ঘানায় ইসলাম
ইসলাম ঘানায় আসা প্রথম ইব্রাহিমীয় একেশ্বরবাদী ধর্ম। বর্তমান ইসলাম দেশের দ্বিতীয় সর্বাধিক প্রচলিত ধর্ম। ঘানার আবাসন শুমারি ও পিউ রিসার্চ সেন্টারের তথ্য অনুসারে, ঘানায় ৬,৪৪২,২০৫ মুসলিম বাস করে, যা দেশের মোট জনসংখ্যার ১৯.৯%। [1] তবে স্থানীয় মুসলিম সংস্থাগুলির দাবি মতে, ঘানায় বসবাসকারী মুসলমানরা মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩০%।[2] দেশটির অধিকাংশ মুসলিম সুন্নি ইসলামের অনুসারী এবং সেখানে আহমদিয়া সম্প্রদায়েরও একদল সংখ্যালঘু অনুসারী রয়েছে। ১৯৬০ এর দশকে ইউসুফ সোয়ালিহ আজুরার সংস্কারবাদী কার্যকলাপে ফলে মুসলিমরা হাম্বলি মতবাদের দিকে পরিবর্তিত হওয়ার আগ পর্যন্ত ঘানায় ইসলামি আইনশাস্ত্রের মালিকি মাজহাব বহুল প্রচলিত ছিল।[3] ঘানায় একসময়ে ব্যাপক প্রভাবশালী সুফিবাদ বছরের পর বছর ধরে উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। তবে তিজানিয়া ও কাদিরিয়া সুফি তরিকা এখনো ঐতিহ্যবাদী মুসলমানদের প্রতিনিধিত্ব করে।
মোট জনসংখ্যা | |
---|---|
৬,৪৪২,২০৫ (১৯.৯%) বা (৩০%) | |
উল্লেখযোগ্য জনসংখ্যার অঞ্চল | |
| |
ভাষা | |
ইংরেজি, আরবি, ফরাসি, আকান, হাউসা ভাষা, কিছু আঞ্চলিক ভাষা | |
ধর্ম | |
সুন্নি ইসলাম, হাম্বলি, মালিকি, আহমদিয়া |
ঘানায় মুসলিম ও খ্রিস্টান সমাজের মধ্যে চমৎকার সম্পর্ক রয়েছে। মুসলিম প্রতিনিধি পরিষদ কর্তৃত্ব মুসলমানদের প্রভাবিত করে এমন ধর্মীয়, সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিষয়গুলি প্রায়শ আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা হয়। দেশটির জাতীয় হজ কাউন্সিল সামর্থবান মুসলিমদের মক্কায় হজযাত্রার ব্যবস্থা করার দায়িত্ব পালন করে। ঘানার জাতীয় প্রধান ইমাম হলেন ঘানার মুসলিমবিষয়ক সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ।[3]
কিছু মেট্রোপলিটন এলাকা ও শহরে বিশেষ করে উল্লেখযোগ্য মুসলিম জনসংখ্যার এলাকাগুলিতে প্রাথমিক, জুনিয়র সেকেন্ডারি, সিনিয়র সেকেন্ডারি শিক্ষা প্রদান করে, এমন অগণিত ইসলামি ও আরবি স্কুল রয়েছে।[3]
ইতিহাস
ঘানায় পশ্চিম আফ্রিকার সাহেল অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা ইসলামের প্রবর্তন করেন। তবে এর আগে ইসলামের মুবাল্লিগরা ঘানার বোনোমান রাজ্যের লোকদের সাথে মানুষের সাথে যোগাযোগ করেছিলেন এবং তাদের সামনে ইসলাম উপস্থাপন করেছিলেন।[4] ঘানায় ইসলামের প্রচার মূলত মান্দে ও হাউসা ভাষী মুসলিম ব্যবসায়ীদের বাণিজ্যিক কার্যক্রমের মাধ্যমে ঘটে।[5]
ইসলামের প্রসার
এভাবে ঘানায় ইসলাম বিভিন্ন পন্থায় ছড়িয়ে পড়ে। মান্ডেরা ঘানার উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম করিডোর দিয়ে এসেছিল এবং বোর্নো ও হাউসা ব্যবসায়ীরা উত্তর-পূর্ব থেকে এসেছিল। বোনো ও বেঘো রাজ্যের পতনের পর ইসলাম সফলভাবে দক্ষিণ ঘানায় প্রবেশ করে।[6] ১১ শতকে দাগোম্বা জাতির লোকেদের হাতে প্রতিষ্ঠিত ঘানার প্রাচীনতম ঐতিহ্যবাহী দাগবান রাজ্যের সময়ে ঘানায় ইসলামের ব্যাপক প্রচার ঘটে। এটি উত্থানের বর্তমান ঘানার উত্তর, উত্তর-পশ্চিম, পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব অঞ্চল নিয়ে গঠিত হয়েছিল। এই রাজ্যটি ইসলামের ব্যাপক পৃষ্ঠপোষকতা করে। এরপর ১৯ শতাব্দীতে ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ প্রশাসন তাদের সেনাবাহিনীতে প্রধানত শিক্ষিত মুসলিম লোকদের তালিকাভুক্ত করে। ১৮৯২ সালে দাগোম্বা, নামুম্বা ও গোঞ্জা উপজাতিদের যৌথ আক্রমনের পর ঘানার বনাঞ্চলে অভিবাসীদের ব্যাপক অভিবাসন ঘটে এবং উত্তরাঞ্চলের জনসংখ্যা হ্রাস করে দেয়। এর ফলে দক্ষিণাঞ্চলে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায়।[7] [8]
মুসলিম জনসংখ্যা
মুসলিম জনসংখ্যা উত্তর ঘানা ও সারা দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা জঙ্গো সম্প্রদায়ের লোকেদের মাঝে কেন্দ্রীভূত।[9][10][11] সরকারী পরিসংখ্যান পরিষেবার আদমশুমারি দেশটিতে প্রায় ২০% মুসলমান হিসেবে রিপোর্ট করে [12] যদিও এই সংখ্যাটি দেশের স্বাধীন সংস্থাগুলি অস্বীকার করে। মুসলিম সংস্থাগুলি দাবি করে যে, ২০০২ সালে প্রকাশিত চূড়ান্ত পরিসংখ্যানে গুরুতর ত্রুটি রয়েছে। এতে দেশের নির্ভরযোগ্য তথ্য ব্যবহার করা হয়নি"।[13] [14] সিআইএয়ের পরিসংখ্যান ঘানায় মুসলমান জনসংখ্যা ১৭.৬ বলে দাবি করে।[15] অন্যান্য হিসাব মতে, ঘানার মুসলিম জনসংখ্যা মোট ২৫%।[16][17] [18] ঘানার জাতীয় উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ তহবিল বিভিন্ন গোষ্ঠীর জনসংখ্যার শতাংশের দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়।[19] [20]
ভৌগোলিক বন্টন
২০১৭ সালের সরকারি আদমশুমারি অনুসারে, ঘানার মুসলমানরা মোট জনসংখ্যার প্রায় ২০ শতাংশ। [21]
অঞ্চল | জনসংখ্যা (২০১৭) [22] |
শতাংশ মুসলমান |
---|---|---|
উত্তর রিজিয়ন | ২,৪৭৯,৪৬১ | ৮০.০% |
উচ্চ পশ্চিমাঞ্চল | ৭০২,১১০ | ৪০.১% |
উচ্চ পূর্বাঞ্চল | ১,০৪৬,৫৪৫ | ৪৫.১% |
ব্রং-আহাফো | ২,৩১০,৯৮৩ | ১৭.৩% |
অ্যাশান্তি | ৪,৭৮০,২৮০ | ২০.২% |
বৃহত্তর আক্রা | ৪,০১০,০৫৪ | ১৫.৯% |
পশ্চিমাঞ্চল | ২,৩৭৬,০২১ | ৯.৪% |
কেন্দ্রীয় অঞ্চল | ২,২০১,৮৬৩ | ৮.৭% |
পূর্বাঞ্চল | ২,৬৩৩,১৫৪ | ৬.৯% |
ভোল্টা | ২,১১৮,২৫২ | ৫.৯% |
ঘানা | ২৪,৬৫৮,৮২৩ | ২০% |
মুসলমানরা দেশটির উত্তরাঞ্চলে সংখ্যাগরিষ্ঠ, উচ্চ পূর্ব অঞ্চলের বৃহত্তম ধর্ম এবং উচ্চ পশ্চিম অঞ্চলে একটি বড় সংখ্যালঘু ধর্ম। ঘানার দক্ষিণাঞ্চলে মুসলমানদের সংখ্যা কিছুটা কম।
উল্লেখযোগ্য মুসলিম
- ইউসুফ সোয়ালিহ আজুরা
- আলিউ মহামা
- ওসমান নুহু শারুবুতু
- মাহামুদু বাউমিয়া
- সামিরা বাউমিয়া
- আবেদি পেলে
- ফারুক অলিউ মাহামা
- মোস্তফা আব্দুল হামিদ
- সুলি মুনতারি
- আব্দুল সালাম মুমুনি
- মোবারক ওয়াকাসো
- আন্দ্রে আয়ু
- জর্ডান আইউ
- বাবা রহমান
- কাসিম নুহু
- কাসিম
- মোবারক মোহাম্মদ মুনতাকা
- হারুনা ইদ্রিসু
- মোহাম্মদ কুদ্দুস
- আহমেদ রমজান
আরো পড়ুন
- Ryan, Patrick J. "Islam in Ghana: its major influences and the situation today." Orita: Ibadan Journal of Religious Studies 28.1-2 (1996): 70–84.
- Skinner, David E. "Conversion to Islam and the promotion of ‘Modern’Islamic Schools in Ghana." Journal of religion in Africa 43.4 (2013): 426–450.
- Weiss, Holger. "Variations in the colonial representation of Islam and Muslims in Northern Ghana, Ca. 1900–1930." Journal of Muslim Minority Affairs 25.1 (2005): 73–95.
- Wilks, Ivor. "The growth of Islamic learning in Ghana." Journal of the Historical Society of Nigeria 2.4 (1963): 409–417. (online)
বহিঃসংযোগ
তথ্যসূত্র
- "Ghana"। The World Factbook (ইংরেজি ভাষায়)। Central Intelligence Agency। ২০২২-১১-১৪।
- "Muslims cry foul over population figures"। web.archive.org। ২০১৪-০৫-০২। ২০১৪-০৫-০২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১১-২৪।
- Mohammad Saani, Ibrahim (২০১১)। The decline of Sufism in West Africa: Some factor contributing to the political and social ascendancy of Wahhabist Islam in Northern Ghana। Institute of Islamic Studies - McGill University। ২০১৪-১২-১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-১২-১২।
- "Islam in Ghana - Report"। HI/OB/IINA। IslamicPopulation.com। অক্টোবর ১৯, ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ডিসেম্বর ১৮, ২০১৪।
- Pontzen, Benedikt (২০২১)। Islam in a Zongo: Muslim Lifeworlds in Asante, Ghana। The International African Library। Cambridge University Press। আইএসবিএন 978-1-108-83024-9।
- Turkson, Peter-K. (১ অক্টোবর ২০০৭)। "Ghana, if Islam Becomes an Enigma"। Oasiscenter। ২৬ ডিসেম্বর ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ডিসেম্বর ১৯, ২০১৪।
- J. A. Braimah, J. R. Goody (১৯৬৯)। Salaga: The Struggle for Power। Historical Society of Ghana। পৃষ্ঠা 222।
- Abdulai Iddrisu (২০০৯)। Contesting Islam: "Homegrown Wahhabism," Education and Muslim Identity in Northern Ghana, 1920--2005। পৃষ্ঠা 283। আইএসবিএন 9781109220643।
- "300 Year Stay In Ghana Does Not Make You A Ghanaian"। Al-Hajj। Accra - Ghana। GhanaWeb। ২৯ মার্চ ২০১২। ১৭ ডিসেম্বর ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ডিসেম্বর ১৭, ২০১৪।
- Yahaya, Tanko Ali (৩১ জুলাই ২০১৩)। "NDC's Phanton Sympathy For The Zongo And Northerners"। Independent Minded Zongorians। Accra - Ghana। GhanaWeb। ১৭ ডিসেম্বর ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ডিসেম্বর ১৭, ২০১৪।
- Yahaya, Tanko Ali (৫ আগস্ট ২০১৩)। "Zongo:the eleventh region?"। Accra Ghana। GhanaWeb। ১৭ ডিসেম্বর ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ডিসেম্বর ১৭, ২০১৪।
- Field Listing :: Religions ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২০১৪-০৫-১২ তারিখে.cia.gov.
- Amos Safo (২০০২)। "Muslims cry foul over population figures"। Ghana। NewsFromAfrica। মে ২, ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ডিসেম্বর ১৭, ২০১৪।
- "International Religious Freedom Report 2006 Bureau of Democracy, Human Rights, and Labor"। US State Department। ডিসেম্বর ১২, ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ডিসেম্বর ১৭, ২০১৪।
- "Field Listing :: Religions"। The World Factbook। Central Intelligence Agency। ২০২০-০৩-০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১১-২১।
- Ed. John L. Esposito। "Ghana, Islam in"। Oxford Islamic Studies। ডিসেম্বর ১৯, ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ডিসেম্বর ১৯, ২০১৪।
- Ahmadiyya Muslim Mosques Around the World: A Pictorial Presentation। Ahmadiyya Muslim Community। ২০০৮। পৃষ্ঠা 352। আইএসবিএন 9781882494514।
- Hashim, M. Ali Mahdi (PhD) (১ মার্চ ২০১৩)। "A Journey Through Islam: Muslims have come up well in Ghana"। Arab News। Saudi Arabia। ১০ নভেম্বর ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ডিসেম্বর ১৭, ২০১৪।
- h olger Weiss (২০০৭)। "the expansion of Muslim ngo's in ghana" (পিডিএফ)। মার্চ ৪, ২০১৬ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ডিসেম্বর ১৭, ২০১৪।
- Branoah Banful, Afua। "Can Institutions Reduce Clientelism? A study of the District Assemblies Common Fund in Ghana" (পিডিএফ)।
- "Ghana Census 2010 statistics"। ২০২০-১০-২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১২-১০।
- Ghana ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২০১৪-১১-১৩ তারিখে at GeoHive.