চতুষ্কোণ (চলচ্চিত্র)
চতুষ্কোণ খ্যাতনামা পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায় পরিচালিত ২০১৪ সালের একটি বাংলা চলচ্চিত্র।[1] এতে অভিনয় করেছেন অপর্ণা সেন, চিরঞ্জিৎ চক্রবর্তী, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, গৌতম ঘোষ প্রমুখ।[2] রিলায়েন্স এন্টারটেইনমেন্ট প্রযোজিত এই চলচ্চিত্রের কাহিনি গড়ে উঠেছে চার পরিচালকের চার ধরনের গল্প নিয়ে, একক কাহিনির মাধ্যমে।[3] ২০১৪ সালের দূর্গাপূজার প্রাক্কালে ২৬শে সেপ্টেম্বর চলচ্চিত্রটি মুক্তি পায়।[4]
চতুষ্কোণ | |
---|---|
চতুষ্কোণ | |
পরিচালক | সৃজিত মুখোপাধ্যায় |
প্রযোজক | রিলায়েন্স এন্টারটেইনমেন্ট দাগ ক্রিয়েটিভ মিডিয়া |
রচয়িতা | সৃজিত মুখোপাধ্যায় |
শ্রেষ্ঠাংশে |
|
সুরকার | অনুপম রায় |
চিত্রগ্রাহক | সুদীপ চট্টোপাধ্যায় |
সম্পাদক | রবিরঞ্জন মৈত্র |
পরিবেশক | দাগ ক্রিয়েটিভ মিডিয়া |
মুক্তি |
|
দেশ | ভারত |
ভাষা | বাংলা |
কাহিনি
চলচ্চিত্রটি শুরু হয় একটি অচেনা মহিলার একটি সুইসাইড নোট এবং নিজেকে সিলিং ফ্যানের সাথে ঝুলিয়ে অত্যহত্যার মধ্য দিয়ে। একটি লোককে একটি বাচ্চার হাত ধরে ঝুলন্ত মহিলার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখা যায়। তারপরে কৃষ্ণবর্ণ ও অতীতের চিত্র তুলে ধরা। এর পর দেখা যায় বারে একটি পার্টি, যেখানে নীলাঞ্জনা (ত্রিনা) এবং তার চঞ্চল প্রেমিক ঋত্বিক (দীপ্ত) পার্টি এবং সিনেমা নিয়ে তর্ক করে। তারপরেই মুভিটি শুরু হয়, যেখানে জয় প্রযোজকের (মিঃ গুপ্ত) সাথে একটি সিনেমা তৈরির বিষয়ে আলোচনা করেছে। তিনি ত্রিনাকে ডাকেন এবং শাক্য ও তার প্রাক্তন প্রেমিক দীপ্তের সাথে চারটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রে কাজ করার জন্য বোঝানোর চেষ্টা করেন। শাক্য এবং দীপ্ত চলচ্চিত্র নিয়ে তর্ক করে এবং তারপরে তাকে ত্রিনার সাথে কাজ করতে বলে। এই চারজন জয়ের বাড়িতে মিলিত হন, যেখানে তিনি তাদের বলেছিলেন যে তাদের হেনরি দ্বীপ বাকখালীতে প্রযোজকের কাছে তাদের নিজ নিজ চিত্রনাট্য পেশ করতে হবে। তাদের গল্পে সাধারণ বিষয় ছিল মৃত্যুর। সেই সন্ধ্যায় শাক্য ও দীপ্ত তাদের গল্পগুলি নিয়ে আলোচনা করে। শাক্য দীপ্তকে বলেযে তিনি একবারে এক টিভি সিরিয়ালের লেখক সম্পর্কে লিখেছেন। এই পুরানো গল্পের লেখক তার চরিত্রগুলিকে নির্মমভাবে হত্যা করে, তার মৃত চরিত্রগুলি দেখে তার হার্ট অ্যাটাক হয় এবং মারা যায়। বাকখালি ভ্রমণের সময়, ত্রিনা ও জয় দীপ্তোর পতন নিয়ে আলোচনা করেন। দীপ্তো ফোনে কথা বলে এবং সবেমাত্র একটি দুর্ঘটনা থেকে বেঁচেছেন এবং তার প্লটটি সন্ধান করে। তিনি এমন একজন ব্যক্তির গল্প শুনলেন যিনি সিগারেটের আসক্ত এবং মধ্যরাতে সিগারেট কিনতে বের হয়ে গাড়ি চালিয়ে যান। তাদের গাড়িটি নষ্ট হয়ে যায় এবং তারা মিঃ গুপ্তের একটি বাংলোতে আশ্রয় নেন।[5]
অভিনয়ে
- তৃণা চরিত্রে অপর্ণা সেন
- দীপ্ত চরিত্রে চিরঞ্জিৎ চক্রবর্তী
- শাক্য চরিত্রে গৌতম ঘোষ
- জয়ব্রত চরিত্রে পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়
- কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়
- পায়েল সরকার[6]
সংগীত
চতুষ্কোণ | ||||
---|---|---|---|---|
অনুপম রায় কর্তৃক সাউন্ডট্র্যাক অ্যালবাম | ||||
মুক্তির তারিখ | String Module Error: Match not found | |||
ঘরানা | চলচ্চিত্রের গান | |||
দৈর্ঘ্য | ২৫:০৩ | |||
সঙ্গীত প্রকাশনী | টি-সিরিজ | |||
প্রযোজক | রিলায়েন্স এন্টারটেইনমেন্ট | |||
অনুপম রায় কালক্রম | ||||
|
এই চলচ্চিত্রের সংগীত পরিচালনা করেছেন অনুপম রায়। আবহ সঙ্গীত পরিচালনা করেন ইন্দ্রদীপ দাসগুপ্ত।
নং. | শিরোনাম | গীতিকার | কণ্ঠশিল্পী | দৈর্ঘ্য |
---|---|---|---|---|
১. | "বসন্ত এসে গেছে (পুরুষ)" | অনুপম রায় | অনুপম রায় | |
২. | "মনে পড়ার গান" | অনুপম রায় | সোমলতা আচার্য্য চৌধুরী | |
৩. | "বোবা টানেল" | অনুপম রায় | অনুপম রায় | |
৪. | "বসন্ত এসে গেছে (নারী)" | অনুপম রায় | লগ্নজিতা চক্রবর্তী[7] | |
৫. | "চিরসখা হে" | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর | শ্রীকান্ত আচার্য্য | |
৬. | "সেটাই সত্যি" | অনুপম রায় | রূপঙ্কর বাগচী |
প্রযোজনা
এই চলচ্চিত্র নিয়ে অনেক বিভ্রাট তৈরি হয়েছিল। ২০১৩ সালের ৩ ডিসেম্বর থেকে দৃশ্যায়ণ শুরু হবার কথা ছিল এবং কাহিনির চার পরিচালকের চরিত্রে অভিনয় করবার কথা ছিল অপর্ণা সেন, ঋতুপর্ণ ঘোষ, গৌতম ঘোষ এবং অঞ্জন দত্তর। ঋতুপর্ণ ঘোষ মারা যাবার পর তার স্থানে অভিনয় করার কথা ছিল কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়র। কিন্তু সৃজিত অসুস্থ হয়ে যাওয়ায় এর দৃশ্যায়ণ বাধাগ্রস্ত হয়। এর মধ্যে প্রযোজকের সাথে ঝামেলা হওয়ার ফলে অঞ্জন দত্ত চলচ্চিত্রটিতে অভিনয় করবেন না বলেন।[8][9] সময়ের সমস্যা হওয়ায় কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ও অভিনয় করবেন না বলেন।[1]
এদিকে সৃজিত মুখোপাধ্যায় পরিচালিত আগের ছবিগুলোর চিত্রগ্রাহক ও সম্পাদক ছিলেন যথাক্রমে সৌমিক হালদার ও বোধাদিত্য বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু তারিখের সমস্যা হওয়ায় তারা শ্রী ভেঙ্কটেশ ফিল্মস প্রযোজিত খাদ-এর কাজ হাতে নেন। ফলে চলচ্চিত্রের জন্য নতুন চিত্রগ্রাহক (সুদীপ চট্টোপাধ্যায়) ও সম্পাদক (রবিরঞ্জন মৈত্র) নিতে হয়।[1]
কিন্তু শেষে অন্য চরিত্রে অভিনয় করেন কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, তার আগের প্রদত্ত চরিত্রে চলে আসেন পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়। অঞ্জন দত্তর চরিত্রে আসেন চিরঞ্জিৎ চক্রবর্তী। তাই প্রাথমিক কাহিনির কিছুটা পরিবর্তন করা হয়।[10]
রিভিউ
টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়া চতুষ্কোণ চলচ্চিত্রের রিভিউয়ে এর নানাদিকের উচ্চকিত প্রশংসা করেন। চিরঞ্জিতের অন্যতম সেরা ফিরে আসা উল্লেখ করে। সম্পাদকের এতগুলো গল্পকে একসাথে জুড়ে দেয়ার সফলতা, অপর্ণা সেনের অভিনয়সহ অন্যান্যদের অভিনয়ের প্রশংসা ছাড়াও পরিচালকের অসাধারণ পরিচালনার কথা বলা হয়। অনুপম রায়ের সংগীতকে এক ধরনের পরমানন্দ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।[11] ষোলোআনা বাঙালিয়ানা, এই চলচ্চিত্রের 'শেষ মিনিটে কাহিনির নাটকীয় মোড়' এর কথা উল্লেখ করেন ।[12] শ্রেষ্ঠ পরিচালনা এবং শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যের জন্য ৬২তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান সৃজিত মুখোপাধ্যায়। শ্রেষ্ঠ চিত্রগ্রহণের জন্য ৬২তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান সুদীপ চট্টোপাধ্যায়।
তথ্যসূত্র
- "খাদের কিনারে চতুষ্কোণ যুদ্ধ"। আনন্দবাজার পত্রিকা। সংগ্রহের তারিখ ৮ জানুয়ারি ২০১৪।
- "চতুষ্কোণ+"। আনন্দবাজার পত্রিকা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ অক্টোবর ২০১৪।
- "চার-এ চতুষ্কোণ"। আমার আনন্দবাজার পত্রিকা। সংগ্রহের তারিখ ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৪।
- "পঞ্চকোণ"। আনন্দবাজার পত্রিকা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪।
- "পরিচালনা করবে কী!"। আনন্দলোক।
- "'চতুষ্কোণ' নয়, আসলে বহুকোণ"। এই সময়। সংগ্রহের তারিখ ৫ ডিসেম্বর ২০১৩।
- "I'm successful, intelligent & a bachelor. So there will be link-ups: Srijit Mukherji"। দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া। সংগ্রহের তারিখ ১৪ নভেম্বর ২০১৪।
- "Why did Anjan Dutt walk out on Srijit Mukherjee?"। The Times of India। সংগ্রহের তারিখ 06 December 2013। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
|সংগ্রহের-তারিখ=
(সাহায্য) - "'চতুষ্কোণ'য়ের এক কোণ খসল"। আনন্দবাজার পত্রিকা। সংগ্রহের তারিখ ৬ ডিসেম্বর ২০১৩।
- "'চতুষ্কোণ'-এ মিশল অকৃত্রিম 'খাদ'"। এই সময়। সংগ্রহের তারিখ ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৪।
- "Mainak Bhaumik on how Chotushkone pushes many boundaries"। টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়া। সংগ্রহের তারিখ ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৪।
- "Chotushkone Movie Review; The King of Last Minute Twists is Back!!!"। ষোলোআনা বাঙালিয়ানা। ১০ জানুয়ারি ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ জানুয়ারি ২০১৫।