খোরশেদ আলম (বীর প্রতীক)
খোরশেদ আলম (জন্ম: অজানা) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করে।[1]
খোরশেদ আলম | |
---|---|
জন্ম | ২ ফেব্রুয়ারি ১৯৩৬ |
জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
নাগরিকত্ব | ব্রিটিশ ভারত (১৯৪৭ সাল পর্যন্ত) পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে) বাংলাদেশ |
পরিচিতির কারণ | বীর প্রতীক |
সন্তান | এম এ মাসুদ |
জন্ম ও শিক্ষাজীবন
খোরশেদ আলমের জন্ম ২ ফেব্রুয়ারি ১৯৩৬ সালে নড়াইল জেলার সদর উপজেলার চান্দেরচর গ্রামে। তার বাবার নাম এয়াকুব শরীফ এবং মায়ের নাম ছটু বেগম। তার স্ত্রীর নাম কোহিনুর বেগম। তাঁদের এক ছেলে, এক মেয়ে। [2]
কর্মজীবন
ইপিআরে চাকরি করতেন খোরশেদ আলম। ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন সিলেট ইপিআর হেডকোয়ার্টারের ১২ নম্বর উইংয়ের অধীনে সীমান্ত এলাকায়। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে প্রতিরোধযুদ্ধে যোগ দেন। এপ্রিলের শেষে সিলেট শহর এলাকার শিবপুরে একটি প্রতিরক্ষা অবস্থানে থাকার সময় পাকিস্তানি সেনাদের বিরাট এক দল তাঁদের আক্রমণ করে। তখন সেখানে ভয়াবহ যুদ্ধ হয়। এ যুদ্ধে খোরশেদ আলমের দলের ১৩ জন ছাড়া সবাই শহীদ হন। চরম এই বিপর্যয়েও তিনি মনোবল হারাননি। যুদ্ধের শেষ দিকে পাকিস্তানি সেনারা তাঁদের উদ্দেশ আত্মসমর্পণ করার কথা বলতে থাকে। এবং পদন্নোতি দেয়ার প্রলোভনও দেয়। কিন্তু সে প্রলোভনে পা দেননি তিনি। হাওরের ভেতর দিয়ে পালিয়ে যান। এরপর ভারতে আশ্রয় নেন। ভারতে পুনর্গঠিত হওয়ার পর ৫ নম্বর সেক্টরের ডাউকি সাবসেক্টর এলাকায় যুদ্ধ করেন। ছাতকে যুদ্ধে অসম সাহস ও বীরত্ব প্রদর্শন করেন। ৭ ডিসেম্বর ছাতক যুদ্ধ হয়।
মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা
সিলেট জেলার অন্তর্গত গোয়াইনঘাট ছিল সীমান্তবর্তী থানা। গোয়াইনঘাটের ওপর দিয়েই সিলেট-তামাবিল-ডাউকি-শিলংয়ের যোগাযোগ। এ জন্য ১৯৭১ সালে গোয়াইনঘাট ছিল গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। সীমান্তবর্তী এলাকায় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নির্বিঘ্ন চলাচল ব্যাহত করার জন্য মুক্তিবাহিনী এই সেতু ধ্বংস করে। ওই সেতু ধ্বংসের কয়েক দিন আগে ভারতের একজন ঊর্ধ্বতন সেনাকর্মকর্তা মুক্তিবাহিনীর ডাউকি ক্যাম্পে এসে বলেন, ‘এ অপারেশনে আপনারা কে যাবেন।’ তিনি এ কথা বলার পর কেটে গেল কয়েক মিনিট। মুক্তিযোদ্ধাদের দলনেতারা সব চুপ। শেষে হাত তোলেন সাহসী খোরশেদ আলম। এরপর তাকেই এ অপারেশন পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়। অন্ধকার রাতে ভারতের ডাউকি থেকে রওনা হলেন একদল মুক্তিযোদ্ধা। তাঁদের নেতৃত্বে খোরশেদ আলম। সীমান্ত অতিক্রম করে এগিয়ে যেতে থাকলেন। তাঁদের লক্ষ্য গোয়াইনঘাটের একটি সেতু। সেখানে পাহারায় আছে পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকাররা। তাদের আক্রমণ করে তাড়িয়ে দিতে হবে।
তারপর সেতু ধ্বংস করতে হবে। বিপজ্জনক ও চরম ঝুঁকিপূর্ণ এক অপারেশন। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধারা বিশেষত খোরশেদ আলম পিছপা হননি। মধ্যরাতের আগেই তারা নিঃশব্দে পৌঁছে গেলেন লক্ষ্যস্থলে। একযোগে শুরু করলেন আক্রমণ। পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকাররা আক্রমণ প্রতিরোধের চেষ্টা করল। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রচণ্ড ও সাঁড়াশি আক্রমণে ভীতসন্ত্রস্ত রাজাকাররা আগেই পালিয়ে যায়। কিছুক্ষণের মধ্যে পাকিস্তানিরাও পালিয়ে গেল। মুক্তিযোদ্ধারা দ্রুত সেতুতে মাইন লাগানোর কাজ শুরু করলেন। মাইন লাগিয়ে অবস্থান নিলেন নিরাপদ দূরত্বে। কিছুক্ষণের মধ্যেই চারদিক প্রকম্পিত করে বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হলো মাইন। ধ্বংস হয়ে গেল সেতু। সফল অপারেশন। এরপর তারা ফিরে চললেন সীমান্তের ওপারে, নিজেদের ঘাঁটির দিকে। [3]
পুরস্কার ও সম্মাননা
পাদটীকা
- এই নিবন্ধে দৈনিক প্রথম আলোতে ০৪-১০-২০১১ তারিখে প্রকাশিত তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না প্রতিবেদন থেকে লেখা অনুলিপি করা হয়েছে। যা দৈনিক প্রথম আলো ক্রিয়েটিভ কমন্স অ্যাট্রিবিউশন-শেয়ার-এলাইক ৩.০ আন্তর্জাতিক লাইসেন্সে উইকিপিডিয়ায় অবমুক্ত করেছে (অনুমতিপত্র)। প্রতিবেদনগুলি দৈনিক প্রথম আলোর মুক্তিযুদ্ধ ট্রাস্টের পক্ষে গ্রন্থনা করেছেন রাশেদুর রহমান (যিনি তারা রহমান নামেও পরিচিত)।
তথ্যসূত্র
- দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না" | তারিখ: ০৪-১০-২০১১
- একাত্তরের বীরযোদ্ধাদের অবিস্মরণীয় জীবনগাঁথা, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা স্মারকগ্রহন্থ। জনতা ব্যাংক লিমিটেড। জুন ২০১২। পৃষ্ঠা ১৪০। আইএসবিএন 9789843351449।
- একাত্তরের বীরযোদ্ধা, খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা (প্রথম খন্ড)। প্রথমা প্রকাশন। এপ্রিল ২০১২। পৃষ্ঠা ১৭১। আইএসবিএন 9789843338884।