গগনা
গগনা ভারতের অসম রাজ্যে প্রচলিত বাদ্যযন্ত্র। এই বাদ্যযন্ত্রটি বাঁশ দ্বারা নির্মিত। আকারে ছোট ও হাল্কা হওয়ায় মহিলারা চুলের খোপায় গগনা ভরিয়ে রাখে। গগনা একধরনের হার্প জাতীয় বাদ্যযন্ত্র। এই হার্প জাতীয় বাদ্যযন্ত্র অতি প্রাচীন ও পৃথিবীর অনেক সভ্যতায় এই ধরনের বাদ্যযন্ত্রের প্রচলন দেখা যায়। গগনা বাদ্যযন্ত্র বিহু নৃত্য ও বিহুগীতের সময় বাজানো হয়। গগনা অসমের মঙ্গোলীয় জনগোষ্ঠির অবদান। এই বাদ্যযন্ত্রের আকার অনুযায়ী ইহাকে রামধন গগনা, লিহিরি গগনা ও শালিকী গগনা ইত্যাদি বিভিন্ন শ্রেণীতে ভাগ করা হয়েছে। শ্রেণীভেদে গগনার সুর ভিন্ন হয়। লোকবিশ্বাস মতে ব্যাঙের ডাকের অনুকর্ণে গগনার সৃষ্টি করা হয়েছিল।
ব্যবহার
বিহুগীত ও বিহুনৃত্যে গগনা বাজানো হয় । এই বাদ্যযন্ত্রটি অসমীয়া ছাড়াও অসমের অন্যান্য উপজাতির লোকেরা ব্যবহার করে থাকে। বর্তমান দিনে অসমের বিহু প্রতিযোগিতায় গগনা বাজানো বাধ্যতামূলক। সাধারনতঃ মহিলারা গগনা বাঁজান কিন্তু কিছুসংক্ষক বিহু অনুষ্ঠানে পুরুষেরা এই বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে থাকেন ।
তৈরী করার প্রনালী
গগনা অতি সূক্ষ্ম বাদ্যযন্ত্র তাই গগনা তৈরী করার জন্য সুদক্ষ কারিগরের প্রয়োজন হয়। গিরা বা গাঠ নাথাকা অ্নগশটি গগনা তৈরী করার জন্য ব্যবহার করা হয়। জাতি বাঁশ গগনা প্রস্তুত করার জন্য উত্তম বাঁশ। লোকবিশ্বাস মতে তাঁতের বাঁশ চুরি করে গগনা প্রস্তুত করলে গগনার সুর সুমধুর হয় । সাত বা আঠ ইঞ্চির দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট বাঁশকে কাটা হয় ও এখানে একটি জিভা লাগানো হয় । এই জিভাটি গগনার ধ্বনির উৎস। জিভার সঙ্গে দুইটি বাঁশ সংযুক্ত করা হয়। একে মেখেলা বলা হয়। জিভা ও মেখেলার গঠনের উপর গগনার সুর নির্ভর করে। যদিও গগনা বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে কিন্তু সব ধরনের গগনা নির্মাণ প্রণালী প্রায় একই ধরনের হয়।
গগনা বাজানোর নিয়ম ও কৌশল
গগনা বাদনের দুইটি ভিন্ন কৌশল আছে যদিও উভয় প্রক্রিয়ায় সুর একই ধরনের হয় । প্রথম প্রক্রিয়ায় গগনাকে মুখের সন্মুখে নিয়ে বাদ্য যন্ত্রের জিভায় আঙ্গুল চালনা করে সুরের সৃষ্টি করা হয় ও প্রক্রিয়ায় গগনার জিভায় মুগার সুতা বেঁধে দিয়ে সুতায় আঙ্গুল চালনা করা হয়। গগনা বাদনের মূল নীতি হচ্ছে মুখের আয়তন বেশি-কম করে বিভিন্ন ধরনের সুরের সৃষ্টি করা।