কে ফোর্স (বাংলাদেশ)
কে ফোর্স (ইংরেজি: K Force) ছিল ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকার দ্বারা অনুমোদিত মেজর খালেদ মোশাররফ নেতৃত্বে গঠিত মুক্তিবাহিনীর সামরিক ব্রিগেড। ব্রিগেডটি বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর অধীনে গঠিত নিয়মিত বাহিনী হিসাবে কাজ করতো, এটি গঠিত হয়েছিল ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ৪র্থ, ৯ম এবং ১০ম ব্যাটালিয়ন দ্বারা।[1]
কে ফোর্স | |
---|---|
সক্রিয় | ১৪ই অক্টোবর, ১৯৭১ - ১৬ই ডিসেম্বর, ১৯৭১ |
দেশ | বাংলাদেশ |
আনুগত্য | অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকার |
ধরন | ব্রিগেড |
গ্যারিসন/সদরদপ্তর | আগরতলা |
কমান্ডার | |
ব্রিগেড কমান্ডার | খালেদ মোশাররফ |
পটভূমি
২৫ মার্চ এর কালরাতে পাকিস্তান সেনা বাহিনীর পরিচালিত নির্মম "অপারেশন সার্চলাইট" (পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কর্তৃক পরিচালিত পরিকল্পিত গণহত্যা) এরপরই পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কর্মরত বাঙালি সামরিক কর্মকর্তারা বিদ্রোহ ঘোষণা করে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতা আন্দোলন যোগদান করে।
মেজর খালেদ মোশাররফ ছিলেন ৪র্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অফিসার যাকে ২৪শে মার্চ পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আদেশে কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট থেকে সিলেট ক্যান্টনমেন্টে স্থানান্তরিত করা হয়, ২৬শে মার্চ তিনি ও তার ইউনিট পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে।
মেজর খালেদ মোশাররফ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অসাধারণ সাহসীকতার স্বীকৃতি হিসাবে সেক্টর-২ এর সেক্টর কমান্ডার হিসাবে নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে সেক্টর-২ এর যোদ্ধাদের দ্বারা শত্রুমুক্ত করা স্বাধীন স্থানগুলিতে দখল প্রতিষ্ঠিত রাখার উদ্দেশ্যে তাকে নিয়মিত কায্যক্রমের অংশ হিসাবে পৃথক ব্রিগেড তৈরি করতে বলা হয় এবং সেক্টর-২ এ বৃহৎ আঙ্গিকে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর স্থাপনাসমূহের উপর আক্রমণের দায়িত্ব দেওয়া হয়।[2]
সুত্রপাত
স্বাধীনতাযুদ্ধের দীর্ঘায়নের সম্ভাবনা বিবেচনায় এনে বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকার বিপক্ষের অস্ত্র সংগ্রামের প্রতিরোধের জন্যে নিয়মিত সামরিক বাহিনী নিয়ন্ত্রণের সিদ্ধান্ত নেয়।
পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সরকারের নির্দেশে কর্নেল আতাউল গনি ওসমানী তিনটি ব্রিগেড আকারের ফোর্স গঠন করেন। যেগুলোর নামকরণ করা হয় তাদের অধিনায়কদের নামের অদ্যাংশ দিয়ে। যা এস ফোর্স, কে ফোর্স, জেড ফোর্স নামে পরিচিত।[3]
সরকারের নির্দেশনা অনুসারে, মেজর খালেদ মোশাররফ সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে গঠন করেন কে ফোর্স এবং মেজর জিয়াউর রহমান জেড ফোর্স এবং মেজর কে এম শফিউল্লাহ গঠন করেন এস ফোর্স।
কে ফোর্স এর ব্রিগেড সদর দপ্তর ছিল আগরতলা।[3]
গঠন
কে ফোর্স ছিল আসলে ৪র্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের এবং অন্যান্যযারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে সেক্টর-২ অধীনে ছিল প্রশিক্ষণ নিয়েছিল সেইসব মুক্তিযোদ্ধাদের একটি স্বীকৃতি।[2]
৪র্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সি কোম্পানির সদস্যরা ও সেক্টর-২ এর সদর দপ্তরের অধীনের মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে নিয়ে কোনাবনে একত্রিত হয়। সি কোম্পানির পরিচিতি ও অধিনায়কত্বে ছিল ক্যাপ্টেন এম. এ. গফফার হালদার।
৯ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট গঠন করা হয়, ক্যাপ্টেন আইনুদ্দিন এর নেতৃত্বে স্বমন্বয় করাহয় ডি কোম্পানি সকল মুক্তিযোদ্ধা এবং ৪র্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের বি কোম্পানির কিছু সংখ্যক সৈন্য দ্বারা। নতুন রেজিমেন্ট একত্রিত হয় কসবা আরও সুসজ্জিত হবার জন্যে.
এ কোম্পানির সকল মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে এবং বি কোম্পানির অবশিষ্ট সৈন্য নিয়ে ১০ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট গঠিত হয় যার নেতৃত্বে থাকেন মেজর আবদুস সালেক চৌধুরী এবং যুদ্ধক্ষেত্র বেলুনিয়া।
একই সাথে সহযোগিতার (কে ফোর্স এর) জন্যে ক্যাপ্টেন আব্দুল আজিজ পাশা নেতৃত্বে মুজিব ব্যাটারি নামে একটি আর্টিলারি ব্যাটারি যোগ করা হয়েছিল।[4]
ব্রিগেড এর কাঠামো
- ব্রিগেড কমান্ডার - মেজর খালেদ মোশাররফ (১৪ই অক্টোবর - ২৩শে অক্টোবর) এবং মেজর আবদুস ছালেক চৌধুরী (২৪শে অক্টোবর - ১৬ই ডিসেম্বর)
- স্টাফ অফিসার ক্যাপ্টেন এম মতিন
- স্টাফ অফিসার – লেফটেন্যান্ট আনোয়ারুল আলম।
৪র্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট
- কমান্ডিং অফিসার – অধিনায়ক এম. এ. গাফফার হালদার
৯ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট
- কমান্ডিং অফিসার ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ আইনুদ্দিন
১০ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট
- কমান্ডিং অফিসার – মেজর আব্দুস ছালেক চৌধুরী (১৪ই অক্টোবর-২৩শে অক্টোবর) এবং ক্যাপ্টেন জাফর ইমাম (২৪শে অক্টোবর - ১৬ই ডিসেম্বর)
১ম ফিল্ড আর্টিলারি ব্যাটারি
- কমান্ডিং অফিসার ক্যাপ্টেন আব্দুল আজিজ পাশা
আরও দেখুন
তথ্যসূত্র
- স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলপত্র: দশম খণ্ড। হাক্কানী পাবলিশার্স। মার্চ ২০১৩। পৃষ্ঠা 135। আইএসবিএন 984-433-091-2।
- মুক্তিযুদ্ধে ২ নম্বর সেক্টর এবং কে ফোর্স। প্রথমা প্রকাশন। মার্চ ২০১৩। পৃষ্ঠা 214। আইএসবিএন 9789849025320।
- "সেক্টর এন্ড আর্মড ফোরসেস অব লিবারেশন ওয়ার" (ইংরেজি ভাষায়)। দ্যা ডেইলি স্টার। সংগ্রহের তারিখ ১২ জানুয়ারি ২০১৭।
- স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলপত্র: দশম খণ্ড। হাক্কানী পাবলিশার্স। মার্চ ২০১৩। পৃষ্ঠা 135। আইএসবিএন 984-433-091-2।