ঘোড়া
ঘোড়া(Equus ferus caballus)[1][2] Equus ferusএর এখনও বিদ্যমান উপজাতির দুটির মধ্যে অন্যতম।এটি Equidae শ্রেণীকরণ সূত্র পরিবারের অন্তর্গত একটি অদ্ভুতদর্শন বক্রপদ খুড়ওয়ালা স্তন্যপায়ী প্রাণী। ঘোড়া বিগত ৪৫ থেকে ৫৫ লক্ষ বছর ধরে Hyracotherium ছোট বহু বক্রপদ জীব থেকে অভিব্যক্ত বর্তমানের বৃহৎ একক বক্রপদ প্রাণী। ৪০০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ নাগাদ মানুষ,ঘোড়াকে ঘরে পোষা শুরু করে,এবং তাদের পোষ মানান ৩০০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে বহুলভাবে শুরু হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়। ঘোড়ার উপজাতির মধ্যে ক্যাবালাসকে পোষ মানান হয়,যদিও এদের কিছু পোষ্য দল বুনো ঘোড়ার মত খোলা জায়গায় বা জঙ্গলে বাস করে। ঘোড়া বা ঘোটক দ্রুতগামী চতুষ্পদ জন্তু যার পিঠে চড়া যায়। দ্রুতগামী বলে এর নাম তুরগ, তুরঙ্গম।
ঘোড়া | |
---|---|
পোষ মানা | |
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস | |
জগৎ: | প্রাণী জগৎ |
পর্ব: | কর্ডাটা |
শ্রেণী: | স্তন্যপায়ী |
বর্গ: | পেরিসোডাক্টাইলা |
পরিবার: | Equidae |
গণ: | Equus |
প্রজাতি: | E. caballus |
দ্বিপদী নাম | |
Equus caballus Linnaeus, 1758 | |
প্রতিশব্দ | |
Equus ferus caballus |
ঘোড়া প্রজাতির সাধারণভাবে মেজাজের উপর ভিত্তি করে তিনটি ভাগে বিভক্ত করা হয়:গতি এবং সহনশীলতা দিয়ে সজীব "উষ্ণ রক্ত";"ঠান্ডা রক্ত",যেমন ড্রাফট ঘোড়ারা ও কিছু হিসেবে টাট্টুগুলি,যারা একটু ধীর গতির, কিন্তু ভারী কাজের জন্য উপযুক্ত;এবং "মাঝারি মেজাজ",যা প্রায়শই প্রথম দুটি প্রকারের মিশ্রণ, সঙ্কর ঘোড়া।
উৎপত্তি
প্রত্নতত্ত্ববিদ ওথনিয়েল চার্লস মারশ ১৮৭৯ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম ঘোড়ার বিবর্তন বর্ণনা করেন।
ঘোড়ার জীবাশ্মের ইতিহাস
আদিমকাল থেকে প্রতিটি যুগের ঘোড়ার জীবাশ্ম পাওয়া গিয়েছে বলে ঘোড়ার বিবর্তনের ক্রমপর্যায় সম্পূর্ণ ভাবে বোঝা সম্ভব হয়েছে। প্রায় ৫ কোটি বছর আগে ইওসিন যুগে আবির্ভূত ঘোড়ার পূর্বপুরুষ ইওহিপ্পাসের জীবাশ্ম উত্তর-পশ্চিম আমেরিকায় পাওয়া গেছে। ঘোড়ার পূর্বপুরুষদের জীবাশ্ম পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে বোঝা যায়-
- সরলতম গঠন থেকে জটিল ও উন্নত গঠনযুক্ত আধুনিক ঘোড়ার আবির্ভাব ঘটেছে।
- পায়ের আঙুলের সংখ্যা হ্রাস ক্ষুরের আবির্ভাব দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, পরিবেশের পরিবর্তন হয়েছে। যার ফলে আঙুলের প্রয়োজনীয়তা কমে গিয়েছে।
ঘোড়ার ক্রমযৌগিক জীবাশ্ম
ঘোড়ার অভিব্যক্তিতে বসবাসের পরিবেশ পরিবর্তনের জন্য ঘোড়ার ক্রমিক বিবর্তন হয়। প্রথমে বনজ অবস্থায় তাদের আকার ছোটো ও আঙুলযুক্ত ক্ষুদ্র পা থাকলেও পরে তৃণভূমি সৃষ্টি হলে তারা বড়ো ও শক্তিশালী হয়ে ওঠে। তাদের পায়ের তৃতীয় আঙুলটি ক্ষুর হিসাবে দ্রুত দৌড়ে সহায়তা করে। ঘোড়ার বিবর্তনের ক্রমপর্যায়ে উদ্ভূত বিভিন্ন ঘোড়া ও তাদের পরিবর্তনের বিষয় আলোচনা করলে বিবর্তন সম্পর্কে ধারণা করা যায়। নিচে বিভিন্ন সময়ে প্রাপ্ত ঘোড়ার জীবাশ্মের গঠনগত বৈশিষ্ট্য আলোচিত হল।
- হাইর্যাকোথেরিয়াম বা ইওহিপ্পাসঃ প্রায় ৫৫ মিলিয়ন বছর আগে ঘোড়ার আদিতম পূর্বপুরুষ হাইর্যাকোথেরিয়াম-এর আবির্ভাব ঘটে। একে ঊষাকালের ঘোড়া ( dawn horse) বলে অভিহিত করা হয়। এদের আকার ছিল শেয়ালের মতো ও উচ্চতা ছিল প্রায় ২৮ সেমি। এদের অগ্রপদে ৪টি ও পশ্চাদপদে ৩টি করে আঙুল ছিল। শরীরের তুলনায় মাথা, গলা ও পা ছোটো ছিল। প্রাণীটি বনের গাছ-গাছালির মধ্যে লুকিয়ে থাকতে পারত।
- মেসোহিপ্পাসঃ আজ থেকে প্রায় ৪০ মিলিয়ন বছর আগে মেসোহিপ্পাস নামক ঘোড়ার পূর্বপুরুষ-এর আবির্ভাব ঘটে। এইসময় জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে তৃণভূমির সৃষ্টি হয়। তাই দৌড়ানোর সুবিধার জন্য মেসোহিপ্পাসের অগ্রপদে পাশের একটি আঙুল হ্রাস পেয়ে উভয় পদেই ৩টি করে আঙুল দেখা যায়। এদের উচ্চতা বেড়ে হয় ৬০ সেমি। মেসোহিপ্পাসদের অন্তর্বর্তী ঘোড়া (intermediate horse) বলে।
- মেরিচিপ্পাসঃ প্রায় ২৫ মিলিয়ন বছর আগে ঘোড়ার মেরিচিপ্পাস নামক পুর্বপুরুষ-এর আবির্ভাব ঘটে। এদের রোমন্থক ঘোড়া (ruminating horse) বলা হয়। মেরিচিপ্পাসের উচ্চতা আরও বেড়ে হয় ১০০ সেমি। এদের পায়ে তিনটি আঙুল থাকলেও তৃতীয় আঙুলটি লম্বা ও চওড়ায় বৃদ্ধি পায় এবং তাতে ক্ষুর সৃষ্টি হয়। পাশের আঙুলগুলি আকারে ছোটো হতে থাকে। পক্ষান্তরে, এদের গ্রীবা অংশও লম্বা হয়ে যায়।
- প্লিওহিপ্পাসঃ প্রায় ১০ মিলিয়ন বছর আগে প্লিওহিপ্পাস ঘোড়ার আবির্ভাব হয়। এর উচ্চতা প্রায় ১০৮ সেমি ছিল এবং ছোটো হলেও দেখতে প্রায় বর্তমান ঘোড়ার মতো ছিল। এদের তৃতীয় আঙুল চলার সময়ে মাটি স্পর্শ করত। অর্থাৎ, এরা প্রথম এক আঙুলযুক্ত ঘোড়া, যাদের দ্বিতীয় ও চতুর্থ আঙুল ক্ষুদ্রতর হয়ে পাশে বিন্যস্থ থাকতো। এই ঘোড়ার পায়ের তৃতীয় আঙুল বাদে বাকি সব আঙুলগুলিই লুপ্তপ্রায়।
- ইকুয়াস বা আধুনিক ঘোড়াঃ প্রায় ১০ লক্ষ বছর আগে প্লিওহিপ্পাস থেকে ইকুয়াস-এর আবির্ভাব হয়। এই ঘোড়ার উচ্চতা বেড়ে হয় প্রায় ১৫০ সেমি। এদের প্রতি পায়ে ক্ষুর দ্বারা আবৃত একটি মাত্র শক্ত আঙুল দেখা যায়। বাকি আঙুলগুলি ক্রমশ ক্ষয়িষ্ণু হয়ে যায়। ইকুয়াস উত্তর আমেরিকা থেকে দক্ষিণ আমেরিকা, ইউরোপ ও এশিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। ইকুয়াস বা আধুনিক ঘোড়ার বিজ্ঞানসম্মত নাম হল- ইকুয়াস ফেরাস ক্যাবেল্লাস (Equus ferus caballus)।
ঘোড়ার বিবর্তনের পরিবর্তন
ঘোড়ার বিবর্তনের উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন গুলি হল-
- ঘোড়ার উচ্চতা ও আকারের ক্রমবৃদ্ধি।
- পার্শ্ব আঙুলের ক্রমক্ষয়। তৃতীয় আঙুলের দৈঘ্য ও প্রস্থ বৃদ্ধি পেয়ে ক্ষুরে পরিবর্তন ও দৌড়ের সময় দেহভার বহনে সহায়তা প্রদান।
- দৌড়ের সময় অগ্র ও পশ্চাদপদের ক্রমবৃদ্ধি।
- মস্তিষ্ক-এর সেরিব্রাল হেমিস্ফিয়ার অংশের আকার বৃদ্ধি বুদ্ধিমান হয়ে ওঠা।
- দাঁতের আকার বেড়ে ঘাস খাওয়ার জন্য উপযুক্ত হওয়া।
তথ্যসূত্র
- Grubb, P. (২০০৫)। "Order Perissodactyla"। Wilson, D. E.; Reeder, D. M। Mammal Species of the World (3rd সংস্করণ)। Johns Hopkins University Press। পৃষ্ঠা 630–631। আইএসবিএন 978-0-8018-8221-0। ওসিএলসি 62265494।
- International Commission on Zoological Nomenclature (২০০৩)। "Usage of 17 specific names based on wild species which are pre-dated by or contemporary with those based on domestic animals (Lepidoptera, Osteichthyes, Mammalia): conserved. Opinion 2027 (Case 3010)"। Bull. Zool. Nomencl.। 60 (1): 81–84। ২০০৭-০৮-২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-০৯-০৩।
- Goody, John (২০০০)। Horse Anatomy (2nd সংস্করণ)। J A Allen। আইএসবিএন 0-85131-769-3।
- Pavord, Tony; Pavord, Marcy (২০০৭)। Complete Equine Veterinary Manual। David & Charles। আইএসবিএন 0-7153-1883-7।