চিকিৎসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

চিকিৎসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বলতে সেইসব উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে বোঝায়, যেখানে অধ্যয়ন শেষ করে ছাত্র-ছাত্রীরা পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসকে পরিণত হয়। ইংরেজিতে এবং তার সরাসরি প্রতিবর্ণীকরণ, আংশিক অনুবাদ বা পূর্ণাঙ্গ অনুবাদ হিসেবে বাংলাতে এই প্রতিষ্ঠানগুলি মেডিকেল স্কুল, মেডিকেল কলেজ, মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়, ইত্যাদি বিভিন্ন নামে পরিচিত।

সাবাহ, মালয়েশিয়ার একটি মেডিকেল স্কুল

নিচে তালিকা আকারে বিভিন্ন দেশের চিকিৎসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলির নাম দেয়া হল।

বাংলাদেশ

বাংলাদেশে চিকিৎসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিকে "মেডিকেল কলেজ", "মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়", ইত্যাদি নামে ডাকা হয়। বাংলাদেশে মেডিকাল বিশ্ববিদ্যালয়গুলি হল চিকিৎসাশাস্ত্রীয় সর্বোচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যাদের প্রতিটির অধীনে একাধিক মেডিকেল কলেজ থাকে।

বাংলাদেশের মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় তালিকা হিসাবে বাংলাদেশে সরাসরি সরকারের ব্যবস্থাপনাধীনে পরিচালিত মেডিকেল কলেজসমূহের তালিকাকে নির্দেশ করা হচ্ছে। ১৯৬৫ সালে ঢাকা নগরীর শাহবাগ এলাকাতে প্রতিষ্ঠিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় এদেশের প্রথম সরকারি পর্যায়ের চিকিৎসাশাস্ত্রীয় উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান; পরবর্তীকালে আরও অনেকগুলি সরকারি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় বর্তমানে এই জাতীয় উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা পাঁচটি।

নিচে বাংলাদেশের মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় সমূহের তালিকা প্রদান করা হলঃ

ভারত

ভারতে বহু প্রাচীনকাল থেকে চিকিৎসাবিদ্যার সমৃদ্ধ ঐতিহ্য বিদ্যমান। তবে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক যুগে এসে এখানে আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞান শিক্ষা দেওয়া শুরু হয়। ১৯শ শতকের প্রথমার্ধেই ১৮৩৫ সালে মাদ্রাসে প্রথম আধুনিক চিকিৎসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি চালু হয়েছিল। ১৯৪৭ সালে যখন ভারত স্বাধীন হয়, তখন দেশটিতে ১৯টি চিকিৎসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে প্রতি বছর ১২০০ জন চিকিৎসক স্নাতক উপাধি অর্জন করতেন। সম্প্রতি (২০১৬ সালের তথ্য অনুযায়ী) ভারতে সারা দেশ জুড়ে ৪১২টি চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় রয়েছে, যেখানে ৫২,৭১৫ জন শিক্ষার্থী চিকিৎসাবিজ্ঞান ও শল্যচিকিৎসাশাস্ত্রে স্নাতক উপাধি অর্জনের জন্য পড়াশোনা করে। প্রতি বছর প্রায় ৬ লক্ষ প্রার্থী এইসব চিকিৎসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনার সুযোগলাভের জন্য ভর্তি পরীক্ষায় অবতীর্ণ হয় এবং প্রায় ৪৫ লক্ষ ভর্তি হয়। এর ফলে ভারত বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সংখ্যক চিকিৎসক সৃষ্টিকারী দেশে পরিণত হয়েছে। তুলনায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি বছর ১৮ হাজার ডাক্তার পাশ হয়ে বের হয়। তা সত্ত্বেও বর্তমানে ভারতে প্রতি ১৭০০ ব্যক্তিতে একজন চিকিৎসক বিদ্যমান, যা বিশ্ব গড় মানের (প্রতি ২ হাজার জনে ৩ জন) চেয়ে বেশ কম। ভারতের লক্ষ্য ২০৩১ সালের মধ্যে প্রতি হাজার জনে ১ জন চিকিৎসকের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা।[6]

ভারতে আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানে পড়াশোনা করে চিকিৎসক পেশায় প্রবেশ করতে চাইলে যে উচ্চশিক্ষায়তনিক উপাধিটি অর্জন করতে হয়, তা হল চিকিৎসাবিজ্ঞান ও শল্যচিকিৎসায় স্নাতক (ব্যাচেলর অভ মেডিসিন অ্যান্ড ব্যাচেলর অভ সার্জারি, বা সংক্ষেপে এমবিবিএস)। এজন্য সাড়ে পাঁচ বছর মেয়াদী স্নাতক শিক্ষাক্রম সফলভাবে সমাপ্ত করতে হয়। পাঠ্যক্রমটিতে প্রথম এক বছর সাধারণ বিজ্ঞানের বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রাক-রোগীভিত্তিক শিক্ষাদান করা হয়। এরপর সাড়ে তিন বছর রোগীভিত্তিক ও রোগী-সংশ্লিষ্ট শিক্ষাদান করা হয়। সবশেষে এক বছর রোগীভিত্তিক হাতেকলমে প্রশিক্ষণ (ইন্টার্নশিপ) সম্পন্ন করতে হয়। প্রশিক্ষণ শুরু হবার আগে শিক্ষার্থীদেরকে একাধিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়, যার মধ্যে শেষ পরীক্ষাটি দুইটি অংশে বিভক্ত। এমবিবিএস উপাধি অর্জনের পরে চিকিৎসার কোনও বিশেষায়িত ক্ষেত্রে আরও তিন বছর পড়াশোনা সফলভাবে শেষ করলে শল্যচিকিৎসায় স্নাতক কিংবা চিকিৎসাবিজ্ঞানে ডক্টর উপাধি প্রদান করা হয়। এছাড়া স্নাতকোত্তর পর্যায়ে দুই বছর মেয়াদী প্রশিক্ষণ কর্মসূচী সমাপ্ত করলে চিকিৎসার বিশেষায়িত ক্ষেত্রে স্নাতকোত্তর সনদ বা ডিপ্লোমা প্রদান করা হতে পারে।

ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের আগে থেকেই ভারতে বহুসংখ্যক প্রাচীন চিকিৎসাবিদ্যা প্রচলিত। ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসাব্যবস্থাগুলির মধ্যে আয়ুর্বেদ, যোগ, প্রাকৃতিক চিকিৎসা, ইউনানি, সিদ্ধ ও হোমিওপ্যাথি (যেগুলি সম্মিলিতভাবে ইংরেজি আদ্যক্ষরা "আয়ুশ" AYUSH নামেও পরিচিত) ভারতে বহুল প্রচলিত স্বাস্থ্যসেবা, বিশেষ করে গ্রামীণ অঞ্চলে। যদিও এই চিকিৎসা-রূপগুলি ভারতের সরকারী স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাতে খুবই সীমিত ভূমিকা পালন করে এবং এগুলি প্রায়শই অনানুষ্ঠানিকভাবে পরিচালনা করা হয়, এসব চিকিৎসকদের ভারতের ২৯টি রাজ্য চিকিৎসা পরিষদের থেকে অনুমতিপত্র নিয়ে তবেই কাজ করতে হয়, ঠিক আধুনিক চিকিৎসকদের মতো। এমনকি এসব ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসা শিক্ষাব্যবস্থাগুলিও বর্তমানে আধুনিক চিকিৎসা শিক্ষার মতো একই রকম কাঠামোয় পরিচালিত হয়। যেমন সাড়ে পাঁচ বছর পড়াশোনা শেষ করলে আয়ুর্বেদীয় চিকিৎসা ও শল্যচিকিৎসায় স্নাতক কিংবা হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা ও শল্যচিকিৎসায় স্নাতক উপাধি প্রদান করা হয়। এই উপাধি পেতে হলে সাধারণত বার্ষিক সমাপনী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবার পাশাপাশি এক বছরের সমাপনী প্রশিক্ষণপর্ব শেষ করতে হয়। এই চিকিৎসা শিক্ষাব্যবস্থাগুলি ভারতের নবগঠিত জাতীয় চিকিৎসা কমিশন বা ভারতের চিকিৎসা পরিষদের এখতিয়ারে নয়, বরং একটি পৃথক মন্ত্রণালয় দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।

পাকিস্তান

তথ্যসূত্র

  1. "বিএসএমএমবি এর নতুন উপাচার্য"। ২৩ আগস্ট ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ মার্চ ২০২০
  2. ৩৪ জনকে নিয়োগ দেবে রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় একুশে টেলিভিশন |প্রকাশিত : ২২ জুলাই ২০১৮ রবিবার
  3. প্রতিটি বিভাগে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে দেব: প্রধানমন্ত্রী যুগান্তর | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮, | অনলাইন সংস্করণ
  4. সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় বিল পাস ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯ তারিখে এনটিভি অনলাইন | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮,
  5. আগামীতে ক্ষমতায় এলে প্রতিটি বিভাগে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হবে একুশে টেলিভিশন | প্রকাশিত : ১২:৩৯ পিএম, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ০১:৫২ পিএম, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮ বৃহস্পতিবার
  6. Kartik Jadhav (ফেব্রুয়ারি ২০১৬), "Medical education in India - An overview", Al Ameen Journal of Medical Science, 9 (2): 76-78
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.