গিয়াস উদ্দিন

গিয়াস উদ্দিন (জন্ম: অজানা- মৃত্যু: ২০০৪) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করে। [1][2]

গিয়াস উদ্দিন
মৃত্যু২০০৪
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ব পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
 বাংলাদেশ
পরিচিতির কারণবীর প্রতীক

জন্ম ও শিক্ষাজীবন

গিয়াস উদ্দিনের জন্ম কুমিল্লা জেলার আদর্শ সদর উপজেলার চান্দপুর গ্রামে। তার বাবার নাম বাদশা মিয়া এবং মায়ের নাম চান্দ বানু। তার স্ত্রীর নাম সাবিহা বেগম। তাদের তিন ছেলে ও দুই মেয়ে।

কর্মজীবন

গিয়াস উদ্দিন চাকরি করতেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ১৯ সিগন্যাল কোরে। ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন ঢাকা সেনানিবাসে। তিনি কমান্ডো বাহিনীর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও প্যারাট্রুপার ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ঢাকা সেনানিবাস থেকে কৌশলে পালিয়ে নিজ এলাকায় গিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন যুদ্ধে। ২ নম্বর সেক্টরের আওতাধীন হোমনা, দাউদকান্দি ও গজারিয়া থানায় যুদ্ধ করেন। ৯ নভেম্বর দাউদকান্দির পঞ্চবটীতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধে তিনি আহত হন। তার বাঁ পায়ে গুলি লাগে।

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ২ নম্বর সেক্টরের ঢাকা অঞ্চলের গেরিলা মুক্তিযোদ্ধাদের চলাচলের পথ কুমিল্লা জেলার উত্তর-পশ্চিমে হোমনা। ক্র্যাক প্লাটুনের মুক্তিযোদ্ধারা এই থানার ওপর দিয়ে ঢাকায় আসতেন। সে জন্য পাকিস্তান সেনাবাহিনী ওই এলাকায় নিয়মিত টহল দিত। এর ফলে জুন মাস থেকে ওই এলাকা দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের চলাচল বিঘ্নিত হতে থাকে। তখন গিয়াস উদ্দিনের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দলের অবস্থান ছিল হোমনায়। সেক্টর সদর দপ্তর থেকে তার কাছে নির্দেশ আসে ওই এলাকা দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের চলাচল নিরাপদ করতে। এরপর তিনি হোমনা থানায় আক্রমণের একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। হোমনা থানায় মোতায়েন ছিল কয়েকজন পাকিস্তানি সেনা। তাদের সহযোগিতা করত থানার পুলিশ। থানার চারদিকে বাংকার এবং প্রতি বাংকারে ছিল এলএমজি। এ ছাড়া দাউদকান্দি থেকেও লঞ্চযোগে পাকিস্তানি সেনারা আসত। তবে তারা টহল দিয়ে চলে যেত।

তথ্যানুসন্ধানের পর গিয়াস উদ্দিন সহযোদ্ধাদের নিয়ে ১ এপ্রিল মধ্যরাতে সেখানে আকস্মিক আক্রমণ পরিচালনা করেন। তারা ছিলেন অল্প কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা। তবে বেশির ভাগই সাহসী ও দুর্ধর্ষ। অস্ত্রশস্ত্রও ছিল উন্নতমানের। আক্রমণের শুরুতেই পাকিস্তানি সেনা ও পুলিশ বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। এলএমজি দিয়ে গুলি করে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেও তারা পুরোপুরি ব্যর্থ হয়। থানায় অবস্থানরত সব পাকিস্তানি সেনা ও পুলিশ যুদ্ধে নিহত হয়। সেদিন গিয়াস উদ্দিন ও তার কয়েক সহযোদ্ধা অসাধারণ বীরত্ব প্রদর্শন করেন। বিশেষত তার রণনৈপুণ্য ও শৌর্যের ফলেই পাকিস্তানিদের প্রতিরোধ ভেঙে পড়ে এবং তারা সবাই নিহত হয়। পরে ৬ জুলাই গিয়াস উদ্দিন জয়পুর গ্রামে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একটি দলের ওপর আকস্মিক আক্রমণ চালান। দাউদকান্দি থানার অন্তর্গত মাসিমপুর বাজারের আধা মাইল পশ্চিমে জয়পুর। গুপ্তচর মারফত সেদিন সকালে তিনি খবর পান পাকিস্তানি সেনারা দুটি লঞ্চযোগে ওই এলাকায় আসছে। খবর পেয়েই সহযোদ্ধাদের নিয়ে গোমতীর শাখা নদীর পাড়ে তিনি ফাঁদ পাতেন। সকাল ১০টায় লঞ্চ দুটি ওই শাখা নদীতে আসে। তখন গিয়াস উদ্দিন ও অন্যরা একযোগে আক্রমণ করেন। এতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। পাল্টা আক্রমণ চালিয়েও তারা মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষতি করতে ব্যর্থ হয়। এরপর সেনারা লঞ্চ নিয়ে পালিয়ে যায়। পরে মুক্তিযোদ্ধারা খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন তাদের আক্রমণে ২০-২২ জন পাকিস্তানি সেনা হতাহত হয়েছে।

পুরস্কার ও সম্মাননা

পাদটীকা

তথ্যসূত্র

  1. দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না"| তারিখ: ০৫-০৮-২০১২
  2. একাত্তরের বীরযোদ্ধাদের অবিস্মরণীয় জীবনগাঁথা, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা স্মারকগ্রহন্থ। জনতা ব্যাংক লিমিটেড। জুন ২০১২। পৃষ্ঠা ১৪০। আইএসবিএন 9789843351449।
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.