ক্ষমতা (পদার্থবিজ্ঞান)
পদার্থবিজ্ঞানে, ক্ষমতা হলো প্রতি একক সময়ে স্থানান্তরিত বা রূপান্তরিত শক্তির পরিমাণ। আন্তর্জাতিক একক পদ্ধতিতে, ক্ষমতার একক হলো ওয়াট, যা প্রতি সেকেন্ডে এক জুলের সমান। আগেকার দিনের আলোচনায়, ক্ষমতাকে কখনও কখনও কার্যকলাপও বলা হতো।[1][2][3] ক্ষমতা একটি স্কেলার পরিমাপ।
ক্ষমতা | |
---|---|
সাধারণ প্রতীক | P |
এসআই একক | ওয়াট (W) |
এসআই মৌলিক এককে | kg⋅m2⋅s−3 |
অন্যান্য রাশি হতে উৎপত্তি | |
মাত্রা |
ক্ষমতা অন্যান্য পরিমাপের সাথেও সম্পর্কিত; উদাহরণস্বরূপ, একটি স্থল যান চলাচলের জন্য প্রয়োজনীয় ক্ষমতা যানটির চাকার উপর বায়ুগতিগত ড্র্যাগ ও আকর্ষণ বলের যোগফল এবং যানটির বেগের গুনফলের সমান। একটি মোটরের উৎপাদন ক্ষমতা হলো মোটর যে টর্ক তৈরি করে তার এবং এর আউটপুট শ্যাফ্টের কৌণিক বেগের গুনফলের সমান। একইভাবে, একটি বর্তনীর মধ্য দিয়ে একটি বৈদ্যুতিক উপাদানে ব্যবহৃত ক্ষমতা উপাদানটির মধ্য দিয়ে প্রবাহিত বিদ্যুৎ এবং উপাদানের বিভবের গুণফল।[4][5]
চিরায়ত বলবিজ্ঞান |
---|
বিষয়ের উপর একটি ধারাবাহিকের অংশ |
সংজ্ঞা
ক্ষমতা হলো সময়ের সাপেক্ষে যে হারে কাজ করা হয় সেটির পরিমাণ; এটি সময়ের সাপেক্ষে কাজের অন্তরজ:
এখানে, P হচ্ছে ক্ষমতা, W কাজের পরিমাণ এবং t হচ্ছে সময়।
যদি x দূরত্বে ধ্রুব বল F প্রয়োগ করা হয় তবে কাজের পরিমাণ দাঁড়াবে । এক্ষেত্রে, ক্ষমতাকে এভাবে লেখা যায়ঃ
ধ্রুব বলের পরিবর্তে যদি পরিবর্তনশীল বল একটি ত্রিমাত্রিক বক্ররেখা C বরাবর প্রয়োগ করা হয় তবে ব্যবহৃত ক্ষমতাকে লাইন ইন্টিগ্রালের মাধ্যমে প্রকাশ করা যায়ঃ
ক্যালকুলাসের মৌলিক উপপাদ্য থেকে আমরা জানতে পারি
তাই সূত্রটি যে কোনো সাধারণ পরিস্থিতির জন্য বৈধ।
একক সমূহ
ক্ষমতার মাত্রা হলো সময় দ্বারা বিভক্ত শক্তি। আন্তর্জাতিক একক পদ্ধতিতে (এসআই), ক্ষমতার একক হলো ওয়াট (W), যা প্রতি সেকেন্ডে এক জুলের সমান। অন্যান্য সাধারণ এবং ঐতিহ্যগত পরিমাপ হলো ঘোড়ার শক্তির সাথে তুলনা করা অশ্বক্ষমতা (এইচপি); এক যান্ত্রিক অশ্বক্ষমতা প্রায় ৭৪৫.৭ ওয়াটের সমান। ক্ষমতার অন্যান্য এককগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রতি সেকেন্ডে আর্গ (erg/s), প্রতি মিনিটের ফুট-পাউন্ড, ডিবিএম, যা ১ মিলিওয়াটের সাথে সম্পর্কিত একটি লগারিদমিক পরিমাপ, ঘণ্টা প্রতি ব্যবহৃত ক্যালরি, ঘণ্টা প্রতি BTU (BTU/h), এবং টন অব রেফ্রিজারেশন।
গড় ক্ষমতা
উদাহরণস্বরূপ, এক কিলোগ্রাম কয়লা পোড়ালে এক কিলোগ্রাম টিএনটি বিস্ফোরণের চেয়ে অনেক বেশি শক্তি নির্গত হয়,[6] কিন্তু টিএনটি বিক্রিয়াটি অনেক দ্রুত শক্তি নির্গত করার ফলে এটি কয়লার চেয়ে অনেক বেশি ক্ষমতা সরবরাহ করে। যদি ΔW Δt সময়কালের মাঝে সম্পাদিত কাজের পরিমাণ হয়, তবে সেই সময়কালে গড় ক্ষমতা Pavg এর সূত্র হচ্ছে
এটি প্রতি একক সময়ে সম্পাদিত কাজ বা পরিবর্তিত শক্তির গড় পরিমাণ। গড় ক্ষমতাকে প্রায়শই কেবল "ক্ষমতা" বলা হয় যখন প্রাসঙ্গিকভাবে আলোচনা করা হয়।
তাৎক্ষনিক ক্ষমতা গড় ক্ষমতার সীমিতকারী মান হয়ে দাড়ায় যখন সময়ের ব্যবধান Δt শূন্যের কাছাকাছি পৌঁছে।
ধ্রুবক শক্তি P এর ক্ষেত্রে, t সময়কালের মধ্যে সম্পাদিত কাজের পরিমাণকে এভাবে দেখানো যায়
শক্তি রূপান্তরের ক্ষেত্রে, W এর পরিবর্তে E চিহ্নটিই বেশি ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
যান্ত্রিক ক্ষমতা
যান্ত্রিক সিস্টেমে ক্ষমতা হলো শক্তি এবং সরণের সমন্বয়। বিশেষ করে, ক্ষমতা হলো একটি বস্তুর উপর প্রয়োগকৃত বল এবং বস্তুর বেগের গুণফল, অথবা একটি শ্যাফটের উপর প্রয়োগকৃত টর্ক এবং শ্যাফ্টের কৌণিক বেগের গুণফল।
যান্ত্রিক ক্ষমতাকে কাজের সময়ের সাপেক্ষে কাজের অন্তরজ হিসাবেও বর্ণনা করা হয়। বলবিজ্ঞানে, একটি বক্ররেখা C বরাবর ভ্রমণকারী বস্তুর উপর F বল দ্বারা সম্পাদিত কাজকে লাইন ইন্টিগ্রাল দ্বারা প্রকাশ করা হয়ঃ
এখানে x হচ্ছে বক্ররেখা C-এর গতিপথ এবং v হচ্ছে ওই রেখা বরাবর বেগ।
যদি F বল একটি বিভবশক্তি (সংরক্ষণশীল বল) থেকে পাওয়া যায়, তাহলে গ্রেডিয়েন্ট উপপাদ্য প্রয়োগ করলে (এবং মনে রাখতে হবে যে এখানে বল বিভব শক্তির গ্রেডিয়েন্টের ঋণাত্মক) পাওয়া যায়ঃ
এখানে A এবং B দ্বারা যথাক্রমে কাজ সম্পাদনের পথের শুরু এবং শেষ বুঝানো হয়েছে।
C বক্ররেখা বরাবর যে কোনো বিন্দুতে ক্ষমতা হল সময়ের ডেরিভেটিভঃ
একমাত্রিক ক্ষেত্রে, সমীকরণটিকে এভাবে সরলীকরণ করা যেতে পারেঃ
ঘূর্ণায়মান ব্যবস্থায়, ক্ষমতা হলো টর্ক τ এবং কৌণিক বেগের গুণফল ω,
এখানে ω হলো সেকেন্ড প্রতি রেডিয়ান। দ্বারা স্কেলার গুণন বুঝানো হয়।
ফ্লুইড পাওয়ার সিস্টেমে, যেমন উদপ্রবাহ অ্যাকচুয়েটরে, ক্ষমতাকে এভাবে দেখানো হয়ঃ
এখানে p হচ্ছে প্যাস্কেলে প্রকাশিত চাপ অথবা N/m2 , এবং Q হচ্ছে m3/s-এ প্রকাশিত এসআই একক।
যান্ত্রিক সুবিধা
যদি একটি যান্ত্রিক সিস্টেমের কোন লস না থাকে, তাহলে প্রদত্ত ক্ষমতা অবশ্যই প্রাপ্ত ক্ষমতার সমান হবে। এটি সিস্টেমের যান্ত্রিক সুবিধার একটি সহজ সূত্র প্রদান করে।
ধরা যাক, একটি ডিভাইসের প্রদত্ত ক্ষমতা হচ্ছে বল FA যা একটি বিন্দুতে কাজ করে এবং যার বেগ vA এবং প্রাপ্ত ক্ষমতা হচ্ছে বল FB যা একটি বিন্দুতে কাজ করে যার বেগ vB। যদি সিস্টেমে কোন লস না থাকে, তাহলে
এবং সিস্টেমের যান্ত্রিক সুবিধা (প্রতি একক ইনপুট বলের বিপরীতে আউটপুট বল) হচ্ছে
একই ধরণের সম্পর্ক ঘূর্ণায়মান সিস্টেমের জন্যেও পাওয়া যায়, যেখানে TA এবং ωA হলো যথাক্রমে ইনপুটের টর্ক আর কৌণিক বেগ এবং TB এবং ωB হলো যথাক্রমে আউটপুটের টর্ক এবং কৌণিক বেগ। যদি সিস্টেমে কোন ক্ষতি না থাকে, তাহলে
এখান থেকে যান্ত্রিক সুবিধা পাওয়া যায়
এই সম্পর্কগুলো গুরুত্বপূর্ণ কারণ এর মাধ্যমে একটি যন্ত্রের সর্বোচ্চ কর্মক্ষমতা নির্ধারণ করা যায় বেগ অনুপাতের পরিপ্রেক্ষিতে তার শারীরিক মাত্রা দ্বারা। উদাহরণস্বরূপ গিয়ার অনুপাত দেখুন।
বৈদ্যুতিক ক্ষমতা
একটি বৈদ্যুতিক উপাদানে সরবরাহকৃত তাৎক্ষণিক বৈদ্যুতিক ক্ষমতা P এর পরিমাণ
এখানে
- হচ্ছে ওয়াটে (সেকেন্ড প্রতি জুল) পরিমাপকৃত তাৎক্ষনিক বৈদ্যুতিক ক্ষমতা,
- হচ্ছে ভোল্টে পরিমাপকৃত উপাদানের বিভব পার্থক্য (অথবা বিভব পতন),
- হচ্ছে অ্যাম্পিয়ারে পরিমাপকৃত উপাদানের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত তড়িৎ প্রবাহ।
উপাদানটি যদি ভোল্টেজ ও তড়িৎ প্রবাহের অনুপাতের সময়-অপরিবর্তনীয় একটি রোধক হয়, তবেঃ
যেখানে
হচ্ছে ওহমে পরিমাপকৃত তড়িৎ রোধ।
সর্বোচ্চ ক্ষমতা ও কর্ম চক্র
পর্যায়ের পর্যায়ক্রমিক সংকেত -এর ক্ষেত্রে, অনেকটা অভিন্ন স্পন্দনের ট্রেনের মতো, তাৎক্ষনিক ক্ষমতা পর্যায় -এরও একটি ফাংশন। শীর্ষ ক্ষমতাকে এভাবে দেখানো যায়:
শীর্ষ ক্ষমতা সমসময় একবারে পরিমাপ করা যায়না, তবে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কোন যন্ত্রে গড় ক্ষমতা -এর মাপজোখই হয়ে থাকে। যদি প্রতি স্পন্দনে শক্তিকে এভাবে দেখানো হয়
তাহলে গড় ক্ষমতা দাড়ায়
স্পন্দন দৈর্ঘ্য যেখানে তাহলে
অনুপাত দুটি সমান হয়। এই অনুপাতগুলোকে স্পন্দন ট্রেনের কর্ম চক্র বলা হয়।
দীপ্তিমান ক্ষমতা
ক্ষমতা ব্যাসার্ধ -এ তীব্রতার সাথে সম্পর্কিত; একটি উৎস দ্বারা নির্গত ক্ষমতা এভাবে লেখা যেতে পারেঃ
আরও দেখুন
- সরল যন্ত্র
- মাত্রার ক্রম (ক্ষমতা)
- স্পন্দিত ক্ষমতা
- প্রাবল্য (পদার্থবিজ্ঞান) - বিকিরণের ক্ষেত্রে, ক্ষেত্রফল প্রতি ক্ষমতা
- ক্ষমতা লাভ - রৈখিক, দুই পোর্ট সম্বলিত নেটওয়ার্কের ক্ষেত্রে
- ক্ষমতার ঘনত্ব
- সংকেত শক্তি
- শব্দ ক্ষমতা
তথ্যসূত্র
- Fowle, Frederick E., সম্পাদক (১৯২১)। Smithsonian Physical Tables (ইংরেজি ভাষায়) (৭ম সংশোধন সংস্করণ)। Washington, D.C.: Smithsonian Institution। ওসিএলসি 1142734534। ২৩ এপ্রিল ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
কার্যকলাপের ক্ষমতা হচ্ছে সময়ের সাপেক্ষে সম্পাদিত কাজের পরিমাণ, অথবা যদি W কাজের পরিমাণ এবং P ক্ষমতা হয়, P = dw/dt. (p. xxviii) ... কার্যকলাপ. সময়ের সাপেক্ষে সম্পাদিত কাজের পরিমাণ বা হার; একক, ওয়াট. (পৃষ্ঠা ৪৩৫)
- Heron, C. A. (১৯০৬)। "Electrical Calculations for Rallway Motors"। Purdue Eng. Rev. (ইংরেজি ভাষায়) (2): 77–93। ২৩ এপ্রিল ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৩ এপ্রিল ২০২০।
একটি মোটরের কার্যকলাপ হলো প্রতি সেকেন্ডে এর দ্বারা সম্পাদিত কাজের পরিমাণ, ... জুল কাজের একক হলে কার্যকলাপের আন্তর্জাতিক একক হচ্ছে জুল-সেকেন্ড, অথবা, এক কথায় এককটি হলো ওয়াট (পৃষ্ঠা. ৭৮)
- "Societies and Academies"। Nature (ইংরেজি ভাষায়)। 66 (1700): 118–120। ১৯০২। ডিওআই:10.1038/066118b0 । বিবকোড:1902Natur..66R.118.।
ওয়াটকে যদি কার্যকলাপের একক ধরা হয়...
- Halliday and Resnick (১৯৭৪)। "6. Power"। Fundamentals of Physics (ইংরেজি ভাষায়)।
- Chapter 13, § 3, pp 13-2,3 The Feynman Lectures on Physics Volume I, 1963 (ইংরেজি ভাষায়)
- জ্বলন্ত কয়লা প্রতি কিলোগ্রামে প্রায় ১৫-৩০ মেগাজুল উৎপন্ন করে, যেখানে বিস্ফোরিত টিএনটি প্রতি কিলোগ্রামে প্রায় ৪.৭ মেগাজুল উৎপন্ন করে। কয়লার মানের গুলোর জন্য দেখুন Fisher, Juliya (২০০৩)। "Energy Density of Coal"। The Physics Factbook (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ৩০ মে ২০১১। টিএনটির মানের জন্য দেখুন TNT equivalent. কোন মানই দহনের সময় বায়ু থেকে ব্যবহৃত অক্সিজেনের ওজন অন্তর্ভুক্ত করে না।