চমাংকান

চমাংকান কার্বি জনগোষ্ঠীর এক পরম্পরাগত উৎসব। ভূত-প্রেত ইত্যাদি দেবতারূপী শিব বা বূঢ়াগোসাঁইর ভক্তিতে মজে থাকা কার্বিদের চমাংকান হল মৃতের উৎসব। মৃতের আত্মার শান্তি কামনা করে এই উৎসব শুরু হয়। কার্বি বিশ্বাস অনুসারে চমাংকান ছাড়া মৃতের আত্মাই সম্পূর্ণ রূ’পে পাপ-তাপ, দুঃখ-ক্লেশ ইত্যাদি থেকে পরিত্রাণ পায় না। সাধারণত তিনদিন ধরে এই অনুষ্ঠান হয়। চমাংকান একটি খরছী অনুষ্ঠান, সেজন্য সমস্ত গৃহস্থই চমাংকান তৈরি করতে পারে না। সেজন্য বহু মৃতের জন্য একসাথেও চমাংকান হয়।

চমাংকান
আনুষ্ঠানিক নামচমাংকান
পালনকারীআসামের কার্বি জনগোষ্ঠী
ধরনআসামের উৎসব

নামের উৎপত্তি

চমাংকান একটি খাসি নৃত্য। অতীত থেকে খাসি এবং জয়ন্তীয়াদের মধ্যে থাকার জন্য কার্বিদের সাজ-পোশাক, নৃত্য-গীত ইত্যাদিতে খাসি এবং জয়ন্তীয়াদের প্রভাব বিদ্যমান। কিছু পণ্ডিতের মতে প্রথমে এই উৎসবের নাম আর্লেং কার্হি ছিল এবং পরে খাসিদের প্রভাবে চমাংকান হয়।

চমাংকান শব্দটির আক্ষরিক অর্থ হল খাসি নৃত্য। কারবি ভাষায় চমাং-এর অর্থ খাসি এবং কান মানে নৃত্য। কিন্তু উল্লেখযোগ্য কথা হল চমাংকান নামের কোনো নৃত্যর প্রচলন খাসিদের মধ্যে দেখা পাওয়া যায় নাা। চমাংকান শব্দটির ব্যুৎপত্তি বিষয়ক বিভিন্ন ব্যাখ্যা কারবিদের মধ্যে পাওয়া যায়। একটি ব্যাখ্যা অনুযায়ী কারবি ভাষায় চমাং মানে যম বা খাসি এবং কান বা কেনান মানে উৎসব বা নাচ। সেই অর্থত যম বা মৃতলোকর উৎসব অথবা খাসিদের মধ্যে প্রচলিত নৃত্য-গীত এই অর্থহে চমাংকানের সঙ্গে খাপ খায়। কারবিদের চমাংকান উৎসবে ডেকা-গাভরু নাচা নিমছ’কেরুং নাচের সঙ্গে খাসিদের নংক্রেম নাচ এবং এই চমাংকান উৎসবে ঢাল-তরোবাল নিয়ে নাচা চমছিনাং রণ নৃত্যর সঙ্গে খাসিদের অন্য একটি রণনৃত্য পরিয়েচ বা মাছতিয়েচের বিশেষ মিল আছে।

কারবিদের মধ্যে প্রচলিত এক কিংবদন্তি মতে কারবি প্রখ্যাত যোদ্ধা এবং সমাজ সংস্কারক থিরেংবাংরেঙের সঙ্গে থাকা যমরাজের মিতির সম্পর্কের (তাদের বিশ্বাস মতে থিরেংবাংরেঙ যমরাজার মেয়েকে বি করেছিল) সুবাদে তিনি যমরাজার পালন করা নৃত্য উপভোগ করার সু রকমা পেয়েছিলেন। এবং তার থেকে চমাংকান শব্দটির অর্থ বিশ্লেষণে চম শব্দের অর্থ যম এবং কানের অর্থ নৃত্য-গীতি বলে মনে করেন বিভিন্নজন। থিরেংবারেঙের প্রচলিত কিংবদন্তিটি আবার অন্য এচামের মতে অন্য ধরনের। তাদের মতে এই থিরেংবারেঙ মানুষের আত্মা যমপুরীতে দুর্ভোগ দেখে একে লাঘব করার উদ্দেশ্যে মৃত্যুর অধিপতিকে সন্তুষ্ট করার জন্য উৎসবের প্রবর্তন করেছিলেন। এবং এই চম-আরং-আকান অর্থাৎ যমপুরীর উৎসবই পরবর্তী সময়ে চমাংকান হিসাবে একটি পরিচিতি লাভ করেছিল।

কারবিদের মধ্যে প্রচলিত অন্য একটি জনশ্রুতি মতে চুমুং চামার ফৈদর কার্বি শিকারী একজন কুকুর মেলে দিয়ে শিকার একদিন একটি গুঁই পালন করে এবং তাকে মারতে খোজায় সে মৃতলোক থেকে আসা কথাটি জানিয়ে প্রাণ রক্ষার জন্য কাকুতি-মিনতি করে। তার বিনিময়ে সে শিকারীব্যক্তিকে যমরাজ্য দেখানোর দায়িত্ব নেয়। সেই মতে শিকারীজন যমরাজ্য পর্যন্ত গিয়ে উভতি এসে মৃতের উদ্ধারের জন্য চমাংকান শ্রাদ্ধ- রকমির প্রচলন করেন। অন্য এক বিশ্বাস মতে – কারবিদের মৃতের উৎসবে কাছের কারবি গ্রামের লোককে নিমন্ত্রণ করার থেকেও চমাংকান নামটির উৎপত্তি সম্পর্কিত। কাছের গ্রাম থেকে আসা নিমন্ত্রিত এমন দলকে কারবি ভাষায় চমফাং বলে। এই আলাদা আলাদা দলের সমূহীয় নৃত্য-অনুষ্ঠানকে আবার চমফাংকান বলে। কালক্রমে এই চমফাংকানের ফ লোপ পেয়ে চমাংকান হয় বলে বহুলোক ধারণা করে।

রীতি-নীতি

কার্বি সমাজে কোনো ব্যক্তির মৃত্যু ঘটলে তাঁর মৃতদেহ তাঁর আত্মীয়রা এসে না পাওয়া অব্দি রেখে দেয়। আত্মীয়রা আসার পরে অপ্রতিষ্ঠানিকতা রক্ষা করে শব সৎকার করা হয় এবং হাড়গুলি পুতি রাখা হয়। তার পরে চমাংকান শুরু বাধ্যতামূলক । এই অনুষ্ঠান শুরুর নির্দিষ্ট কোনো দিন বার নেই যদিও কোনো "শুভ অনুষ্ঠান দেহাল বা রংকের পূজাভাগ এবং লখিমীপূজা হাচাকিকান তৈরি করে ওঠার পরে সাধারণত 'চ'মাংকান' শুরু হয়। চমাংকান উৎসবে দুজন ব্যক্তি মূখ্য ভূমিকা পালন করে। উছেপি একজন বয়স্ক কার্বি মহিলা। তিনি একজন পেশাদারী কান্দনী। তিনি চমাংকানে সুর লাগিয়ে শোক গীতি সমূহ গান। দুইহুদেন চমাংকানের রীতি-নীতির পর্যায় রক্ষা করে। সঙ্গে তিনি চমাংকানের বাদ্য সম্পর্কে আলোচনা করেন।

তথ্যসূত্র

    • তিওয়া আরু কার্বি লোক-সংস্কৃতির লেছেরি বুটলি, লেখক মুরুলীধর দাস, পৃষ্ঠা = ৪৮
    • কার্বি কৃষ্টির উৎস,
    • কারবি লোক সমাজ-সাহিত্য সংস্কৃতিত এভূমুকি,লেখক সুরেন্দ্র বরুয়া, পৃষ্ঠা = ১৪
    • রচনা প্ৰবাহ, ডেকা এবং ডেকা, ২০০৮, পৃষ্ঠা-৩০৩ (১)
    This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.