গুপ্তিপাড়ার রথযাত্রা

গুপ্তিপাড়ার রথযাত্রা বাংলার রথযাত্রা গুলোর মধ্যে অন্যতম বিখ্যাত রথ যাত্রা। নানা মতভেদ থাকলেও ১৭৪০ সালে এই রথ উত্‍সব শুরু করেন মধুসুদানন্দ।[1] ভান্ডার লুট গুপ্তিপাড়ার রথের এক অনন্য বৈশিষ্ট্য। পুরীর রথের সঙ্গে গুপ্তিপাড়ার রথের পার্থক্য হল, পুরীর রথকে জগন্নাথ দেবের রথ বলে। আর গুপ্তিপাড়ার রথকে বলে বৃন্দাবন জীউর রথ। গুপ্তিপাড়ার রথের বৈশিষ্ঠ হল, উল্টো রথের দিন এখানে ভান্ডার লুট হয়। ভারতবর্ষের কোথাও এই ভান্ডার লুট হয়না।[2]

গুপ্তিপাড়ার রথযাত্রা
রথ সাজানো হচ্ছে
Founded১৭৪০
Founded Byস্বামী মধুসুদনানন্দ
Placeগুপ্তিপাড়া, হুগলি, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত
Organizerশ্রী শ্রী বৃন্দাবনচন্দ্র জিউ মঠ
Height৩৬ ফুট
Base৩৪ ফুট × ৩৪ ফুট
Wheels১৬
Styleনবরত্ন
ভান্ডারলুট অন্যতম বৈশিষ্ট্য

ভান্ডার লুট

অন্য জায়গায় মতন এই দিন জগন্নাথ দেব তার মাসির বাড়িতে সকল মানুষের অন্তরালে বন্ধ ঘরে থাকেন। এই দিন জগন্নাথ দেবকে অনবদ্য নিরামিষ ভোগ দেওয়া হয়। জগন্নাথের মাসির বাড়িতে ৫২টি লোভনীয় পদে প্রায় ৪০ কুইন্টাল খাবারের 'ভাণ্ডার লুট পালন হয়।[3]

প্রেক্ষাপট  

কথিত আছে লক্ষ্মীর সঙ্গে মন কষাকষি হওয়ায় জগন্নাথ লুকিয়ে মাটিতে এসে আশ্রয় নেয়। সেখানে ভাল ভাল খাবার পেয়ে জগন্নাথ মাসির বাড়িতেই থেকে যান। অন্যদিকে লক্ষ্মীর মনে সন্দেহ দানা বাঁধে যে স্বামী বোধহয় পরকীয়ার টানে কোথাও চলে গিয়েছেন। পরে তিনি বৃন্দাবনের কাছে জানতে পারেন যে জগন্নাথ মাসির বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। তারপরেই স্বামীকে ফিরিয়ে আনতে লক্ষ্মী লুকিয়ে গিয়ে মাসির বাড়িতে সর্ষে পােড়া ছিটিয়ে আছে। কিন্তু, তাতে কোনো কাজ না হওয়ায় বৃন্দাবন ও কৃষ্ণচন্দ্র লোকজন নিয়ে মাসির বাড়িতে হাজির হন।[4]

সেখানে গিয়ে তারা দেখেন যে ঘরের তিনটি দরজা বন্ধ। তাই লক্ষ্মীর অনুরোধে তার স্বামীকে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য দরজা ভেঙে বৃন্দাবন ও কৃষ্ণচন্দ্র ভেতরে ঢােকেন। ঘরের ভেতরে প্রবেশ করেই তারা দেখতে পান মালসায় করে রকমারি পদের খাবার সাজানাে রয়েছে। ভাল ভাল খাবার চোখের সামনে দেখে তারা সেই সমস্ত মালসা লুট করে নেন। যা ভাণ্ডার লুট নামে সকলের কাছে পরিচিত।[4]

আবার আরেকটি অংশ দাবি, বৃন্দাবন চন্দ্র প্রচুর ধনসম্পত্তি ছিল। রাজা তার রাজ্যের শক্তিমানদের চিহ্নিত করার জন্য এই ভান্ডার লুটের আয়োজন করেছেন। যারা বেশি সংখ্যায় ভাণ্ডার লুট করে তাদের বৃন্দাবন চন্দ্র তার মন্দির পাহারার দায়িত্বে নিয়ােগ করতেন।

তবে প্রথা চালুর কারণ নিয়ে দ্বিমত থাকলেও প্রাচীন সেই রীতি মেনে এখনও প্রতিবছর উল্টোরথের আগের দিন মাসির বাড়ির মন্দিরের তিনটি দরজা একসঙ্গে খেলা হয়। ঘরের ভিতর রকমারি খাবারের পদ মালসায় করে সাজানো থাকে। দরজা খেলার পর এই প্রসাদ নেওয়ার জন্য মানুষের মধ্যে হুড়োহুড়ি শুরু হয়ে যায়। এই মালসা ভোগ পাওয়ার জন্য দূরদূরান্ত করে কয়েক হাজার মানুষ উল্টোরথের আগের দিন প্রসাদ পাওয়ার জন্য গুপ্তিপাড়া হাজির হন।[4]

ভোগ

ভান্ডার লুটের জন্য গোবিন্দভোগ চালের খিচুড়ি, বেগুন ভাজা, কুমড়ো ভাজা, ছানার রসা, পায়েস, ক্ষীর, ফ্রায়েড রাইস, মালপোয়া, সন্দেশ, ও রাবড়ি সহ মোট ৫২টি পদে খাবার সহ প্রায় ৫৫০ টি মালসা তৈরি করা হচ্ছে। প্রতিটি মালসা প্রায় ৫ থেকে ৮ কেজি করে খাবার থাকে। [4]

এই কর্ম যজ্ঞের জন্য ১০ জন রাঁধুনি ও ১০ জন হেল্পার সহ মােট ২০ জন রান্নার কাজ করেন। নিয়ম মেনে দুপুর দুটোর আগেই সমস্ত খাবার তৈরি করে মালসায় সাজিয়ে মাসির বাড়িতে রাখা হয়। বিকেল ৩ টায় মাসির বাড়ির দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়।[5]

আরো দেখুন

তথ্যসূত্র

  1. Sengupta, Ashok; Mandal, Tapas (৫ জুলাই ২০১৬)। "রথে জেগে উঠছে গুপ্তিপাড়া, বাংলার বনেদিবাড়ি"Dainik Jugashankha (Bengali ভাষায়)। Kolkata। ১১ আগস্ট ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৬ জুলাই ২০১৬
  2. "২৭৬ তম রথযাত্রা পালন গুপ্তিপাড়ায়"Eenadu India (Bengali ভাষায়)। ১৯ জুলাই ২০১৫। ১৭ আগস্ট ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ জুলাই ২০১৫
  3. Ghosh, Binay (১৯৭৮)। Paschimbanger Sanskriti (Bengali ভাষায়)। III। Prakash Bhavan। পৃষ্ঠা 272।
  4. Department:info@bartamanpatrika.com, News (২১ জুলাই ২০১৮  )। "আজ জগন্নাথের মাসির বাড়িতে ৫২ পদের ৪০ কুইন্টাল খাবারের ভান্ডার লুট"বর্তমান পত্রিকা। ২০১৮-০৭-১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ 2018-07-25 এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য)
  5. "গুপ্তিপাড়ার রথে বিশেষ ট্রেন চালানো ও স্টেশন আলো দিয়ে সাজানোর আবেদন"Bartaman (Bengali ভাষায়)। ১৫ জুন ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৫ জুলাই ২০১৬
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.