গির্জাশিখর

স্থাপত্যে শিখর বা গির্জাশিখর বলতে কোন সুউচ্চ অট্টালিকা বা বুরূজের (ঐতিহাসিকভাবে সাধারণত গির্জা বুরূজের) উপরে অবস্থিত পিরামিড আকৃতির বা মোচাকৃতির চূড়াকে বোঝায় যা ক্রমাগত সরু হয়ে একটি সূচ্যগ্রবিন্দুতে সমাপ্ত হয়। ইউরোপ মহাদেশে মধ্যযুগে, ১২শ শতকের দিকে, গির্জার বুরূজের উপরে আলাদা করে একটি সরল চতুর্পার্শ্ববিশিষ্ট পিরামিড আকৃতির চূড়া বা শিখর প্রথম ব্যবহার হতে শুরু করে। এরপর গোথিক স্থাপত্যশৈলীর পরিপক্ব পর্বে এসে গির্জাশিখরগুলি সরু, লম্বা ও সুদৃশ্য রূপ ধারণ করে এবং গির্জার বুরূজের সাথে এগুলির দৃশ্যমান সংযোগগুলিকে ধারাবাহিকতা প্রদান করা হয়। গির্জাশিখর কেবল ভবনের স্থাপত্যের চাক্ষুষ পরিসমাপ্তি নয়, বরং মধ্যযুগের ধর্মপ্রাণ মানুষের স্বর্গাভিমুখী আশা-আকাঙ্খারও প্রতীক ছিল।

ইংল্যান্ডের স্যালিসবেরি ক্যাথেড্রালের গির্জাশিখর; ১২৩ মিটার উচ্চতাবিশিষ্ট শিখরটি যুক্তরাজ্যের সর্বোচ্চ।

দক্ষিণ ইউরোপের ধর্মীয় স্থাপনাগুলিতে শিখর তেমন জনপ্রিয়তা না পেলেও ইংল্যান্ড, ফ্রান্স ও জার্মানিতে এগুলির স্থাপত্যশৈলীর বিবর্তন অব্যাহত থাকে। প্রথমদিকে এগুলি কাঠে তৈরি হত, পরে জার্মানিতে গোথিক স্থাপত্যশৈলী পর্বের সময় পাথর দিয়ে এগুলি নির্মাণ করা শুরু হয়। উত্তর আমেরিকার ঔপনিবেশিক গির্জাগুলিতেও সরল শিখর যোগ করার প্রচলন ছিল।

গির্জাশিখরের উদ্দেশ্য বিবিধ। প্রথমত, ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে এটি স্বর্গের অভিলাষকে প্রতীকায়িত করে। আবার উল্লম্ব বল্লমের দেখায় বলে গির্জাশিখর খ্রিস্টধর্মের রাজনৈতিক শক্তিরও এক ধরনের প্রতীক।[1] তৃতীয়ত, গির্জাশিখর সংশ্লিষ্ট গির্জার সম্পদ ও প্রতিপত্তির পরিচায়ক। গির্জার বাইরে অন্যান্য ভবনে শিখরের প্রয়োগ ভবনের মালিক বা নির্মাতার মর্যাদার প্রতীক।

অস্ট্রিয়ার রাজধানী শহর ভিয়েনা "শতশিখরের শহর" নামে পরিচিত।

তথ্যসূত্র

  1. Robert Odell Bork, Great Spires: Skyscrapers of the New Jerusalem, ২০০৩, গ্রন্থটিতে গির্জাশিখরের এই জটিল ধর্মীয় ও রাজনৈতিক তাৎপর্য আলোচিত হয়েছে।
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.