খিজির আলী

খিজির আলী (জন্ম: ১৯৩৪) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর বিক্রম খেতাব প্রদান করে।[1]

খিজির আলী
জন্ম১৯৩৪
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ব ব্রিটিশ ভারত (১৯৪৭ সাল পর্যন্ত)
 পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
 বাংলাদেশ
পরিচিতির কারণবীর বিক্রম

জন্ম ও শিক্ষাজীবন

খিজির আলীর জন্ম বাগেরহাট জেলার সদর উপজেলার কার্তিকদিয়া গ্রামে। তার এক ছেলে এবং দুই মেয়ে। [2]

কর্মজীবন

খিজির আলী ৯ নম্বর সেক্টরের হিঙ্গলগঞ্জ সাব-সেক্টর এলাকায় যুদ্ধ করেন। ১৯৭১ সালে তিনি ছিলেন মেকানিক। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে যুদ্ধে যোগ দেন। ২৬ মার্চ খুলনা মহানগরের বৈকালি এলাকায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ যুদ্ধে খিজির আলী অসম সাহস প্রদর্শন করেন। তার অস্ত্র চালানোর প্রশিক্ষণ ছিল না। সামান্য বন্দুক দিয়ে তিনি অনেকক্ষণ পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে বৈকালিতে প্রতিরোধ করেন। খুলনার পতন হলে ভারতের টাকিতে যান। সেখানে কয়েক দিন প্রাথমিক প্রশিক্ষণ নিয়ে সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার টাউন শ্রীপুরে পাকিস্তানি সেনাদের ক্যাম্পে সফল অপারেশন করেন। তারা ৩১ জন মুক্তিযোদ্ধা একযোগে গ্রেনেড নিক্ষেপ করলে পাকিস্তানি সেনাদের ক্যাম্পের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। পূর্ণাঙ্গ প্রশিক্ষণ শেষে প্রথম অংশ নেন অপারেশন জ্যাকপটে। ১৫ আগস্ট মধ্যরাতে একদল নৌ-কমান্ডো মোংলা বন্দরে লিমপেট মাইনের সাহায্যে কয়েকটি জাহাজ ডুবিয়ে দেন। খিজির আলীর দলের ওপর দায়িত্ব ছিল নৌ-কমান্ডোদের স্থলে নিরাপত্তা প্রদান ও গাইড করা। তাদের রেকি করা তথ্যের ভিত্তিতেই নৌ-কমান্ডোরা সফলতার সঙ্গে অপারেশন করেন। পরে আরও কয়েকটি অপারেশনে তিনি নৌ-কমান্ডোদের সঙ্গে অংশ নেন। এর মধ্যে আশাশুনি থানা দখল উল্লেখযোগ্য।

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা

সাতক্ষীরা জেলার অন্তর্গত আশাশুনি। জেলা সদর থেকে ৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণে এর অবস্থান। আশাশুনিতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একটি ঘাঁটি ছিল। তাদের সঙ্গে ছিল বিপুলসংখ্যক রাজাকার। অক্টোবরের মাঝামাঝি মুক্তিযোদ্ধা ও নৌ-কমান্ডোরা যৌথভাবে সেখানে আক্রমণ করেন। মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দলের নেতৃত্ব দেন খিজির আলী। দুদিন ধরে সেখানে যুদ্ধ হয়। প্রথম দিন সারা রাত যুদ্ধ চলে। পরদিন মুক্তিযোদ্ধারা পুনর্গঠিত হয়ে আবার পরিকল্পিতভাবে আক্রমণ করেন। এ দিন তারা পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকারদের ফাঁকি দিয়ে থানার ঘাটে ভাসমান ফেরি পন্টুনে কয়েকটি মাইন লাগান। মাইন বিস্ফোরণে গোটা ফেরিঘাট তছনছ হয়ে যায়। মুক্তিযোদ্ধাদের তীব্র আক্রমণে পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকারদের মধ্যে তীব্র ভীতি সৃষ্টি হয়। এ সময় দুঃসাহসী খিজির আলী দুই হাতে দুটি এলএমজি নিয়ে ঝড়ের বেগে গুলি করতে করতে থানার ভেতরে ঢুকে পড়েন। এ দৃশ্য দেখে পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকাররা বিস্মিত ও হতভম্ব হয়ে পড়ে। তার ভয়াল রণমূর্তি দেখে পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকাররা এতই ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে যে তারা নিজ অস্ত্রশস্ত্র ফেলেই পালাতে থাকে। এরপর মুক্তিযোদ্ধারা সহজেই আশাশুনি থানা দখল করেন। ১১ জন পাকিস্তানি সেনা ও ৪০ জন রাজাকার তাদের হাতে নিহত হয়। মুক্তিযোদ্ধারা অবশ্য বেশিক্ষণ আশাশুনি থানার দখল ধরে রাখতে পারেননি। পরদিন পাকিস্তানি হেলিকপ্টার বৃষ্টির মতো গুলি ও বোমা ফেলতে থাকে। তখন মুক্তিযোদ্ধারা পিছু হটে যান। [3]

পুরস্কার ও সম্মাননা

তথ্যসূত্র

  1. দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না" | তারিখ: ২৯-০৯-২০১১
  2. একাত্তরের বীরযোদ্ধাদের অবিস্মরণীয় জীবনগাঁথা, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা স্মারকগ্রহন্থ। জনতা ব্যাংক লিমিটেড। জুন ২০১২। পৃষ্ঠা ১৪০। আইএসবিএন 9789843351449।
  3. একাত্তরের বীরযোদ্ধা, খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা (প্রথম খন্ড)। প্রথমা প্রকাশন। এপ্রিল ২০১২। পৃষ্ঠা ১৭১। আইএসবিএন 9789843338884।

বহি:সংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.