কে এম আবু বাকের

কে এম আবু বাকের (জন্ম: ১ জানুয়ারি, ১৯৫৩) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করে।[1]

কে এম আবু বাকের
জন্ম১ জানুয়ারি, ১৯৫৩
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ব পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
 বাংলাদেশ
পরিচিতির কারণবীর প্রতীক

জন্ম ও শিক্ষাজীবন

কে এম আবু বাকেরের জন্ম নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ উপজেলার মাছুমাবাদ গ্রামে। তার বাবার নাম কে এম আবদুল্লাহ এবং মায়ের নাম সুলতানা আবদুল্লাহ। তার স্ত্রীর নাম নাজমা আক্তার। তাদের তিন ছেলে।[2]

কর্মজীবন

১৯৭১ সালে কে এম আবু বাকের শিক্ষার্থী ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে যুদ্ধে যোগ দেন। তিনি প্রথম বাংলাদেশ ওয়ার ফোর্সে অন্তর্ভুক্ত হন। প্রশিক্ষণ শেষে ‘জেড’ ফোর্সের অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অধীনে যুদ্ধ করেন। ধামাই চা-বাগান, সোনারুপা, ফুলতলা উল্লেখযোগ্য যুদ্ধ। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে চাকরি করেন। ১৯৯৬ সালে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হিসেবে অবসর নেন তিনি।

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা

১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসের শুরুতে মৌলভীবাজার জেলার অন্তর্গত ভানুগাছ এলাকায় মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়মিত মুক্তিবাহিনীর ‘জেড’ ফোর্সের অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট বৃহত্তর সিলেট মুক্ত করার জন্য সীমান্ত এলাকা থেকে শমসেরনগর-মৌলভীবাজার-সিলেট অক্ষ ধরে অগ্রসর হতে থাকে। ৩০ নভেম্বর মধ্যরাত থেকে তারা অভিযান শুরু করেন। কমলগঞ্জ হয়ে কেরামতনগর মুক্ত করার জন্য তারা এগোতে থাকেন ভানুগাছের দিকে। কিন্তু পথ হারিয়ে ফেলায় মুক্তিযোদ্ধারা সময়মতো ভানুগাছে পৌঁছাতে পারেননি। গভীর রাতে সীমান্ত অতিক্রম করে সামনে এগিয়ে যেতে থাকলেন মুক্তিযোদ্ধারা। তারা কয়েকটি দলে বিভক্ত ছিলেন। একটি দলে ছিলেন কে এম আবু বাকের। তিনিই তাদের দলনেতা ছিলেন। অন্ধকারে হাঁটতে হাঁটতে তারা পথ হারিয়ে ফেললেন। এর মধ্যে ভোর হলো। আবছা আলোয় বুঝতে পারলেন আঁকাবাঁকা পথে তারা বেশি দূর এগোতে পারেননি। এমন সময় তাদের সামনে হঠাৎ হাজির হলো পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর টহল দল। একসঙ্গে এত মুক্তিযোদ্ধা দেখে পাকিস্তানি সেনাদের চক্ষু চড়কগাছ। মুক্তিযোদ্ধারা আক্রমণ করার আগেই ভয় পেয়ে তারা আত্মসমর্পণ করল। এ ঘটনা ভানুগাছের সন্নিকটে।

কেরামতনগরে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রতিরক্ষা অবস্থান ছিল বেশ শক্তিশালী। কে এম আবু বাকেরের নেতৃত্বাধীন দলের ওপর দায়িত্ব ছিল কেরামতনগরের আউট পোস্ট দখলের। তিনি তার দল নিয়ে দিনের বেলাতেই সেখানে আক্রমণ করেন। পাকিস্তানি সেনারাও তাদের পাল্টা আক্রমণ করে। শুরু হয় রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ। মুক্তিযোদ্ধাদের সাহসিকতা ও বীরত্বে হকচকিত পাকিস্তানি সেনারা একপর্যায়ে পিছু হঠতে বাধ্য হয়। মুক্তিযোদ্ধারা সহজেই কেরামতনগর দখল করেন।

এই যুদ্ধে কে এম আবু বাকের কৌশলী ভূমিকা পালন করে পাকিস্তানি সেনাদের তাক লাগিয়ে দেন। পাকিস্তানিরা ভাবতেই পারেনি দিনের বেলায় এভাবে মুক্তিযোদ্ধারা আক্রমণ করবেন। যুদ্ধে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বেশ ক্ষয়ক্ষতি হয়। মুক্তিবাহিনীর সাতজন আহত হন। [3]

পুরস্কার ও সম্মাননা

তথ্যসূত্র

  1. "দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না" | তারিখ: ০৪-০২-২০১২"। ২০১৭-০৪-৩০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৩-০১
  2. একাত্তরের বীরযোদ্ধাদের অবিস্মরণীয় জীবনগাঁথা, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা স্মারকগ্রহন্থ। জনতা ব্যাংক লিমিটেড। জুন ২০১২। পৃষ্ঠা ২৯৯। আইএসবিএন 9789843351449।
  3. একাত্তরের বীর মুক্তিযোদ্ধা (দ্বিতীয় খন্ড)। ঢাকা: প্রথমা প্রকাশন। মার্চ ২০১৩। পৃষ্ঠা পৃ ১৭১। আইএসবিএন 9789849025375।

বহি:সংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.