চিন্মোহন সেহানবীশ

চিন্মোহন সেহানবীশ (৮ ডিসেম্বর, ১৯১৩ - ১৯ মে, ১৯৮৭) একজন বাঙালি বামপন্থী বুদ্ধিজীবী, সাহিত্যিক ও ইতিহাসবিদ। তিনি প্রগতি লেখক সংঘ ও ভারতীয় গণনাট্য সংঘের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। শিক্ষাব্রতী ও সমাজসেবিকা উমা সেহানবীশ তার স্ত্রী।

চিন্মোহন সেহানবীশ
জন্ম(১৯১৩-১২-০৮)৮ ডিসেম্বর ১৯১৩
লাহোর, পাকিস্তান
মৃত্যু১৯ মে ১৯৮৭(1987-05-19) (বয়স ৭৩)
পেশালেখক, ঐতিহাসিক, গবেষক
ভাষাবাংলা
জাতীয়তাভারতীয়
নাগরিকত্বভারতীয়
শিক্ষাএম.এ (অর্থনীতি)
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়
সময়কালআধুনিক যুগ
ধরনভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন, কমিউনিস্ট আন্দোলন
উল্লেখযোগ্য রচনাবলিলেনিন ও ভারতবর্ষ
রুশ বিপ্লব ও প্রবাসে ভারতীয় বিপ্লবী
রবীন্দ্রনাথ ও বিপ্লবী সমাজ
উল্লেখযোগ্য পুরস্কারবিদ্যাসাগর পুরস্কার, সোভিয়েত ল্যান্ড নেহরু পুরস্কার
দাম্পত্যসঙ্গীউমা সেহানবীশ

প্রারম্ভিক জীবন

চিন্মোহন সেহানবীশের আদি নিবাস বাংলাদেশের রংপুর হলেও পিতার কর্মক্ষেত্র লাহোরে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ছিলেন অধ্যাপক বিনয়মোহন সেহানবীশ। পিতামহ বিপিনমোহন ব্রাহ্মধর্ম গ্রহণ করেছিকেন। রানীগঞ্জের স্কুল থেকে কৃতিত্বের সংগে বৃত্তি সহ ম্যাট্রিক পাশ করেন। সেন্ট জেভিয়ার'স কলেজ, কলকাতা থেকে বি এস সি ও ১৯৩৫ সালে অর্থনীতিতে এম এ পাশ করেন তিনি। ৫০ এর দশকে স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইন্সটিটিউটের সাথে যুক্ত ছিলেন।

বিপ্লবী আন্দোলন

সেহানবীশ কৈশোরে গান্ধীবাদের আদর্শে প্রানিত ছিলেন। ছাত্রজীবনে সেন্ট পল কলেজ হোস্টেলে থাকার সময় প্রফেসর একরয়েড ও পিসতুতো দাদা, সিপি আই নেতা অজয় ঘোষ এর প্রভাবে মার্কসবাদী দর্শনে আকৃষ্ট হন। ১৯৪১ সালে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যপদ লাভ করেন। এম এ পাশ করে হিন্দুস্থান কর্পোরেশনে চাকরি নেন ও নিজে বুকম্যান প্রকাশন সংস্থা স্থাপন করে চাকরি ছেড়ে দেন। পরে এই সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল পাবলিশিং হাউসের সাথে মিলিত হয়ে যায়। ১৯৪৯ সালে কমিউনিস্ট পার্টি নিষিদ্ধ ঘোষিত হলে তিনি গ্রেপ্তার হন ও প্রেসিডেন্সি জেল, বক্সা দুর্গ বন্দীশিবির ইত্যাদি জায়গায় কারারুদ্ধ থাকেন।[1] ১৯৫১ সালে মুক্তি পান চিন্মোহন সেহানবীশ। বিশ্বশান্তি আন্দোলন ও ভারত - সোভিয়েত ইউনিয়ন মৈত্রী আন্দোলনে, ফ্যাসিবিরোধী লেখক শিল্পী সংঘের কাজে তার ভূমিকা ছিল।[2] প্রগতি লেখক সংঘের প্রধান সংগঠক ও ভারতীয় গননাট্য সংঘের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন তিনি।[3][4]

সাহিত্য ও সংস্কৃতি

৩০-৪০ এর দশক থেকে অগ্রণী, পরিচয়, নতুন সাহিত্য, আন্তর্জাতিক ইত্যাদি পত্রিকায় প্রগতিমূলক রচনা লিখেছেন। রবীন্দ্রসাহিত্য ও রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টিকর্ম সম্পর্কে তিনি আগ্রহী ছিলেন। রবীন্দ্র শতবার্ষিকী কমিটির উদ্যোগে অনুষ্ঠিত রবীন্দ্র মেলা কমিটির সম্পাদক হন। এই কমিটিতে ছিলেন গোপাল হালদার ও মৈত্রেয়ী দেবী। অর্থনীতির ছাত্র হলেও তার গবেষণার বিষয় ছিল ইতিহাস। স্বাধীনতা সংগ্রামী ও ভারতের কমিউনিস্ট আন্দোলনের বিপ্লবীদের নিয়ে অজানা তথ্য তিনি গ্রন্থভুক্ত করে গেছেন। মহাজাতি সদনে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের নিয়ে স্থায়ী প্রদর্শনী গড়ে তোলার উদ্যোক্তা ও প্রধান সংগঠক ছিলেন তিনি। তার তত্ত্বাবধানে পশ্চিমবঙ্গ সরকার কর্তৃক মুক্তির সন্ধানে ভারত বইটি প্রকাশিত হয়। ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির ইতিহাস রচনায় ড. গঙ্গাধর অধিকারী কে তিনি সাহায্য করেন।

তার রচিত গ্রন্থগুলির মধ্যে আছেঃ[3][5]

  • সোভিয়েট বিজ্ঞান (অনুবাদ করেছেন) (প্রথম প্রকাশিত সেপ্টেম্বর ১৯৪৬),
  • ৪৬ নং একটি সাংস্কৃতিক আন্দোলন প্রসঙ্গে (প্রথম প্রকাশিত নভেম্বর ১৯৬০),
  • Tagore and the World (১৯৬১),
  • দুই শতাব্দীর বিপ্লব (প্রথম প্রকাশিত জুলাই ১৯৬২),
  • রুশ বিপ্লব ও প্রবাসী ভারতীয় বিপ্লবী (প্রথম প্রকাশিত জুন ১৯৭৩),
  • What is Communism? (১৯৭৪)
  • Fifty years of communist press (প্রথম প্রকাশিত ১৯৭৫)
  • লেনিন ও ভারতবর্ষ (Lenin and India) (১৯৮০),
  • রবীন্দ্রনাথের আন্তর্জাতিক চিন্তা (১৯৮৩),
  • রবীন্দ্রনাথ ও বিপ্লবী সমাজ (১৯৮৬),

পুরস্কার

চিন্মোহন সেহানবীশ বিদ্যাসাগর পুরস্কার ও সোভিয়েত ল্যান্ড নেহরু পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছিলেন।

মৃত্যু

১৯ মে, ১৯৮৭ সালে মারা যান চিন্মোহন সেহানবীশ।

তথ্যসূত্র

  1. "মুখোপাধ্যায়, সুভাষ"banglapedia.org। সংগ্রহের তারিখ ২৯ জুলাই ২০১৭
  2. রজত বন্দ্যোপাধ্যায়। "তিমিরবিনাশী সংস্কৃতির উত্তরাধিকার"। সংগ্রহের তারিখ ২৯ জুলাই ২০১৭
  3. দ্বিতীয় খন্ড, অঞ্জলি বসু সম্পাদিত (২০০৪)। সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান। কলকাতা: সাহিত্য সংসদ। পৃষ্ঠা ১০৭। আইএসবিএন 81-86806-99-7।
  4. "গণনাট্য সংঘ"। সংগ্রহের তারিখ ২৯ জুলাই ২০১৭
  5. চিন্মোহন সেহানবীশ (১৯৭৩)। রুশ বিপ্লব ও প্রবাসী ভারতীয় বিপ্লবী। কলকাতা: মনীষা গ্রন্থালয় প্রাইভেট লিমিটেড।
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.