কোলাহল
কোলাহল হলো অনাকাঙ্ক্ষিত শব্দ যা বিরক্তির উদ্রেক করে এবং শোনার সময় তা অসংহত ও উচ্চ মনে হয়। পদার্থবিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে কোলাহল বা সুরবর্জিত শব্দ সাধারণ শব্দ থেকে অভিন্ন কারণ উভয়ই কোনো একটি মাধ্যমের কম্পন থেকেই উৎপন্ন হয় । যেমন: বায়ু,পানি ও অন্যান্য মাধ্যম। কিন্তু এর পার্থক্য তখনই উপলব্ধ হয় যখন মস্তিষ্ক তা গ্রহণ করে ও অনুভব করে।
অনেক সময় ক্ষীণ শব্দও বিরক্তির সৃষ্টি করে।যেমন: সম্প্রচার বা বৈদ্যুতিক ডিভাইসগুলোর মাধ্যমে যোগাযোগের সময় মূল শব্দের পাশাপাশি অন্যান্য অপ্রয়োজনীয় শব্দ। শব্দ মানবজীবনের অত্যন্ত প্রয়োজনীয় অংশ আর এর অপ্রয়োজনীয় অংশই মূলত কোলাহল। সংকেত প্রক্রিয়াকরণের ক্ষেত্রে অনেক সময় এমন শব্দকেও কোলাহল বলা হয় যা কোনো অর্থপূর্ণ তথ্য বহন করে না।
পরিমাপ
বিস্তারের পরিমাণ বা তরঙ্গের সর্বোচ্চ সরণ থেকে কোলাহলের তীব্রতা সম্বন্ধে ধারণা পাওয়া যায়।বিস্তার অধিক হলে উপলব্ধ হয় যে কোলাহল অনেক উচ্চ। কারণ বিস্তারের উপর নির্ভর করে শব্দ উচ্চ না ধীর প্রকৃতির। কোলাহলপূর্ণ শব্দ কতটা তীক্ষ্ণ ছিল তা এর কম্পাঙ্ক পরিমাপ করলে জানা সম্ভব। অপ্রয়োজনীয় শব্দগুলো সাধারণত ডেসিবেল(dB) এককে পরিমাপ করা হয়।যেমন:গাড়ি, বাসের শব্দ, মশার পাখার শব্দ ইত্যাদি। এটি লগারিদমীয় মানদণ্ডকে অনুসরণ করে।
শব্দ সীমা পরিমাপক যন্ত্র (Sound Level meter) বায়ুতে শব্দের পরিমাণ নির্ণয় করতে ব্যবহৃত হয়। এই যন্ত্রটিরই বিভিন্ন রূপ কোলাহল বা অযাচিত শব্দ পরিমাপ করতে পারে।যেমন: নয়েজ ডোসিমিটার (Noise Dosemeter বা Noise Dosimeter)।
সম্প্রতি আধুনিক মুঠোফোনগুলোতে এমন অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার ব্যবহৃত হচ্ছে যা কোলাহলের উৎস চিহ্নিত করতে পারে।[1][2][3]
ব্যবস্থাপনা
উচ্চ শব্দ ও কোলাহলের ক্ষতিকর দিক বিবেচনায় বিভিন্ন দেশে কৌশলগত ব্যবস্থার পাশাপাশি বিধি-বিধানগত ব্যবস্থাও দেখা যায়। এ ধরনের পরিস্থিতি বন্ধে এমন প্রাচীরের ব্যবহারও দেখা যায় যা কোলাহল প্রতিরোধ করে।
১৯৭২ খ্রিস্টাব্দে যুক্তরাষ্ট্রে কোলাহল নিয়ন্ত্রণে বিহিতক প্রণয়ন করা হয়।[4] জনসচেতনতা সৃষ্টিও এই নীতির অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল। যুক্তরাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান নিওশ (NIOSH) কোলাহল নিয়ে কাজ করে যেহেতু মানুষের শ্রবণশক্তি হ্রাসের হার রোধ করা এর একটি লক্ষ্য।[5] ইউরোপীয় ইউনিয়নের অধিকারভুক্ত ইউরোপীয় পরিবেশগত প্রতিনিধি ( EEA ) কোলাহল ব্যবস্থাপনায় ভূমিকা রাখে।১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দে জাপানেও কোলাহল বন্ধের উদ্দেশ্যে বিহিতক প্রণয়ন করা হয়েছে।[6]
স্বাস্থ্যঝুঁকি
উচ্চ শব্দ বা কোলাহল স্বাস্থ্যের জন্য নেতিবাচক। এটি মানুষের শারীরিক ও মানসিক উভয় ধরনের ক্ষতিরই কারণ হতে পারে। শারীরিক ক্ষতি যেমন: শ্রবণশক্তিনাশ , উচ্চ রক্তচাপ, অনিদ্রা, কানে ভোঁ ভোঁ শব্দ শোনা, হৃৎ-ধমনীর ব্যাধি ইত্যাদির কারণ। মানসিক সমস্যার মধ্যে বিরক্তিবোধ, হতাশা, উদ্বেগ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এমনকি উচ্চ শব্দ এমন মানসিক পরিবর্তন করে যাতে ব্যক্তিত্ব পরিবর্তন এবং হিংস্র বা উগ্র কাজের মতো ঘটনাও মানুষের দ্বারা সংঘটিত হয়।[7]
এ ধরনের শব্দ শ্রবণেন্দ্রিয়ের কোষগুলোকে অধিক উদ্দীপ্ত করে এবং স্থায়ীভাবে কোষে ক্ষত এমনকি মৃত কোষেও পরিণত করতে পারে।[8] ফলে শোনার ক্ষমতা বিনষ্ট হয়ে যায়। দীর্ঘ সময় ধরে 85 dB(ডেসিবেল) শব্দসীমার উপর শ্রুত শব্দ স্থায়ীভাবে শ্রবণশক্তি নষ্ট করতে পারে । অন্যদিকে অল্প সময়ের জন্য এ পরিমাণ শব্দ শুনলে তা সহ্যসীমার ভিতরে থাকে।
তথ্যসূত্র
- "NoiseScore: A Free Smartphone App for Community Noise Issues With Live Map"। Noiseandthecity.org (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৮-০৬-১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৬-১৫।
- "soundprint – Find Your Quiet Place"। www.soundprint.co (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৬-১৫।
- "iHEARu"। www.ihearu.co (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৬-১৫।
- Noise Control Act of 1972, P.L. 92-574, 86 Stat. 1234, 42 U.S.C. § 4901 – 42 U.S.C. § 4918.
- NIOSH Strategic Plan: FYs 2019–2023. National Institute for Occupational Safety and Health.
- "Noise Regulation Law No. 98 of 1968"। সংগ্রহের তারিখ ৫ অক্টোবর ২০২০।
- "Children and Noise" (পিডিএফ)। World Health Organization।
- Noise-induced hearing loss। New York: Raven। ১৯৭৬। পৃষ্ঠা ৪১–৪৮।