ক্রিকেটের ইতিহাস
যতদূর জানা যায়, ক্রিকেট খেলা শুরু হয়েছিলো ষোড়শ শতাব্দীর শেষদিকে। মূলতঃ দক্ষিণ-পূর্ব ইংল্যাণ্ডে শুরু হলেও অষ্টাদশ শতাব্দীতে এটি ইংল্যাণ্ডের জাতীয় খেলায় পরিণত হয় এবং ঊনবিংশ ও বিংশ শতাব্দীতে এটি বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। ১৮৪৪ সাল থেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ খেলা হলেও ইতিহাস স্বীকৃত টেস্ট ক্রিকেট ম্যাচ খেলা শুরু হয় ১৮৭৭ সালে। দর্শক সংখ্যার দিক দিয়ে ক্রিকেট, ফুটবলের ঠিক পরেই বিশ্বের দ্বিতীয় জনপ্রিয় খেলা হিসেবে স্বীকৃত। এই খেলার বিশ্বব্যাপী প্রশাসনের দায়িত্বে আছে একশোর বেশি সদস্যযুক্ত সংস্থা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল, যদিও এর মধ্যে শুধু বারোটি সদস্য দেশই টেস্ট ক্রিকেট খেলে।
প্রারম্ভিক ক্রিকেট
প্রধান নিবন্ধ: ক্রিকেটের ইতিহাস ১৭২৫ পর্যন্ত
ক্রিকেট |
---|
বিষয়শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত |
উৎস
সম্ভবত স্যাক্সন অথবা নরম্যানদের সময়ে উইল্ড-এ বসবাসকারী শিশুরা ক্রিকেট খেলা চালু করেছিলো। উইল্ড দক্ষিণ-পূর্ব ইংল্যাণ্ডের কেন্ট এবং সাসেক্স[1]-এর মধ্যবর্তী একটি ঘন অরণ্য। ক্রিকেট খেলার সর্বপ্রথম স্পষ্ট উল্লিখিত তারিখ সোমবার, ১৭ই জানুয়ারি, ১৫৯৭ খ্রীস্টাব্দ ("পুরোনো পদ্ধতির" জুলিয়ান তারিখ; বর্তমান ক্যালেন্ডার অনুসারে ১৫৯৮ খ্রিস্টাব্দ)।
ক্রিকেটের উৎস সম্বন্ধে এছাড়া আরও অনুমান করা হয় যে এই খেলা ফ্রান্স অথবা ফ্লেন্ডার্সে শুরু হয়েছিলো। এই অনুমানের ক্ষেত্রে ক্রিকেট খেলার উল্লিখিত তারিখ বৃহস্পতিবার, ১০ই মার্চ, ১৩০০ খ্রীস্টাব্দ (জুলিয়ান তারিখ) এবং এটা ভাবা হয় যে পরবর্তীকালে রাজা দ্বিতীয় এডয়ার্ড "ক্রিগ এবং অন্যান্য খেলা"-য় খেলেছিলেন ওয়েস্ট্মিনস্টার এবং নিউএন্ডেন নামক দুটি জায়গায়। মনে করা হয় যে, "ক্রিগ" হল ক্রিকেটেরই একটি পুরাতন ইংরাজি ভাষার শব্দ। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে এর আগে এটি ছিল "ক্রেইক (ইংরেজি craic)", যার মানে "সার্বজনীন মজা এবং খেলা"।[2]
এটা বিশ্বাস করা হয় যে, সপ্তদশ শতাব্দীর প্রথমদিকে প্রাপ্তবয়স্কদের খেলা হয়ে ওঠার আগে পর্যন্ত বহু প্রজন্ম ধরে ক্রিকেট খেলা শুধু শিশুদের খেলা ছিল। সম্ভবত ক্রিকেট খেলা উদ্ভূত হয়েছিলো বোলস খেলা থেকে। যেহেতু বোলস একটু পুরানো খেলা, তাই মনে করা হয় বলটিকে তার লক্ষ্যের আগে ব্যাটসম্যান ব্যাট দিয়ে থামিয়ে সেটিকে আঘাত করে দূরে পাঠানো থেকেই ক্রিকেট খেলার উৎপত্তি। খেলা শুরু হয় মেষ-চারিত কোনো মাঠ বা ফাঁকা জায়গায়, মূল সরঞ্জামের মধ্যে বল হিসাবে ব্যবহার করা হয় ভেড়ার দলা পাকানো পশম (বা এমনকি একটি পাথর অথবা একটি ছোটো কাঠের ডেলা); ব্যাট হিসাবে ব্যবহার করা হয় একট লাঠি বা একটি বাঁকা দণ্ড বা খামারবাড়ির কোনও যন্ত্র; উইকেট হিসাবে একটি বসার টুল বা গাছের গোড়ার শিকড় অথবা কোনো দরজা (যেমন একটি উইকেট দরজা)।[3]
প্রথম স্পষ্ট উল্লেখ
১৫৯৭ সালে ইংল্যাণ্ডের সারের গিল্ডফোর্ড অঞ্চলে চলা জমির মালিকানার বিতর্ক সম্বন্ধীয় একটি আইনি মামলায় ক্রেকেট শব্দটির উল্লেখ পাওয়া যায়। ঊনষাট বছর বয়সী জন ডেরিক নামক একজন শব-পরীক্ষক আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন যে, তখন থেকে পঞ্চাশ বছর আগে যখন তিনি ফ্রী স্কুলে পড়তেন, তখন তিনি এবং তাঁর বন্ধুরা ওই জায়াগায় ক্রেকেট খেলেছিলেন। ডেরিকের বর্ণনা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করে যে, ১৫৫০ সাল নাগাদ সারেতে এই খেলা হয়েছিলো এবং এটাই সর্বপ্রথম সর্বজনীনভাবে গৃহীত উল্লেখ।[4][5]
প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে ক্রিকেট খেলার প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় ১৬১১ সালে, যখন সাসেক্সে দুইজন লোকের বিরুদ্ধে আদালতে নালিশ করা হয় রবিবার গীর্জায় না গিয়ে ক্রিকেট খেলার জন্য।[6] ওই একই বছর একটি অভিধান ক্রিকেটকে সংজ্ঞায়িত করে বালকদের খেলা হিসাবে এবং সম্প্রতি খেলাটি যে প্রাপ্তবয়স্করাও খেলছে তা উত্থাপন করে।[4]
"ক্রিকেট" নামের উৎপত্তি
"ক্রিকেট" নামটির সম্ভাব্য উৎস হিসাবে অনেক শব্দের কথাই ধরা হয়। সর্বপ্রথম স্পষ্ট উল্লেখে এটাকে ক্রেকেট বলা হয়। এমনও হতে পারে, নামটি এসেছে মধ্য ওলন্দাজ ভাষা ক্রিক (ইংরেজি krick(-e)) থেকে, যার অর্থ দণ্ড; অথবা পুরাতন ইংরেজি ভাষার শব্দ ক্রিক (ইংরেজি cricc) বা ক্রাইক (ইংরেজি cryce) থেকে, যার অর্থ পঙ্গু লোকের বগলে লাগিয়ে চলবার লাঠি বা ছড়ি, অথবা ফরাসি ভাষা ক্রিকোয়েট (ইংরেজি criquet) থেকে, যার অর্থ কাঠের থাম।[3] ক্রিকস্টোয়েল (ইংরেজি krickstoel) একটি মধ্য ওলন্দাজ ভাষা যার অর্থ একটি দীর্ঘ নিচু বসার টুল যেগুলি গীর্জায় নতজানু হওয়ার কাজে ব্যবহার করা হয়; এটা অনেকটা প্রারম্ভিক ক্রিকেটে ব্যবহৃত দীর্ঘ নিচু উইকেটের মত যাতে দুটি স্টাম্প ব্যবহার করা হত।[7] বন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউরোপীয় ভাষা বিশেষজ্ঞ হেইনার গিলমেইস্টার-এর মতে, "ক্রিকেট" শব্দটির উৎপত্তি হকির মধ্য ওলন্দাজ শব্দ মেট দে (ক্রিক্ কেট্ (ইংরেজি krik ket)) সেন (অর্থাৎ "দণ্ড নিয়ে তাড়া") থেকে।[8]
আরও সম্ভবত, ক্রিকেটের পরিভাষাগুলি গড়ে উঠেছে দক্ষিণ-পূর্ব ইংল্যাণ্ডের সেই সময়কার ভাষা থেকে এবং ফ্লেন্ডার্স দেশটির সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক থেকে, বিশেষত যখন দেশটি পঞ্চদশ শতাব্দীতে ডাচি অব্ বার্গাণ্ডির অন্তর্ভুক্ত ছিল তখন দক্ষিণ ইংল্যাণ্ডের কথ্য ভাষায় অনেক মধ্য ওলন্দাজ[9] শব্দ প্রবেশ করেছে।[10]
সপ্তদশ শতাব্দীর গোড়ার দিক
ইংরেজ গৃহযুদ্ধ পর্যন্ত ক্রিকেট খেলার অনেক উল্লেখ পাওয়া যায় এবং এটা ইঙ্গিত করে যে, ক্রিকেট খেলাটি প্রাপ্তবয়স্কদের খেলারূপে গণ্য হয়েছিল যাতে যাজক দল অংশগ্রহণ করতো, তবে সেই সময়ে প্রাদেশিক পর্যায়ের কোনো দলের প্রামাণিক তথ্য পাওয়া যায়নি। একইভাবে, এই খেলাকে কেন্দ্র করে অনেক প্রসারণশীল জুয়াখেলার কিছু প্রমাণ পাওয়া যায় যা পুরো অষ্টাদশ শতাব্দী ধরে এই খেলাটিকে বৈশিষ্টমন্ডিত করে। তবে, সাধারণত এটা বিশ্বাস করা হয় যে, গ্রামীণ ক্রিকেট শুরু হয়েছিল সপ্তদশ শতাব্দীর মধ্যভাগে, কিন্তু কাউন্টি (প্রাদেশিক) ক্রিকেট বা এই খেলায় লগ্নী তখনও শুরু হয়নি।[11]
কমনওয়েল্থ্
১৬৪৮ সালে গৃহযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর নতুন পিউরিটান সরকার "বেআইনি সমাবেশগুলি" কঠোর হাতে দমন করেছিল, বিশেষ করে যেসব খেলায় প্রচুর কর্কশ আওয়াজ হয় যেমন ফুটবল। সাব্বাথ (রবিবার) বিষয়ে যে প্রথা ছিল, সেই আইন চাইছিলো তার চেয়ে আরও কঠোর কোনো রীতি। যেহেতু নিম্নবর্গের মানুষদের কাছে সাব্বাথ(রবিবার)-ই একমাত্র অবসর সময় ছিল তাই কমনওয়েল্থের সময় ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা হ্রাস পেয়েছিলো। যাইহোক, এই খেলা কিছু বৈতনিক বিদ্যালয় যেমন উইনচেস্টার এবং সেন্ট পলস-এ জাঁকজমকভাবে বেড়ে উঠেছিলো। অলিভার ক্রনওয়েলের শাসনকালে ক্রিকেটকে যে নিষিদ্ধ ঘোষণা হয়েছিলো এর কোনো অকাট্য প্রমাণ নেই, তবে সরকারি বিরতির সময়ে কিছু প্রমাণ আছে যেটা নির্দেশ করে যে এটা কর্তৃপক্ষের কাছে গ্রহণযোগ্য ছিল কারণ তারা খেলাটিকে "সাব্বাথ (রবিবার) লঙ্ঘনের" কারণ হিসাবে দেখেনি।[11] এটি বিশ্বাস করা হয় যে সাধারণভাবে আভিজাত্যরা ঐ মুহূর্তে গ্রাম্য খেলায় জড়িত থাকার মাধ্যমে ক্রিকেটকে গ্রহণযোগ্য করেছিলেন।[4]
জুয়া এবং গণমাধ্যমে প্রচার
১৬৬০ সালের restoration এর ঘটনার পরই মূলত ক্রিকেট জনপ্রিয়তা পাওয়া শুরু করে এবং ধারণা করা হয় ঐ সময়েই খেলাটি সর্বপ্রথম জুয়াড়িদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়। ১৬৬৪ সালে ইংল্যান্ডের কাভালিয়ের (restoration এর ঘটনার পর গঠিত সর্বপ্রথম সংসদ) সংসদে "The Gaming Act 1664" পাস হয়, যে আইনে বাজির সর্বোচ্চ সীমা ১০০ পাউন্ড নির্ধারণ করে দেয়া হয়, তৎকালীন সময়ে যেটা বেশ বড় অঙ্কই ছিল।[11] তৎকালীন ১০০ পাউন্ড বর্তমানের ১৫০০০ পাউন্ডের সমান।[12] ১৭ শতকের শেষ দিকে ক্রিকেট অনেক জনপ্রিয় একটি খেলায় পরিণত হয়। ১৬৯৭ সালে সাসেক্সে অনুষ্ঠিত একটি "দুর্দান্ত ম্যাচ " এর উল্লেখ সংবাদপত্রে পাওয়া যায়, যে ম্যাচে প্রতি দলে ১১ জন করে খেলেছিল এবং উভয়পক্ষের জন্য বাজির দর ছিল ৫০ গিনি।[6]
১৬৯৬ সালে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা স্বীকৃতি পাওয়ার পর সর্বপ্রথম খবরের কাগজে ক্রিকেটের সংবাদ প্রকাশিত হতে থাকে। কিন্তু ক্রিকেট সম্পর্কে নিয়মিত ও বিশ্লেষণধর্মী সংবাদ প্রকাশিত হওয়া শুরু হয় আরও অনেকদিন পরে। ১৮ শতকের প্রথমার্ধে গণমাধ্যমগুলো খেলাটির ভিতরের বিষয়ের চেয়ে বাজি ও জুয়া নিয়ে সংবাদ প্রকাশেই বেশি আগ্রহী ছিল।[11]
অষ্টাদশ শতাব্দীর ক্রিকেট
প্রধান নিবন্ধ: ১৭২৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ক্রিকেটের ইতিহাস , ক্রিকেটের ইতিহাস ১৭২৬-১৭৭১, এবং ক্রিকেটের ইতিহাস ১৭৭২-১৮১৫
পৃষ্ঠপোষকতা এবং খেলোয়াড়
জুয়ার হাত ধরেই খেলাটির শুরুর দিকের পৃষ্ঠপোষকদের আবির্ভাব ঘটে। কারণ অনেক জুয়ারিই নিজেদের দল গঠনের মাধ্যমে শক্তিশালী অবস্থানে যেতে চেয়েছিলেন এবং ধারণা করা হয় যে ১৬৬০ সালের restoration এর ঘটনার পরেই প্রথম "কাউন্টি দল" গঠিত হয়, বিশেষত যখন অভিজাত সদস্যরা পেশাদার হিসাবে গ্রাম ক্রিকেট থেকে "স্থানীয় বিশেষজ্ঞ" নিয়োগ করছিলেন।[4] যতদূর জানা যায়, ১৭০৯ সালে দলগুলো প্রথম কাউন্টি নাম ব্যবহার শুরু করে। ১৬৯৭ সালের ম্যাচে সাসেক্সের বিরুদ্ধে সম্ভবত অন্য আরেকটি কাউন্টি অংশগ্রহণ করেছিল।
প্রাথমিক পৃষ্ঠপোষকদের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ছিলেন একদল অভিজাত এবং ব্যবসায়ী যারা ১৭২৫ সাল থেকেই সক্রিয় ছিলেন, যে সময় থেকে পৃষ্ঠপোষকদের প্রভাবে ক্রিকেট বিষয়ক সংবাদ সম্মেলন নিয়মিত অনুষ্ঠিত হওয়া শুরু হয়। এদের মধ্যে ছিলেন রিচমন্ডের ২য় ডিউক, স্যার উইলিয়াম গেইজ, অ্যালেন ব্রডরিক এবং এডউইন স্টিড । প্রথমবারের মতো গণমাধ্যমে থমাস ওয়েইমার্ক এর ন্যায় কোনো একক খেলোয়াড়ের নাম প্রকাশিত হয়।
ইংল্যাণ্ডের বাইরে ক্রিকেটের প্রসার
১৭ শতকে ব্রিটিশ উপনিবেশসমূহের মাধ্যমেই প্রথম উত্তর আমেরিকায় ক্রিকেট পরিচিতি লাভ করে।[10] তখনো সম্ভবত ইংল্যান্ডের উত্তরে ক্রিকেট জনপ্রিয়তা পায়নি। ১৮ শতকের শেষ দিকে এটি বিশ্বের অন্যান্য প্রান্তেও ছড়িয়ে পড়ে। উপনিবেশবাদীদের মাধ্যমে ওয়েস্ট ইন্ডিজে[10] এবং ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির নাবিকদের মাধ্যমে ভারতে শতাব্দীর প্রথমার্ধে খেলাটি পরিচিতি লাভ করে। ১৭৮৮ সালে উপনিবেশ স্থাপনের পর পরই অস্ট্রেলিয়াতে এবং ১৯ শতকের গোড়ার দিকে নিউজিল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকায় ক্রিকেট প্রবেশ করে।[4]
উচ্চ শ্রেণির মানুষদের প্রচেষ্টা সত্ত্বেও কানাডায় ক্রিকেট কখনই জনপ্রিয়তা পায়নি। ১৮৬০-১৯৬০ সালের মধ্যে কানাডায় খেলাটির জনপ্রিয়তা ধীরে ধীরে হ্রাস পায়, যা অস্ট্রেলিয়া ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের সম্পূর্ণ বিপরীত। কানাডার সাধারণ মানুষদের মধ্যেও খেলাটি জনপ্রিয়তা পায়নি। গ্রীষ্মকালে জনপ্রিয়তার দিক দিয়ে খেলাটিকে বেসবলের সাথে প্রতিযোগিতা করতে হতো। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ে ফ্রান্সে থাকা কানাডার সৈন্যরা ক্রিকেটের বদলে বেসবল খেলেছিলো।[13][14]
ক্রিকেটীয় আইনের উন্নয়ন
আরও দেখুন: ক্রিকেটের আইন
ক্রিকেটে ব্যাট, বল, পিচের দৈর্ঘ্য, ওভারসংখ্যা, আউটের ধরন ইত্যাদি নিয়ম ঠিক কবে আবিষ্কৃত হয়েছে এ সম্পর্কে কোনো সঠিক তথ্য পাওয়া যায় না। ১৭২৮ সালে রিচমন্ডের ডিউক অ্যালেন ব্রডিক চুক্তির নিবন্ধ তৈরি করেন যাতে কোনো নির্দিষ্ট ম্যাচে প্রয়োজনীয় নিয়মসমূহ নির্ধারণ করা যায়। এটি একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য হয়ে দাঁড়ায়,বিশেষত জুয়ার গুরুত্বের ভিত্তিতে অংশীদারদের অর্থ প্রদানের ক্ষেত্রে।[6]
চুক্তির নিবন্ধ ১৭৪৪ সালে সর্বপ্রথম লিপিবদ্ধ হয় এবং ১৭৭৪ সালে সংশোধিত হয়, যখন নতুন বিষয়সমূহ যেমনঃ এলবিডব্লিউ, মধ্যবর্তি স্ট্যাম্প, ব্যাটের সর্বোচ্চ প্রস্থ ইত্যাদি যুক্ত করা হয়। উক্ত বিধানসমূহে বলা হয় "নীতিনির্ধারকরা দুজন আম্পায়ারকে উপস্থিত ভদ্রলোকদের মধ্যে থেকে বেছে নেবেন যারা সমস্ত বিতর্ক সমাধানে সিদ্ধান্ত নেবেন"। জনপ্রিয় "Star and Garter Club" নিয়মগুলো প্রণয়ন করে যার সদস্যরাই পরবর্তীতে ১৭৮৭ সালে লর্ডসে এমসিসি প্রতিষ্ঠা করেন। এমসিসি তখনই আইনগুলির রক্ষাকারী হয়ে ওঠে এবং পরে পর্যায়ক্রমে সংশোধন ও পুনঃনির্ধারণ করেছে।[15]
ইংল্যাণ্ডে ক্রমাগত উন্নতি
ইংল্যান্ডে খেলাটির প্রসার অব্যাহত থাকে। ১৭৫১ সালে ইয়র্কশায়ার প্রথম ক্রিকেট ভেন্যু হিসেবে উল্লেখ পাওয়া যায়।[16] বোলিং এর প্রাথমিক ধরন (মাটিতে গড়িয়ে বল করা ) ১৭৬০ সালের কাছাকাছি কোনো এক সময়ে বর্জিত হয় যখন থেকে বোলাররা বল পিচ করতে শুরু করে এবং লাইন, দৈর্ঘ্য ও গতিতে বৈচিত্র্যতা সম্পর্কে অধ্যয়ন করতে শুরু করে।[11] ১৭৭২ সাল থেকে নিয়মিত স্কোরকার্ড লেখা শুরু হয় এবং তখন থেকেই খেলাটির উন্নয়নের ক্রমবর্ধমান স্পষ্ট ছবিটি ফুটে উঠে।[17]
১৮ শতকের গোড়ার দিকের বিখ্যাত ক্লাবগুলো ছিলো লন্ডন এবং ডার্টফোর্ড। লন্ডন তাদের ম্যাচগুলো খেলতো আর্টিলারি গ্রাউন্ডস মাঠে, যেটি এখনো বিদ্যমান। অন্য ক্লাবগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল সাসেক্সের স্লিনডন ক্লাব যা রিচমন্ডের ডিউক এবং বিখ্যাত খেলোয়াড় রিচার্ড নিউল্যান্ড দ্বারা সমর্থিত ছিল।মেডেনহেড, হর্নচর্চ, মাইডস্টোন, সেভেনোকস, ব্রমলে, অ্যাডিংটন, হ্যাডলো এবং চের্তসিতে আরও অনেক ভালো ক্লাব ছিল।
তবে প্রথম দিকের ক্লাবগুলির মধ্যে সর্বাধিক বিখ্যাত ছিল হ্যাম্পশায়ারের হ্যাম্বলডন। এটি একটি যাজক সংস্থা হিসাবে শুরু হয়েছিল যা ১৭৫৬ সালে প্রথম খ্যাতি অর্জন করেছিল। ক্লাবটা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৭৬০ সালে এবং ভালো পৃষ্ঠপোষকতার কারণে ১৭৮৭ সালে লর্ডসে এমসিসি প্রতিষ্ঠার আগপর্যন্ত ৩০ বছর ধরে খেলাটির প্রাণকেন্দ্রে ছিল। হ্যাম্বলডন অসাধারণ ব্যাটসম্যান জন স্মল এবং প্রথম দুর্দান্ত পেসার থমাস ব্রেট সহ বেশ কয়েকজন অসামান্য খেলোয়াড় তৈরি করেছিল। তাদের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন চের্তসি এবং সারে বোলার এডওয়ার্ড "লাম্পি" স্টিভেন্স, যিনি সম্ভবত ফ্লাইট ডেলিভারির মূল প্রবক্তা ছিলেন।
ফ্লাইট বা পিচড ডেলিভারির জবাব দিতে সোজা আকৃতির ব্যাট উদ্ভাবিত হয়েছিল। পুরোনো 'হকিস্টিক' আকৃতির ব্যাট শুধু গড়িয়ে যাওয়া বলের বিরুদ্ধেই কার্যকরী ছিল।
ক্রিকেট এবং সঙ্কট
অষ্টাদশ শতাব্দীতে ক্রিকেট তার প্রথম আসল সঙ্কটের মুখোমুখি হয়েছিল,যখন বড় ম্যাচগুলো সাত বছরের যুদ্ধে কার্যত বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো। এটি মূলত খেলোয়াড়ের এবং বিনিয়োগের অভাবের কারণে ঘটেছিলো। তবে খেলাটি টিকেছিল এবং "হ্যাম্বলডন যুগ" যথাযথভাবে ১৭৬০ এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে শুরু হয়েছিল।
ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরুতে ক্রিকেট আরেকটি বড়ো সংকটের মুখোমুখি হয় যখন নেপোলিয়োনিক যুদ্ধের সমাপ্তির সময়কালে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ থামিয়ে দেওয়া হয়। এবারও প্রধান কারণ ছিল খেলোয়াড়ের এবং বিনিয়োগের অভাব।[18] তবে, ১৭৬০ এর দশকের মতো, খেলাটি বেঁচে গিয়েছিল এবং ১৮১৫ সাল থেকে এটি ধীরে ধীরে পুনরুজ্জীবিত হয়েছিল।
১৮১৫ সালের ১৭ জুন ওয়াটারলুর যুদ্ধের প্রাক্কালে ব্রিটিশ সৈনিকরা একটি ক্রিকেট ম্যাচ খেলেছিলেন ব্রাসেলসের বোইস দে লা ক্যামব্রে পার্কে। তখন থেকেই পার্কের যে স্থানে ম্যাচটি হয়েছিল তার নামকরণ করা হয় লা পেলাউস ডেস অ্যাংলাইস (ইংরেজদের মাঠ)।
এমসিসি নিজেই রিজেন্সি পিরিয়ডে বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু ছিল, প্রধানত লর্ড ফেডরিক বিউক্লার্ক এবং জর্জ ওসবলডেলস্টোন এর মধ্যে শত্রুতার কারণে। ১৮১৭ সালে, তাদের ষড়যন্ত্র এবং হানাহানিগুলো ম্যাচ ফিক্সিং কেলেঙ্কারীতে পরিণত হয়, যার ফলে বিখ্যাত খেলোয়াড় উইলিয়াম ল্যামবার্ট লর্ডসে আজীবনের জন্য নিষিদ্ধ হোন। ক্রিকেটে জুয়া কেলেঙ্কারির ঘটনা সপ্তদশ শতাব্দী থেকেই চলছে।
১৮২০-এর দশকে, ক্রিকেট তার নিজস্ব একটি বড় সংকটের সম্মুখীন হয়েছিল যখন রাউন্ডআর্ম বোলিংকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য প্রচারণা শুরু হয়।
ঊনবিংশ শতাব্দীর ক্রিকেট
প্রধান নিবন্ধ: ক্রিকেটের ইতিহাস (১৭৭২-১৮১৫) এবং ইংলিশ ক্রিকেটের ইতিহাস (১৮১৬-১৮৬৩)
কাউন্টি ক্লাবগুলোর প্রথমবারের মতো সংগঠনের সাথে সাথে খেলাটির সংস্থার মৌলিক পরিবর্তনসমূহও সাধিত হয়। ১৮৩৯ সালে সাসেক্স দিয়ে শুরু হওয়া সমস্ত আধুনিক কাউন্টি ক্লাবগুলি ১৯ শতকে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। প্রথম কাউন্টি দলগুলো প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সাথে সাথেই তাদেরকে খেলোয়াড়দের নিজস্ব উদ্যোগের সম্মুখীন হতে হয়, যখন ১৮৪৬ সালে উইলিয়াম ক্লার্ক ভ্ৰাম্যমান সর্ব-ইংল্যান্ড একাদশ প্রতিষ্ঠা করেন। বাণিজ্যিক উদ্যোগ হলেও এই দলটি এমন জেলাগুলি জনপ্রিয় করার জন্য অনেক কিছু করেছিল যেসব জেলায় এর আগে কখনও উচ্চ-শ্রেণীর ক্রিকেটাররা ভ্রমণ করেননি। অন্যান্য অনুরূপ দল তৈরি করা হয়েছিল এবং এই প্রচলন প্রায় ত্রিশ বছর ধরে চলে। তবে কাউন্টি এবং এমসিসি জয় লাভ করে।
১৯ শতকের মাঝামাঝি এবং শেষের দিকে রেল যোগাযোগের উন্নয়ন ক্রিকেটের প্রসারে সাহায্য করেছিল। প্রথমবারের মতো, অনেক দূর থেকে আসা দলগুলি সময় সাপেক্ষ যাত্রা ছাড়াই একে অপরের সাথে খেলার সুযোগ পায়। দর্শকরা ম্যাচ দেখার জন্য দীর্ঘ দূরত্বে ভ্রমণ করতে পারতো। সাম্রাজ্যের চারপাশের সেনা ইউনিটগুলির হাতে সময় ছিল এবং তারা স্থানীয়দের উৎসাহিত করেছিল যাতে তারা কিছু বিনোদনমূলক প্রতিযোগিতা করতে পারে। কানাডা বাদে বেশিরভাগ সাম্রাজ্যেই ক্রিকেট পরিচিতি পায়।[19]
১৮৬৪ সালে, আরেকটি বোলিং বিপ্লবের ফলে ওভারআর্ম বোলিংকে বৈধতা দেওয়া হয়েছিল এবং একই বছর উইজডেন ক্রিকেটারস অ্যালমানাক প্রথম প্রকাশিত হয়। ডব্লু জি গ্রেস ঐই মুহুর্তে তাঁর দীর্ঘ এবং প্রভাবশালী ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন, ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা বাড়াতে তাঁর কীর্তিসমূহ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তিনি প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনসমূহ প্রবর্তন করেছিলেন যা খেলাটিতে, বিশেষত ব্যাটিংয়ে বিপ্লব ঘটায়।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সূচনা
১৮৪৪ সালে আমেরিকা ও কানাডার মধ্যে প্রথম আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। নিউ ইয়র্কের সেইন্ট জর্জ ক্রিকেট ক্লাবের মাঠে ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হয়।[20]
১৮৫৯ সালে, শীর্ষস্থানীয় ইংরেজ পেশাদারদের একটি ক্রিকেট দল প্রথমবারের মতো বিদেশ সফরে উত্তর আমেরিকায় যায়। ১৮৬২ সালে প্রথম কোনো ইংরেজ দল অস্ট্রেলিয়ায় যায়। ১৮৬৮ সালের মে এবং অক্টোবরের মধ্যে, আদিবাসী অস্ট্রেলিয়ানদের একটি দল বিদেশে ভ্রমণকারী প্রথম অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট দল হিসেবে ইংল্যান্ড সফর করেছিল।[21]
১৮৭৭ সালে, অস্ট্রেলিয়ায় সফরকারী একটি ইংল্যান্ড দল পুরো অস্ট্রেলিয়ান একাদশের বিরুদ্ধে দুটি ম্যাচ খেলেছিল যা এখন সর্বপ্রথম টেস্ট ম্যাচ হিসাবে বিবেচিত। পরের বছর অস্ট্রেলিয়ানরা প্রথমবার ইংল্যান্ড সফর করে এবং এই সফরের সাফল্য ভবিষ্যতে অনুরূপ উদ্যোগের জনপ্রিয় চাহিদা নিশ্চিত করে। ১৮৭৮ সালে কোনও টেস্ট খেলা হয়নি তবে এরপরে আরও অনেক দেশ খেলা শুরু করে এবং ১৮৮২ সালে ওভালে টানটান উত্তেজনায় অস্ট্রেলিয়ার জয় অ্যাশেজ সিরিজের জন্ম দেয়।
১৮৮৯ সালে সাউথ আফ্রিকা তৃতীয় টেস্ট খেলুড়ে দেশে পরিণত হয়।
জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপসমূহ
১৮৯০ সালে ইংল্যান্ডে আনুষ্ঠানিক কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশিপ গঠিত হওয়ার সময় ঘরোয়া ক্রিকেটে একটি উল্লেখযোগ্য উন্নতি ঘটেছিল। এই সাংগঠনিক উদ্যোগটি অন্যান্য দেশে পুনরাবৃত্তি হয়েছে। অস্ট্রেলিয়া ১৮৯২-৯৩ সালে শেফিল্ড শিল্ড প্রতিষ্ঠা করেছিল। প্রতিষ্ঠিত হওয়া অন্যান্য জাতীয় প্রতিযোগিতা হল দক্ষিণ আফ্রিকার কারি কাপ, নিউজিল্যান্ডের প্লানকেট শিল্ড এবং ভারতের রঞ্জি ট্রফি।
১৮৯০ সাল থেকে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সূত্রপাত পর্যন্ত সময়কাল স্মৃতি বিজড়িত হয়ে ওঠে, কারণ সম্ভবত দলগুলি তখন "খেলোয়াড়ি চেতনা" অনুসারে ক্রিকেট খেলেছিল, তবে আরও বাস্তবতার কারণ এটি ছিল শান্তির সময় যা ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছিলো প্রথম বিশ্ব যুদ্ধ। ওই যুগকে ক্রিকেটের স্বর্ণযুগ বলা হয় এবং এতে অসংখ্য দুর্দান্ত খেলোয়াড় ক্রিকেট খেলতো যেমনঃ গ্রেস, উইলফ্রেড রোডস, সি.বি. ফ্রাই, রঞ্জিৎসিনঝি এবং ভিক্টর ট্রাম্পার।
প্রতি ওভারে বলসংখ্যা
ওভার প্রতি চার বলে ক্রিকেট শুরু হয়েছিল। ১৮৮৯ সালে ওভারের চারটি বল, প্রতি ওভারের পাঁচটি বলের নিয়ম দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয় এবং তারপরে এটি ১৯০০ সালে প্রতি ওভারের বর্তমান ছয়টি বলের নিয়মে পরিবর্তিত হয়। পরবর্তীকালে, কয়েকটি দেশ ওভারে আটটি বল নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে। ১৯২২ সালে, প্রতি ওভারে বলের সংখ্যাটি কেবল অস্ট্রেলিয়াতে ছয় থেকে আটটিতে পরিবর্তন করা হয়েছিল।১৯২৪ সালে নিউজিল্যান্ডে এবং ১৯৩৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় ওভারে ৮ বলের নিয়মটি সম্প্রসারিত হয়। ১৯৩৯ সালে ইংল্যান্ডে পরীক্ষামূলকভাবে ওভারে ৮ বলের নিয়মটি চালু করা হয়। ১৯৪০ সালে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্য ছিল, কিন্তু প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের জন্য স্থগিত করা হয় এবং যখন এটি আবার শুরু হয়, ইংলিশ ক্রিকেট ছয় বলের ওভারে ফিরে যায়। ১৯৪৭ সালের ক্রিকেটের আইনগুলি খেলার অবস্থার উপর নির্ভর করে ওভারে ছয় বা আটটি বলের অনুমতি দেয়। ১৯৭৯-৮০ অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের সেশনের সময়কাল থেকে ওভার প্রতি ছয়টি বল বিশ্বব্যাপী ব্যবহৃত হয়ে আসছে এবং ২০০০ সালের সর্বশেষ সংস্করণের আইনানুসারে কেবল ছয় বলের ওভারের অনুমতি দেয়া হয়েছে।
বিংশ শতাব্দীর ক্রিকেট
টেস্ট ক্রিকেটের বিকাশ
১৯০৯ সালে যখন ইম্পেরিয়াল ক্রিকেট কনফারেন্স (শুরুতে এই নামেই পরিচিত ছিল) প্রতিষ্ঠিত হয়, তখন শুধু ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা এর সদস্য ছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজ (১৯২৮), নিউজিল্যান্ড (১৯৩০) ও ভারত (১৯৩২) এবং যুদ্ধের পরে পাকিস্তান (১৯৫২) টেস্ট দল হিসেবে অধিভুক্ত হয়। আইসিসির বেশ কয়েকটি অনুমোদিত সদস্য দেশ নিয়োগের সাথে সাথে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে খেলাটির বিকাশ ঘটেছিলো এবং বিংশ শতাব্দীর শেষ প্রান্তিকে এদের মধ্যে তিনটি দেশ পূর্ণ সদস্য হয়েছে: শ্রীলঙ্কা (১৯৮২), জিম্বাবুয়ে (১৯৯২) এবং বাংলাদেশ (২০০০)। পরবর্তীতে ২০১৮ সালে আয়ারল্যান্ড ও আফগানিস্তান টেস্ট সদস্যভুক্ত হয়।
টেস্ট ক্রিকেট বিশ শতক জুড়ে সর্বোচ্চ স্তরের খেলা হিসাবে থেকে যায় তবে এটির সমস্যা ছিল যেমনঃ ১৯৩৩-৩৩ এর কুখ্যাত "বডিলাইন সিরিজে" ডগলাস জারডিনের ইংল্যান্ড অস্ট্রেলিয়ার ডন ব্র্যাডম্যানের রান ক্ষুধাকে নিষ্ক্রিয় করার জন্য তথাকথিত "লেগ থিওরি" ব্যবহার করে।
দক্ষিণ আফ্রিকার নির্বাসন (১৯৭০-৯১)
আরও দেখুন: ১৯৭১ থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকায় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আঘাত হানা সবচেয়ে বড় সংকট দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদ ও জাতিগত বৈষম্যমূলক নীতি। ১৯৬১ সালের পরে দক্ষিণ আফ্রিকা কমনওয়েলথ অফ নেশনস ত্যাগ করার ফলে পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করতে শুরু করে, তাই ওই সময়ের নিয়ম অনুসারে, তার ক্রিকেট বোর্ডকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) ছাড়তে হয়েছিল। ১৯৬৮ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা কর্তৃপক্ষ ইংল্যান্ডের দক্ষিণ আফ্রিকা সফর বাতিল করার ফলে (কারণ ইংল্যান্ড দলে বাসিল ডি অলিভেইরা নামক সংকর বর্ণের এক খেলোয়াড় অন্তর্ভুক্ত হয়েছিলেন) বর্ণবাদ সম্পর্কে ক্রিকেটের বিরোধিতা তীব্রতর হয়। ১৯৭০ সালে, আইসিসি সদস্যরা দক্ষিণ আফ্রিকাকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট প্রতিযোগিতা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করার পক্ষে ভোট দিয়েছিল।
সেরা খেলোয়াড়দের জন্য শীর্ষ-স্তরের প্রতিযোগিতা শুরু করতে দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট বোর্ড তথাকথিত "বিদ্রোহী ট্যুর" তহবিল শুরু করে, আন্তর্জাতিক খেলোয়াড়দেরকে দল গঠনের জন্য এবং দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের জন্য প্রচুর অর্থের অফার দেয়। আইসিসির প্রতিক্রিয়া ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা সফর করতে রাজি হওয়া যেকোনো বিদ্রোহী ক্রিকেটারকে অনুমোদিত আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ করে দেওয়া। সত্তরের দশকে খেলোয়াড়দের পারিশ্রমিক অনেক কম হওয়ায় অনেকে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের প্রস্তাব গ্রহণ করেছিলেন, বিশেষত যেসব খেলোয়াড় তাদের ক্যারিয়ারের অন্তিম পর্যায়ে ছিলেন। ১৯৮০-এর দশকে বিদ্রোহী সফর অব্যাহত থাকলেও দক্ষিণ আফ্রিকার রাজনীতিতে অগ্রগতি হয় এবং স্পষ্ট হয়ে যায় যে বর্ণবাদ শেষ হচ্ছে। ১৯৯১ সালে দক্ষিণ আফ্রিকাকে (যা তখন নেলসন ম্যান্ডেলার অধীনে "রেইনবো নেশন" হিসেবে পরিচিত ছিল) আন্তর্জাতিক খেলায় পুনরায় স্বাগত জানানো হয়েছিল।
বিশ্ব সিরিজ ক্রিকেট
আরও দেখুন: বিশ্ব সিরিজ ক্রিকেট
শীর্ষস্থানীয় ক্রিকেটারদের অর্থের সমস্যা ১৯৭৭ সালের আরও একটি ক্রিকেটীয় সঙ্কটের মূল কারণ ছিল, যখন অস্ট্রেলিয়ান গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব কেরি প্যাকার টিভি অধিকার নিয়ে অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট বোর্ডের সাথে ঝুঁকছেন। খেলোয়াড়দের দেওয়া কম পারিশ্রমিকের সুযোগ নিয়ে প্যাকার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের কাঠামোর বাইরে ব্যক্তিগতভাবে পরিচালিত ক্রিকেট লিগে বিশ্বের বেশ কয়েকটি সেরা খেলোয়াড়কে স্বাক্ষর করিয়ে প্রতিশোধ গ্রহণ করেছিলেন। বিশ্ব সিরিজ ক্রিকেট নিষিদ্ধ দক্ষিণ আফ্রিকার কয়েকজন খেলোয়াড়কে নিয়োগ দিয়েছিলো এবং তাদের বিশ্ব-মানের অন্যান্য খেলোয়াড়দের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দক্ষতা প্রদর্শন করার সুযোগ দেয়। এই বিদ্বেষটি কেবল ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত স্থায়ী ছিল এবং "বিদ্রোহী" খেলোয়াড়দের প্রতিষ্ঠিত আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরে যেতে দেওয়া হয়েছিল। যদিও অনেকে দেখতে পেলেন যে তাদের জাতীয় দলগুলি তাদের ছাড়া এগিয়ে গেছে। বিশ্ব সিরিজ ক্রিকেটের দীর্ঘমেয়াদী ফলাফলের মধ্যে উল্লেখযোগ্যভাবে খেলোয়াড়ের উচ্চতর বেতন এবং রঙিন কিট এবং রাতের ম্যাচের মতো উদ্ভাবন অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
সীমিত-ওভারের ক্রিকেট
১৯৬০ এর দশকে ইংলিশ কাউন্টি দলগুলি প্রতিটি দলের একটি ইনিংস এবং প্রতিটি ইনিংসে নির্দিষ্ট সংখ্যক ওভারের ক্রিকেট খেলতে শুরু করে। শুধু নকআউট প্রতিযোগিতা হিসাবে ১৯৬৩ সালে শুরু হওয়া সীমিত ওভারের ক্রিকেট জনপ্রিয়তা অর্জন করে। ১৯৬৯ সালে একটি জাতীয় লীগ তৈরি হয়েছিল যার ফলস্বরূপ কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশিপে ম্যাচের সংখ্যা হ্রাস পেয়েছিল।
যদিও অনেক সনাতন ক্রিকেট অনুরাগী খেলার সংক্ষিপ্ত রূপ নিয়ে আপত্তি জানিয়েছিলেন, তবুও সীমিত ওভারের ক্রিকেটে এক দিনের মধ্যেই ম্যাচের মীমাংসা হওয়ার সুবিধা ছিল। এটি অল্প বয়স্ক বা ব্যস্ত ব্যক্তিদের কাছে ক্রিকেটের চাহিদা বৃদ্ধি করেছিল এবং এটি বাণিজ্যিকভাবে সফল প্রমাণিত হয়েছিল।
১৯৭১ সালে মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ড মাঠে একটি টেস্ট ম্যাচ প্রারম্ভিক দিনে ভারী বৃষ্টির কারণে পরিত্যক্ত হওয়ার পরে সময় কাটাতে প্রথম সীমিত ওভারের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। এটি কেবল একটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা হিসাবে এবং এর মাধ্যমে খেলোয়াড়দের কিছু অনুশীলন করানোর চেষ্টা করা হয়েছিল, তবে তা প্রচুর জনপ্রিয় হয়ে উঠে। সেই থেকে ওয়ানডে ম্যাচ ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠে, বিশেষত ব্যস্ত ব্যক্তিদের জন্য যারা পুরো ম্যাচটি দেখতে চান। এরই ফলস্বরূপ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল ১৯৭৫ সালে ইংল্যান্ডে প্রথম ক্রিকেট বিশ্বকাপের আয়োজন করে, যেটিতে সমস্ত টেস্ট খেলুড়ে দেশ অংশ নিয়েছিল।
বিশ্লেষণমূলক এবং চিত্রলেখসংক্রান্ত প্রযুক্তি
সীমিত-ওভারের ক্রিকেট, ক্রিকেট কভারেজের জন্য টেলিভিশন রেটিং বাড়িয়ে দেয়। সীমিত ওভারের ম্যাচগুলির কভারেজে প্রবর্তিত উদ্ভাবনী কৌশলগুলি দ্রুতই টেস্ট কভারেজের জন্য গৃহীত হয়েছিল। উদ্ভাবনের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিল খুঁটিনাটি পরিসংখ্যান এবং গ্রাফিকাল বিশ্লেষণের উপস্থাপনা, স্ট্যাম্পের সামনে ক্ষুদ্রাকৃতির ক্যামেরা স্থাপন, মাঠের বিভিন্ন স্থান থেকে ছবি তুলার জন্য একাধিক ক্যামেরার ব্যবহার, উচ্চ-গতির ফটোগ্রাফি এবং কম্পিউটার গ্রাফিক্স প্রযুক্তি যা দর্শকদের একটি ডেলিভারির গতিপ্রকৃতি ও আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত বুঝতে সহায়তা করে।
১৯৯২ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা ও ভারতের মধ্যে টেস্ট সিরিজে, টেলিভিশন রিপ্লের মাধ্যমে রান আউট আপিলের রায় দেওয়ার জন্য তৃতীয় আম্পায়ার ব্যবহারের সূচনা হয়েছিল। পরবর্তীকালে স্ট্যাম্পিংস, ক্যাচ এবং বাউন্ডারির মতো খেলার অন্যান্য বিষয়গুলি সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়া তৃতীয় আম্পায়ারের দায়িত্বের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। ২০১১ সাল থেকে ভার্চুয়াল-রিয়েলিটি ট্র্যাকিং প্রযুক্তির (যেমনঃ হক-আই ও হটস্পট) সহায়তায় এলবিডব্লু সহ আম্পায়ারদের অন্যান্য সিদ্ধান্তগুলির পর্যালোচনা করার জন্য তৃতীয় আম্পায়ারের ব্যবহার শুরু হয়। যদিও এই ধরনের পদক্ষেপগুলো এখনও কিছু বিতর্কিত সিদ্ধান্তকে উত্তপ্ত বিতর্ক থেকে মুক্ত করতে পারেনি।[22]
একবিংশ শতাব্দীর ক্রিকেট
২০০১ সালের জুনে, আইসিসি একটি "টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ টেবিল" প্রবর্তন করে এবং ২০০২ সালের অক্টোবরে একটি "ওয়ানডে আন্তর্জাতিক চ্যাম্পিয়নশিপ সারণী"। আইসিসি র্যাঙ্কিং থেকে বুঝা যায়,[23] বিভিন্ন ক্রিকেট ফর্ম্যাটগুলি বেশিরভাগ প্রাক্তন ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের দেশগুলিতে বিশেষত ভারতীয় উপমহাদেশ এবং নেদারল্যান্ডস সহ নতুন অংশগ্রহণকারীদের একটি বড় প্রতিযোগিতামূলক খেলা হিসাবে অব্যাহত রয়েছে। ২০১৩ সালে, আফগানিস্তান এবং আয়ারল্যান্ডের অন্তর্ভুক্তিতে পূর্ণ আইসিসির সদস্যপদ প্রাপ্ত দেশগুলির সংখ্যা বারোটিতে উন্নীত হয়েছিল।
বিভিন্ন ফরম্যাটে প্রতিযোগিতায় সক্ষম আরও বেশি জাতীয় দল তৈরি করার লক্ষ্যে আইসিসি তার উন্নয়ন কর্মসূচিটি প্রসারিত করেছে। উন্নয়নের প্রচেষ্টাসমূহ প্রধানত আফ্রিকান ও এশীয় দেশসমূহ এবং যুক্তরাষ্ট্রকে কেন্দ্র করে সংগঠিত হচ্ছে। ২০০৪ সালে, আইসিসি ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপটি প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটকে ১২ টি দেশের কাছে নিয়ে আসে, বেশিরভাগ প্রথমবারের মতো। ক্রিকেটের নতুন উদ্ভাবনটি টি-টোয়েন্টি, যা মূলত সান্ধ্য বিনোদন। এটি এখন পর্যন্ত প্রচুর জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে এবং ম্যাচগুলিতে বড় দর্শক উপস্থিতি আকর্ষণের পাশাপাশি টিভির দর্শকদের হিসাবে ভাল রেটিং অর্জন করেছে। উদ্বোধনী আইসিসি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ টুর্নামেন্টটি ২০০৭ সালে অনুষ্ঠিত হয়েছিল।[24] ভারতে টি-টোয়েন্টি লিগ গঠন - ২০০৭ সালে শুরু হওয়া অনানুষ্ঠানিক ইন্ডিয়ান ক্রিকেট লিগ এবং ২০০৮ সালে শুরু হওয়া আনুষ্ঠানিক ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগ - ক্রিকেটের ভবিষ্যতে তাদের প্রভাব নিয়ে গণমাধ্যমে অনেক জল্পনা জাগিয়ে তোলে।[25][26][27][28]
ঐতিহাসিক সূত্র
"প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট" আনুষ্ঠানিকভাবে ১৮৯৪ সালের মে পর্যন্ত সংজ্ঞায়িত করা হয়নি এবং ১৮৯৫ ইংলিশ ক্রিকেট মৌসুমের [29] শুরু থেকেই তা কার্যকর হয়েছিল। অবশ্য ইংল্যান্ডে আরও ২ শতাব্দী আগে থেকেই এবং অন্যান্য দেশে ১৯ শতকের মাঝামাঝি থেকে প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট শুরু হয়। ১৮৯৫ সালের আগপর্যন্ত এতো উচ্চস্তরের ক্রিকেটের জন্য কোনো আনুষ্ঠানিক নাম ব্যবহৃত হয়নি বরং তার বদলে কিছু সাধারণ শব্দ, যেমনঃ "first-class","major", "great" এবং "important"(এই শব্দটির প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় ACS এর A Guide to Important Cricket Matches Played in the British Isles 1709–1863 (১৯৮১) বইয়ে)।[29] ঐতিহাসিকগণ এই ব্যাপারে একমত যে তৎকালীন সময়ে "great match" নামে পরিচিত ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল ১৬৯৭ সালের জুনে সাসেক্সের একটি অজানা জায়গায় দুটি একাদশের মধ্যে, যে ম্যাচে বাজির দর ছিল ৫০ গিনি।[6] ঐতিহাসিকগণ বিশ্বাস করেন যে "major match" নামে পরিচিত ম্যাচগুলো সম্ভবত ১৬৯৭ সালেরও আগে আয়োজিত হয়েছিল।[30][31] ১৬৯৫ সালে, ইংরেজ সংসদ ১৬৬২ লাইসেন্সিং আইনটি নবায়নের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল এবং এটিই ১৬৯৬ সালে এই আইনের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর স্বাধীনভাবে গণমাধ্যমে ক্রিকেটের সংবাদ প্রকাশের পথ পরিষ্কার করে দেয়।[32] ১৬৯৭ সালের আগের ম্যাচগুলো অজানা হওয়ার মূল কারণটি ছিল যে যখন লাইসেন্সিং আইন কার্যকর ছিল, তখন এটি কার্যকরভাবে প্রেসের উপর সেন্সরশিপ চাপিয়েছিল এবং খেলাধুলাকে সংবাদপত্রের প্রকাশের জন্য যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বলে মনে করা হয় নি। বিধিনিষেধগুলি অপসারণের পরে ধীরে ধীরে খবরের কাগজগুলিতে খেলাধুলার সংবাদ প্রবর্তিত হয়েছিল তবে যথেষ্ট পরিণত ও বিশ্লেষণধর্মী সংবাদ খবরের কাগজে স্থান পেতে কয়েক দশক লেগে গিয়েছিলো।[32]
১৮৯৫ সাল থেকে আনুষ্ঠানিক সংজ্ঞার কারণে প্রথম শ্রেণির মর্যাদা নিয়ে কোনও প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই।[29] আইসিসি এটিকে পুনরায় সংজ্ঞায়িত করায় ১৯৪৭ সাল থেকে ধারণাটি সার্বজনীনতা পায়। যদিও ১৯৪৭ সালের আগে গ্রেট ব্রিটেনের বাইরে ম্যাচের অবস্থা নিয়ে খুব কমই বিতর্ক হয়েছে।[33] ১৯৬৩ সালে শুরু হওয়া সীমিত ওভারের ম্যাচের মর্যাদা আনুষ্ঠানিকভাবে লিস্ট এ শ্রেণীবদ্ধ এবং বড় টি-টোয়েন্টি ম্যাচ নিয়ে একইভাবে কোনও সমস্যা নেই। যদিও বিশেষজ্ঞরা ম্যাচের মর্যাদা সম্পর্কে সাধারণভাবে একমত, তবুও কিছু ব্যতিক্রম রয়েছে যদিও ব্যতিক্রমগুলো রেকর্ডকৃত মোট ম্যাচের সংখ্যার একটি সামান্য অংশ। ১৯৩০-৩১ এর শীতে ব্যক্তিগতভাবে সংগঠিত একটি দলের ভারত ও সিলোন ভ্রমণ ছাড়া, সমস্ত "বিতর্কিত" ম্যাচগুলি ১৮৯৫ সালের আগে ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। আরও তথ্যের জন্য প্রকাশিত ক্রিকেট পরিসংখ্যানগুলিতে পার্থক্য দেখুন
নীচের তালিকাটি কোনওভাবেই নিখুঁত নয়, তবে অন্তর্ভুক্ত রচনাগুলি বিস্তারিতভাবে সপ্তদশ শতাব্দীর শেষের দিকের সময়কাল হতে শুরু করে ১৮৯৫ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে সংজ্ঞায়িত প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট শুরু হওয়া পর্যন্ত খেলাটির বিকাশের গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের উল্লেখযোগ্য এবং যথেষ্ট উৎস হতে পারে। এগুলি একক ম্যাচ, দল, স্থান এবং খেলোয়াড়ের সমর্যাদা নির্ধারণ করতে বিশ্বব্যাপী ব্যবহৃত হয়। আরও সাধারণ অর্থে, ক্রিকেটের বই এবং অন্যান্য মুদ্রিত কর্মগুলো নির্ভরযোগ্য তবে আত্মজীবনী এবং সংকীর্ণ চেতনার অন্যান্য কাজগুলি যথাযথভাবে উপযুক্ত নয় এবং অবশ্যই ম্যাচের মর্যাদা নির্ধারণের জন্য বিচ্ছিন্নভাবে ব্যবহৃত হয় না।
বই এবং অন্যান্য মুদ্রিত কর্ম
- ACS (1982). A Guide to First-Class Cricket Matches Played in the British Isles. Nottingham: ACS.
- ACS (1981). A Guide to Important Cricket Matches Played in the British Isles 1709 – 1863. Nottingham: ACS
- Altham, H. S. (1962). A History of Cricket, Volume 1 (to 1914). George Allen & Unwin
- Arlott, John (1984). Arlott on Cricket. Collins. ISBN 0-563-16115-9
- Ashley-Cooper F.S. (1900). At the Sign of the Wicket: Cricket 1742–1751. Cricket magazine
- Ashley-Cooper, F. S. (1924). Hambledon Cricket Chronicle 1772–1796. Jenkins
- Ashley-Cooper, F. S. (1929). Kent Cricket Matches 1719–1880. Gibbs & Sons
- Barclays (1986). Swanton, E. W. (ed.). Barclays World of Cricket. Willow Books. ISBN 0-00-218193-2
- Birley, Derek (1999). A Social History of English Cricket. Aurum. ISBN 1-85410-710-0
- Bowen, Rowland (1970). Cricket: A History of its Growth and Development. Eyre & Spottiswoode.
- Buckley, G. B. (1935). Fresh Light on 18th Century Cricket. Cotterell
- Buckley, G. B. (1937). Fresh Light on pre-Victorian Cricket. Cotterell
- Guha, Ramachandra (2001). A Corner of a Foreign Field – An Indian History of a British Sport. Picador.
- Harte, Chris (1993). A History of Australian Cricket. Andre Deutsch. ISBN 0-233-98825-4.
- Haygarth, Arthur (1862). Scores & Biographies, Volume 1 (1744–1826). Lillywhite. ISBN 1-900592-23-1. (also volumes 2 to 14, covering the 1827 to 1878 seasons)
- James, C. L. R. (1963). Beyond A Boundary. Hutchinson. ISBN 0822313839
- Lillywhite, Fred (1949). The Guide to Cricketers (annual). Lillywhite. (annual review – seasons 1849 to 1866)
- Lillywhite, James (1872). James Lillywhite's Cricketers' Annual (Red Lilly). Lillywhite. (annual review – seasons 1871 to 1899)
- Lillywhite, John (1865). John Lillywhite's Cricketer's Companion (Green Lilly). Lillywhite. (annual review – seasons 1864 to 1884)
- Major, John (2007). More Than A Game. HarperCollins.
- Maun, Ian (2009). From Commons to Lord's, Volume One: 1700 to 1750. Roger Heavens. ISBN 978-1-900592-52-9
- Maun, Ian (2011). From Commons to Lord's, Volume Two: 1751 to 1770. Martin Wilson. ISBN 978-0-9569066-0-1.
- McCann, Tim (2004). Sussex Cricket in the Eighteenth Century. Sussex Record Society.
- Mote, Ashley (1997). The Glory Days of Cricket. Robson.
- Nyren, John (1998). Mote, Ashley (ed.). The Cricketers of my Time. Robson.
- Pycroft, James (1854). The Cricket Field (2nd ed.). Longman.
- Rae, Simon (1998). W. G. Grace: A Life. Faber & Faber. ISBN 978-0-571-17855-1.
- Underdown, David (2000). Start of Play. Allen Lane. ISBN 0-7139-9330-8
- Waghorn, H. T. (1899). Cricket Scores, Notes, etc. (1730–1773). Blackwood.
- .Waghorn, H. T. (1906). The Dawn of Cricket. Electric Press
- Webber, Roy (1960). The Phoenix History of Cricket. Phoenix.
- Webber, Roy (1951). The Playfair Book of Cricket Records. Playfair Books.
- Wilson, Martin (2005). An Index to Waghorn. Bodyline.
- Wynne-Thomas, Peter (1997). From the Weald to the World. Stationery Office Books
কাল-ভিত্তিক প্রাসঙ্গিক কিছু সূত্রের উদাহরণ
- Wisden. Pardon, Charles (ed.). Wisden Cricketers' Almanack, ২৭তম সংস্করণ (1890 ed.). London: John Wisden & Co. Ltd.
- Wisden. Pardon, Sydney (ed.). Wisden Cricketers' Almanack, ৩২তম সংস্করণ (1895 ed.). London: John Wisden & Co. Ltd.
- Wisden. Preston, Hubert (ed.). Wisden Cricketers' Almanack, ৮৫তম সংস্করণ (1948 ed.). London: John Wisden & Co. Ltd.
- Playfair. West, Peter (ed.). Playfair Cricket Annual, ১ম সংস্করণ (1948 ed.). London: Playfair Books.
বিষয়-ভিত্তিক প্রাসঙ্গিক কিছু সূত্রের উদাহরণ
- Hodgson, Derek (1989). The Official History of Yorkshire County Cricket Club. The Crowood Press. ISBN 1852232749
- Kilburn, J. M. (1970). A History of Yorkshire Cricket. Stanley Paul. ISBN 0091011108.
নির্বাচিত অনলাইন সূত্রাবলী
- "The official laws of cricket". Marylebone Cricket Club (MCC). উৎস the original on 11 March 2013. সংগ্রহের তারিখ 10 January 2016.
- "ESPNcricinfo home page". ESPNcricinfo. সংগ্রহের তারিখ 10 January 2016.
- "Wisden Almanack online". ESPNcricinfo. সংগ্রহের তারিখ 10 January 2016.
- "CricketArchive home page". CricketArchive. সংগ্রহের তারিখ 10 January 2016.
- Bateman, Anthony (2003). "More Mighty Than The Bat, The Pen" (PDF). British Society of Sports History. উৎস the original (PDF) on 17 February 2015. সংগ্রহের তারিখ 10 January 2016.
- Bowen, Rowland (1965). "Wisden 1965 : Cricket in the 17th and 18th centuries". ESPNcricinfo. সংগ্রহের তারিখ 10 January 2016.
- Terry, David (2008). "The Seventeenth Century Game of Cricket: A Reconstruction of the Game" (PDF). SportsLibrary. উৎস the original (PDF) on 21 June 2009. সংগ্রহের তারিখ 10 January 2016.
আরও দেখুন
তথ্যসূত্র
- [Wynne-Thomas, Peter(১৯৯৭)], From the Weald to the World. Stationery Office Books
- Altham, H.S. (1962). A History of Cricket, Volume 1 (to 1914). George Allen & Unwin.
- Birley, Derek (1999). A Social History of English Cricket. Aurum.
- Altham, p. 21.
- Underdown, p. 3.
- McCann, p. xxxi.
- Bowen, p. 33.
- Terry, David (2008). "The Seventeenth Century Game of Cricket: A Reconstruction of the Game" (PDF). SportsLibrary. Archived from the original (PDF) on 21 June 2009. Retrieved 25 September 2008.
- Middle Dutch was the language in use in Flanders at the time.
- Rowland Bowen, Cricket: A History of its Growth and Development, Eyre & Spottiswoode, 1970
- From Lads to Lord's; The History of Cricket: 1300–1787
- UK Retail Price Index inflation figures are based on data from Clark, Gregory (2017). "The Annual RPI and Average Earnings for Britain, 1209 to Present (New Series)". MeasuringWorth. Retrieved 2 February 2020.
- David Cooper, "Canadians Declare 'It Isn't Cricket': a Century of Rejection of the Imperial Game, 1860–1960." Journal of Sport History (1999) 26#1 pp. 51–81
- Andrew Horrall, "'Keep-a-fighting! Play the Game!' Baseball and the Canadian Forces During the First World War," Canadian Military History (2001) 10#2 pp. 27–40
- "The official laws of cricket". Archived from the original on 29 August 2017. Retrieved 30 July 2016.
- F S Ashley-Cooper, "At the Sign of the Wicket: Cricket 1742–1751", CricketMagazine, 1900 ^
- Arthur Haygarth, Scores & Biographies, Volume 1 (1744–1826), Lillywhite, 1862
- ACS (1981). A Guide to Important Cricket Matches Played in the British Isles 1709–1863. Nottingham: ACS. p. 4.
- David Cooper, "Canadians Declare 'It Isn't Cricket': A Century of Rejection of the Imperial Game, 1860–1960." Journal of Sport History 26 (1999): 51–81.
- "United States of America v Canada". CricketArchive. Retrieved 6 September 2008.
- The Australian Eleven: The first Australian team ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮ তারিখে, National Museum of Australia. Retrieved 30 December 2014.
- Gibson, Owen Cricket may have embraced technology too quickly, says Hawk-Eye founder The Guardian, 9 August 2013
- ICC rankings for Tests, ODIs and Twenty20 at espncricinfo.com (Accessed 30 August 2013)
- "Remember these? The defining images of the last quarter-century : The millennial game".
- How will the IPL change cricket? BBC News 17 April 2008
- Cricket's new order BBC News 29 February 2008
- Stars come out as the eyes of the cricket world switch to Bangalore The Guardian 18 April 2008
- Test nations must act or lose players The Australian 18 April 2008
- ACS, First-class Match Guide, p. 4.
- Webber, p. 10.
- Altham, p. 23.
- Leach, John (2007). "From Lads to Lord's: 1695". Stumpsite. Archived from the origina on 29 June 2011. Retrieved 10 January 2010.
- Wisden 1948, p. 813.
গ্রন্থপঞ্জি
- Altham, H.S. (1962). A History of Cricket, Volume 1 (to 1914). George Allen & Unwin.
- Bateman, Anthony. Cricket, literature and culture: symbolising the nation, destabilising empire (Routledge, 2016).
- Birley, Derek (1999). A Social History of English Cricket. Aurum.
- Bowen, Rowland (1970). Cricket: A History of its Growth and Development. Eyre & Spottiswoode.
- Box, Charles (1868). The Theory and Practice of Cricket, from its origin to the present time. Frederick Warne.
- Harte, Chris (1993). A History of Australian Cricket. London: Andre Deutsch. ISBN 0-233-98825-4.
- Lang, Andrew. "The History of Cricket" in Steel A. G.; Lyttelton R. H. Cricket, Longmans 1898 (6th edn)
- Light, Rob. "‘In a Yorkshire Like Way’: Cricket and the Construction of Regional Identity in Nineteenth-century Yorkshire." Sport in History 29.3 (2009): 500–518.
- McCann, Tim (2004). Sussex Cricket in the Eighteenth Century. Sussex Record Society.
- McKibbin, Ross. Classes and Cultures. England 1918–1951 (Oxford: Oxford University Press, 1998). online pp. 332–39
- Russell, Dave. "Sport and identity: the case of Yorkshire County Cricket Club, 1890–1939." Twentieth Century British History 7.2 (1996): 206–30.
- Stone, Duncan. "Cricket's regional identities: the development of cricket and identity in Yorkshire and Surrey." Sport in Society 11.5 (2008): 501–16. online
- Underdown, David (2000). Start of Play. Allen Lane.
- Wisden Cricketers' Almanack (বার্ষিক): various editions
- Wynne-Thomas,Peter (১৯৯৭) From the Weald to the World. Stationery Office Books