গ্রাম
গ্রাম হল জনবসতির একটি একক। এটি প্রধানত কৃষিভিত্তিক অঞ্চলে মনুষ্য সম্প্রদায়ের ছোটো বসতি। যেখানে বসবাসরত সম্প্রদায়রা কৃষিকাজ কৃষিভিত্তিক ও বিভিন্ন ছোটোখাটো কাজের (যেমন কুমোরের বা কর্মকারের কাজ) মাধ্যমে খুব সাধারণভাবে জীবন যাপন করে থাকে। গ্রাম সাধারণত বড়ো শহর বা রাজধানী থেকে দূরে অবস্থিত হয়। গ্রামে শহরের মতো তেমন আধুনিক সুবিধাগুলো থাকেনা। এই কারণে জমিদার ও রাজাগণ শহরে বসবাস করলেও গ্রামের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখতেন।
প্রাচীন সামন্ততান্ত্রিক সমাজে কৃষিভিত্তিক গ্রাম ছিল রাজস্ব আহরণের উৎস। একটি গ্রামে কৃষিজীবী ছাড়াও কামার, কুমার, মাঝি, মেথর, জেলে প্রভৃতি পেশার লোকের বসবাস থাকে। গ্রাম মূলত একটি স্বশাসিত এলাকা হিসাবে পরিগণিত হত।
দক্ষিণ এশিয়া
আফগানিস্তান
আফগানিস্তানে গ্রাম বা দেহ (দারি / পশ্তু : ده) হল আফগান সমাজের মাঝারি আকারের মানব বসতি, যা পাড়া বা কালা (দারি : قلعه, পশতু : کلي), চেয়ে বড় হলেও শহর বা শর (দারি : شهر, পশ্তু : শহর) এর চেয়ে ছোট। কালা'র বিপরীতে, দেহ সাধারণত একটি বৃহত্তর জনবসতি হয় যার মধ্যে একটি বাণিজ্যিক ক্ষেত্র অন্তর্ভুক্ত থাকে, যদিও আরও বড় শরে সরকারী ভবন এবং পরিষেবা যেমন উচ্চশিক্ষার স্কুল, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা, থানা ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
বাংলাদেশ
বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ গ্রামে বসবাস করে। ২০১১ সালের আদমশুমারী অনুযায়ী গ্রামে বসবাসকারী জনসংখ্যা হল ১১,০৪,৮০,৫১৪ জন, যা দেশের মোট জনসংখ্যার ৭৬.৬৯%। ১৭৯৩ সালের চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের পর গ্রামীণ শাসন ও কর ব্যবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তন আসে। এ ব্যবস্থায় গ্রামের জমির পূর্ণ অধিকার পায় জমিদার। আধুনিক রাষ্ট্রব্যাবস্থায় গ্রাম পর্যায়ে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা নির্বাচন পদ্ধতি চালু করা হয়েছে এবং পৃথক প্রশাসনিক কাঠামো গড়ে তোলা হয়েছে।[1]
পাকিস্তান
পাকিস্তানিদের বেশিরভাগই গ্রামাঞ্চলে বাস করেন। ২০১৭ সালের হিসাব মতে পাকিস্তানীদের প্রায় ৬৪% গ্রামাঞ্চলে বাস করে। পাকিস্তানের বেশিরভাগ গ্রামাঞ্চল শহরগুলির কাছাকাছি এবং প্রাথমিক-নগর অঞ্চল হয়ে থাকে। সংজ্ঞা অনুসারে পাকিস্তানের কোনও পল্লী অঞ্চল এমন একটি অঞ্চল যা একটি নগরীর সীমানায় আসে না এমন অঞ্চল বা নগরীর সীমানার বাইরের অঞ্জল। গ্রামকে উর্দুতে দেহাত বা গাওঁ বলা হয়। পাকিস্তানি গ্রামের জীবন আত্মীয়তা এবং বিনিময় সম্পর্কের দ্বারা চিহ্নিত।এরা মুসলমান।
ভারত
বিংশ শতাব্দীর শুরুতে মোহন দাস কমরচাদ গান্ধী ঘোষণা করেছিলেন যে, "ভারতের আত্মা তার গ্রামগুলোতে বাস করেন"। ২০১১ সালের ভারতীয় জনগণনা অনুসারে ৬৮.৮৪% ভারতীয় (প্রায় ৮৩৩.১ মিলিয়ন মানুষ) বিভিন্ন গ্রামে বাস করেন। গ্রামের আকারে যথেষ্ট পরিমাণে পার্থক্য রয়েছে। ২৩৬,০০৪ টি ভারতীয় গ্রামে জনসংখ্যা ৫০০ এরও কম, এবং ৩,৯৭৬ টি গ্রামে ১০,০০০+ জনসংখ্যা রয়েছে। স্থানীয় ধর্মীয় অনুসরণ অনুসারে বেশিরভাগ গ্রামগুলির নিজস্ব মন্দির, মসজিদ বা গির্জা রয়েছে।
দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়া
মালয়েশিয়া
মালয়েশিয়ার গ্রামকে ক্যামপাং (কখনও কখনও ইংরেজি ভাষায় কামপং বা কমপং উচ্চারিত হয়) বল হয়ে থাকে। মালয়েশিয়ায় কমপুং ১০,০০০ জন বা তারও কম লোকের বাসস্থান হিসাবে নির্ধারিত হয়। ঐতিহাসিক কাল থেকে, প্রতিটি মালয় গ্রামের নেতৃত্বে থাকেন একটি পঙ্গুলু (গ্রাম প্রধান), যিনি তাঁর গ্রামে নাগরিক বিষয় শোনার ক্ষমতা রাখেন (আরও তথ্যের জন্য মালয়েশিয়ার আদালত দেখুন)।
মধ্য এশিয়া
আউয়েল (কাজাখ: Ауыл) কাজাখস্তানের একটি শব্দ যার অর্থ "গ্রাম"।[2] ২০০৯ সালের কাজাখস্তানের আদমশুমারি অনুসারে, ৪২.৭% কাজাখ (৭.৫ মিলিয়ন মানুষ) বিভিন্ন গ্রামে বাস করে।[3] এই ধারণাটির সাথে সাথে "আউয়েল" শব্দের পাশাপাশি উত্তর কাজাখস্তানে স্লাভিক শব্দ "সেলো" ব্যবহৃত হত।
চিত্রশালা
তথ্যসূত্র
- ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর, সম্পাদকগণ (২০১২)। "গ্রাম"। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। আইএসবিএন 9843205901। ওএল 30677644M। ওসিএলসি 883871743।
- Қазақ тілі термиңдерінің салалық ғылыми түсіндірме сөздігі: География және геодезия. — Алматы: "Мектеп" баспасы, 2007. — 264 бет. আইএসবিএন ৯৯৬৫-৩৬-৩৬৭-৬
- "History of stat.kz"। ১৩ নভেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ মার্চ ২০১৪।.