গোলাম হোসেন (বীর প্রতীক)

গোলাম হোসেন (জন্ম: অজানা - মৃত্যু: ১৯৮১) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করে। [1][2]

গোলাম হোসেন
জন্ম
মাগুরা
মৃত্যু১৯৮১
চট্টগ্রাম
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ব পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
 বাংলাদেশ
পেশামুক্তিযোদ্ধা
পরিচিতির কারণবীর প্রতীক

জন্ম ও শিক্ষাজীবন

গোলাম হোসেন কুমিল্লা জেলার সদর উপজেলার তুলাতুলি গ্রামে। তার বাবার নাম মো. আফসার উদ্দিন মোল্লা এবং মায়ের নাম মমিনজান বেগম। তার স্ত্রীর নাম জাহানারা বেগম। তাদের দুই ছেলে ও দুই মেয়ে।

কর্মজীবন

গোলাম হোসেন চাকরি করতেন ইপিআরে। ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন সিলেট সেক্টরে। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তারা ঝাঁপিয়ে পড়েন যুদ্ধে। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ৩১ পাঞ্জাব রেজিমেন্ট তাদের আক্রমণ করে। সেই আক্রমণ তারা বীরত্বের সঙ্গে প্রতিহত করেন। ৪ এপ্রিল সিলেট শহরের টিবি হাসপাতালে অবস্থানরত পাকিস্তানি সেনাদের মুক্তিযোদ্ধারা আক্রমণ করেন। মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দলের নেতৃত্ব দেন গোলাম হোসেন। এখানে অনেকক্ষণ যুদ্ধ হয়। পরাজিত পাকিস্তানি সেনারা অনেক ক্ষয়ক্ষতি স্বীকার করে খাদিমনগরে পালিয়ে যায়। প্রতিরোধযুদ্ধে তার ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। পরে যুদ্ধ করেন ৫ নম্বর সেক্টরের ডাউকি সাবসেক্টরে।

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা

সিলেট জেলার জৈন্তাপুরের অন্তর্গত তামাবিল ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে অবস্থিত। সীমান্তের ওপারে ভারতের ডাউকি। তামাবিলের পশ্চিমে জাফলং। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে সিলেট অঞ্চলের মুক্তিযোদ্ধাদের একাংশ অবস্থান নেন ডাউকিতে। তারা বেশির ভাগ ছিলেন ইপিআর সদস্য। কয়েকটি দলে বিভক্ত। একটি দলের নেতৃত্বে ছিলেন গোলাম হোসেন। অন্যদিকে, তামাবিল ও জাফলংয়ে ছিল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অবস্থান। মুক্তিযোদ্ধারা প্রায়ই সীমান্ত অতিক্রম করে তামাবিল ও জাফলংয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে আক্রমণ করতেন। এরই ধারাবাহিকতায় ২৫ জুন মুক্তিযোদ্ধাদের দুটি দল তামাবিলে অবস্থানরত পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমণ করে। এই আক্রমণে সার্বিক নেতৃত্ব দেন বি আর চৌধুরী । একটি দলের নেতৃত্ব দেন গোলাম হোসেন।

মুক্তিযোদ্ধাদের আকস্মিক আক্রমণে পাকিস্তানিদের প্রতিরক্ষা ভেঙে পড়ে। ব্যতিব্যস্ত পাকিস্তানি সেনারা পেছনে সরে গিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণ প্রতিরোধের চেষ্টা করে। গোলাম হোসেন তার দল নিয়ে তখন ঝাঁপিয়ে পড়েন শত্রুর ওপর। তার সাহসিকতায় পাকিস্তানি সেনারা হতভম্ব হয়ে যায়। মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে ছিন্নভিন্ন ও তছনছ হয়ে পড়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রতিরক্ষা। এরপর সেনারা পালাতে শুরু করে। যে যেদিকে পারে পালিয়ে যায়। তারা ফেলে যায় সহযোদ্ধাদের মৃতদেহ, অস্ত্র, গোলাবারুদ ও খাদ্যসামগ্রী। মুক্তিযোদ্ধারা সেগুলো ডাউকিতে নিয়ে যান। এই যুদ্ধে গোলাম হোসেন অসাধারণ রণকৌশল ও বীরত্ব প্রদর্শন করেন। মূলত তার রণকৌশলের জন্যই পাকিস্তানিদের প্রতিরক্ষা ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। এর কয়েক দিন পর গোলাম হোসেন একদল মুক্তিযোদ্ধাকে সঙ্গে নিয়ে জৈন্তাপুরে পাকিস্তানি সেনাদের অ্যামবুশ করেন। সহযোদ্ধাদের নিয়ে একদিন রাতে তিনি ডাউকি থেকে রওনা দেন। সীমান্ত অতিক্রম করে শেষ রাতে পৌঁছেন জৈন্তাপুরে। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর টহল দলের চলাচলপথের এক স্থানে তারা গোপনে অবস্থান নেন। সকাল হওয়ার পর পাকিস্তানি সেনাদের টহল দল সেখানে হাজির হওয়ামাত্র তারা আক্রমণ করেন। এতে হতাহত হয় অনেক সেনা।

পুরস্কার ও সম্মাননা

পাদটীকা

তথ্যসূত্র

  1. "দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না"| তারিখ: ১০-০৮-২০১২"। ২০২০-০৭-১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-১১-০৬
  2. একাত্তরের বীরযোদ্ধাদের অবিস্মরণীয় জীবনগাঁথা, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা স্মারকগ্রহন্থ। জনতা ব্যাংক লিমিটেড। জুন ২০১২। পৃষ্ঠা ১৪০। আইএসবিএন 9789843351449।
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.