খ্রিস্টীয় নগ্নতাবাদ
খ্রিষ্টীয় প্রকৃতিবাদী হচ্ছে এমন ধরনের ক্রিস্টিয়ানরা যারা প্রকৃতিবাদ বা নগ্নতাবাদের চর্চা করেও এটি কাপড়মুক্ত আন্দোলনের একটি অংশ। এটা ক্রিস্টান ধর্মের প্রায় সকল শাখাতেই দেখা যায় এবং বাইবেলের শিক্ষা ও জীবনযাপনের ধরনের সাথে এর কোন বিরোধ দেখা যায় না কাপড়ছাড়া ঈশ্বরের উপাসনা করতে। এটা মানবতাবাদী দর্শনের ও নতুন যুগের আদর্শ যা অন্য প্রকৃতিবাদীরা বিশ্বাস করে তার পরিপন্থী এবং প্রকৃতি উপাসনাকে এটা সমর্থন করে না। আমেরিকা[1], কানাডা[2], হল্যান্ড ও ব্রাজিল-এ সংগঠিত ক্রিস্টিয়ান প্রকৃতিবাদী দেখা যায়। তাদের সাধারণ বিশ্বাস হলো সামাজিক নগ্নতা ও ক্রিস্টিয়ানিটি পাশাপাশি চলে আসছে পারিবারিকভাবে ও এককভাবে অনেক আগের থেকেই। নগ্ন হওয়া একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনদর্শন ও গ্রহণযোগ্য ব্যাপার যাকে ঈশ্বর বাইবেলের কোথাও খারাপ বলেন নাই। রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠার জন্য প্রাথমিকযুগের চার্চ নগ্নতার প্রতি দমনমূলকনীতি নিয়েছি যদিও তা যিশুর শিক্ষা নয়। আধুনিক শিষ্টাচারের নিয়ম অনুযায়ী নগ্নতা নিষিদ্ধ যা বাইবেল যুগের চেয়ে ভিক্টোরিয়ান যুগের সাথে বেশি সামঞ্জস্যপূর্ণ। বর্ণবাদ ও অনগ্নতাবাদী প্রবণতা একই সাথে জড়িত। আগে ইউরোপিয়ানরা জঙ্গলের মানুষের সাথে কোন সম্পর্ক করতে চাইত না। যারা উলংগ ও কালো ছিল তাদের ওরা মনে করত আলাদা জাতের কোন জীব যারা পরিত্রাণ পাওয়ার অযোগ্য। এখনো অনেক ক্রিস্টিয়ানরা নগ্নতার সাথে জড়িত কোন জীবনযাত্রাকে অগ্রহণযোগ্য মনে করে। কাপড় এবং গায়ের রঙই হলো কোনো মানুষকে বিচারের মানদন্ড। মানুষের শরীর হলো ঈশ্বরের অপূর্ব সৃষ্টি, তাই কাপড় পড়া হলো তার সাথে বিরোধিতা করা। অনেক মানুষ মনে করে কাপড় পরা তাকে বাঁচাবে পাপ থেকে, আসলে তার উল্টোটাই সত্যি। নগ্নতা ও যৌনতা পাশাপাশি যায় না এবং অবৈধ কোন যৌন সংসর্গ ঈশ্বরের বিরোধিতা করা। কাপড় পড়া আমাকে অন্য মানুষের লোভ থেকে বাচাবে - এমন ধারণার ভিত্তি আছে ইসলাম ধর্মে , ক্রিস্টান ধর্মে না। বাচ্চাদের নিস্পাপতা বিলুপ্ত হয়ে যায় যখন তাদের অপ্রকৃতিবাদী বাবা-মা তাদের বলে,তুমি মানুষের মাঝে উলংগ দেখানোর মতো বড় হয়েছ। পরবর্তী প্রজন্মেও একই মিথ্যা প্রবাহিত হয় যা শয়তান আদম ও ঈভকে বলেছিল। ক্রিস্টিয়ান প্রকৃতিবাদীরা আদম ও ঈভের ইডেনের বাগানের গল্পটাকে তাদের বিশ্বাসের কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করে। কিছু ক্রিস্টিয়ান প্রকৃতিবাদীরা সহিংসতা, ধর্ষণ এমনকি গণহত্যায় বিশ্বাস করে সামাজিক ও যৌনতাবিহীন নগ্নতার অভাবের কারণে। নাৎসী জার্মানি সব ধরনের প্রকৃতিবাদ ১৯৩৩ সালে নিষিদ্ধ করে। কিছু সর্বাধিনায়কও প্রকৃতিবাদের বিরোধিতা করে ও হত্যার বিধান রাখে যেমন- জোসেফ স্ট্যালিন (সোভিয়েত ইউনিয়ন), মাওযেদং (গণপ্রজাতন্ত্রী চীন, পলপট (কম্বোডিয়া), ইদি আমিন (উগান্ডা) ও ওমর-আল-বশির (সুদান)। কিছু কিছু স্থানে নগ্নতা নিষিদ্ধ। ইচ্ছার বিরুদ্ধে কাউকে তাকে নগ্ন করা যেমন- বন্দীকে।
যা সরাসরি পাপের সাথে জড়িত যেমন-গুপ্ত উপাসনা, পাগানিজম, প্রদর্শনকামনাবাদ, ধর্মীয় পতিতাবৃত্তি। এমন স্থানে যেখানে মানুষ পুরোপুরি নগ্নতা আশা করে না ও চমকে যাওয়ার কারণ হতে পারে। যেসব মানুষ খাদ্য, বস্ত্র ও বাসস্থানের অভাবে ভুগছে। তাদের কাপড় দরকার হতে পারে ঠান্ডা আবহাওয়ায় , প্রতিকূল পরিবেশে অথবা সামাজিক প্রয়োজনে। ক্যাথলিক প্রধান দেশে প্রকৃতিবাদ বেশি জনপ্রিয়, যেমন-ক্রোয়েশিয়া, স্লোভাকিয়া, ইতালি,স্পেন, ফ্রান্স, পর্তুগাল, অস্ট্রিয়া, হাঙ্গেরী, পোল্যান্ড ও ব্রাজি্লে। তবে রক্ষণশীল ক্যাথলিক প্রধান দেশে যেমন-আয়ারল্যান্ড-এ প্রকৃতিবাদ জনপ্রিয় না ও তাদের কোন বেসরকারী সমুদ্র সৈকতও নেই। ক্রিস্টিয়ান প্রকৃতিবাদীরা আরো মনে করে লালসা মানুষের জাগতে পারে যখন সে পোশাক পরা। যেমন-বিকিনি পড়া মানুষ পুরোপুরি নগ্ন মানুষের চেয়ে বেশি লালসা জাগাতে পারে । হল্যান্ডের ক্রিস্টিয়ান প্রকৃতিবাদী চার্চে পুরোহিত ছাড়া বাকি সবাই নগ্ন থাকে। ২০০২ সালে দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার চার্চে একজন পুরোহিতকে বাদ দেয়া হয় তার ক্রিস্টিয়ান প্রকৃতিবাদী বিশ্বাসের জন্য। অনেক ক্রিস্টিয়ানরা মনে করে টিমোথী ১নং বইয়ে পল বলেন মহিলাদের চার্চে শালীন পোশাক পরার জন্য ও শিষ্টাচার বজায় রাখার জন্য, যা ক্রিস্টিয়ান প্রকৃতিবাদীদের বিশ্বাসের বিপরীত। কিছু পুনরুত্থানের পরের বিশ্বাসী মানুষ মনে করে শরীর নগ্ন হলে পাপে পূর্ণ হয়ে যায় ও শয়তান হয়ে যায় এ ধারণা প্লেটোর তপসা থেকে এসেছে ক্রিস্টিয়ান প্লেটোনিস্টদের কাছে অনুবাদের মাধ্যমে। গ্রীক দার্শনিক প্লেটো বিশ্বাস করতেন দ্বৈত এক ধরনের মতবাদে যেখানে একদিকে শুধু ভাল, আরেকদিকে শুধু খারাপ। এটা মানুষের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করলে করলে মন প্রয়োজনীয়ভাবেই ভাল, অন্যদিকে শরীর পাপে পূর্ণ। বাইবেল বহির্ভূত ধারণা বলে একে মনে করে প্রত্যাখান করেন ক্রিস্টিয়ান প্রকৃতিবাদীরা। ১৯২০-এর দশকে সর্বপ্রথম আমেরিকায় প্রকৃতিবাদী আন্দোলন শুরু হয়। জিমেনিশিয়াম শব্দটি মানে নগ্ন অবস্থায় শিক্ষা দেয়া। এ্যাথলেটিক খেলার আদর্শ চর্চাতে এমন করা যায়। ১৯৯০-এর দশকে মাঝামাঝিতে ইন্টারনেট চালু হলে ক্রিস্টিয়ান প্রকৃতিবাদী্রা আরো সংগঠিত হয়ে ওঠে আমেরিকায়। বার্ষিক ক্রিস্টিয়ান নগ্নতাবাদী সমাবর্তন শুরু হয় ২০০০ সহস্রাব্দের প্রথম দিকে।
তথ্যসূত্র
- "Supporting and Gathering Christian Nudists - Christian Nudist Convocation | CNC"। Christiannc.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০৭-২৬।
- "Christian nudists to build village in Florida"। Azcentral.com। ২০০৫-১২-০৬। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০৭-২৬।
আরও দেখুন
- পর্ণগ্রাফী অভিনেত্রীদের তালিকা