ত্রী ছিল। জ্যেষ্ঠ স্ত্রী নেপালের গরাকী ।তার পুত্ৰ নরসিংহ। গৌড়ের দুজন স্ত্রী ছিল: হেমপ্ৰভা ও পদ্মাবতী দেবী । নরনারায়ণ হেমপ্ৰভার পুত্ৰ ও শুক্লধ্বজ বা চিলারায় পদ্মাবতীর পুত্ৰ । বিশ্ব সিংহের মোট ১৯ জন পুত্ৰ ছিল । চিলা রায় কোচ-রাজবংশীদের গর্ব।
শিক্ষা
চিলারায়ের ভাই নরনারায়ণ ও চিলারায় বারানসীতে ব্রহ্মানন্দ বিশারদ নামক সন্ন্যাসীর থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেছিলেন। তারা বারানসী থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে সকল হিন্দু ধর্মগ্রন্থ ও যুদ্ধ বিদ্যায় নিপুণ হন।
রাজ অভিষেক
চিলারায়ের পিতা বিশ্বসিংহ মৃত্যুর পূর্বে ভবিষৎ নির্ধারন করে রেখেছিলেন। সেইমতে, জেষ্ঠ পুত্র নরসিংহ বিদেশ যাওয়া, নরনারায়ণ নিজ দেশে রাজত্ব করা ও চিলারায়কে রণধর্ম পালন করার জন্য আদেশ দেন। ১৫৩৩ সনে বিশ্বসিংহের মৃত্যু হয়। সেইসময়ে নরনারায়ণ ও চিলারায় বারানসীতে শিক্ষা গ্রহণ করিতেছিলেন। সুযোগ পেয়ে নরসিংহ রাজসিংহাসনে বসেন। রতনী ধাই নামক ব্যক্তি স্বর্গীয় রাজার আদেশ লঙ্ঘন হওয়া দেখে নাগভোগ নামক সন্ন্যাসীর হাতে চিঠি দিয়ে নরনারায়ণ ও চিলারায়কে রাজধানী আসার নির্দেশ করেন। রাজধানী পৌছে নরনারায়ন ও চিলারায় নরসিংহকে যুদ্ধে পরাস্ত করেন। ১৫৩৪ সনে নরনারায়ণ রাজসিংহাসনে বসেন । রাজ অভিষেক হওয়ার সময় চিলারায়ের নাম দেওয়া হয় সংগ্রাম সিংহ ।
কোচ রাজ্য বিস্তার
নরনারায়ন সিংহাসনে বসে পিতৃ রাজ্য বিস্তার করার কল্পনা করেন। চিলারায়ের সাহায্যে নরনারায়ন রাজ্য বিস্তার করতে সক্ষম হয়। ১৫৬৩ সনের জুন মাসে চিলারায় আহোমের রাজধানী গড়গাঁও দখল করে। তিনি কাছাড় আক্রমণ করে রাজধানী মাইবং দখল কর। ফলস্বরুপ কছাড়ী রাজা কোচ রাজ্যের বশ্যতা স্বীকার করেন। কাছাড় জয় করে তিনি মণিপুর, শ্রী হট্ট, খাইরাম,চট্টগ্রাম, ডিমরুয়া ইত্যাদি রাজ্য জয় করেন। জয়ন্তীয়া রাজা, ত্রিপুরার রাজা ও সিলেটের রাজা তার সৈন্যের হাতে মৃত্যুবরণ করেন।[2]।
গৌড় রাজ্য আক্রমণ
গৌড় রাজ্য আক্রমণের সময় চিলারায় বন্দী হন। কিন্তু তার ব্যবহারে পরিতুষ্ট হয়ে গৌড় রাজমাতা তাকে মুক্তি দেন ও পাঁচটি কন্যার সহিত বিবাহ করান। বাহার বন্দ, শেরপুর, গয়বারী ও দহকনীয়া সর্বমোট পাঁচটি পরগনা যৌতুক হিসেবে প্রাপ্ত করেন । অন্য এক ইতিহাস মতে করতোয়া নদীর পূর্ব অংশে থাকা অঞ্চলসমূহ যৌতুক রুপে প্রাপ্ত করেন। সেই সময়ে তিনি পুরুষত্তম বিদ্যাবাগীশ, পীতাম্বর সিদ্ধান্ত ও বাগীশ নামক পণ্ডিতদের গৌড় রাজ্য থেকে সঙ্গে করে নিয়ে আসেন।
বৈষ্ণব ধর্ম প্রচার
চিলারায় ও নরনারায়ন শৈব ভক্ত ছিলেন। তারা শিব-পার্বতীকে আরাধনা করার জন্য অসংখ্যা মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। কিন্তু চিলারায় মহাপুরুষ শংকরদেবের সান্নিধ্যে আসার পর শংকরদেব প্রচারিত বৈষ্ণব ধর্মের প্রতি মোহিত হন। অবশেষে নরনারায়ন মহাপুরুষ শংকরদেবের গুন পাণ্ডিত্যে মুগ্ধ হন ও রাজসভায় পণ্ডিতের স্থান দেন। চিলারায় পরিবার সহ বৈষ্ণব ধর্ম গ্রহণ করেন। মহাপুরুষ শ্রীমন্ত শংকরদেব চিলারায় ও নরনারায়নের সহযোগীতায় বৈষ্ণব ধর্ম প্রচার করেন।
মৃত্যু
১৫৭১ সনে বসন্ত রোগে চিলারায়ের মৃত্যু হয়।
বীর চিলারায় পুরস্কার
বীর চিলারায়ের স্মরনে ২০০৫ সন থেকে অসম সরকার তার জন্মদিবসটিকে বীর চিলারায় দিবস হিসেবে পালন করার জন্য ঘোষণা করেন।[3] তদুপরি সাহসিকতার পরিচয় দেওয়া ব্যক্তিদের বীর চিলারায় নামক পুরস্কার প্রদান করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।[3]।
তথ্যসূত্র
- http://www.assaminfo.com/famous-people/48/bir-chilarai.htm
- Sarkar, J N (১৯৯২), "Chapter IV: Early Rulers of Koch Bihar", Barpujari, H. K., The Comprehensive History of Assam, 2, Guwahati: Assam Publication Board
- "About Bir Chilarai"। Assam info.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-১১-২৫।