খাদ্য

আমরা যে সব বস্তু আহার করি তাকে আহার্য সামগ্রী বলে। কিন্তু সকল আহার্য সামগ্রীই খাদ্য নয়। যেমন, থোড় সেলুলোজ দিয়ে গঠিত হওয়ায় আমাদের পরিপাক নালীতে পাচিত হয় না। ফলে এটি পুষ্টি সহায়ক নয়। সুতরাং সেই সব আহার্য সামগ্রীকেই[1] খাদ্য বলা যাবে, যা দেহের পুষ্টি ও বৃদ্ধি সহায়ক এবং তাপশক্তি উৎপাদনে সহায়তা করে।

বিভিন্ন ধরনের খাবার

জীবদেহে শক্তির প্রধান উৎস হল খাদ্য। সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়াকালে সৌরশক্তি উদ্ভিজ খাদ্যের মধ্যে স্থৈতিক শক্তিরূপে আবদ্ধ হয়। জীবকোষে শ্বসনের সময় স্থৈতিক শক্তি তাপ শক্তি বা গতিশক্তি রুপে মুক্ত হয়, জীবদেহের যাবতীয় বিপাক ক্রিয়া, যেমন : শ্বসন, রেচন,পুষ্টি গ্রহণ ইত্যাদি এবং শারীরবৃত্তীয় ক্রিয়াকলাপ, যেমন-বৃদ্ধি, চলন-গমন, জনন ইত্যাদি নিয়ন্ত্রিত হয়। সুতরাং প্রাণ ধারণের জন্য প্রত্যেক জীবকেই খাদ্য গ্রহণ করতে হয়। তাই, যে সব আহার্য সামগ্রী গ্রহণ করলে জীবদেহের বৃদ্ধি, পুষ্টি, শক্তি উৎপাদন,ক্ষয়পূরন হয় ও রোগ প্রতিরোধ করে তাকেই খাদ্য বলে।

দৈনিক গড় ক্যালরি গ্রহণ

প্রকারভেদ

জীবদেহে খাদ্যের কার্যকারিতা অনুযায়ী খাদ্য কে দু'ভাগে ভাগ করা হয়, যেমন-

  1. দেহ-পরিপোষক খাদ্য: যে সব খাদ্য দেহের গঠন, বৃদ্ধি ও শক্তি উৎপাদনে সহায়কারী, তাদের দেহ-পরিপোষক খাদ্য বলে। যেমন : শর্করা বা কার্বোহাইড্রেট, আমিষ বা প্রোটিন এবং স্নেহপদার্থ বা ফ্যাট বা লিপিড।
  2. দেহ-সংরক্ষক খাদ্য: যে সব খাদ্য দেহকে রোগ সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করে, শক্তি উৎপাদনে সহায়ক নয়, তাদের দেহ-সংরক্ষক খাদ্য বলে। যেমন : খাদ্যপ্রাণ বা ভিটামিন, খনিজ পদার্থ বা মিনারালস।

খাদ্যের উপাদান

খাদ্যে ছ'টি উপাদান থাকে, যথা- শর্করা, আমিষ বা প্রোটিন, স্নেহপদার্থ, ভিটামিন বা খাদ্যপ্রাণ, খনিজ লবণ এবং জল

শর্করা বা কার্বোহাইড্রেট

কার্বোহাইড্রেট যে সকল উপাদান দ্বারা গঠিত তা হল কার্বন, হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেন। শর্করায় হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন ২:১ অনুপাতে থাকে। শর্করার আণবিক সংকেত C
n
(H
2
O)
n
; যেমন গ্লুকোজ C
6
H
12
O
6
, সুক্রোজ C
12
H
22
O
11
ইত্যাদি। বেশিরভাগ খাদ্যে কম বেশি খাদ্য উপাদান থাকে। শর্করা বিভিন্ন রূপে বিভিন্ন খাদ্যে থাকে যেমন শ্বেতসার হিসেবে শর্করা যে সকল খাদ্যে পাওয়া যায় তা হল ধান বা চাল, গম, ভূট্টা, বাজরা, আলু, ওলকপি, কচু, বীট, গাজর ইত্যাদি। খেজুর, আঙ্গুর, আপেল ইত্যাদিতে শর্করা দ্রাক্ষাশর্করা বা গ্লুকোজ হিসেবে পাওয়া যায়। শাক-সবজি, বেল, তরমুজ, থোড় ইত্যাদিতে সেলুলোজ হিসেবে। আম, কলা, কমলালেবু প্রর্ভতি পাকা ফলে ফল শর্করা বা ফুক্টোজ হিসেবে। চিনি, গুড়, মিছরী ইত্যাদিতে ইক্ষু শর্করা বা সুক্রোজ হিসেবে শর্করা উপস্থিত থাকে। দুধে দুগ্ধ শর্করা বা ল্যাক্টোজ হিসেবে এবং পাঁঠার যকৃৎ ও পেশীতে গ্লাইকোজেন বা প্রাণীজ শ্বেতসার হিসেবে শর্করা পাওয়া যায়।

প্রত্যেক অণুতে সরল শর্করার এক বা একাধিক এককের উপস্থিতি অনুসারে কার্বোহাইড্রেটকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়ছে। এগুলো হল যথা:

  • মনোস্যাকারাইড:যেসব শর্করা একটি মাত্র অণু দ্বারা গঠিত, তাকে মনোস্যাকারাইড বলে। যথা: গ্লুকোজ, ফ্রুক্টোজগ্যালাকটোজ
  • ডাইস্যাকারাইড:যেসব শর্করা দুটি অণু দ্বারা গঠিত, তাকে ডাইস্যাকারাইড বলে। যেমন: সুক্রোজ, ল্যাকটোজমলটোজ
  • পলিস্যাকারাইড:যেসব শর্করা অনেক অণু দ্বারা গঠিত, তাকে পলিস্যাকারাইড বলে। যেমন: স্টার্চ, গ্লাইকোজেন ও সেলুলোজ।

শর্করা দেহে পুষ্টি জুগিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে। দেহের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি এবং তাপ শক্তি উৎপাদন করে সেইসাথে খাদ্য হজমে সহায়তা করে কোষ্ঠ দূর করতে (সেলুলোজ) ভূমিকা রাখে। গ্লাইকোজেন যকৃত ও পেশীতে সঞ্চিত থাকে যা প্রয়োজনের সময় গ্লুকোজে পরিণত হয়ে দেহে অতিরিক্ত তাপ শক্তি উৎপাদন করে এবং রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ স্বাভাবিক রাখে।1 গ্রাম শর্করা ৪ কিলোক্যালরি তাপ উৎপন্ন করে। রক্তে গ্লুকোজের স্বাভাবিক পরিমাণ হল প্রতি ১০০ মিলি. রক্তে ৮০-১২০ গ্রাম। এই প্রসঙ্গে উল্লেখ্য যে, প্রাণিজ প্রোটিন গ্রহণ না করেও শুধুমাত্র প্রচুর পরিমাণে শ্বেতসার জাতীয় খাদ্য খেয়ে মানুষ সুস্থ শরীরে দীর্ঘদিন যাবৎ বেঁচে থাকতে পারে। এই জন্য শ্বেতসার জাতীয় খাদ্যকে প্রোটিন বাঁচোয়া খাদ্য বলে

আমিষ বা প্রোটিন

প্রোটিন-অণু অসংখ্য অ্যামাইনো অ্যাসিডের সমন্বয়ে গঠিত হয়। এই পর্যন্ত প্রায় 22 টি এমাইনো এসিড পাওয়া গেছে। এতে রয়েছে কার্বন, হাইড্রোজেন, অক্সিজেন এবং নাইট্রোজেন। অনেক সময় সালফার এবং ফসফরাসও প্রোটিনে থাকে। মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, ছানা ইত্যাদিতে প্রাণিজ প্রোটিন এবং ডাল, সয়াবিন, বীন, গম ইত্যাদিতে উদ্ভিজ্জ প্রোটিন পাওয়া যায়। প্রানীজ প্রোটিনে অপরিহার্য অ্যামাইনো অ্যাসিডের প্রায় সবগুলিই থাকে বলে প্রাণিজ প্রোটিনকে প্রথম শ্রেণীর প্রোটিন বালা হয়।

প্রোটিনকে প্রধানত তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যে সব প্রোটিন অন্য কোন উপাদানের সঙ্গে সংযুক্ত থাকে না, তাদের সরল প্রোটিন বলে। উদাহরণ হল অ্যালবুমিন, গ্লোবিউলিন, প্রোটমিন, হিস্টোন, গ্লায়াডিন, গ্লুটেলিন ইত্যাদি। অন্যদিকে সরল প্রোটিন যখন অন্য কোন উপাদানের সঙ্গে যুক্ত থাকে, তখন তাদের সংযুক্ত প্রোটিন বলে। যেমন হিমোগ্লোবিন, হিমোসায়ানিন, ফসফোপ্রোটিন, লাইপোপ্রোটিন ইত্যাদি। আরেকটি প্রোটিন রয়েছে যা পরিপাক নালীতে প্রোটিন জাতীয় খাদ্য পরিপাকের সময় উদ্ভূত হয়, তাদের লব্ধ প্রোটিন বলে। যেমন পেপটন, পেপটাইড ইত্যাদি।

প্রোটিন দেহের বৃদ্ধি, কোষ গঠন ও ক্ষয়পূরণ করে। তাপ শক্তি উৎপাদন করে। দেহস্থ উৎসেচক, হরমোন ইত্যাদি সৃষ্টি করতে ভূমিকা রাখে। অপরিহার্য অ্যামাইনো অ্যাসিডের চাহিদা পূরণ করা হল প্রোটিনের অন্যতম কাজ। এই প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যায় যে, ১ গ্রাম প্রোটিন অণু দহন হলে ৪.১ কেসিএল তাপ শক্তি উৎপন্ন হয়। একজন প্রাপ্তবয়স্ক লোকের প্রত্যহ প্রায় ১০০-১৫০ গ্রাম প্রোটিন জাতীয় খাদ্যের প্রয়োজন

স্নেহপদার্থ

কার্বন, হাইড্রোজেন, এবং অক্সিজেন নিয়ে স্নেহপদার্থ বা ফ্যাট গঠিত হয়। স্নেহ পদার্থে অক্সিজেন অনুপাত শর্করার তুলনায় কম এবং শর্করার মত হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন ২:১ অনুপাতে থাকে না। ফ্যাট প্রকৃতপক্ষে অ্যাসিড এবং গ্লিসারলের সমন্বয়ে গঠিত এস্টার বিশেষ। প্রকৃতিতে প্রচুর খাদ্য হতে কম বেশি স্নেহ পদার্থ পাওয়া যায়। যেমন বাদাম, নারিকেল, সরষে, রেড়ী বীজ, তুলা বীজ ইত্যাদিতে উদ্ভিজ্জ ফ্যাট থাকে এবং মাখন, ঘি, চর্বি ইত্যাদিতে প্রানীজ ফ্যাট থাকে। সাধারণ উত্তাপে যে সমস্ত ফ্যাট তরল অবস্থায় থাকে, তাদের তেল হিসেবে জানি আমরা।

যে সব ফ্যাট অন্য কোন উপাদানের সঙ্গে সংযুক্ত থাকে না, তাদের সরল ফ্যাট বলে। যথা: ওয়াক্স বা মোম, ল্যানোলিন ইত্যাদি সরল ফ্যাটের উদাহরণ। সরল ফ্যাট যখন অন্য কোন উপাদানের সঙ্গে যুক্ত থাকে, তখন তাদের যৌগিক ফ্যাট বলে। যথা: ফসফোলিপিড, গ্লাইকোলিপিড, অ্যামাইনো-লিপিড ইত্যাদি।

প্রানিদেহের তাপ নিয়ন্ত্রণ ও তাপ শক্তি উৎপন্ন করা ফ্যাট জাতীয় খাদ্যের প্রধান কাজ। ফ্যাট মেদরুপে ভবিষ্যতের খাদ্যের উৎস হিসাবে সঞ্চিত থাকে। ফ্যাট ভিটামিনকে দ্রবীভূত রাখে এবং এদের শোষণে সাহায্য করে। ফ্যাট যকৃৎ থেকে পিওরস এবং অগ্ন্যাশয় থেকে অগ্ন্যাশয় রস নিঃসরণে সাহায্য করে। স্নেহপদার্থ মলাশয় ও পায়ু পিচ্ছিল করে মল নিঃসরণে সহায়তা করে। কোলেস্টেরল নামক ফ্যাট থেকে ভিটামিন-ডি, ইস্ট্রোজেন, টেস্টোস্টেরণ নামক হরমোন উৎপন্ন হয়। ১ গ্রাম অণু ফ্যাট দহন হলে ৯.৩ কেসিএল তাপ শক্তি উৎপন্ন হয়। একজন প্রাপ্তবয়স্ক লোকের প্রত্যহ প্রায় ৫০ গ্রাম স্নেহপদার্থ প্রয়োজন।

ভিটামিন

যে বিশেষ জৈব পরিপোষক সাধারণ খাদ্যে অতি অল্প পরিমাণে থেকে দেহের স্বাভাবিক পুষ্টি ও বৃদ্ধিতে সহায়তা করে এবং রোগপ্রতিরোধ শক্তি বৃদ্ধি করে, তাকে ভিটামিন বলে। দ্রাব্যতা অনুসারে ভিটামিনগুলিকে দুভাগে ভাগ করা হয়। যে সব ভিটামিন তেল বা স্নেহপদার্থে দ্রবীভূত হয়, তাদের স্নেহপদার্থে দ্রবনীয় ভিটামিন বলে। যেমন: ভিটামিন এ, ভিটামিন ডি, ভিটামিন ই, ভিটামিন কে। অন্যদিকে যে সব ভিটামিন জলে দ্রবীভূত হয়, তাদের জলে দ্রবনীয় ভিটামিন বলে। যেমন ভিটামিন বি, ভিটামিন সি এবং ভিটামিন পি।

ভিটামিন দুধ, ডিম, মাছ, মাংস, প্রানীদের যকৃৎ, মাছের যকৃৎ নিঃসৃত তেল, মাখন, উদ্ভিজ্জ তেল, বাদাম, ঢেঁকিছাটা চাল, লাল আটা, ছোলা, মুগ, বীট, গাজর, মটরশুঁটি, পালংশাক, টমেটো, বাঁধাকপি, ফুলকপি, লেবু, আম, আমলকি, আপেল ইত্যাদিতে পাওয়া যায়। ভিটামিনের এই সব উৎসের মধ্যে দুধ, ডিম, পালংশাক, টমেটো, মটরশুঁটি, কলা, আপেল ইত্যাদিতে বেশীর ভাগ ভিটামিন পাওয়া যায়। ভিটামিন এ এবং ডি এর উৎস মোটামুটি এক, যেমন : কড্, হ্যালিবাট যকৃত নিঃসৃত তেল (লিভার অয়েল), মাখন, দুধ, ডিম,গাজর, বাঁধাকপি, ইত্যাদি।

খনিজ লবণ

খনিজ লবণ হল অজৈব খাদ্য উপাদন। এরা শক্তি সরবরাহ করে না। খনিজ লবণ জীব দেহের স্বাভাবিক পুষ্টির অভাব পূরণ করে। জীব দেহের স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য খনিজ লবণের প্রয়োজন। রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বৃদ্ধি ও তৈরি করতে খনিজ লবণ অত্যন্ত প্রয়োজন।

পানি

পানি খাদ্যের একটি উপাদান। মানবদেহের জন্য পানি অপরিহার্য। দেহের গঠন এবং অভ্যন্তরীণ কাজ জল ছাড়া চলতে পারে না। আমাদের দৈহিক ওজনের ৬০-৭০% পানি। আমাদের রক্ত মাংস, স্নায়ু, দাঁত, হাড় ইত্যাদি প্রতিটি অঙ্গ গঠনের জন্য পানি প্রয়োজন। দেহকোষ গঠন ও কোষের যাবতীয় শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়াগুলো পানি ছাড়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়।

খাদ্য উৎস

বেশিরভাগ খাবারের উদ্ভব হয় উদ্ভিদ থেকে। কিছু খাবার সরাসরি উদ্ভিদ থেকে পাওয়া যায়; এমনকি প্রাণীরা যেগুলি খাদ্য উত্স হিসাবে আমরা ব্যবহার করি তাদেরও গাছপালা থেকে প্রাপ্ত খাবার খাইয়ে বড় করা হয়। সিরিয়াল নামক শস্যটি হ'ল একটি প্রধান খাদ্য যা অন্য যে কোনও ফসলের চেয়ে বিশ্বজুড়ে বেশি খাদ্যশক্তি সরবরাহ করে। [2] বিশ্বব্যাপী সমস্ত শস্য উৎপাদনের ৮৭ ভাগ জুড়ে আছে ভুট্টা, গম এবং চাল (তাদের বিভিন্ন জাত মিলিয়ে)।[3][4][5] বিশ্বব্যাপী উৎপাদিত বেশিরভাগ শস্য প্রাণিসম্পদগুলিকে বৃদ্ধি করতে খাওয়ানো হয়।

প্রাণী বা উদ্ভিদ উত্স নয় এমন উৎস থেকে প্রাপ্ত কিছু খাবারের মধ্যে বিভিন্ন ভোজ্য ছত্রাক, বিশেষত মাশরুম অন্তর্ভুক্তখামিরযুক্ত এবং আচারযুক্ত খাবার যেমন খামিরযুক্ত রুটি, অ্যালকোহলযুক্ত পানীয়, পনির, আচার, কম্বুচা এবং দই তৈরিতে ছত্রাক এবং ব্যাকটেরিয়া ব্যবহার করা হয়। আর একটি উদাহরণ হল নীল-সবুজ শেত্তলা যেমন স্পিরুলিনা[6] অ জৈবজাতীয় পদার্থ যেমন লবণ, বেকিং সোডা এবং টারটার ক্রিম ব্যবহার করে কোনও উপাদান সংরক্ষণ বা রাসায়নিকভাবে পরিবর্তিত করতে ব্যবহৃত হয়।

উদ্ভিদ

উদ্ভিদ উত্স থেকে খাবার

অনেক গাছপালা এবং উদ্ভিদের অংশ খাদ্য হিসাবে খাওয়া হয় এবং প্রায় ২,০০০ উদ্ভিদ প্রজাতি খাদ্যের জন্য চাষ করা হয়। এই উদ্ভিদগুলোর বিভিন্ন প্রজাতির বিভিন্ন স্বতন্ত্র জাত রয়েছে[7]

মানুষ সহ অন্যান্য প্রাণীর জন্য গাছের বীজ হ'ল খাবারের একটি উত্স, কারণ এগুলিতে ওমেগা ফ্যাটগুলির মতো অনেক স্বাস্থ্যকর ফ্যাট সহ উদ্ভিদের প্রাথমিক বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি থাকে। আসলে, মানুষের ভোজ্য বেশিরভাগ খাদ্যই বীজভিত্তিক। ভোজ্য বীজের মধ্যে সিরিয়াল ( ভুট্টা, গম, চাল, ইত্যাদি ), বীচি জাতীয় ( শিম, মটরশুটি, মসুর ডাল, ইত্যাদি) এবং বাদাম রয়েছেতেলবীজগুলিকে প্রায়শই সমৃদ্ধ তেল উৎপাদন করতে পিষে নেওয়া হয় যেমন সূর্যমুখী, ফ্ল্যাকসিড, রেপসিড ( ক্যানোলা তেলসহ), তিল ইত্যাদি। [8]

বীজগুলিতে সাধারণত অসম্পৃক্ত চর্বি বেশি থাকে এবং পরিমিত স্বাস্থ্যকর খাদ্য হিসাবে বিবেচিত হয়। তবে, সমস্ত বীজই ভোজ্য নয়। বড় বীজ, যেমন লেবু থেকে পাওয়া বীজ দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি করে, অন্যদিকে চেরি এবং আপেলের বীজগুলিতে সায়ানাইড থাকে যা কেবলমাত্র বৃহত পরিমাণে খাওয়া হলে তা বিষক্রিয়া তৈরি করতে পারে। [9]

ফল হল গাছের পূর্নাঙ্গ পাকাপোক্ত ডিম্বাশয়, যার মধ্যে বীজ আছে। অনেক উদ্ভিদ ও প্রাণী আছে বিবর্তিত যেমন সাবেক ফলের থেকে পরেরটি আকর্ষণীয় খাদ্য উৎস, কারণ প্রাণী যে ফল খেতে পারে তা বহন করে রেচন বীজ দূরে। ফলস্বরূপ, বেশিরভাগ খাদ্যাভ্যাসের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ হল ফল। টমেটো, কুমড়ো এবং বেগুনের মতো কিছু বোটানিকাল ফল সবজি হিসাবে খাওয়া হয়। [10] (আরও তথ্যের জন্য, ফলের তালিকা দেখুন। )

শাকসবজি দ্বিতীয় ধরনের উদ্ভিদজ খাদ্য উৎস যা সাধারণত খাদ্য হিসাবে খাওয়া হয়। এর মধ্যে আছে শিকড় জাতীয় শাকসবজি ( আলু এবং গাজর ), স্তরজাতীয় ( পেঁয়াজ পরিবার), গাছের পাতা জাতীয় ( শাক এবং লেটুস ), ডাঁটা জাতীয় শাকসবজি ( বাঁশের কাণ্ড এবং শতমূলী), এবং পুষ্পবিন্যাস শাকসবজি ( গ্লোব আর্টিচোক এবং ব্রোকলি এবং অন্যান্য শাকসবজি যেমন বাঁধাকপি বা ফুলকপি)।[11]

প্রাণী

বিভিন্ন কাঁচা মাংস

উৎপাদিত প্রাণীসম্পদ তাদের দিয়ে তৈরি করা পণ্যে প্রত্যক্ষ বা অপ্রত্যক্ষভাবে হিসাবে ব্যবহৃত হয়। প্রাণীর কাছ থেকে নেওয়া মাংস হল প্রত্যক্ষ পণ্যের উদাহরণ, যা পেশী সিস্টেমগুলি বা অঙ্গগুলি ( অফাল ) থেকে আসে।

প্রাণীদের দ্বারা উৎপাদিত খাদ্য পণ্যগুলির মধ্যে স্তন্যপায়ী গ্রন্থিগুলির দ্বারা উৎপাদিত দুধও রয়েছে, যা অনেক সংস্কৃতিতে ডুবিয়ে বা ডেইরি প্রক্রিয়াজাত করতে ব্যবহৃত হয় যেমন পনির, মাখন ইত্যাদি। এছাড়াও, পাখি এবং অন্যান্য প্রাণী যারা ডিম দেয় তা প্রায়শই খাওয়া যায় এবং মৌমাছিরা মধু উৎপাদন করে (ফুল থেকে একটি আহরিত অমৃত) যা অনেক সংস্কৃতিতে একটি জনপ্রিয় মিষ্টি খাদ্য। কিছু সংস্কৃতিতে রক্ত খাদ্য হিসেবে খাওয়া হয়। কখনও কখনও রক্ত সসেজ হিসেবে যা সস ঘন করতে ব্যবহৃত হয় বা খাদ্য ঘাটতির সময়ে একটি নিরাময়কৃত, লবণাক্ত আকারে তা খাওয়া হয় এবং অন্যরা স্টিউতে রক্ত ব্যবহার করে যেমন ভাপে সিদ্ধ খরগোশ রান্নায়। [12]

কিছু রীতি নীতির অনুসারে এবং কোন কোন মানুষ সাংস্কৃতিক কারনে, খাদ্যাভ্যাশের জন্য, স্বাস্থ্য রক্ষায়, নৈতিক কারনে বা আদর্শগত কারণে মাংস বা পশু খাদ্য পণ্য গ্রহণ করেন না। নিরামিষাশীরা প্রাণীজ উত্স থেকে শুরু করে বিভিন্ন মাত্রা পর্যন্ত খাবার ত্যাগ করতে পছন্দ করেন। নিরামিষবাদীরা কোনও প্রাণীর উত্স থেকে উপাদান নিয়ে বা প্রানীজ উৎস থাকে এমন কোনও খাবার গ্রহণ করে না।

আরো দেখুন

  • Bulk foods
  • বেভারেজ
  • Food and Bioprocess Technology
  • খাদ্য প্রকৌশল
  • ফুড ইনকর্পোরেটেড, ২০০৯ সালে একটি ডকুমেন্টারি
  • খাদ্য বিজ্ঞান
  • আগামীর খাদ্য প্রযুক্তি
  • Industrial crop
  • খাদ্যের তালিকা
  • প্রস্তুতকৃত খাবারের তালিকা
  • Optimal foraging theory
  • রান্নার রূপরেখা
  • পুষ্টির রূপরেখা

আরও পড়ুন

  • কলিংহাম, ইএম (২০১১)। যুদ্ধের স্বাদ: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এবং খাবারের যুদ্ধ
  • কাটজ, সলোমন (২০০৩) খাদ্য ও সংস্কৃতি এনসাইক্লোপিডিয়া, স্ক্রিবনার
  • নেসলে, মেরিয়ন (২০০৭)। খাদ্য রাজনীতি: কীভাবে খাদ্য শিল্প পুষ্টি ও স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করে, ক্যালিফোর্নিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসস, সংশোধিত এবং প্রসারিত সংস্করণ,আইএসবিএন ০-৫২০-২৫৪০৩-১
  • মোবস, মাইকেল (২০১২) টেকসই খাবার সিডনি: নিউ সাউথ পাবলিশিং,আইএসবিএন ৯৭৮-১-৯২০৭০৫-৫৪-১
  • ভবিষ্যতের খাদ্য (২০১৫)। 2015 ডিজিটাল লাইফ ডিজাইন (ডিএলডি) বার্ষিক সম্মেলনে একটি প্যানেল আলোচনা "কীভাবে আমরা বাড়ির নিকটে, ভবিষ্যতে আরও খাদ্য বাড়িয়ে উপভোগ করতে পারি? MIT মিডিয়া ল্যাব এর কেভিন স্লেভিন খাদ্য শিল্পী, শিক্ষাবিদ, এবং MIT মিডিয়া ল্যাব এর CityFarm প্রকল্প, অসভ্য গ্রুপের বেঞ্জামিন পামার, এবং Andras Forgacs, আধুনিক তৃণভূমির সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা থেকে উদ্যোক্তা এমিলি Baltz,

তথ্যসূত্র

  1. "food"Encyclopedia Britannica (ইংরেজি ভাষায়)। ২৭ জুলাই ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ মে ২০১৭
  2. Society, National Geographic (১ মার্চ ২০১১)। "food"National Geographic Society (ইংরেজি ভাষায়)। ২২ মার্চ ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ মে ২০১৭
  3. "ProdSTAT"FAOSTAT। ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
  4. Favour, Eboh। "Design and Fabrication of a Mill Pulverizer" (ইংরেজি ভাষায়)। ২৬ ডিসেম্বর ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
  5. Engineers, NIIR Board of Consultants & (২০০৬)। The Complete Book on Spices & Condiments (with Cultivation, Processing & Uses) 2nd Revised Edition: With Cultivation, Processing & Uses (ইংরেজি ভাষায়)। Asia Pacific Business Press Inc.। আইএসবিএন 978-81-7833-038-9। ২৬ ডিসেম্বর ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
  6. McGee, 333–34.
  7. McGee, 253.
  8. McGee, Chapter 9.
  9. "Are apple cores poisonous?"। The Naked Scientists, University of Cambridge। ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১০। ৬ মে ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ মে ২০১৪
  10. McGee, Chapter 7.
  11. McGee, Chapter 6.
  12. Davidson, 81–82.

উৎস

বহিঃ সংযোগ

উইকিঅভিধানে খাদ্য-এর আভিধানিক সংজ্ঞা পড়ুন।

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.