খুলনা জিলা স্কুল

খুলনা জিলা স্কুল খুলনা জেলার অন্যতম পুরাতন বিদ্যালয় এবং বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় বিদ্যালয়গুলির একটি।১৮৮৩ সালের হান্টার কমিশনের রিপোর্ট অনুযায়ী ১৮৮৫ সালের এপ্রিল মাসে ইংরেজ সরকার এ বিদ্যাপীঠের নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনার ভার গ্রহণ করেন । এবং বিদ্যালয়টি ১৮৮৫ সালে ব্রিটিশ আমলে স্থাপিত হয়। এই বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণী থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষাদান করা হয়। "খুলনা জিলা স্কুল" এর মাঠটি খুলনা শহরের মধ্যে অন্যতম বড় মাঠ এবং বিদ্যালয়ের সকল সাংস্কৃতিক ও বিভিন্ন ক্রীড়া প্রতিযোগিতা নিজ বিদ্যায়তনের মাঠেই অনুষ্ঠিত হয়। ২০১০ সালের জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষায় মেধা তালিকার ১ম দশ জনের মধ্যে ১ম, ২য় ও ৩য় স্থান অধিকারী ৯ জনই এই বিদ্যালয়ের ছাত্র। [1]

খুলনা জিলা স্কুল
অবস্থান
মানচিত্র
খুলনা শহরের কেন্দ্রস্থলে, খুলনা

তথ্য
ধরনসরকারি
প্রতিষ্ঠাকাল১৮৮৫ সালে
বিদ্যালয় বোর্ডযশোর শিক্ষা বোর্ড
ইআইআইএন১১৭১৩৫
অধ্যক্ষমেজর জেনারেল ফারহানা নাজ, পিএসসি, এনডিসি, বিপিএম, পিপিএম।
শ্রেণী৩য়-১০ম
শিক্ষার্থী সংখ্যা৩০০০০
ওয়েবসাইটবিদ্যালয়ের ওয়েব সাইট

ইতিহাস

এ বিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠার ইতিহাস অস্পষ্ট। কারও মতে ১৮৫৬ সালে এ বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়, সেই হিসেবে এটি খুলনা শহরে প্রতিষ্ঠিত প্রথম স্কুল। আবার কারও মতে- এটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৭৩ সালে। এ হিসেবে খুলনা জিলা স্কুল শহরের প্রতিষ্ঠিত দ্বিতীয় স্কুল এবং প্রথমটি হলো খুলনার দৌলতপুরস্থ মুহসিন হাই স্কুল (১৮৬৭ ইং)। প্রতিষ্ঠাকালে "খুলনা জিলা স্কুল" এর নাম ছিল খুলনা হাইস্কুল। বাবু সাতুরাম মজুমদার তার নিজ অর্থ দিয়ে স্কুলের প্রথম পাকা ভবন তৈরি করেন। সেই সময় খ্যাতিমান শিক্ষক সারদা চরণ মিত্র ছিলেন প্রধান শিক্ষক।

খুলনা জিলা স্কুল

১৮৮৩ সালের হান্টার কমিশনের রিপোর্ট অনুযায়ী ১৮৮৫ সালের এপ্রিল মাসে ইংরেজ সরকার এ বিদ্যাপীঠের নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনার ভার গ্রহণ করেন। তখন প্রতিষ্ঠিত একটি লাল ভবনে ‘খুলনা জিলা স্কুল’ নামে এর নতুন পরিচয় হয়। মূল কাঠামোকে অক্ষুণ্ণ রেখে ভবনটিকে ১৯৯৫ সালে সংস্কার করা হয়। ১৯৬৩ সালে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান সরকার টেকনিক্যাল শিক্ষা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বিদ্যালয়ের মাঠের উত্তর পার্শ্বে তিনতলাবিশিষ্ট একটি ভবন নির্মাণ করেন। এটি বর্তমানে প্রশাসনিক ভবন।

অবস্থান

খুলনা জিলা স্কুল খুলনা শহরের কেন্দ্রস্থলে এক নিদারুণ প্রাকৃতিক পরিবেশে অবস্থিত। এর পাশ দিয়ে ভৈরব নদ বহমান। এই বিদ্যালয়ের পশ্চিম পাশে খুলনা সার্কিট হাউজ অবস্থিত।

বিদ্যালয় কায্যক্রম ও পরিবেশ

বিদ্যালয়ে বর্তমানে ৫০ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা। বর্তমানে এ বিদ্যালয়ে দুই শিফটে ছাত্রদের শিক্ষা দেওয়া হয় এবং ২ শিফটে পাঠরত ছাত্রসংখ্যা ৩ হাজারঃ

  • প্রভাতী শাখা : চলে সকাল ৭:১৫টা থেকে দুপুর ১২টা(৩য়-৫ম শ্রেণী সকাল ১১:২০) পর্যন্ত এবং
  • দিবা শাখা : চলে দুপুর ১২.১৫টা থেকে বিকাল ৫.১৫টা (৩য়-৫ম শ্রেণী বিকাল ৪:৪৫) পর্যন্ত।

ম্যানেজিং কমিটি দ্বারা স্কুলটি পরিচালিত হয়। পরিচালনা পরিষদের সভাপতি হন জেলা প্রশাসক এবং সম্পাদক হন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। সদস্যের মধ্যে রয়েছেন নির্বাহী প্রকৌশলী ও সিভিল সার্জন। এই বিদ্যালয়ের লাইব্রেরি বেশ পুরানো, গ্রন্থ সংখ্যা ৬ হাজার। এখানে অনেক দুষ্প্রাপ্য গ্রন্থও আছে। পড়াশুনার সাথে সাথে খেলাধুলা এবং স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে অনুষ্ঠিত বিতর্ক প্রতিযোগিতা,কুইজ প্রতিযোগিতা, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ও সঙ্গীতে পারদর্শিতার ছাপ রেখে চলেছে এ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এই বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে কৃষি বিভাগ, বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কার্যক্রম, প্রযুক্তি ও বিজ্ঞান চর্চা, বিএনসিসি কার্যক্রম, স্কাউটস ও রেডক্রিসেন্ট কার্যক্রম।

বিদ্যালয়ের ৯ টি ভবন শ্রেণি কক্ষের জন্য, ২টি একতলা ছাত্র হোস্টেল, একটি প্রশাসনিক ভবন, একটি শিক্ষকদের কমনরুম, ৬টি ল্যাবরেটরি, একটি খেলার মাঠ, একটি মসজিদ, একটি অডিটোরিয়াম ও একটি শহীদ মিনার রয়েছে।[1]

কৃতিত্বের স্বাক্ষর

এই বিদ্যালয়ের এস.এস.সি পরীক্ষায় যশোর বোর্ডে পর পর ছয় বার প্রথম স্থান অধিকার করে। ৫ম শ্রেণির বৃত্তি ও সমাপনী পরীক্ষা এবং জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষায় জাতীয় ও স্থানীয়ভাবে মেধাতালিকার শীর্ষে অবস্থান করেছে। ২০১০ সালের জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষায় মেধা তালিকার ১ম দশ জনের মধ্যে ১ম, ২য় ও ৩য় স্থান অধিকারী ৩জনই এই বিদ্যালয়ের ছাত্র। [1]

কৃতি ছাত্র

  • কাজী ইমদাদুল হক
  • আনিসুজ্জামান - সাহিত্যিক, গবেষক, জাতীয় অধ্যপক
  • শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়- সাহিত্যিক, ঔপন্যাসিক
  • কবি ফররুখ আহমদ
  • খান এ সবুর - পাকিস্তান সরকারের মন্ত্রী
  • কাজী জাফর আহমেদ - বাংলাদেশ সরকারের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী
  • জনাব এস. এ করিম - তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা
  • মকসুমুল হাকিম - বিচারপতি
  • আনিস সিদ্দিকী - কথাশিল্পী
  • নাদিম - অভিনেতা
  • মাঞ্জারুল ইসলাম রানা-ক্রিকেটার
  • নুরুল হাসান সোহান- ক্রিকেটার
  • গোলাম মোস্তফা
  • মোহাম্মদ সিরাজুল আলম খান

- ছাত্রনেতা ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক নিজাম

  • ফারসীম মান্নান মোহাম্মদী- জ্যোতির্বিজ্ঞানী, বিজ্ঞান লেখক, গবেষক, শিক্ষক।
  • আসলাম বেগ- পাকিস্থান বিমান বাহিনীর সাবেক প্রধান।
  • সালমান শাহ- প্রখ্যাত অভিনেতা।
  • আশরাফুল মকবুল- বাংলাদেশ সরকারের সচিব।
  • মেজর গণি- পূর্ব পাকিস্থানের প্রথম মেজর।
  • উজ্জ্বল- চলচ্চিত্র অভিনেতা
  • ওয়াহিদুজ্জামান-বাংলাদেশ সরকারের সচিব।
  1. কৃতি শিক্ষক

আবুল ফজল- প্রখ্যাত সাহিত্যিক, চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য।

তথ্যসূত্র

  1. "খুলনা জিলা স্কুল"বাংলা পিডিয়া। সংগ্রহের তারিখ ১৮ জানুয়ারি ২০১৭

২. হান্টার কমিশন [১]

বহিঃসংযোগ

বিদ্যালয়ের ওয়েব সাইট

    This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.